জাম্বো ঘাস চাষ পদ্ধতি

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

জাম্বো ঘাস চাষ পদ্ধতি

আমাদের কাছে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে জাম্বো ঘাস চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত নিয়ে আর্টিকেল লিখতে। তাই আজকে আমরা আলোচনা করেছি জাম্বো ঘাস চাষ পদ্ধতি নিয়ে।

দুগ্ধ খামারীদের মধ্যে জাম্বো ঘাসের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাঙ্গুড়া উপজেলা পাবনা জেলার একটি ছোট উপজেলা যা প্রায় প্রতি বছর বন্যা কবলিত হয়ে থাকে। ফলে কৃষকদের গাভী পালনে খুব সমস্যা দেখা দেয়। এতদ্বসত্বেও তারা অন্ততপক্ষে গোয়াল ঘরের স্থান বন্যামুক্ত রাখার জন্য মাটি ফেলে উঁচু করেছে। বন্যার পানি সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে এবং অক্টোবর থেকে আবার নামতে শুরু করে। ফলে, কৃষকরা তাদের জমিতে মাস কলাই, খেসারী ইত্যাদি ছিটিয়ে বপন করে যা গরুকে খাওনোই ছিল তাদের ঐতিহ্য।

কিন্তু গত ২০০৭ সালে কৃষকরা উচ্চ মূল্যে যে মাস কলাই ও খেসারী বীজ ক্রয় করে বপন করেছিল তা পর পর দু’বার বন্যার পানিতে ডুবে তাদের মারাত্নক আর্থিক ক্ষতি হয়। কৃষকরা এতে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং গাভী পালনের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠতে থাকে। এই অবস্থায় তাদেরকে উচ্চ ফলনশীল ঘাস চাষের প্রতি আহবান জানানো হয়। এরই ফলশ্রুতিতে এখানে উচ্চফলনশীল জাম্বো ঘাস চাষ শুরু হয় ব্যাপকভাবে। কৃষক ভাইয়েরা নতুন ঘাস জাম্বো চাষ করে আর্থিকভাবে যথেষ্ট লাভবান হয়েছেন। জাম্বো ঘাস একটি স্থায়ী সবুজ ঘাস যা যে কোনো আবহাওয়াতে জন্মাতে পারে। তবে যেখানে অল্প বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ভাল হয়।

জাম্বো ঘাস চাষ প্রক্রিয়া:

মাটি:
বেলে মাটি ব্যতীত সব ধরনের মাটিতেই জাম্বো ঘাস চাষ করা যায়। তবে এটেল ও দোআঁশ মাটিতে ফলন বেশি হয়। মাটির PH ৬-৮ এর মধ্যে হলে ভাল হয়।

বপনের সময়:
সারা বৎসর এই ঘাস চাষ করা যায়। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে চাষ করলে বন্যার পানি আসার পূর্ব পর্যন্ত প্রায় চার থেকে পাঁচ বার কাটা যায়।

আরও পড়ুন   দেশেই ফলবে বেঁটে প্রজাতির ‘ম্যাজিক নারিকেল’

জমি তৈরি:
২-৩ বার মাটি চাষ করে ঘাস রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

বপন পদ্ধতি ও বীজের পরিমাণ:
এই ঘাসের বীজ ১ ফুট পরপর লাইন করে ৬ ইঞ্চি পরপর ২টি বীজ প্রতি গর্তে বপন করা যায়। এছাড়া ছিটিয়েও বপন করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে লাইন করে বপন করলে ৩-৪ কেজি বীজ লাগে। এছাড়া ছিটিয়ে বোনা হলে ৫-৬ কেজি বীজের দরকার হয়।

সার প্রয়োগ:
বিঘা প্রতি গোবর সার ১৫০০-২০০০ কেজি, ডিএপি সার ১৫-২০ কেজি ও ইউরিয়া সার ৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি মাসে ঘাস কাটার পর ৫ কেজি ইউরিয়া সার ছিটিয়ে সেচ দিলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

