আজ শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন
আমরা আজকে আলোচনা করবো টবে আলু চাষ পদ্ধতি নিয়ে যাতে যে কেউ ছাদে বা বারান্দায় খুব সহজেই আলু চাষ করতে পারেন।
টবে আলু চাষ পদ্ধতি অন্যান্য সবজি চাষ পদ্ধতি থেকে অনেকটাই ভিন্ন। আলু চাষের জন্য বড় আকৃতির টব অথবা কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়। টবে আলু চাষ করতে অবশ্যই টবটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে প্রচুর পরিমাণ আলো-বাতাস পায়। অন্ততপক্ষে দিনে 3-4 ঘন্টা সূর্যের আলো পড়ে। এমন জায়গায় আপনাকে বাছাই করতে হবে।
আমরা জানি শহরে মাটির দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে অপর দিকে শহরে মাটি তেমন পাওয়া যায় না যাও পাওয়া যায় তা স্বাস্থ্যসম্মত না। এখন বাড়ি বা বাগানে যথেষ্ট জমি না থাকলেও আমরা সবজি চাষ করতে পারি। সেজন্য টবে আলু চাষ খুবই কার্যকরী একটি উপায়।
আলু তো জানেনই একটা অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং ফাইবার। টবে আলু চাষ করলে আপনি সহজেই নিজের গৃহস্থালীতে পরিপূর্ণ আলু পাবেন। আর এটা নিঃসন্দেহে অনেক খরচ বাঁচাবে।
চলুন আজই থেকে কিছু টব এনে তাতে মাটি ভরে আলু গাছ লাগিয়ে দেখি। একটু যত্ন নিলেই ভাল ফলন পাওয়া যাবে। বেশি মেহনত না করেই আপনি নিজের হাতের তরি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর আলু পাবেন। সবাইকে এটা করার জন্য আমি উৎসাহিত করব।
টবে যে পরিমান আলু উৎপাদন হয় তা একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট তাই আপনি ছাদে টবে আলু চাষ করলে আপনার খরচ কমে যাবে।
হ্যাঁ বন্ধুরা, ছাদে আলু চাষের জন্য পাত্র বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন একসাথে দেখে নেই কোন ধরণের পাত্র বেশি উপযোগী হবে।
প্রথমেই বলি প্লাস্টিকের বড় বাক্স বা ড্রামগুলো। এগুলো সহজেই পাওয়া যায় আর টেকসইও বটে। আমরা এদের নিচে ছোটখাট কিছু ছিদ্র করে দিতে পারি যাতে বেশি পানি বের হয়ে যেতে পারে। এই বাক্সগুলোতে মোটামুটি ভালোই আলু হবে।
আরেকটা ভালো বিকল্প হলো লোহার বা গালভেনাইজড ড্রাম। এগুলো অনেক শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী। তবে দাম হয়তো একটু বেশি লাগবে। এদেরও নিচে ছিদ্র রাখলে পানি সহজে বের হয়ে যাবে।
কাঠের বিড বা বাক্সগুলোও ব্যবহার করা যায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে কারণ সময়ের সাথে সাথে এগুলো পচে যেতে পারে। তাই একটু লেপ দিয়ে বা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখলে ভালো হয়।
আর একটা সুবিধাজনক বিকল্প হলো টারড পট বা প্লান্টার। এগুলোর নিচে ছিদ্র থাকলে পানি নিকাশের সমস্যা হবে না।
তবে সবকিছুরই এক সাধারণ নিয়ম, সেটা হলো পাত্রগুলোর নিচে যথেষ্ট ছিদ্র থাকা। তাহলেই অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাবে। আর সেই সাথে উপযুক্ত মাটি ও সার ব্যবহার করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে যদি যত্ন নেওয়া যায় তাহলে ছাদেও আলু চাষ সফল হবে নিশ্চয়ই। চলো তাহলে শুরু করা যাক!
দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য সবচাইতে ভালো। এছাড়া টবে আলু চাষ করতে চাইলে মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ অধিক থাকা বাঞ্ছনীয়। টবের কাজকে বাইরে থেকে সার প্রয়োগ করা তুলনামূলক কঠিন। এই কারণে মাটি তৈরি সময় মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে। টবে আলু চাষ পদ্ধতি তে মাটি তৈরির সময় 40 ভাগ পরিমাণ জৈব সার এবং 60 ভাগ পরিমাণ দোআঁশ মাটি সুন্দর ভাবে মিশিয়ে নিন। মাটি মেশানো হয়ে গেলে টপ টি কে এই অবস্থায় অন্তত 7 থেকে 8 দিন রেখে দিন।
টপ্পা কনটেইনারের দুই তৃতিয়াংশ পরিমাণ মাটি নিন। এরপর উপরের অংশ সুন্দরভাবে সমান করে নিন । এবার অঙ্কুর বের হওয়া আলু কেটে এগুলোকে বীজ হিসেবে লাগিয়ে দিন। আলু কাটার সময় পুরনো আলো অংকুর এর সাথে বেশ কিছু আলুর অংশ রেখে দিন। এরপর অংকুর গুলোর উপরে তিন ইঞ্চি পরিমাণ মাটি দিয়ে ঢেকে দিন।
টবে আলু চাষ পদ্ধতি তে আলু গাছের যত্ন ও পরিচর্যা করা খুবই জরুরি। প্রথমেই মাটির সাথে যথেষ্ট পরিমাণ জৈব সার মিশিয়ে নিলে পরবর্তীতে আর সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে নিয়মিত পানি দেয়া আলু চাষ এর জন্য অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে পানি দিতে হবে তবে কোনোভাবেই অতিরিক্ত পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না । টব বা প্লাস্টিকের কন্টেইনার ব্যবহার করলে অপ্রয়োজনে পানি বের করে দেয়ার জন্য কন্টেইনার বা টবের নিচে আগে থেকেই ছিদ্র করে নিন।
টবে আলু চাষ এর ক্ষেত্রে ফসল পরিপক্ক হতে আড়াই থেকে তিন মাস সময় লাগে। মনে রাখতে হবে আলু গাছে ফুল আসার পর আলু আসতে শুরু করে। এরপর আলু গাছ এর সবুজ বর্ণ হলুদ রং ধারণ করলে বুঝতে হবে আলো সংগ্রহের সময় হয়েছে। এ সময় আপনাকে আলু সংগ্রহ করতে হবে। আপনার কনটেইনার এর নিচে যদি খোলার মতো ব্যবস্থা রাখেন তবে পরিপক্ক আলুগুলো আগেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।