আজ বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন

কেঁচো কম্পোষ্ট (ভার্মি কম্পোষ্ট) জৈবসার উৎপাদন পদ্ধতি ও আয়-ব্যয় হিসাব

কেঁচো কম্পোষ্ট (ভার্মি কম্পোষ্ট) জৈবসার উৎপাদন পদ্ধতি ও আয়-ব্যয় হিসাব

কেঁচো কম্পোষ্ট (ভার্মি কম্পোষ্ট) জৈবসার উৎপাদন পদ্ধতি ও আয়-ব্যয় হিসাব

উর্বর মাটিতে পাচঁ ভাগ জৈব পদার্থ থাকতে হয়। মাটির পানি ধারণক্ষমতা ও বায়ু চলাচল বাড়াতে পাঁচ ভাগ জৈব পদার্থ থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে এক দশমিক আট থেকে দুই ভাগ। জৈব পদার্থের পরিমান বাড়াতে কম্পোষ্ট সার, পচা আবর্জনা, সবুজ সারের যেমন ভূমিকা, কেঁচো সারের ভূমিকাও তেমনি অসামান্য।

কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় । গাছের পাতা, খড়, গোবর, লতা, পাতা, পঁচনশীল আবর্জনা ইত্যাদি খেয়ে কেঁচো মলত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি হয়।

কী আছে কেঁচোসারেঃ ‘ভার্মি কম্পোষ্ট’ বা কেঁচোসারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা ও মাটি নরম করার ক্ষমতা তো আছেই,এ ছাড়া আছে আটাশি দশমিক ৩২ ভাগ জৈব পদার্থ, এক দশমিক ৫৭ ভাগ নাইট্রোজেন, এক দশমিক ২৬ ভাগ বোরন-যেগুলো অন্যান্য জৈব সারে এত বেশি পরিমাণে নেই।

কেঁচোসার ব্যবহার করলে চাষের খরচ কম হয়। প্রাকৃতিক লাঙ্গল যে কেঁচো তারও সংখ্যা বাড়ে মাটিতে। উৎপাদিত ফসলের বর্ণ, স্বাদ, গন্ধ হয় আকর্ষণীয়। ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

বাজার সম্ভাবনা
মূলধন
প্রশিক্ষণ
প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান
কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির নিয়ম
আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ
সচরাচর জিজ্ঞাসা

বাজার সম্ভাবনা

রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের খরচও বেশী। কেঁচো কম্পোস্টের উপকারিতা অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে বেশি। কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি খরচ কম এবং রাসায়নিক সারের অপকারিতা মাথায় রেখেই দিন দিন জৈব সারের ব্যবহার বাড়ছে। আর তাই কেঁচো কম্পোস্টের চাহিদা ও বাজার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেঁচো কম্পোস্ট বিক্রি করতে উপজেলা পর্যায়ে ব্যবসায়ী, কৃষক, আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তৈরি করা কম্পোস্ট সার বিক্রির জন্য প্রচার অভিযান চালাতে হবে। সেক্ষেত্রে-

আরও পড়ুন   পাটের আবাদ ভালো হওয়ায় কৃষকের চোখে খুশির ঝিলিক

পোস্টার লাগানো যেতে পারে।
সাইনবোর্ড লাগানো যেতে পারে।
ভ্যান গাড়ীতে করে প্রদর্শন করা যেতে পারে।
বাজারের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ রাখতে হবে।

মূলধন

আনুমানিক ৬০০-৭০০ টাকার যন্ত্রপাতি এবং ২৪০০-২৫০০ টাকার কাঁচামাল কিনে বেশ বড় আকারেরর কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি ও বিক্রি ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। বড় আকারে কেঁচো কম্পোস্ট ব্যবসা শুরু করতে যদি নিজের কাছে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তাহলে স্থানীয় ঋণদানকারী ব্যাংক (সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা)থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।

প্রশিক্ষণ

কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি প্রক্রিয়া খুবই সহজ। এর জন্য আলাদা ভাবে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে ধারণা নিয়েই এ কাজ শুরু করা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান

স্থায়ী উপকরণ
উপকরণ

পরিমাণ

আনুমানিক মূল্য (টাকা)

প্রাপ্তিস্থান

ঘর তৈরি/শেড তৈরি

১ টি

৩০০-৩১০

নিজেই তৈরি করা যায়

পানি নিরোধক কাগজ

৪০ ফিট

২০০-২১০

হার্ডওয়ার দোকান

মাটির বড় পাত্র

৫টি

১৫০-১৬০

কুমার বাড়ী

মোট=৬৫০-৬৮০ টাকা

 

কাঁচামাল
উপকরণ

পরিমাণ

আনুমানিক মূল্য (টাকা)

