বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

বায়োটেকনোলজি পদ্ধতিতে মাছ চাষ

  • লাস্ট আপডেট : সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৮
  • ৭৫ টাইম ভিউ
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বায়োটেকনোলজি পদ্ধতিতে মাছ চাষ

আমাদের দেশে এক সময় প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ পাওয়া যেত। প্রাকৃতিক আশ্রমগুলো নষ্ট ও সংকুচিত হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এই সব ছোট মাছের প্রজনন হ্রাস পেয়ে অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

মাছের প্রয়োজনীয়তার কারণে আশির দশকে গড়ে উঠেছিল গুটি কয়েক কার্প জাতীয় মাছের হ্যাচারি। এসব হ্যাচারির লাভ দেখে রাতারাতি আমাদের দেশে প্রায় ৮০০ এর মত হ্যাচারি গড়ে ওঠে। ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাঙ্গাসের চাষাবাদ শুরু হয়। বর্তমান সময়ে দেশীয় কার্প জাতীয় মাছ ও পাঙ্গাসের মোট উৎপাদন প্রায় স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু আমাদের চাহিদার বিপরীতে এখনও ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ মেট্টিক টনের মত। আর এই ঘাটতি পূরণের জন্য দরকার আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ এবং উন্নতমানের পোনা। উন্নতমানের পোনা বলতে শুধু অন্ত:প্রজননমুক্ত পোনা হলেই চলবে না। প্রয়োজন বায়োটেক ফিস বা জন্মগতভাবে উন্নতজাতের মাছের পোনা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু মাছের বায়োটেকনোলজির কথা উল্লেখ করছি।

আমাদের দেশীয় রুই মাছ প্রথম বছরে খুব একটা বড় হয় না। যার কারণে খামারিরা এক বছর বয়সী রুই মাছের পোনা দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু এই রুই মাছকে যদি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ট্রিপ্লয়েড করা হয় তাহলে কমপক্ষে এর বৃদ্ধি হবে প্রায় দেড়গুণ। রুই মাছের ট্রিপ্লয়েড পোনা করাও খুবই সহজ।

প্রথমে স্ত্রী মাছের পেট থেকে চাপ প্রয়োগ পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্পার্ম মেশানোর পর নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ডিমগুলোকে রেখে দিলেই ট্রিপ্লয়েড রেনু পাওয়া যাবে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে ঊল্লেখিত পদ্ধতিতে সব পোনাই ট্রিপ্লয়েড হয় না। আর সে জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পার হলে কোনটা ট্রিপ্লয়েড আর কোনটা ডিপ্লয়েড পোনা তা সহজেই সনাক্ত করা যায়। আর সনাক্তের কাজ শেষ করতে পারলে প্রথম বছরের ট্রিপ্লয়েড পোনা দিয়েই এক বছরে কমপক্ষে ১ কেজি ওজনের রুই উৎপাদন করা সম্ভব।

আরও পড়ুন  সেক্স ফেরোমোন

জন্মগতভাবে উন্নত দেশি শিং, কৈ, পাবদা, পুটি, পাঙ্গাস ইত্যাদি সাধারণভাবে উৎপাদিত মাছের মধ্যে অর্ধেক মাছ পুরুষ আর অর্ধেক মাছ স্ত্রী। এসব মাছের মধ্যে কিছু পুরুষ ও স্ত্রী মাছ বড় হয়। যে সমস্ত স্ত্রী মাছ বড় হয় তার মধ্যে শিং, কৈ, পাবদা, পুটি, পাঙ্গাস মাছ রয়েছে। আবার কিছু পুরুষ মাছ বড় হয় যেমন- তেলাপিয়া, দেশি মাগুর ইত্যাদি। যে মাছগুলো এক বছরে বা তারও কম সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে সে সমস্ত মাছকে সহজেই বায়োটেকনোলজি প্রয়োগ করে স্ত্রী মাছে রূপান্তরিত করা সম্ভব। তিন বছরের মধ্যেই জন্মগতভাবে উন্নত স্ত্রী কৈ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে শিং, পাবদা, পুটি, পাঙ্গাস মাছের স্ত্রী মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।

স্ত্রী মাছ উৎপাদন করার কৌশল সাধারণভাবে কৈ, শিং, পাবদা, পুটি, পাঙ্গাসকে প্রজনন করিয়ে রেনু উৎপাদন করার পর খাদ্য গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ১৭ আলফা মিথাইল টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রয়োগ করে মাছগুলোকে পুরুষ মাছে রূপান্তরিত করতে হবে।

এই মাছগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে একটি করে পুরুষ মাছ প্রজননে ব্যবহার করতে হবে এবং অই পুরুষ মাছটিকে আলাদা করে রাখতে হবে। পরবর্তীতে বাচ্চা বড় হওয়ার পর বাচ্চাগুলোকে সেক্সিং টেস্ট করে যদি সব স্ত্রী মাছ পাওয়া যায় তাহলে এই মাছের প্রজননে ব্যবহৃত পুরুষ মাছটিই হল সুপার পুরুষ এবং এই পুরুষ মাছের সাথে যেকোন স্ত্রী মাছের প্রজনন করালেই জন্মগতভাবে উন্নত সব স্ত্রী মাছ পাওয়া যাবে। এভাবে বারবার পরীক্ষা করে সুপার পুরুষ মাছ সংগ্রহ করতে হবে।

এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে থাই কৈ মাছের সব স্ত্রী মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করে শিং, পুটি সব স্ত্রী মাছের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি এই গবেষণাটি শেষ হলে এর যাবতীয় তথ্যাদি সাধারণ খামারির মাঝে উন্মুক্ত করার ইচ্ছা আছে। জন্মগতভাবে উন্নত এই মাছ সাধারণ মাছের চেয়ে কমপক্ষে ৭০% অতিরিক্ত উৎপাদন হয় (থাই কৈ)।

আরও পড়ুন  সুনামগঞ্জে কৃষক হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণভাবে উৎপাদিত স্ত্রী মাছের চেয়ে এ মাছের শতকরা ২০ ভাগ ওজনে বেশি হয়ে থাকে। একই প্রক্রিয়ায় পাঙ্গাস মাছের স্ত্রী মাছ উৎপাদন করতে পারলে দেশে পাঙ্গাস মাছের উৎপাদনে বিশাল আকারে বেড়ে যাবে। যদিও প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ৪/৫ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে দেশের প্রোটিন চাহিদা পূরণে সামনের দিনে বায়োটেক ফিসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

ছবি ও তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
একই রকম পোস্ট