পুকুরে লাভজনক শিং মাছ চাষ পদ্ধতি

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পুকুরে লাভজনক শিং মাছ চাষ পদ্ধতি

পুকুরে শিং মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। ভালো করে চাষ করতে পারলে কার্পজাতীয় মাছের তুলনায় শিং মাছ চাষে লাভ বেশি। তাছাড়া কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমেও পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি শিং মাছের পোনা উৎপাদন এবং চাষ করা সম্ভব। কেননা শিং মাছ বাজারের একটি দামি মাছ। কথায় আছে, শিং মাছ খেলে দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি হয়। তাহলে জেনে নিন কীভাবে চাষ করবেন।

পোনা মজুদঃ

এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত দেশি শিং মাছের পোনা পাওয়া যায়। দেশি শিং মাছ একক চাষের জন্য ৫০০ থেকে ১০০০ পোনা মজুদ করা যাবে। শিং মাছ চাষে পুকুরে ৪-৫ ইঞ্চি সাইজের প্রতি শতাংশে ৮-১০ পিচ রুই, কাতল, গ্রাসকার্প, মৃগেল মাছের পোনা ছাড়তে হবে। কিছু কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়লে পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকে।

পুকুর নির্বাচনঃ

পুকুর নির্বাচনের সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে-

১. পুকুর অবশ্যই বন্যামুক্ত হতে হবে।
২. পুকুরের পাড় মজবুত হতে হবে। কোন প্রকার ছিদ্র থাকলে সমস্ত শিং মাছ চলে যাবে।
৩. বৃষ্টির সময় পানির উচ্চতা ৪ ফুটের বেশি হবে না- এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে।
৪. পুকুর আয়তাকার হলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৫. পুকুরের আয়তন ৪০-৫০ শতাংশের মধ্যে হতে হবে।
৬. এক প্রান্ত অন্য প্রান্তের চেয়ে ১ ফুট ঢালু রাখতে হবে।

পুকুর প্রস্তুতঃ

নতুন পুকুরের চেয়ে পুরাতন পুকুরে শিং মাছ চাষ ভালো হয়। নতুন পুকুর হলে ভালোভাবে চাষ দিয়ে প্রতি শতাংশে কমপক্ষে ২০ কেজি গোবর ও ভালোভাবে মই দিয়ে তারপর চুন দিতে হবে। পুরনো পুকুর হলে প্রথমেই সেচ দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। এরপর চুন দিতে হবে শতাংশ প্রতি ১ কেজি। চারদিকে জাল দিয়ে ভালোভাবে ঘের দিতে হবে। চারপাশে জাল দেওয়ার পর পুকুরে শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে ২-৩ ফুট পরিষ্কার পানি দিতে হবে। পানি দেওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে পোনা ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পর এক ইঞ্চি ফাঁসের একটি জাল পেতে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন   মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার

মজুদ ঘনত্বঃ

শিং মাছ এককভাবে বা মিশ্রভাবে চাষ করা যায়। মিশ্রভাবে চাষ করতে হলে কার্প জাতীয় মাছের সাথে প্রতি শতাংশে ৩০টি পর্যন্ত আঙুল সাইজের শিং মাছের পোনা ছাড়তে হবে। পোনা মজুদের সময় পোনাকে এন্টিফাঙ্গাস মেডিসিনে গোসল দিয়ে তারপর ছাড়তে হবে। কার্প জাতীয় মাছ ছাড়া তেলাপিয়া এবং পাঙ্গাসের সাথেও শিং মাছের মিশ্রচাষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ৫০টি পর্যন্ত শিং মাছের পোনা মিশ্রভাবে ছাড়া যায়। কার্পজাতীয়, তেলাপিয়া বা পাঙ্গাসের সাথে শিং মাছ চাষ করলে বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না।

খাবার প্রয়োগঃ

পোনা মজুদের পর প্রথম ১০ দিন দৈনিক মাছের ওজনের ২০% খাবার প্রয়োগ করতে হয়। ছোট থাকা শিং মাছ সাধারণত রাতের বেলায় খেতে পছন্দ করে; তাই ২০% খাবারকে দু’বেলায় সমান ভাগ করে ভোরের দিকে একটু অন্ধকার থাকতে প্রয়োগ করতে হয়। মাছ মজুদের পরের ১০ দিন ১৫% হারে এবং এর পরের ১০ দিন মাছের ওজনের ১০% হারে পুকুরে খাবার প্রয়োগ করতে হয়। এভাবে এক মাস খাবার প্রয়োগের পর ৫% হারে পুকুরে খাবার দিতে হবে। শিং মাছ ৩ ইঞ্চি হওয়ার সাথে সাথে দিনের বেলাতে খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যার পর যে খাবার দেওয়া হত সেটি সন্ধ্যার একটু আগে এগিয়ে এনে আস্তে আস্তে বিকেলে দিতে হবে। অন্যদিকে ভোরবেলার খাবারও এমনি করে সকাল ৯-১০ টার দিকে পিছিয়ে নিতে হবে। শিং মাছের ওজন ১৫ গ্রাম হলে ৩% এর অধিক খাবার দেওয়া মোটেই ঠিক নয় এবং বিক্রির আগ পর্যন্ত এই নিয়মই বজায় রাখতে হবে।

মাছ আহরণঃ

অন্যান্য মাছ জাল টেনে ধরা গেলেও শিং মাছ জাল টেনে ধরা যায় না। শিং মাছ ধরতে হলে শেষরাতের দিকে পুকুর সেচ দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। শিং মাছ ধরার উত্তম সময় হল ভোরবেলা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। মাছ ধরার পর মাছ থেকে গেলে শ্যালো দিয়ে কমপক্ষে ২ ফুট ঠান্ডা পানি দিয়ে পুকুর ভরে রাখতে হবে। পরের দিন আবার একই নিয়মে মাছ ধরতে হবে। শিং মাছের পুকুর একপাশে ঢালু রাখা দরকার। তা না হলে সমস্ত পুকুরজুড়ে মাছ ছড়িয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন   মাছ চাষের র্পূনাঙ্গ ব্যবস্থাপনা

সাবধানতা অবলম্বনঃ

মাছের কাঁটা বিঁধলে সেখানে খুবই ব্যথা হয়। কাঁটা বিঁধানো জায়গায় ব্যথানাশক মলম লাগিয়ে গরম পানি দিলে সাথে সাথে কিছুটা উপশম হয়। এছাড়া মলম লাগিয়ে গরম বালির ছ্যাকা দিলেও আরাম পাওয়া যায়। তাই শিং মাছ ধরার আগে এমন ব্যবস্থা রাখলে মন্দ হয় না। একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এসবের কিছুরই প্রয়োজন হয় না।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now