কী হবে করোনা পরবর্তী বেকারত্ব এবং দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা?
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর মতে, করোনা মহামারী (কোভিড-১৯) এর কারণে বিশ্বব্যাপী কাজ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ।
এছাড়াও করোনা ভাইরাস আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা ২০০৮ সালের পরিস্থিতিকেও ছাড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে যাবেন এবং শ্রমজীবী শ্রেণির লোকের আয় মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে। আবার অন্যদিকে, বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক।
বিশ্বব্যাংক ধারণা করছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে যেতে পারে শুধুমাত্র এই মহামারীর কারণে।
করোনা পরবর্তী অন্যতম মুখ্য সমস্যা যেটা দেখা দিতে পারে তা হচ্ছে বেকারত্ব।
আইএলওর হিসাবে ২০১০ সালে বাংলাদেশে ২০ লক্ষ লোক বেকার ছিল। ২০১২ সালে ছিল ২৪ লক্ষ। ২০১৬ সালে তা ২৮ লক্ষে উঠেছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষে ওঠার আশঙ্কা করা হয়েছিল। এই মহামারীর কারণে এর সংখ্যা নিঃসন্দেহে বেড়ে যাবে সহজেই ধারণা করা যাচ্ছে।
তাই করোনা পরবর্তী সময়ে বেকারত্বের মতো একটি গুরুতর সমস্যা ঠেকাতে যেদিকটিতে বিশেষভাবে নজর দেয়া যেতে পারে তা হচ্ছে
দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।
দুগ্ধ খামারে লাভজনকভাবে দুধ উৎপাদন করার জন্য সুষ্ঠুভাবে কাজকর্ম করাই হচ্ছে দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা।
ডিএলএস এর এক বিশ্লেষণে–
২০১৭-১৮ সালে দেশে দুধের চাহিদা ছিল:
১৫০.২৯ লক্ষ মেট্রিক টন,
(২৫০ মিলি/দৈনিক/মাথাপিছু)
তার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ৯৪.০৬ লক্ষ মেট্রিক টন।
স্বল্পতা দেখা দেয় ৫৬.২৩ লক্ষ মেট্রিক টন।
একইভাবে, ২০১৬-১৭ এবং ২০১৫-১৬ সালে উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ৯২.৮৩ এবং ৭২.৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন।বিপুল জনসংখ্যার এই দেশ চাল ও মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে এখনো ততটা ভাল অবস্থান করে নিতে পারেনি।
পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের অর্থনীতির মূলভিত্তি মূলত কৃষি এবং পশুপালন, যেখানে দুধ উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই দেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম স্কেলের দুধ উৎপাদনকারী দেশ। প্রতিবছর ১৪৬.৩১ মিলিয়ন টন দুধ উৎপাদন হয় ভারতের পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ ও আন্ধ্রা প্রদেশ থেকে। যা আমেরিকার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ও চীনের উৎপাদন স্কেলের তুলনায় তিনগুন।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সাইট – ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, ভারত বছরে দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করে প্রায় ২১২.০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৯ সালে বেড়ে যা দাঁড়িয়েছে ২৪৪.১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক রিপোর্ট (CEIC) অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২,৩৬০.৮৩৩ মিলিয়ন টাকার পাউডার দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করেছিল ২০১৯ সালের শেষদিকে যা পরবর্তীতে শুধুমাত্র এক মাসের ব্যবধানে ২,৭৮২.২১৭ মিলিয়ন টাকায় পৌছায়। এছাড়াও বাংলাদেশে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কম হওয়ার কারণে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেশি তুলনামূলকভাবে।
ইতিমধ্যে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার পশুপালন, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের উন্নতির দিকে নজর দিয়ে প্রায় ২ মিলিয়ন কৃষক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষিজ-উদ্যোক্তাদের উন্নত বাজার প্রদান করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সাথে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়নের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এক্ষেত্রে তরুণদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রকল্পগুলোর আওতায় আর্থিক এককালীন কিছু নগদ অর্থ দিয়ে উৎসাহ দিলে অনেকেই নব্য উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। ফলে, প্রতিটি খামারে একাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের মতো আরও কিছু প্রকল্প চালু করা যেতে পারে।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সহ ভেটেনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোর বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে বেকার জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ দক্ষ করে গড়ে তোলা যেতে পারে। বিভিন্ন গ্রামীণ উন্নয়ন সংগঠনের মাধ্যমে – ঋণ, অনুদান ও কারিগরি সহায়তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
দুগ্ধ খামার বর্তমানে একটি লাভজনক শিল্প। গাভীর খামার বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্যবিমোচন, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশে দুধের চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। সঠিক উদ্যোগ ও মনিটরিং এর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি কাজে লাগালে বাংলাদেশও নিজের জনগণের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারবে বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য।
জুলফিকার দিহান
ছাত্র,পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ অর্থনীতি বিভাগ
ঢাকা স্কুল অব ইকনমিক্স