আজ বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
মটরশুঁটি একটি জনপ্রিয় শিম পরিবারের শীতকালীন সবজি। মটরশুঁটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। যেমন কাঁচা খাওয়া যায়, শুকিয়ে বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া যায়, ভেজে খাওয়া যায়। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। মটরশুঁটি উদ্ভিজ্জ আমিষের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। আজকাল পারিবারিক অনুষ্ঠানের বিশেষ রান্নার আয়োজনে ও পরিপক্ক শুটি ডাল হিসেবে এদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমাদের দেশে উৎপাদিত মটরশুঁটির একটি বড় অংশ ডাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যাপকহারে মটরশুঁটি চাষ করা হচ্ছে। আসুন জেনে নেই মটরশুঁটি চাষ করার পদ্ধতি।
প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি
মটরশুটি শীত প্রধান ও আংশিক আর্দ্র জলবায়ুর উপযোগী ফসল। মটরশুঁটি চাষের সবচেয়ে উপযোগী তাপমাত্রা হল ১০ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। মটরশুঁটি চাষের জন্য দোআঁশ মাটি সর্বোত্তম। এঁটেল মাটিতে চারা রোগে মারা যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
মটরশুঁটি এর উল্লেখযোগ্য জাত
আমাদের দেশে চাষ করারমত মটরশুটির বেশ কিছু জাত রয়েছে। তারমধ্যে আরকেল, আলাস্কা, গ্রীন ফিস্ট, স্নো ফ্লেক, বনভীল, সুগার স্ন্যপ নামের জাতগুলোর আবাদ হচ্ছে। এছাড়াও বারি মটরশুটি-১, বারি মটরশুঁটি-২, বারি মটরশুঁটি-৩, ইপসা মটরশুটি-১, ইপসা মটরশুটি-২, ইপসা মটরশুটি-৩, আলাস্কা, সুগার স্নপ ইত্যাদি ব্যাপক জনপ্রিয়।
চাষের উপযুক্ত জমি তৈরি ও বীজ বপন
আমাদের দেশে মটরশুঁটি চাষের উপযুক্ত মাস হল নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী এই চার মাস। কারণ এই চার মাসে অনুকুল জলবায়ুগত পরিবেশ বিরাজমান থাকে। তবে নভেম্বর মাসে মটরশুঁটির বীজ বপন করা সর্বোত্তম। অক্টোবর মাসেও বীজ বোনা যেতে পারে তবে প্রায়ই বৃষ্টি হওয়ার কারণে এ সময় জমি তৈরি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই সঠিক সময়ে মটরশুঁটির চারা রোপন করতে হবে। মটরশুটির গাছ চারা অবস্থায় অত্যন্ত দুর্বল থাকে। তাই মটরশুঁটি চাষের জন্য জমি খুব ভালো ভাবে তৈরি করতে হবে এর জন্য ৪/৫টি চাষ ও মই দিতে হবে।
মটরশুটি এর বীজ বপনের পূর্বে বীজ বালাই নাশক দ্বারা শোধন করে নেওয়া উচিৎ। মটরশুঁটির বীজ সারি করে বপন করা উচিৎ। জমিতে ৪০ সেমি দুরত্বে সারি করে ২০ সেমি পর পর বীজ রোপণ করতে হবে। মটরশুঁটি চাষে জোড়া সারি পদ্ধতিতে চাষ করা ভালো। যদি জলাবদ্ধতার আশঙ্কা থাকে তবে উঁচু স্থানে সারিগুলো তৈরি করতে হবে। জাত ও বপন পদ্ধতি অনুসারে হেক্টর প্রতি প্রায় ৬০-৭০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
মটরশুঁটি চাষের জন্য প্রতিশতক জমিতে ৪০ কেজি গোবর সার, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম টিএসপি, সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও টিএসপি অর্ধেক জমি চাষের সময় ও বাকি অর্ধেক দু কিস্তিতে পরে দিতে হবে। শেষ চাষে সার প্রয়োগের অন্তত ৭-১০ দিন পরে মটরের বীজ বপন করতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
ভালো ফলন পাওয়ার জন্য মটরশুঁটির জমিতে শুকনো মৌসুমে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ টি সেচ দিতে হবে। ফল ধরলে অন্তত একবার সেচ দেয়া জরুরি। ভালো ফসলের জন্য বাউনী দেয়া দরকার। সারি বরাবর খুটি পুঁতে সুতলি দিয়ে বাউনি দেয়া যায়। জমিতে পানি দাঁড়ানো অবস্থায় যেন না থাকে সেজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আগাছা ও নিড়ানি
নিড়ানি দিয়ে মাঝে মাঝে সারির দুপাশের আগাছা তুলে ফেলে জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। সারির মাঝে হালকা কোপ দিয়ে মাঝে মাঝে আগাছা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগদমন
মটরশুঁটিতে প্রধানত ড্যাম্পিং অফ, রাস্ট, পাউডারি মিলিডিউ এবং অ্যানথ্রাকনোজ আক্রমণ করে থাকে। এসব রোগ চারা অবস্থায় আক্রমণ করে থাকে। ডাইথেন এম-৪৫ (২ গ্রাম/লিটার) প্রয়োগ করে এ সব রোগ দমন করা যায়। সে সাথে প্রতি লিটার পানিতে রিডোমিল এম. জেড ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ক্ষেতে সেপ্র করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কাটুই পোকা চারার গোঁড়া কেটে ফসলের ক্ষতি করে। প্রাথমিক অবস্থায় ভোরবেলায় কেটে ফেলা চারার গোড়ায় চারপাশ থেকে পোকা খুঁজে মেরে ফেলে এ পোকার আক্রমণের প্রকোপ কমানো যায়। এছাড়াও আরও আরও কিছু পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এগুলো দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মটরশুঁটি বীজ বোনার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ফুল ফোটার ২০ থেকে ২৫ দিন পর বীজের জন্য শুটি সংগ্রহ করা যেতে পারে। বীজ পূর্ণ আকারপ্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু শক্ত হয়নি, এ অবস্থায় শুঁটি বা ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।