নারিকেল গাছের রোগ ও প্রতিকার
আজকের কৃষি আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করবে নারিকেল গাছের রোগ ও প্রতিকার নিয়ে, সবাই পড়ে শেয়ার করে দিন অন্য নারিকেল চাষী বন্ধুদের মাঝে।
নারিকেল আমাদের দেশে একটি অর্থকারী ফসল। নারিকেল চাষ করে বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। তবে নারিকেল চাষ করার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নারিকেলের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হয়। আসুন জেনে নেই নারিকেলের কিছু রোগবালাই ও তাঁর প্রতিকার সম্পর্কে।
নারিকেল গাছের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও বর্ণনা
১। মাইজ মরা (Bud rot) রোগঃ
ক) Phytophthora palmivora নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় গাছের মাইজ অথবা মাইজের চারিদিকের অংশ অর্থাৎ গাছের পুরোভাগের পত্রগুচ্ছের কাণ্ড মধ্যে গুপ্ত অবস্থায় থাকে।
খ) সাধারণত মাঝের পাতাগুলি কোমল থাকে বলে অতি সহজে তা ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই রোগের আক্রমনের ফলে রোগাক্রান্ত পাতা প্রথমে বিবর্ণ হয়।
গ) ধীরে ধীরে তা শুকিয়ে যায় এবং গাছের অগ্রভাগ মাটিতে পড়ে যায়। Phytophthora palmivora নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে।
২। পানি ঝরা (Bleeding) রোগঃ
ক) এই রোগে আক্রমণের ফলে গাছের কাণ্ডের ক্ষতস্থান দ্বারা লালচে বাদামী রঙের রস বের হয়ে আসে। পরে এই রস শুকিয়ে কালো ও শক্ত চাপড়ার মতো হয়ে যায়।
খ) এই রোগে আক্রান্ত অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এই রোগ গাছে খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
গ) অল্প বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হওয়ার এক বছরের মধ্যে তা ঢলেপড়ে নষ্ট হয়ে যায়। বড় গাছে আক্রান্ত হলে দুই তিন বছরের মধ্যে ঢলে পড়ে।
ঘ) Ceratocystis paradoxa নামক ছত্রাকের আক্রমণে পানি ঝরা রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে।
৩। পাতায় দাগ ধরা (Leaf spot) রোগঃ
ক) Pestalotia palmarum নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে। বাইরের পুরানো পাতায় এই রোগ প্রথমে দেখা যায়।
খ) পাতার উপর হলুদ রঙের ছোট ছোট অসংখ্য দাগ পড়ে। রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দাগের কেন্দ্রস্থল ধূসর বর্ণ ধারণ করে এবং অনেখানি অংশ মরে ধূসর হয়ে যায়।
গ) এর ফলে পাতারা আগা, কিনারা শুকিয়ে পাতা কুঁচকিয়ে যায়।
নারিকেল গাছের বিভিন্ন রোগের প্রতিকার সম্পর্কে
১। মাইজ মরা (Bud rot) রোগঃ
ক) এই রোগে আক্রান্ত গাছ কেটে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে। তাহলে এই রোগ কিছুটা দমন করা যায়।
খ) আক্রান্ত গাছের আগা পরিষ্কার কর বোর্দোমিক্সচ্যার ছিটিয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়।
গ) আক্রান্ত গাছের আশেপাশের গাছকেও রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হলে বোর্দোমিক্সচ্যার (৫ : ৫ : ৫০ হারে), পেরেনক্স ৩%, ডায়থেন, রোভরাল ইত্যাদি ছিটিয়ে দিলে রোগ নিয়ন্ত্রন হয়।
২। পানি ঝরা (Bleeding) রোগঃ
ক) সদ্য আক্রান্ত অংশের তন্তু ছুরি দ্বারা কেটে গর্তের মধ্যে কিছু নারিকেল পাতা রেখে আগুন লাগিয়ে দিতে হবে।
খ) পরে গরম আলকাতরার সঙ্গে কাঠের গুড়া মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করতে হবে।
৩। পাতায় দাগ ধরা (Leaf spot) রোগঃ
ক) এই রোগে আক্রান্ত পাতা কেটে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
খ) পাতার দাগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়থেন এম-৪৫ অথবা অন্যকোন ছত্রাকনাশক ১৫ দিন অন্তর অন্তর ছিটিয়ে দিতে হবে।