শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩২ অপরাহ্ন

ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ

  • লাস্ট আপডেট : শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭
  • ২৬৭ টাইম ভিউ
ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ
ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ

আজকে আমরা আলোচনা করবো ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি নিয়ে যাতে বাগান প্রেমী বন্ধুরা ছাদে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি শিখতে পারে। সবাই পড়ে শেয়ার করে দিবেন অন্য বন্ধুদের পড়ার জন্য।

বাংলাদেশে এখন ছাদ কৃষি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, অনেক ফলই বাগানীরা ছাদে চাষ করছে। আর আজকে আলোচনা করা হবে ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি নিয়ে।

ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো । পাতাবিহীন এই গাছটি দেখে অনেকেই একে ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের নাম শুনলে কেমন জানি অদ্ভুত মনে হয় ।

এ আবার কেমন ফল । এটা কি আদৌ খাবার উপযোগী কিনা মনে সন্দেহ জাগে । ফলের ভিতরের অংশ লাল ও সাদা হয়। ভিতরে নরম শাঁস এবং ফলের মিষ্ট গন্ধ আছে । শাঁসের মধ্যে ছোট ছোট নরম বীজ থাকে। ড্রাগন গাছে ফুল ফোটার ৩৫ – ৪০ দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযুক্ত হয় ।

ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতিঃ

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে-দোঁআশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম। ছাদে ড্রাগন ফলের কাটিং লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি কালার ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে । ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে । যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে । টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । টব বা ড্রামের গাছটিকে ছাদের এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে সবসময় রোদ থাকে ।

আরও পড়ুন  ফলের বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি ও বাগান ব্যবস্থাপনা

এবার ২ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ৪০-৫০ গ্রাম টি,এস,পি সার এবং ৪০-৫০ গ্রাম পটাশ সার,একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টবে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন । অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন একইভাবে রেখে দিতে হবে । মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন একটি কাটিং এর চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে ।

গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে । যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে । ড্রাগন ক্যাক্টাস জাতীয় গাছ তাই পানি খুব কম দিতে হবে । লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি কখনই জমে না থাকে ।

ড্রাগন ফল কোন ঋতুতে চাষ করা ভালো?

হ্যাঁ বন্ধুরা, ড্রাগনফল একটা অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এটা চাষ করার জন্য উপযুক্ত ঋতু বেছে নেওয়া খুবই জরুরী।

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ড্রাগনফল চাষের জন্য শীতকাল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সময়টা ড্রাগনফলের বাগান গড়ার খুব ভালো। এই ঠান্ডা আবহাওয়াতে ফলগুলো সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে এবং মিষ্টিও হবে অনেক বেশি।

গরমকালে অর্থাৎ এপ্রিল-জুন মাসে ড্রাগনফল গাছে কিছুটা অঙ্কুর হলেও ফলগুলো ভালোভাবে গড়ে উঠতে পারবে না। গরমে মিষ্টিও কম থাকবে। তাই ড্রাগনফলের স্বাদ ও গুণ বজায় রাখতে হলে শীতকালই সবচেয়ে ভালো সময়।

বর্ষাকালে অধিক আর্দ্রতা এবং বৃষ্টির কারণে ড্রাগনফল গাছে রোগবালাই দেখা দিতে পারে। তাই বর্ষাকালে এটা চাষ করা বিদ্ধ নয়।

সুতরাং যদি আপনিও ড্রাগনফল চাষ করতে চান, তাহলে আগামী শীতকালই সেরা সময় বলে মনে হচ্ছে। শীতের এই আবহাওয়ায় সতেজ ও মিষ্টি ড্রাগনফলের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন  কাঁকরোল চাষ পদ্ধতি

ছাদের ড্রাগন ফলের চাষ জন্য কোন টব ভাল হবে?

