আজ বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন
যদিও ইট-পাথরের শহরে এখনো পুরোপুরি শীত নামেনি, তবুও নগরের সবজি বাজারগুলো জানান দিতে শুরু করেেছ শীতের বারতা। শীতকালীন বাহারি রঙের রকমারি সব শাক আর সবজির দেখা মিলছে নগরীর কাঁচা বাজারগুলোতে। যদিও পসরা সাজানো এই সবজিগুলো উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ-প্রক্রিয়ায় কতটা রাসায়নিকমুক্ত ও স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ এ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। তাই নগরবাসী যাতে নিজেদের বাড়ির ছাদেই বিষমুক্ত সবজির চাষ করতে পারে সে বিষয়েই রইল কিছু পরামর্শ।
হিমেল হাওয়া ও শিশিরে যেসব সবজি ভালো হয় সবই চাষ করা হয় শীত-মৌসুমে। আমাদের দেশে সবজি চাষরে জন্য শীতকাল ধরা হয় কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) থেকে ফাল্গুন (মার্চ) পর্যন্ত। এ সময় গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি, শালগম, শিম, মূলা, টমেটো, বেগুন, লাউ, পালংশাক ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। তবে শীতকালীন সবজি চাষের জন্য জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি যে জাতই নির্বাচন করা হোক-না কেন, বীজ বা চারা সব সময় যেকোনো বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে হবে। শীতের সবজি চাষে অনেকের মধ্যে ইদানিং উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বেশি আগাম চাষে গরম ও বৃষ্টিজনিত ঝুঁকি থাকে। এতে অনেক সময় ফুলকপির ফুল আসে না, বাঁধাকপির মাথা বাঁধে না। শিমগাছের প্রচুর ফুল আসে কিন্তু ফল হয় না। সেজন্য খুব আগে অর্থাৎ ভরা বর্ষায় চাষ না করে শ্রাবণের শেষদিকে চাষ শুরু করা যায়। এতে ভাদ্র-আশ্বিনে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে আশ্বিনের শেষে বা কার্তিক থেকে সবজি তোলা শুরু করা যায়।
শাক-সবজির বীজতলার জন্য মাটি হতে হবে ঝুরঝুরে, হালকা এবং পানি ধরে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন। মাটি-চালনি দিয়ে চেলে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। দুই ভাগ বেলে দোআঁশ মাটির সঙ্গে দুইভাগ জৈবসার মিলিয়ে নিয়ে বীজতলার মাটি তৈরি করে নিতে হয়। মাটি যদি এঁটেল হয় তাহলে বীজরে অঙ্কুরোদগমের সুবিধার জন্য এক ভাগ বালি মিশিয়ে হালকা করে নিতে হবে। মাটিকে শোধন করে জীবাণুমুক্ত করে নিয়ে চারাকে রোগবালাই থেকে রক্ষা করা সহজ। সাধারণত এক লিটার ফরমালডিহাইড শতকরা ৪০ ভাগ ৪০ লিটার পানিতে মিশিয়ে এই দ্রবণের ২৫ লিটার প্রতি ঘনমিটার মাটিতে কয়েক কিস্তিতে ভিজিয়ে দিতে হয়। এরপর দু’দিন চটের কাপড় দিয়ে মাটি ঢেকে রেখে পরে চট উঠিয়ে দিলে মাটি জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে। আগের নিয়মে মাটি হালকা ঝুরঝুরে করে টবের উপরের ভাগ সমতল করতে হবে। খুব হালকাভাবে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে টবের ভেতর। এরপর জৈবসার দিয়ে বীজগুলোকে ঢেকে দিতে হবে। পানি দিতে হবে নিয়মিত ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত ঝাঁজরি দিয়ে। লক্ষ্য রাখতে হবে, পানির ঝাপটায় যাতে বীজের উপরে জৈবসারের আবরণ সরে না যায়। যেসব বীজ আকারে ছোট সেগুলো ক্ষেতের উপর দিয়ে পানি দিলে বীজগুলো পানির ধাক্কায় এক স্থানে অঙ্কুরোদগমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই সব টবের উপর দিয়ে পানি না দিয়ে তলা দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করা উচিত।
অনেক সময় বিভিন্ন প্রকার পাখি, পিঁপড়া, মাকড়সা ইত্যাদি শাক-সবজির চারা নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই হেপ্টোক্লোর-৪০ পরিমাণমতো দিয়ে যাবতীয় পিঁপড়া ও মাকড়সার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা যায়। তবে পাখির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে হলে টবের ওপর তার বা নাইলনের জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় টবের মাটিতে বীজ বপনের আগে বিভিন্ন প্রকার আগাছা জন্মাতে পারে। আগাছাগুলো নিড়ানি দিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলে দিতে হবে। টবে চারা জন্মালে চারার গোড়ায় যেন আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এমন জায়গায় শাক-সবজির টবগুলো রাখা দরকার। তবে অতিরিক্ত ঝড়-বৃষ্টি-রোদ-তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য সাময়িকভাবে টব নিরাপদ স্থানে সরানো যেতে পারে। সবজি সময়মতো সংগ্রহ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সবজি বেশিদিন গাছে রেখে বেশি পোক্ত না করে নরম থাকতেই তুলে খাওয়া ভালো। এতে একদিকে যেমন নরম খাওয়া যায় অন্যদিকে গাছে আরও বেশি সবজি আসে। সবজি গাছ থেকে ছিঁড়ে সংগ্রহ করা যাবে না। আস্তে করে কেটে সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে সবজি-গাছের কোনো ক্ষতি হবে না।