বন্যায় মৎস্য চাষীদের ক্ষতি কমানোর জন্য যা যা করণীয়

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বন্যায় মৎস্য চাষীদের ক্ষতি কমানোর জন্য যা যা করণীয়

বন্যা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্যতম হল বন্যা কবলিত মৎস্যচাষীগণ। মৎস্যচাষীদের ক্ষতি কমাতে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে।

বন্যায় কবলিত হয়েছে এমন জলাশয়ের মৎস্যচাষীদের জন্য পরামর্শ:-

১. বন্যার পানিতে জলাশয় ডুবে গেছে কিন্তু সব মাছ বা কোন মাছই ধরতে পারেননি এমন চাষী ঐ জলাশয়ে বাঁশ, ডালপালা ইত্যাদি দিয়ে ঝোপ বা ঝাটা তৈরি করে দিতে পারেন, যাতে ঐ জলাশয়কেই মাছ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ফলে পানি কমে যাওয়ার পর থেকে যাওয়া মাছসহ আরও দেশী মাছ/ছোট মাছ পাওয়া যাবে। এতে করে ক্ষতি অনেকটাই লাঘব হবে।

২. যদি সম্ভব হয় তবে জলাশয়ে সহজলভ্য কিছু খাবার অনিয়মিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পরিমানে বেশি নয়। ফলে খাবারের আকর্ষণে মাছ ঐ জলাশয়ে অবস্থান করবে এবং অন্যান্য দেশী মাছ প্রবেশ করবে।এটা পরীক্ষালব্ধ এবং অনেকটাই ফলপ্রসু। খাদ্য হিসেবে যা দেওয়া যেতে পারে-

a) বন্যার সময় অনেক শামুক পাওয়া যায়,সেগুলো সংগ্রহ করে শামুকের খোলস সরিয়ে মাংসগুলো রোদে শুকিয়ে কিছুটা চূর্ণ করে তার সাথে চালের কুড়া মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এটি খুবই উপকারী ও মাছকে আকর্ষণ করে।

b) বন্যার সময় বাড়ির আশেপাশে প্রচুর কেঁচো পাওয়া যায় সেগুলো সংগ্রহ করে জলাশয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে,ফলে একদিকে পরিবেশ ভাল থাকবে অন্যদিকে মাছ সেগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করবে।

c) অনিয়মিতভাবে খৈল ও চালের কুড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে খরচ যেন বেশি না হয়।

৩. পানিতে খুব বেশি ভাসেনি কিন্তু নোংরা পানি প্রবেশ করেছে এবং ঘোলা হয়েছে এমন জলাশয়ে ২৫০-৩০০ গ্রাম চুন প্রতি শতাংশে দেওয়া যেতে পারে অথবা খড় ও ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. ভারি বৃষ্টি / কয়েকদিন ধরে চলমান বৃষ্টি এলাকা কিন্তু বন্যার পানিতে পুকুর একেবারে ভেসে যায়নি এমন এলাকার যেখানে পুকুরে মাছ খাবি খাচ্ছে সেসব পুকুরে অক্সি গোল্ড/ অক্সি ফ্লো/ কুইক অক্সিজেন ২০০-৫০০ গ্রাম/ একর/৩-৬ ফুট গভীরতায় দেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন   পেয়ারা ডাল বাঁকালেই ফলন হবে দশগুণ

৫। বিক্রয় উপযোগী মাছ দ্রুত বিক্রি করে দেয়া ভাল। স্থানীয় বাজারে দাম কম হলে শহরের বাজারে পাঠাতে পারেন।

৬। বন্যার প্রকপতা কম অর্থাৎ পানির স্রোতের গতিবেগ কম বা অল্প পরিমান পানি আসতে পারে এমন এলাকায় নেট/ বানা দিয়ে জলাশয়ের চারপাশে ভালভাবে বেড়া দেওয়া যেতে পারে।

৭। বৃষ্টির পানিতে জলাশয় ভরপুর হয়ে গেলে নালা করে বা অন্য যেকোন পদ্ধতি অবলম্বন করে পানি বের করে দিতে হবে।

প্রয়োজনে যে কোন সময় উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।

উপজেলা মৎস্য দপ্তরের করণীয়:

১.বন্যা কবলিত মৎস্যচাষীদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যেতে পারে।
২. চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া এবং চাষিদের মনোবল অটুট রাখতে সাহায্য করা যেতে পারে।
৩. চাষিরা যাতে জীবন্ত মাছ ঢাকা বা অন্য বড় শহরে ভাল দামে বিক্রি করতে পারে সেক্ষেত্রে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করা যেতে পারে।
৪. বন্যার প্রকপতা কমে গেলে নিচু জলাশয়ে ( তবে বন্যার পানি যেখানে আছে) ওই এলাকার মৎস্যচাষীদের সমাজভিত্তিক পেনে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা এবং তালিকা তৈরি করে সহায়তা করা যেতে পারে।
৫. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা তৈরি করে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রদশর্নী খামার দেয়া যেতে পারে।
৬.বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের বিভিন্ন সরকারি, এনজিও এবং স্বেচ্ছা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করায়ে দেয়া যেতে পারে। যাতে মৎস্যচাষিরা কিছু সহযোগিতা পায়।

মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় নজর দিতে পারেন:

১. মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে।
২. সম্ভব হলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের সরকারিভাবে পোনা দেওয়া যেতে পারে।এক্ষেত্রে উন্মুক্ত জলাশয়ে বা প্রাতিষ্ঠানিক পুকুরে আমরা যে পোনা অবমুক্ত করি সেখান থেকে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৩. প্রদর্শনী পুকুরগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।

পরামর্শগুলো একত্র করে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সামাজিক মাধ্যম বা উদ্বুদ্ধকরণ সভার মাধ্যমে চাষির কাছে পৌঁছানো যেতে পারে। যাতে সম্ভাব্য ক্ষতি কমে যায়, চাষিরা মাছ চাষ করার মনোবল না হারায়। তাহলে বেঁচে যাবে আমাদের মৎস্য সেক্টর, বাঁচব আমরা, বাঁচবে জাতি, বাঁচবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন   কম্পোস্ট ব্যবহারের উপকারিতা

লেখক: মো আব্দুস সালাম, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, কালুখালী, রাজবাড়ী।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now