10.6 C
New York
Saturday, December 2, 2023
spot_img

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে রাক্ষুসে শোল চাষ

দেশি জাতের মাছ যেখানে হারিয়ে যেতে বসেছে, সেখানে রাসায়নিক সার ও খাবার ছাড়াই মাছ চাষ শুরু করেছেন সাতক্ষীরার জাকির হোসেন। এরই মধ্যে তিনি শোল মাছ চাষ করে সবার নজর কেড়েছেন। মাত্র পাঁচ কাঠা আয়তনের একটি পুকুরে দেশি জাতের শোল মাছের চাষ শুরু করেন।

কম খরচে অল্প কিছুদিনেই প্রায় পাঁচ মণ মাছ পেয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর মাস কয়েক আগে ভাসমান অবস্থায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক জোড়া শোল মাছ। সযত্নে মাছ দুটিকে ছেড়ে দেন নিজের পুকুরে। গত বছরের ১০ আগস্ট ডিম ছাড়ে মা মাছটি। তারপর পোনা বের হয়। এই পোনাই তাঁর পুকুরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সবচেয়ে ছোট একটি শোল মাছেরও ওজন হয়েছে আটশ’ গ্রাম।

বছর পুরতেই তা এক কেজি ছাড়িয়ে যাবে। পুকুরে কোনো সার দেননি জাকির। চুন কিংবা কোনো রাসায়নিক খাবারও নয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে মাছগুলো বেড়ে উঠছে। বাজারের ছোট মাছই মাছগুলোর প্রধান খাদ্য। প্রতিদিন সকাল-বিকাল তাদের খাবার দেন জাকির। শোল মাছকে রাক্ষুসে মাছ হিসেবে সবাই এড়িয়ে চলেন। কারণ এরা অন্য সব ছোট মাছ খেয়ে ফেলে। অথচ জাকির শোল মাছের সঙ্গে চিতল, রুই, কাতলের চাষও করেছেন। তাদের বেড়ে ওঠাও নজর কাড়ার মতো।

মানুষ যে মাছকে পুকুরে মাছের জন্য শত্রু মনে করেন, জাকির তাকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছেন। শোল মাছের পোনা পরিচর্যার পর একটু বড় হলেই পোনা লালনের দায়িত্ব নেয় মা মাছটি। এজন্য বাড়তি কোনো কাজেরও দরকার হয় না। জাকির তাঁর বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গুড়পুকুরের রিসার্চ ইনস্টিটিউিট। পুকুরে শোল মাছের চাষ এ প্রতিষ্ঠানেরই অধীনে চলছে। পুরনো জোড়া শোলের ওজন এখন দুই কেজি ছাড়িয়ে গেছে। তিনি পাশেই নতুন আরও একটি পুকুর খনন করেছেন। সেখানে ওই পুরুষ ও মা মাছ দুটো ছেড়ে দেবেন। সেখানে আবারও শুরু হবে নতুন মাছের আবাদান।

জাকিরের পুকুরের পানি ছয় ফুটের বেশি গভীর নয়। চকচকে পানি। কারণ সবই প্রাকৃতিক। তবে এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর  বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। মাছ চাষের পুকুরে হাঁস নামানো নিষেধ। কিন্তু মানুষের গোসল করা নিষেধ নয়। জাকিরের মতো আরও অনেক শিক্ষিত যুবক এভাবে মাছ চাষে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের দেশি জাতের মাছই হতে পারে বিশ্বসেরা মাছ। জাকিরের সাফল্যে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে মাছ চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।

দেশি জাতের মাছ যাতে হারিয়ে না যায়, সে উদ্যোগই নিতে হবে আমাদের সবাইকে। এ ব্যাপারে আশাবাদী জাকির নিজেও। কিছুদিন আগে জাকির প্রথম দফায় তাঁর পুকুরের মাছ তুলেছেন। এ সময় জেলা মৎস্য অফিসার ও উপজেলা মৎস্য অফিসারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জাকিরকে পুরস্কৃত করার কথা ভাবছেন।

মৎস্য বিভাগও তাঁকে সব ধরনের সহায়তা দিতে ইচ্ছুক। পরিশ্রম করলে, কোনো কাজকেই ছোট মনে না করে, একনিষ্ঠভাবে নিয়ম মেনে চললে, তাতে সাফল্য আসবেই। জাকির হোসেন এটাই আরেকবার প্রমাণ করলেন।

ডা. মুহিদার রহমান সাতক্ষীরা

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,913FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles