9.8 C
New York
Monday, December 4, 2023
spot_img

পারা ঘাস চাষ পদ্ধতি

পারা ঘাস চাষ পদ্ধতি

পারা ঘাস এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। দেখতে অনেকটা দল ঘাসের মত। এ ঘাস মহিষ বা পানি ঘাস নামেও পরিচিত। জমিতে লাগানোর পর মাটিতে লতার মত ছড়িয়ে পড়ে এবং অল্প দিনের মধ্যেই সমস্ত জমিতে বিস্তার লাভ করে। এ ঘাস পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং উচ্চ ফলনশীল। এটি জলাবদ্ধ ও লবণাক্ত তা স হয করতে পারে এবং কয়েক দিনের জন্য বন্যার পানিতেও এ ঘাস টিকে থাকতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এ ঘাস চাষ করা যায় এবং উঁচু স্থান অপেক্ষা নিচু জলাবদ্ধ জমিতে ভাল হয়। এ ঘাস গবাদি পশু ছাড়াও গ্রাসকার্প মাছের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। শীতকালের সামান্য সয়ম ব্যতীত অন্যান্য সকল সময়ই এ ঘাস দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

​পুষ্টিমানঃ- শুষ্ক পদার্থের ভিত্তিতে নিন্মরূপ।

ক) ক্রুড প্রোটিন (CP) ৯.৪%
খ) ক্রুড ফাইবার (CF) ২৯.৩%
গ) চর্বি (EE) ০.৮%
ঘ) খনিজ (Ash) ১০.৪%
ঙ) নাইট্রোজেন ফ্রি এক্সট্রাক্ট (NFE) ৫০.১%

জমি নির্বাচনঃ- পারা ঘাস প্রায় সব জমিতে আবাদ করা যায়। উঁচু, নিচু, ঢালু জলাবদ্ধ এমন কি লোনা মাটিতেও এ ঘাস ভাল জন্মায় এবং ভাল ফলন দিয়ে থাকে। পারা ঘাস যেহেতু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে তাই যে সমস্ত স্থানে এবং জলাবদ্ধ জায়গা পুকুর, ডোবা ও বাঁধের ধারে এ ঘাসের চাষ করা যেতে পারে।

রোপণ সময়ঃ- বৈশাখ হতে আশ্বিন এ ঘাস চাষের উপযুক্ত সময়।

রোপণ দূরত্বঃ- সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছ ১.১.৫ ফুট।

বংশ বিস্তারঃ- পারা ঘাসের কাটিং বা লতা মাটিতে লাগিয়ে বংশ বিস্তার করা যায়।

চারা তৈরিঃ- পরিপক্ক গাছের কম পক্ষে তিনটি গিট নিয়ে কাটিং তৈরি করতে হয়।

চারার পরিমানঃ- চারার পরিমাণ রোপণ ও দূরত্বের উপর নির্ভরশীল। ১.০X১.৫ ফুট দূরত্বে রোপণ করলে একরে প্রায় ২০,০০০ কাটিং প্রয়োজন।

রোপণের পদ্ধতিঃ- সমতল শুকনা জমিতে প্রথমে ৪/৫ টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এর পর নির্দিষ্ট দূরত্বে গ র্ত করে প্রতি গর্তে ৩/৪ টি কাটিং রোপণ করতে হবে। কাটিং ছাড়া সম্পূর্ণ লতাও রোপণ করা যায়। এ পদ্ধতিতে লাইন বারাবর ১-১.৫ ফুট দূরত্বে কোদাল দ্বারা সামান্য গর্ত করতে হবে। এরপর ৩/৪ টি লতার গোড়া একত্রে করে প্রথমে গর্তে রেখে ভালভাবে মাটি চাপা দিতে হবে। অতঃপর উক্ত লতা সমূহের গিট অংশ পরবর্তী গর্ত গুলোর উপর বিছিয়ে দিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে। এভাবে সমস্ত জমিতে ঘাসের লতা রোপণ করতে হবে।

কাদা জমিতেঃ- কাদা জমিতে লতার গোড়ার অংশ পুঁতে দিয়ে মাঝে পা দিয়ে লতার গিটের অংশ চেপে দিতে হবে। কাদা জমিতে চারা ছিটিয়ে গরু দিয়ে বা পা দিয়ে মারিয়ে দিয়েও পারা ঘাস লাগানো যায়। এ পদ্ধতিতে ঘাস লাগালে প্রতিটি গিট হতে নতুন চারা গজিয়ে দ্রুত ঘাসের বংশ বিস্তার ঘটে।

অসমতল/ঢালু জমিতেঃ- অসমতল বা ঢালু জমিতে যেমন রাস্তা , বাঁধ ও পুকুর পাড়ের ঢালে লাগালে প্রথমে ভাল ভাবে আগাছা পরিষ্কার করে গর্ত করে প্রতি গর্তে গোবর ও টিএসপি সার দিয়ে ঘাসের কাটিং বা লতা লাগাতে হবে।

সার প্রয়োগঃ- পারা ঘাসের জমিতে সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। পারা ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল ঘাস এবং বছরে অনেকবার কাটা যায়। সুতরাং এ ঘাসের সারের চাহিদা প্রথমতঃ নাইট্রোজেন (ইউরিয়া সার)। সমতল চাষযোগ্য জমিতে যখন পারা ঘাস লাগানো হয় তখনে চাষের সময় একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার এবং প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে।

ঘাস কাটাঃ- জমিতে চারা লাগানোর প্রায় ৬০-৭০ দিন পর প্রথম বার ঘাস কাটা যায়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪/৫ সপ্তাহ পর ঘাস কাটা যায়। মাটি হতে ৪/৫ ইঞ্চি উপর থেকে ঘাস কাটতে হয়।

ফলনঃ- পারা ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল বিধায় একর প্রতি বছরে গড়ে ২৫-৩০ টন সবুজ ঘাস পাওয়া যায়।
সংরক্ষণঃ- রোদ্রে শুকিয়া।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,913FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles