বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

দেশি মুরগিতে স্বাবলম্বী হাজারো নারী

  • লাস্ট আপডেট : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
  • ১৫৩ টাইম ভিউ
SAMSUNG CAMERA PICTURES
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

খামারে লালিত-পালিত ব্রয়লার, লেয়ার, পাকিস্তানি মুরগিতে এখন দেশের বাজারগুলো সয়লাব। এই মুরগি পালনে লাভ বেশি বলে প্রচলিত। ফলে দেশি মুরগি বাজার থেকে হারাতে বসেছে। সেই অবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিদেশি নয়, দেশি মুরগি পালন করে নিত্যদিনের অভাবকে বিদায় জানিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন শেরপুরের নকলার হাজারো আত্মপ্রত্যয়ী গ্রামীণ নারী।

স্বল্প পুঁজি ও নামমাত্র শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় বিভিন্ন কৃষি সংগঠনের সদস্যসহ বেকার যুবক-যুবতী ও শিক্ষার্থীরাও ওই নারীদের দেখাদেখি দেশি মুরগি পালন করছেন। এতে করে বাড়ছে কর্মসংস্থান ও দেশীয় পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভারের ‘দেশি মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উন্নত জাতের দেশি মুরগি উৎপাদন অঞ্চল-১’ এর একটি এলাকা হলো উপজেলার নকলা ইউনিয়নের মধ্যনকলা গ্রাম। ওই গ্রামের ৫০ জন মহিলা উদ্যোক্তাকে সুফলভোগী হিসেবে নির্বাচন করে তাদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘মধ্যনকলা দেশি মুরগি পালন সমিতি’। তাদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট।

মুরগি পালন সমিতির সভাপতি রীনা বেগম বলেন, দুই বছর আগে তারা ৫০ জন মিলে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর নারী উদ্যোক্তাদের কাছে সরবরাহ করা উন্নত জাতের দেশীয় আটটি মুরগি ও একটি মোরগ বাচ্চা দিয়ে তাদের মুরগি পালন শুরু হয়। এখন হাজার হাজার আত্মপ্রত্যয়ী যুবক-যুবতী স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন।

মধ্যনকলা, নকলা, শিববাড়ী, বাড়ইকান্দি, ভূরদী, বানেশ্বরদী ও মোজারসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন করে সবাই বেকারত্ব ও দারিদ্র্যকে বিদায় জানিয়ে আজ অনেকেই স্বাবলম্বী বলে জানান রীনা বেগম।

মধ্যনকলার শিক্ষার্থী হালিমা ও লাভলী জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি দেশি মুরগি পালন আয়ের ভালো একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ তারা পড়াশোনার কাজে ব্যয় করতে পারছেন।

আরও পড়ুন  স্বপ্ল পুঁজির নার্সারি ব্যবসা করবেন কীভাবে

শিববাড়ি গ্রামের বৃদ্ধা কুলসুম ও সাহিদা বলেন, দেশি মুরগি পালন করতে আলাদা সময় ও খাদ্য সরবরাহ করতে হয় না তাদের।
দেশীয় পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালনে বাচ্চাগুলো ৩ থেকে ৪ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং ডিম দেওয়া শুরু করে। প্রতিটি মুরগি বছরে ২০০ থেকে ২৫০টি ডিম দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ওই ডিম ফোটানোর পর দুই মাস বয়সের একটি বাচ্চা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।

বিধবা নারী রোকেয়া, সাহিদা ও মনোয়ারাসহ আরো অনেকের ভাষ্য, এখন তারা প্রতি বছর বাচ্চা বিক্রি বাবদ দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।

আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগির চেয়ে অধিক লাভজনক বলে জানান ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদন কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা। তারা জানান, এ জাতের মুরগি ডিম বেশি দেয়, মাংস বেশি হয় এবং মাংস অন্য মুরগির চেয়ে সুস্বাদু। এসব বিবেচনায় নকলার প্রতিটি গ্রামে এখন দেশি মুরগি পালন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভারের দেশি মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের উপজেলা কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের তথ্যমতে, সারা দেশে ৬০ থেকে ৭০টি উপজেলায় এ পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বর্তমানে নকলা উপজেলা মডেলে পরিণত হয়েছে।

মেহেদী হাসান বলেন, দেশি মুরগি পালনকারীদের আগ্রহ ও সফলতা দেখে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য একটি ইনকিউবেটর দেওয়া হয়েছে। এখন তারা আরো লাভবান হবেন বলে মনে করেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

এ ছাড়া ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদন কল্যাণ সংস্থা, অগ্নিবীণা ক্ষুদ্র কৃষক আইপিএম ক্লাবের সব সদস্য উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন করে সফলতা পেতে শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।

দেশি মুরগি পালনের সুবিধার বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশি মুরগি প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করে বলে সংক্রমণ ও কোনো পরজীবী সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। ফলে খুব বেশি ওষুধ বা ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয় না। শুধু বাচ্চার ভ্যাকসিন করলেই চলে।

আরও পড়ুন  বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সাফল্য

মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, অল্প পুঁজি ও স্বল্প শ্রমে যে কেউ ঘরোয়া পরিবেশে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। বেকারসহ গ্রামীণ বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষকে দেশি মুরগি পালন করতে পরামর্শ ও সেবা দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ অফিস।

শেরপুর প্রতিনিধি.

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
একই রকম পোস্ট