পুকুরে হাঁস পালন পদ্ধতি বিস্তারিত
আজকের কৃষিতে হাঁস পালন নিয়ে আর্টিকেল রয়েছে অনেকেই আমাদের ইনবক্সে বলতেছেন পুকুরে হাঁস পালন পদ্ধতি বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করার জন্য তাই আমরা আজকে আর্টিকেল টি সেই সকল কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রকাশ করলা। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।
প্রথম দিকে ছোট আকারের খামার করা ভালো। পরবর্তীতে বাণিজ্যিক আকারে খামার করা যেতে পারে। ডিম পাড়ার জন্য লেয়ার হাঁস পালন করতে হয়। এগুলোর মধ্যে খাকি ক্যাম্বল, ইন্ডিয়ান রানার, দেশি পাতি হাঁস উল্লেখযোগ্য। মাংসের জন্য অন্যান্য প্রজাতির হাঁস পালন করতে হয়।
বাচ্চা সংগ্রহের পর যতদ্রুত সম্ভব ঘরে ছাড়তে হবে। হাঁসের বাচ্চার ধকল প্রতিরোধে স্যালাইন পানি বা ইলেকট্রোলাইট (পশু-পাখির স্যালাইন) খাওয়ানো যেতে পারে। হাঁস সাধারণত পানিতে থাকতে ও সাঁতার কাটতে পছন্দ করে।
ছোট হাঁসের বাচ্চা দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে দুই বার পানিতে ছাড়তে হবে। হাঁসের প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রতি লোভ বেশি থাকায় সব সময় পানিতে থাকতে চায়। বাচ্চা হাঁসকে বেশি সময় পানিতে রাখা যাবে না সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। পূর্ণবয়স্ক হাঁস দিনে ৮-১০ ঘণ্টা পানিতে সাতার কাটাতে পারে
মাছ ও হাঁসের খাদ্য :
মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছকে আলাদা কোন খাদ্য দিতে হয় না বলেই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ সহজ। মাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। মাছ পানি থেকে তার প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। মাছ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাদ্য চাহিদাও বাড়ে। এ সময় মাছ হাঁস বা মুরগির বিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাপ্ত খাদ্য ও পুকুরে তৈরি zপ্রাকৃতিক খাদ্য খেয়ে থাকে। কোন ধরনের সম্পূরক খাদ্য দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
শুধু হাঁসের পরিচর্যা করলে হাঁস ও মাছ দুইয়ের পরিচর্যা হয়। মাঝে মাঝে হাঁসের বিষ্ঠা সংগ্রহ করে জমিতে জৈব সার হিসেবে প্রয়োগ করলে পরবর্তী ফসল ভালো হয়। হাঁসের বাচ্চার বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রথমে রেডি ফিড (তৈরি খাদ্য-বাজারে পাওয়া যায়) খাওয়াতে হবে এবং বারবার খাবার দিতে হবে। সম্ভব না হলে নিজেদের তৈরিকৃত খাদ্য খাওয়াতে হবে।
খাবার শুকনো অবস্থায় খাওয়ালে অবশ্যই সঙ্গে পানির পাত্র রাখতে হবে। বাচ্চা হাঁস খাবার মুখে পুরেই পানির সাহায্যে গিলে ফেলে। এ সময় বাচ্চা হাঁস সাবলীলভাবে বেড়ে উঠবে। পরবর্তীতে নিজেদের তৈরি করা খাদ্য খাওয়ানো যাবে। তৈরিকৃত খাদ্যে উপাদান সঠিকভাবে থাকায় বাচ্চার বৃদ্ধি ঠিক মতো হয়। নিজেদের তৈরিকৃত হাঁসের খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান থাকা আবশ্যক তা হলো ধান, চাউলের কুড়া, চাউলের খুদ, গম ভাঙা, গমের ভুষি ইত্যাদি।
এসব দ্রব্য ভালোভাবে মিশিয়ে হাঁসকে খেতে দিতে হবে। তাছাড়া শামুক, ঝিনুক ভেঙে খাওয়ানো যায়। ছোট বাচ্চাকে শামুক-ঝিনুক খুবই অল্প পরিমাণে খাওয়ানো যেতে পারে। উন্নত জাতের হাঁসের খাদ্য চাহিদা কম। এরা সাধারণত ১৬০-১৮০ গ্রাম খাদ্য প্রতিদিন খেয়ে থাকে। হাঁসের দিনের খাবার তিন ভাগে ভাগ করে সকাল, দুপুর ও বিকেল বেলা দিতে হবে।
