শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৮ অপরাহ্ন

গো-খাদ্য হিসাবে এ্যালজি

  • লাস্ট আপডেট : রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
  • ১২৬ টাইম ভিউ
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
এ্যালজি কিঃ এ্যালজি এক ধরনের উদ্ভিদ আকারে এক কোষী থেকে বহুকোষী বিশাল বৃক্ষের মত হতে পারে। তবে আমরা এখানে দুটি বিশেষ প্রজাতির এক কোষী এ্যালজির কথা উল্লেখ করবো যা গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এদের নাম হলো ক্লোরেলা এবং সিনেডসমাস। এরা সূর্যালোক, পানিতে দ্রবীভুত অক্সিজেন, কার্বন ডাই- অক্সাই্ড ও জৈব নাইট্রোজেন আহরণ করে সালোকসংশ্লেন প্রক্রিয়ার বেচে থাকে। এরা অত্যন্তদ্রূত বর্ধনশীল বিশেষ বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উষ্ণ জলবায়ুতে।
এ্যালজির পুষ্টিমানঃ এ্যালজির অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর খাদ্য যা বিভিন্ন ধরনের আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন-খৈল, শুটকি মাছের গুড়া ইত্যাদির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। শুষ্ক এ্যালজিতে শতকরা ৫০-৭০ ভাগ আমিষ বা প্রোটিন, ২০-২২ ভাগ চর্বি এবং ৮-২৬ ভাগ শর্করা থাকে। এছাড়াও এ্যালজিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন থাকে।
এ্যালজির চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
এ্যালজির বীজ, কৃত্রিম অগভীর পুকুর পরিস্কার স্বচ্ছ কলের পানি, মাসকলাই বা অন্যান্য ডালে ভুষি এবং ইউরিয়া।
এ্যালজির উৎপাদন পদ্ধতিঃ
  • প্রথমে সমতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় একটি কৃত্রিম পুকুর তৈরী করতে হবে। পুকুরটি লম্বায় ১০ ফুট, চওড়ায় ৪ ফুট এবং গভীরতায় ১/২ ফুট হতে পারে । পুকুরের পাড় ইট বা মাটি তৈরী হতে পারে। এবার ১১ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া একটি স্বচ্ছ পলিথিন বিছিয়ে কৃত্রিম পুকুরের তলা ও পাড় ঢেকে দিতে হবে। তবে পুকুরের আয়তন প্রয়োজন অনুসারে ছোট বা বড় হতে পারে। তাছাড়া মাটির বা সিমেন্টের চাড়িতে এ্যালজি চাষ করা যায়।
  • ১০০ গ্রাম মাসকালাই (বা অন্য ডালের) ভূষিকে ১ লিটার পানিতে সারারাত ভিজিয়ে কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানিটুকু সংগ্রহ করতে হবে। একই ভূষিকে অন্তত তিনবার ব্যবহার করা যায়, যা পরবর্তীতে গরুকে খাওয়োনো যায়।
  • এবার কৃত্রিম পুকুরে ২০০ লিটার পরিমান কলের পরিস্কার পানি, ১৫-২০ লিটার পরিমান এ্যালজির বীজ, যা এ্যলজির ঘনত্বের উপর নির্ভর করে এবং মাসকালাই ভূষি ভেজানো পানি নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ২-৩ গ্রাম পরিমান ইউরিয়া নিয়ে উক্ত পুকুরের পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • এরপর প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকাল কমপক্ষে তিনবার উক্ত এ্যালজির কালচারকে নেড়ে দিতে হয়। পানির ১-২ গ্রাম পরিমান ইউরিয়া ছিটালে ফলন ভাল হয়।
  • এভাবে উৎপাদনের ১২-১৫ দিনের মধ্যে এ্যালজির পানি গরুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়। এসময় এ্যালজি পানির রং গাঢ় সবুজ বণের্র হয়। এ্যালজির পানিকে পুকুর থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি গরুকে খাওয়ানো যায়।