ছাদে ড্রাগনফল চাষ করতে ছানে? খুব ভালো চিন্তা! ড্রাগনফল তো জানোই কী মজাদার এবং পুষ্টিকর একটা ফল।

তবে ছাদে চাষের জন্য টবের ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি প্লাস্টিকের বড় বাক্স বা ড্রামগুলোই সবচেয়ে উপযোগী হবে। প্রথমত, এগুলো সহজেই পাওয়া যায়। আর তাছাড়া এগুলোর খরচও বেশি পড়বে না। প্লাস্টিকের পাত্রগুলো টেকসই হওয়ায় বছরের পর বছর ব্যবহার করা যাবে।

oppo_0

তবে এদের নিচে কিছু ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে, যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে। ছাদে থাকার কারণে পানি জমে না থাকলে গাছগুলো পচে যাবে না।

অন্যদিকে লোহার বা গালভেনাইজড ড্রামগুলোও অনেক মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী। তবে এগুলোর দাম একটু বেশি হতে পারে। এগুলোকেও পানি নিকাশের জন্য নিচে ছিদ্র রাখতে হবে।

কাঠের বিড বা বাক্সগুলোও খুব খারাপ নয়। কিন্তু কাঠ পচে যাওয়ার সমস্যা থাকে। তাই এগুলোকে লেপ দিয়ে বা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে রাখা উচিত। এতে বেশি দিন টিকবে।

টারড পট বা প্লান্টারগুলোও ভালো বিকল্প। এগুলোর নিচে ছিদ্র থাকলে পানি নিকাশের কোন সমস্যাই থাকবে না।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, যেকোনো পাত্রই বেছে নাও, নিচে অবশ্যই ছিদ্র রাখতে হবে। এছাড়াও উপযুক্ত মাটি ও সার ব্যবহার করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে যদি ভালোভাবে যত্ন নিতে পার তাহলে ছাদেও তোমার ড্রাগনফলের বাগান গড়ে উঠবে নিশ্চয়ই! চল সবাই মিলে শুরু করা যাক!

ছাদের ড্রাগন ফলের চাষ জন্য কোন মাটি ভাল হবে?

আমরা জানি ড্রাগনফল চাষের জন্য মাটির প্রসঙ্গটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছাদে চাষ করতে হবে বলে মাটির বিষয়টা আরও বেশি খেয়াল রাখতে হবে। একটু না খেয়াল করলেই গাছগুলো মারা যেতে পারে।

আমার মতে, ড্রাগনফল চাষের জন্য দোঁآশ মাটিই সবচেয়ে উপযুক্ত। এই দোঁআশ মাটিতে পরিপূর্ণভাবে জৈব পদার্থ থাকে যা গাছের বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়াও দোঁআশ মাটিতে ভালোভাবে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা থাকে। তাই গাছকে প্রায়শই পানি দিতে হবে না।

আরও পড়ুন  চীনার উৎপাদন প্রযুক্তি

যদি দোঁআশ মাটি না পাও, তাহলে ভালো মানের বাজার থেকে সারি মাটি কিনতে পারো। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু পরিমাণ ভালো মানের জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে। এটা মাটিকে উর্বর করবে আর গাছগুলোরও ভালো বৃদ্ধি হবে।

কিছু লোক বালি মিশ্রিত মাটিও ব্যবহার করে থাকে। তবে একা বালি মাটি ড্রাগনফলের জন্য খুব ভালো নয়। কারণ এতে জৈব পদার্থ কম থাকে। তাই বালি মাটি ব্যবহার করলে অবশ্যই দোঁআশ মাটি বা জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে দোঁআশ মাটি বা ভালো মানের বাজারের সারি মাটিই ড্রাগনফলের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ছাদে চাষের জন্য এগুলোই নির্ভরযোগ্য। মাটি ঠিক থাকলে গাছগুলোও ভালোভাবে বেড়ে উঠবে আর তোমরা পাবে মজাদার মিষ্টি ড্রাগনফল!

অন্যান্য পরিচর্যা

ড্রাগনের গাছের কান্ড লতানো প্রকৃতির । তাই চারা লাগানোর পর গাছ কিছুটা বড় হয়ে গেলে খুঁটি বা পিলার পুঁতে দিয়ে ড্রাগন ফল গাছ বেঁধে দিতে হবে । এছাড়া হাতে পরাগয়ন করতে হয় সেই ক্ষেত্রে রাতের বেলা পরাগায়ন করতে হয়।

ফলের ব্যবহারঃ

ড্রাগন ফল ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে খেলে ভালো লাগে। ফলকে ২/৪ টুকরা করে চামচ দিয়ে কুরে এর শাঁস খাওয়া যায় । এ ছাড়াও খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া যায়।

এই আর্টিকেল টি পড়ে যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করে দিন অন্য কৃষি উদ্যোক্তা বন্ধুদের মাঝে যাতে তারাও শিখতে পারে ছাদে টবে ড্রাগন ফলের চাষ।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
একই রকম পোস্ট