পোকা আক্রমণের লক্ষণঃ
‘জায়ান্ট মিলিবাগ’ ফল ও ফসলের চরম ক্ষতি করে। পূর্ণাঙ্গ পোকা পাতা ও ডালের রস চুষে নেয়। পোকার আক্রমনে পাতা, ফল ও ডালে সাদা সাদা তুলার মত দেখা যায়। অনেক সময় পিপড়া দেখা যায়। এর আক্রমণে অনেক সময় পাতা ঝরে যায় এবং ডাল মরে যায়।
তাছাড়া এই পোকা হানিডিউ (কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ তরল) নিঃসরণ করে যা পাতা ও ফলের উপর ছত্রাক জন্মাতে সাহায্য করে। পোকাটি দেহের সংস্পর্শে আসলে চুলকানি ও এলার্জি হয়।
এ পোকার জীবনচক্র একটু ভিন্ন ধরনের। এপ্রিল থেকে জুন মাসে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা গাছের গোড়ার নিকটবর্তী মাটির প্রায় ৫-১৫ সে.মি. গভীরে গুচ্ছভাবে ডিম পাড়ে। নভেম্বর মাসের শেষ হতে মার্চ মাস পর্যন্ত ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এই ক্ষুদ্রাকৃতির নিম্ফ (বাচ্চা) হেঁটে হেঁটে গাছের উপর উঠে পড়ে এবং গাছের ডালপালার অগ্রভাগের নরম অংশ হতে রস শোষণ করে খেয়ে বড় হওয়ার পর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়।
‘জায়ান্ট মিলিবাগ’ পোকার আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়:
মাটি শোধন:
যেহেতু পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটিতে ডিম পাড়ে তাই নভেম্বর মাসের শুরুতে মাটি (গাছ হতে ২ মিটার পর্যন্ত) কুপিয়ে তাতে ৫ টাকা দামের “ঝিনুক চুন” ৫ লিটার পানিতে ১ চা চামচ ভাল ভাবে মিশিয়ে মাটিতে গাছের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু প্রয়োগ করতে হবে। এতে মাটিতে বিদ্যমান ডিম ও সদ্য প্রস্ফুটিত বাচ্চা চুনের পানির সংস্পর্শে মারা যাবে।
কীটনাশক প্রয়োগ:
তিন দিন পর গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। বাড়িতে তৈরি কীটনাশক গাছ বান্ধব। বাড়িতে আপনি একটি আস্ত ছোট রসুন, একটি ছোট পেঁয়াজ, ১ চা চামচ আস্ত গোল মরিচ ভালো করে বেটে পেস্ট করে মিশ্রণটি কে পুনরায় ব্লেন্ডার মেশিনে ভাল করে ব্লেন্ড করে, এই মিশ্রনটি ১ লিটার পানিতে গুলিয়ে তার সাথে ১ টেবিল চামচ “ট্রিকস”লিকুইড ডিসওয়াশ যোগ করে সকালে বোতল ভরে রেখে দিতে হবে। শেষ বিকেলে বোতল জাত মিশ্রনটি চা এর পরিস্কার ছাকনি দিয়ে ছেকে প্রাপ্ত তরলটুকু গাছের ডালে, পাতার নিচে উপরে স্প্রে করতে হবে।
সতর্কতা…মিশ্রনটি যেন মাটিতে না পড়ে সে জন্য মাটিতে গাছের গোড়ায় ভাল করে খবরের কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে। তা না হলে মিশ্রনটি সরাসরি মাটিতে পরলে মাটির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে।
**‘জায়ান্ট মিলিবাগ’ পোকা মারা গেলে আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে তা পুড়িয়ে ফেলুন এবং মাটিতে গর্ত করে ছাইগুলো মাটি চাপা দিন। যাতে পোকার আক্রমণ সেই স্থানে পুণরায় হওয়ার কোন সম্ভাবনা না থাকে।
** গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১৫-২০ সে.মি. উপরে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়ে দিতে হবে যাতে মিলিবাগ গাছে উঠতে না পারে।
আরও তথ্যের জন্য আপনার নিকটস্থ উপসহকারী কৃষি অফিসার অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন।