খেত-খামারে আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশীয় কৃষিতে ড্রোন প্রযুক্তির আবির্ভাব, ড্রোনের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জমির চাষাবাদের পরিকল্পনা, ফসলের স্বাস্থ্যের নিরীক্ষণ, আগাছা, রোগব্যাধি এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ড্রোন এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর মতো, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত এবং ফিলিপাইনের কৃষিক্ষেত্রেও ড্রোন প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
ভারতে পূর্বে এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র প্রতিরক্ষার সীমাবদ্ধতায় ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে কৃষি উন্নয়নে এর ব্যবহার বাড়ছে। দেশটির কিছু রাজ্য কৃষকদের ড্রোন কেনার জন্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করছে, যা সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকার মতো হতে পারে। চীনে কৃষিতে ড্রোন ব্যবহার কৃষকদের উৎপাদনশীলতা ১৭-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
ড্রোন প্রযুক্তির সাহায্যে ফসলের খেত পর্যবেক্ষণ, বালাইনাশক স্প্রে, এমনকি সেচ কার্যক্রমও সহজতর করা সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে ড্রোনকে সংযুক্ত করলে, এটি নির্দিষ্ট এলাকার ফসলের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জানাতে সক্ষম।
মাটির আর্দ্রতা, রাসায়নিক উপাদান, এবং জমির আকারের উপযোগী ফসল রোপণের মতো কাজেও ড্রোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। জমির তথ্য বিশ্লেষণ করে বীজ বপনেও ড্রোনের ব্যবহার করা যায়, যা ৭০ শতাংশের বেশি নির্ভুলতা নিশ্চিত করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এক একর জমিতে বালাইনাশক বা পানি স্প্রে করতে প্রথাগত পদ্ধতিতে ২৫০-৩০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয় এবং সময় লাগে ১-৩ ঘণ্টা। কিন্তু ড্রোনের মাধ্যমে এই কাজটি মাত্র ১৫-২০ লিটার পানি ব্যবহার করে ১০-১৫ মিনিটে সম্পন্ন করা সম্ভব। ফলে শ্রম, সময়, এবং অর্থ—তিনটিরই সাশ্রয় ঘটে। এর কার্যকারিতাও বহুগুণে উন্নত।
বাংলাদেশের কৃষি খাতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তর যৌথভাবে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। আধুনিক প্রযুক্তির ওপর কর্মশালার মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০ জন কর্মকর্তাকে প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তবে এই প্রযুক্তি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
ড্রোন প্রযুক্তির সম্প্রসারণে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করা এবং প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে দেশে কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করছেন, যা উৎপাদন খরচ এবং সরকারি ভর্তুকি বাড়িয়ে তুলছে। ড্রোনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাত্রায় সার প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে খরচ হ্রাসের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মধ্যে ড্রোন অন্যতম ভরসার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। এই বিষয়ে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশ কৃষি উৎপাদনের সঠিক তথ্য সংগ্রহে ড্রোন ব্যবহার করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি নিরূপণ, সরকারি প্রণোদনা বিতরণ এবং মাঠ পর্যায়ের জরিপ কার্যক্রমে এই প্রযুক্তি অনন্য ভূমিকা পালন করছে।”
অতএব, বাংলাদেশেও উত্তম কৃষি চর্চার জন্য ড্রোন প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগ সময়ের দাবি।