  • একটি পুকুরের এ্যালজির পানি খা্ওয়ানো পর উক্ত পুকুরে আগের নিয়ম অনুযায়ী পরিমান মত পানিম সার এবং মাসকালাই ভূষি ভেজানো পনি দিয়ে নতুন করে এ্যালজি কালচার শুরু করা যায়, এ সময় নতুন করে এ্যালজি বীজ দিতে হয় না।
  • যখন এ্যালজি পুকুরে পানির রং স্বাভাবিক গাঢ় সবুজ রং থেকে বাদামী রং হয়ে যায়। বুঝতে হবে যে উক্ত কালচারটি কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে নতুন করে কালচার শুর করতে হব। এ কারণে এ্যালজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত সাধানতা করা উচিত।
সাবধানতাঃ
  • এ্যালজির পুকুরটি সরাসরি সূর্যালোকের নিচে না করে ছায়যুক্ত স্থানে করা উচিত। কারণ অতি আলোকে এ্যালজি কোষের মৃত্যু হয়।
  • কখনোই মাসকালই ভূষি ভেজানো পানি বর্ণিত পরিমানের চেয়ে বেশী দেয়া উচিত নয়, এতেও এ্যালজি কোষ মারা যেতে পারে।
  • এ্যালজি পুকুরের পানিকে না দিলে কোষের উপর কোষ থিতিয়ে কালচারটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • যদি কখনো এ্যালজি পুকুরের পানি গাঢ় সবুজ রংয়ের পরিবর্তে হালকা নীল রং ধারনকরে তখন তা ফেলে দিয়ে নতুন করে কালচার শুরু করতে হবে। কারণ নীল রঙের এ্যালজি ভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত এ্যালজি।
ফলন ও খরচঃ উপরোক্ত নিয়মে এ্যালজি উৎপাদন করলে প্রতি ১০ বর্গ মিটার পুকুর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লিটার এ্যালজি পানি বা ১৫০ গ্রাম শুষ্ক এ্যালজি উৎপাদন সম্ভব। উৎপাদন সামগ্রীর দাম অনুসারে প্রতি লিটার এ্যালজির উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ পাচ পয়সা খরচ পড়তে পারে। সবচেয়ে বড় সুবিধা এই যে, এ্যালজি উৎপাদন করতে কোন আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ীতে যে কোন ছায়াযুক্ত সমতল স্থানে এমনকি ঘরের ভিতরে বা দালানের ছাদেও করা যায়।
গরুকে এ্যালজি খাওয়ানোঃ
  • এ্যালজির পানি সব ধরনের, সব বয়সের অর্থাৎ বাছুর, বাড়ন্ত গরু, দুধের বা গর্ভবতী গাভী, হালের বলদ সবাইকেই এ্যালজি খাওয়ানোর যায়।
  • এ্যালজি খাওয়ানোর কোন বাঁধা নিয়ম নেই। এটাকে সাধারণ পানির পরিবর্তে সরাসরি খাওয়ানো যায়। এক্ষেত্রে গরুকে আলাদার করে পানি খাওয়ানো প্রয়োজন নেই।
  • দানাদার  খাদ্য অথবা খড়ের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়।
  • এ্যালজির পানিকে গরম করে খাওয়ানো উচিত নয়, এতে এ্যালজির খাদ্যমান নষ্ট হতে পারে।
  • যদি বেশী গরু থাকে, (যেমন ধরুন ৫টি গরু আছে) । এক্ষেত্রে অন্ততঃ পূর্ব বর্ণিত আকারের ৫টি কৃত্রিম পুকুরে এ্যালজি চাষ করা উচিত যাতে একটির এ্যালজি পানি শেষ হতে পরবর্তীটি খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়।
উপসংহারঃ এ্যালজি পানি ব্যবহার করে কম খরচে গরুর মাংস এবং দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়াও এ্যালজি বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাই্ড শোষন করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। তাই এ্যালজি উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশের ভরসাম্য রক্ষাও সম্ভব।
তথ্য:
তথ্য আপা প্রকল্প
আরও পড়ুন  প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদে ভাগ্য বদল

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
একই রকম পোস্ট