আজ মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন
কমলালেবু জাতীয় ফলের মধ্যে কমলা সবচেয়ে জনপ্রিয়। সুস্বাদু, সুগন্ধি এবং ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল। বর্তমানে কমলা ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, আমেরিকায় অধিক পরিমাণে উৎপাদন হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে আমাদের দেশেও উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে।
পুষ্টি মূল্য
এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল।
ভেষজ গুণ
কমলা সর্দিজ্বর ও বমি নিবারক। কমলার শুকনো ছাল অম্লরোগ ও শারিরীক দুর্বলতা নিরসন করে।
ব্যবহার
জ্যাম, জেলি, জুস হিসেবে।
জাত পরিচিতি
বারি কমলা-১: এটি একটি নিয়মিত আগাম ফল প্রদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। প্রতিটি গাছে ৩০০-৪০০টি ফল ধরে। ফল বড়, ওজন ১৮০-২০০ গ্রাম ও প্রায় গোলাকার। পাকার পর হলুদ রঙ ধারণ করে। ফলের খোসা ঢিলা, ফল রসালো ও মিষ্টি। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় জেলায় চাষ উপযোগী।
চারা উৎপাদন
বীজ থেকে সরাসরি চারা তৈরী করা যায়। চোখ কলম ও পার্শ্বকলমের মাধ্যমেও কলম তৈরী করা যায়। ১০ থেকে ১২ মাস বয়সের কমলার চারা বাডিং ও গ্রাফটিংয়ের জন্য আদিজোড় হিসাবে ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। রোপণের জন্য সোজা ও ভাল বৃদ্ধি সম্পন্ন্ তরতাজা চারা অথবা কলম বেছে নিতে হবে।
জমি তৈরি
জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। সমতল ভূমিতে আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে এবং পাহাড়ী অঞ্চলে কোদালের সাহায্যে জমি তৈরি করতে হবে। জমির তৈরি পর উভয় দিকে ৪-৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেন্টিমিটার (২ফুট) আকারে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের মাটি তুলে পাশে রেখে দিতে হবে। বর্ষার আগে গর্ত মাটি দিয়ে ভর্তি করে রাখতে হবে। কমলা চাষের জমি পাহাড়ী হলে সেখানে ৩০-৫০ মিটার দূরত্বে ২-৪টি বড় গাছ রাখা যেতে পারে।
চারা রোপণ
জমির প্রকার ভেদে সমতল জমিতে বর্গাকার বা আয়তাকার এবং পাহাড়ী জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে কমলার চারা/কলম রোপণ করতে হবে।
১. বর্গাকার বা আয়তাকার পদ্ধতি
এ ধরনের রোপণ পদ্ধতিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব এবং সারি থেকে সারির দূরত্বের চেয়ে কম। ফলে দুই সারির পাশাপাশি চারটি গাছ মিলে এটি আয়তক্ষেত্র সৃষ্টি করে। এ পদ্ধতিতে গাছের পরিচর্যা করা সহজ হয়।
২. কন্টুর পদ্ধতি
এটি এমন এক পদ্ধতি যেখানে পাহাড়ের ঢাল, উচু নিচু ও উচ্চতা অনুসারে জমি থেকে পাহাড়ের ঢালে সমান উচ্চতায় সারিবদ্ধভাবে গাছ লাগানো হয়। সাধারণত: পাহাড়ী এলাকায় যেখানে জমি ঢালু সেখানে এই পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হয়। পাহাড় কেটে সমতল সিড়ি বাঁধ তৈরি করা হয় এবং ঢালের সাথে আড়াআড়িভাবে সারি করে গাছ লাগানো হয়। এই পদ্ধতিতে গাছের পরস্পর দূরত্ব কখনও সমান থাকে না। তবে এই পদ্ধতি দ্বারা ভূমি ক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
রোপণ সময়
বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ বৈশাখ ( মে-জুন) মাস কমলার চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে সেচেরে ব্যবস্থা থাকলে যেকোন সময় কমলার চারা লাগানো যেতে পারে।
মাদা তৈরি
চারা রোপণের ১৫-২০ দিন আগে উভয় দিকে ৪-৫ মিটার দূরত্বে ৭৫ সেন্টিমিটার (২.৫ফুট) আকারে গর্ত তৈরি করতে হবে। প্রতি গর্তে ১৫ কেজি পচা গোবর, ৩-৫ কেজি ছাই, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি ও ২৫০ গ্রাম চুন গর্তের উপরের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। গর্ত ভরাট করার ১০-১৫ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
চারা রোপণ:
সুস্থ ও সবল ১.০-১.৫ বছর বয়সের চারা/কলম সংগ্রহ করে গর্তের মাঝখানে এমনভাবে রোপণ করতে হবে যেন গর্তের বলটি ভেঙ্গে না যায়। চারা রোপণের পর হালকাভাবে সেচ দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা
গাছের বয়স অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে সার দিতে হবে।
এসব সারের অর্ধেক ফল সংগ্রহের পর অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে এবং বাকি অর্ধেক সার ফল মার্বেল আকার ধারণ করার পর অর্থাৎ অক্টোবর মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা
চারা অবস্থায় কমলা গাছের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। গোড়া থেকে জম্মানো অতিরিক্ত মাথা গজানোর সাথে সাথে কেটে ফেলতে হবে। নিচের দিকে ছোট ছোট শাখা ছেটে ভূমি থেকে অন্তত: ৪৫ সেমি (দেড় ফুট) উপর হতে কান্ডের উৎপাদনশীল শাখা বাড়তে দিতে হবে। মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল মাঝে মাঝে ছেটে দিতে হবে এবং কাটা অংশে কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউপি পেষ্ট আকারে লাগাতে হবে। গাছের গঠন ছোট থেকেই সুন্দর ও শক্ত করে তুলতে হবে।
সাথী ফসল
কমলা বাগানে ৫-৭ বৎসর পর্যন্ত সাথী ফসলের চাষ করা যায়। শাক-সবজি, ডাল ও তেল জাতীয় ফসলের আবাদ করে বাগান থেকে অতিরিক্ত লাভ ঘরে তোলা যায়। এতে কমলার ফলনে কোন ক্ষতি হয় না। বরং নিয়মিত পরিচর্যার কারণে কমলা গাছে বালাইয়ের আক্রমণ কম হয়।
কাঠবিড়ালী ও বাদুরের আক্রমণ
কাঠবিড়ালী কাঁচা ও পাকা এবং বাদুর পাকা অবস্থায় কমলার ক্ষতি করে। রাতেই এরা বেশি ক্ষতি করে। পাহারা দিয়ে/ টিনের বা পিতলের বাক্সে ঘন্টা বাজিয়ে/কাকতাড়ুয়া দিয়ে/কাঠবিড়ালী মেরে বাগানে ঝুলিয়ে রেখে কমলা রক্ষা করা যায়।
ফসল তোলা
মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
সংগৃহীত ও সংকলিত