প্রাপ্তিস্থান

কেঁচো

২০০০ টি

২০০০-২০৫০

কেঁচো বিক্রির পাইকারী দোকান

গোবর

১২০০ কেজি

৩০০-৩২০

বাড়ী থেকে কেনা যেতে পারে

রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট

৫০ কেজি

বাড়ী থেকে সংগ্রহ করা যায়

পাতলা চট

৪০ ফুট

১৩০-১৩৫ টাকা

হার্ডওয়ারের দোকান

মোট=২৪৩০-২৫০৫টাকা

তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, জামালপুর, নভেম্বর ২০০৯।

কেঁচো কম্পোস্ট তৈরিকরণ পদ্ধতিঃ

স্থান নির্বাচনঃ

গাছের ছায়ায় মাটিতে গর্ত করে সার তৈরি করতে হয়। সেজন্য ২ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীর গর্ত করতে হবে। গর্তের আকার এমন হবে যেন দুই থেকে পাঁচ হাজার কেঁচো থাকতে পারে। এ পদ্ধতিতে মাসে ১০০ কেজি করে সার তৈরি করা সম্ভব হবে। গর্তের উপর ছনের চালা দিতে হবে। তবে মাটির গর্তের চেয়ে মাটির বড় পাত্রে (গামলা) কম্পোস্ট তৈরি করলে কেঁচোগুলো হারিয়ে বা নষ্ট হয় না। তাই বর্তমানে গামলার ব্যবহারই বেশি।

আরও পড়ুন   সবজি ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া সার

তৈরি ঘরের মধ্যে বা গর্তের তলায় ইটের টুকরো বা বালি বিছিয়ে নিতে হবে।

ইটের বা বালির স্তরের উপরে ১৫-২০ সে.মি. গভীর ভালো দোঁ-আশ মাটি বিছিয়ে দিতে হবে এবং শ’খানেক কেঁচো বা কোঁচোর ডিম ছড়িয়ে দিতে হবে।

কেঁচোর উপর কাঁচা গোবর বিছিয়ে দিতে হবে।
এই স্তরের উপর শুকনো পাতা বা খড় দিতে হবে।
মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণ পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
এভাবে ৪ সপ্তাহ রাখার পর সদ্য কাটা গাছের পাতা ও কচি ডাল ৫ সে. মি. পুরু করে বিছিয়ে দিতে হবে।
গর্ত না ভরা পর্যন্ত ৩/৪ দিন অন্তর অন্তর খোসা, পাতা ইত্যাদি দিতে হবে ও ১৫ দিন পর পর ওলট-পালট করতে হবে।
কম্পোস্ট তৈরির উপাদান গুলো কালচে রং ধারণ কররে জৈব সার তৈরি হবে। এসময় পানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সার তৈরি হয়ে গেলে কেঁচো গুলো গর্তের নিচে চলে যাবে।
এবার ঝুরঝুরে দানাদার সার গর্ত থেকে বের করে শুকিয়ে ছাঁকনিতে ঢেলে (পলিথিন ব্যাগে) প্যাকেট করতে হবে।

সাবধানতা ঃ

চালুনীর সময় সাবধান থাকতে হবে যেন শিশু কেঁচো মারা না যায়। শিশু কেঁচোগুলো পুরানো গোবরে রাখতে হবে। পিপঁড়া ও পোকার কামড় থেকে কেঁচোগুলোকে সাবধানে রাখতে হবে।

আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ
খরচ (এক মাসের জন্য)
কাঁচামাল বাবদ খরচ আনুমানিক

২৪৩০-২৫০৫ টাকা

যন্ত্রপাতির অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ

৫-৬ টাকা

মোট= ২৪৩৫-২৫১১ টাকা

আয়ঃ

পরিমাণ এবং উৎপাদনের ভিত্তিতে খরচ কমবেশি হতে পারে। এখানে একটি ছোট পড়িসরের হিসাব প্রদান করা হলোঃ

এ পরিমাণ কাঁচামাল দিয়ে মাসে ২০০০ কোঁচোর মাধ্যমে ১০০ কেজি সার উৎপাদন করা সম্ভব।

১ কেজি সার বিক্রি হয়=৭-৮ টাকা

১০০ কেজি সার বিক্রি হয়=৭০০-৮০০ টাকা

নতুন জমানো কেঁচো বিক্রি=২০০০-২২০০ টাকা

মাসে মোট আয় =(সার+কেঁচো)=২৭০০-৩০০০

আরও পড়ুন   লালপুরে কৃষি প্রশিক্ষনের সনদ বিতরণ

 

লাভ :

সার ও কেঁচো বিক্রিতে আয়

২৭০০-৩০০০ টাকা

সার তৈরিতে খরচ: (পরিমাণ এবং উৎপাদনের ভিত্তিতে খরচ কমবেশি হতে পারে। এখানে একটি ছোট পড়িসরের হিসাব প্রদান করা হলোঃ

২৪৩৫-২৫১১ টাকা

লাভ=২৬৫-৪৮৯ টাকা

অর্থাৎ ২৬৫-৪৮৯ টাকা লাভ করা সম্ভব। তবে সময় ও স্থানভেদে এর কম বা বেশি লাভ হতে পারে।

যে কোন ব্যক্তি বাড়ীতে বসে নিজেই কেঁচো কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com