গৃহপালিত হাঁসকে নির্দিষ্ট সংকেতে ডাক দিলে তারা খাবার খেতে চলে আসে। আবার প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট সময় খাবার দিলে ঠিক ওই সময় তারা খাবার খেতে চলে আসবে। হাঁসের বাচ্চা পরিপূর্ণ হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে মাছের পোনা ছাড়তে হলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ছোট মাছের পোনা হাঁস ধরে ফেলে বা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে ১৫ দিনের মতো পূর্ণবয়স্ক হাঁসকে বদ্ধ অবস্থায় পালন করা যেতে পারে।
পুরো আর্টিকেল টি পড়ে ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন ফেসবুকে আর আমাদের ইনবক্সে জানান আরও কি কি আর্টিকেল আমরা লিখবো আপনাদের জন্য।
হাসের পুষ্টি কর খাদ্য:
হাসের পুষ্টিকর খাদ্য পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ভুট্টা, চাল, গম, সয়াবিন মিল, মাছের গুঁড়ো, মটরশুঁটি, বৃদ্ধিয়ে ভিটামিন এ, ডি, ই, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পালং শাক, লেটুস, জলপাই পাতা, গাজর, আলু, টমেটো, বাদামের তেল, সয়াবিন তেল এবং পরিষ্কার ও তাজা পানি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই পরিকল্পনা হলে হাসের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে এবং তাদের স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতা উন্নত হবে।
ডিম সংগ্রহ :
সব জাতের হাঁসি সাধারণত ২২-২৩ সপ্তাহের মধ্যে ডিম পাড়া আরম্ভ করে। ডিম পাড়া শুরুর পূর্বে হাঁসিকে সঠিকভাবে খাদ্য দিতে হবে। যদিও ডিম পাড়ার ১৫ দিন আগে থেকে তাদের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। ডিম পাড়া অবস্থায় তাদের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ডিম পাড়া অবস্থায় হাঁসিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের জোগান দিতে পারলে দীর্ঘদিন ধরে ডিম পাওয়া যায়। হাঁসি সাধারণত খুব সকাল বা সকালের দিকে ডিম পাড়ে। এজন্য হাঁসিকে খুব সকালে ঘর থেকে ছাড়া যাবে না। একটু দেরি করে ছাড়তে হবে নতুবা পানির মধ্যে ডিম পাড়ার প্রবণতা দেখা যাবে।
প্রথম অবস্থায় হাঁসির ডিম একটু ছোট আকারের হলেও পরবর্তীতে তা স্বাভাবিক আকারের হয়ে যায়। হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে আকারে বড় ও ওজন বেশি হয়। সকালের ডিম সংগ্রহ করার সময় খাদ্য খেতে দিতে হবে। ডিম সংগ্রহের পর ওই ডিমে বিষ্ঠা লেগে থাকলে তা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি কোন হাঁসি ডিম না পাড়ে সে ক্ষেত্রে ওই হাঁসিটি চিহ্নিত করে ঝাঁক থেকে বাদ দিতে হবে।
এজন্য হাঁসির সংখ্যা ও ডিম উৎপাদন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। হাঁসি ডিম পাড়বে কি পাড়বে না তা হাত দিয়ে ডিমের থলি পরীক্ষা করে বোঝা যায়। শুধু ডিমের জন্য হাঁস পালন করলে ওই হাঁসের সঙ্গে কোন পুরুষ হাঁস রাখার দরকার নেই। কিন্তু ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর প্রয়োজন হলে ৭-৮টি হাঁসির জন্য ১টি হাঁসা (পুরুষ হাঁস) পালন করতে হবে।
হাঁসের রোগ :
মুরগির তুলনায় হাঁসের রোগ-বালাই খুবই কম বলেই হাঁস পালন করা খুব সহজ। হাঁসের প্রধান রোগ হলো ডাগ প্লেগ, ডাক কলেরা, প্যারালাইসিস ইত্যাদি। এছাড়াও অন্যান্য রোগে হাঁস আক্রান্ত হতে পারে। হাঁসের ভ্যাকসিন নিকটস্থ সরকারি প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ঝাঁকের মধ্যে কোন হাঁসের আচরণ অস্বাভাবিক পরিলক্ষিত হলে তাকে হাঁসের ঝাঁক থেকে আলাদা করে রাখতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
যদি হাঁসটির কোন রোগ হয়ে থাকে অথবা আঘাতপ্রাপ্ত হয় সেক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। হাঁসের যে কোন রোগ সম্পর্কে জানার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।