কাটিং:
বপন করার ৪৫/৫০ দিন পর প্রথম বার কাটা যায় এবং পরে প্রতি মাসে ১ বার করে কাটা যায়। ১ বিঘা জমিতে উৎপাদন প্রায় ৮০০০-১০০০০ কেজি হয়ে থাকে যার মূল্য প্রায় ৫০০০-৬০০০ হাজার টাকা।

ঘাসের পরিচর্চা:
এই ঘাসের জন্য কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতিবার কাটার ৭ দিন পর সেচ দিতে হয় এবং ইউরিয়া সার দিলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

ঘাসের গুণাগুণ:
জাম্বো ঘাস গরুর খাদ্য হিসাবে অতি উত্তম। এ ঘাস ৯-১৮% আমিষ সমৃদ্ধ এবং এর পরিপাচ্যতা (digestibility) ৫৬-৬২%। প্রতি ৩০ দিন অন্তর ২-৩ ফুট হলে কাটা যায়। গরুকে ছোট করে কেটে খাওয়ানো উচিত। এই ঘাসকে সাইলেজ করেও সংরক্ষণ করা যায়। এই ঘাস গরুকে খাওয়ানো হলে গরুর দুধ বৃদ্ধি পায় এবং দুধের চর্বির পরিমাণ (fat %) বেশি হয়। ফলে কৃষকরা লাভবান হন।

খেসারীর সাথে জাম্বো ঘাস চাষ:
বন্যার পানি যখন নেমে যায় তখন জমিতে পলিমাটি পড়ে। কৃষকরা সাধারণত সেখানে খেসারী ছিটিয়ে বপন করেন। সেই বিনা চাষে খেসারীর সাথে প্রতি বিঘা জমিতে দুই-আড়াই কেজি জাম্বো ঘাসের বীজ ছিটিয়ে বপন করলে খেসারী ও জাম্বো ঘাসের উৎপাদন ভাল হয়। পরীক্ষামূলকভাবে দেখা গেছে, জাম্বো ঘাসকে অবলম্বন করে লতিয়ে লতিয়ে খেসারী গাছ বড় হতে থাকে। খেসারী এবং জাম্বো ঘাস ৪৫/৫০ দিনে কাটা যায়।

আরও পড়ুন   সঠিক নিয়মে পেঁপে চাষ পদ্ধতি

খেসারী লিগুউমিনাস জাতীয় হওয়ায় এদের শিকড়ে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন বিদ্যমান থাকে। ফলে, কম পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করে বেশি পরিমাণ জাম্বো ঘাস উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য কৃষকদের উচিত বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় সাথে সাথে খেসারী ও জাম্বো ঘাসের বীজ বপন করা। এতে গো-খাদ্যের অভাব দূর করা যায়। কারণ বন্যার সময় ঘাস নষ্ট হয়ে যায় এবং গবাদিপশু ঠিক মতো খাদ্য পায় না। এছাড়া পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন প্রতিকূলতার ফলে এদের স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে যায়। এ কারণে এদের দুধ উৎপাদনও হ্রাস পায়। তাই খেসারী ও জাম্বো ঘাস এক সাথে চাষ করলে কৃষকের গো-সম্পদ রক্ষা করা যাবে।

ভুট্টার সাথে জাম্বোর চাষ:
যে সমস্ত জমিতে আমন ধান কাটা হয় সে সমস্ত জমিতে কৃষকরা ভুট্টার সাথে জাম্বো ঘাসের চাষ করতে পারেন। জমি তৈরি করে ২-৩ চাষ দিয়ে প্রয়োজনীয় গোবর ও ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হবে। জাম্বো ঘাসের বীজ বিঘা প্রতি ৫/৬ কেজি ও ভুট্টার বীজ ৩/৪ কেজি ছিটিয়ে রোপণ করলে ৪৫/৫০ দিনের মধ্যে প্রথম কাটা যায়। ভুট্টা ও জাম্বো ঘাসের উৎপাদন বিঘা প্রতি ২০০ কেজি করা সম্ভব। যেহেতু জাম্বো ঘাসের প্রথমে বীজ থেকে একটি কুঁড়ি বের হয় সেজন্য প্রথম কাটায় উৎপাদন কম হয়। কিন্তু জাম্বো ও ভুট্টা ঘাসের মিশ্র চাষে প্রথম।

 

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now