বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৭ অপরাহ্ন

মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার

  • লাস্ট আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৬১৫ টাইম ভিউ
মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার

মাছ চাষে অনেক সমস্যায় ভুগে থাকেন মৎস্য চাষীরা তাই আজকে আলোচনা করবো মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার গুলো নিয়ে। সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে।

মাছ চাষে অনেক সমস্যাই দেয়া যায় এর মধ্যে শীতকালে একটু বেশি সমস্যা দেয়া যায়।শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। কারণ এ সময়ে পুকুরে পানি কমে, পানি দূষিত হয়, পানি গরম হয়, অক্সিজেন কমে যায়, গ্যাস সৃষ্টি হয়, রোগবালাইসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যার জন্য মাছের মড়ক দেখা দিতে পারে। এতে মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমস্যার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ও সমস্যা হওয়ার পরেও সমাধান করে মাছের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায়।

মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা কি কি?

মাছের খাবি খাওয়া

পানিতে অক্সিজেনের অভাব হলে মাছ পানির ওপর ভেসে ওঠে খাবি খায়। অর্থাৎ বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণের চেষ্টা করে। মনে হয় মাছ পানি খাচ্ছে। মাছ খুব ক্লান্ত হয়। এতে মাছের ফলন কমে যায়।

পানিতে সাঁতারকাটা, বাঁশ পানির ওপর পেটানো, হররা টেনে তলার গ্যাস বের করে দেয়া, পুকুরে পাম্প বসিয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি করা, পানি নাড়াচাড়া করে অক্সিজেন বাড়ানো যায়। নতুন পানি সরবরাহ করেও অক্সিজেন বাড়ানো যায়। প্রতি শতাংশে এক কেজি চুন দিলে উপকার পাওয়া যায়।

কার্বন ডাইঅক্সাইডজনিত পানি দূষণঃ

পানিতে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে গেলে মাছের দেহে বিষক্রিয়া হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। খাবি খাওয়া প্রতিকারের মতো পানি নাড়াচাড়া করে অক্সিজেন বাড়ালে কার্বন ডাইঅক্সাইড কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় অতিরিক্ত কাদা সরাতে হবে।

অ্যামোনিয়াজনিত সমস্যাঃ

পুকুরে অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রঙ তামাটে অথবা কালচে রঙের হয়। এতে মাছের ছোটাছুটি বেড়ে যায়। মাছ খাদ্য খায় না। বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। মাছের মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে। সার ও খাদ্য প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে।

আরও পড়ুন  দেশি পাবদার চাষ প্রযুক্তি

নাইট্রোজেনজনিত সমস্যাঃ

পানিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাছের দেহে অক্সিজেন সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়ে বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। এতে মাছের দেহ বাদামি রঙ ধারণ করে। মাছ খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে ২৫০ মিলিগ্রাম লবণ প্রতি লিটার হারে দিতে হবে।

পিএইচজনিত সমস্যাঃ

পানিতে পিএইচ কমে গেলে মাছের দেহ থেকে প্রচুর পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। মাছ খাদ্য কম খায়। পিএইচ বেশি হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। দেহ খসখসে হয়। মাছ রোগাক্রান্ত হয়। পিএইচ কম হলে চুন, ডলোমাইড বা জিপসাম ১ থেকে ২ কেজি প্রতি শতাংশ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ বেশি হলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডালপালা তিন-চার দিন ভিজিয়ে রেখে পরে তুলে ফেলতে হবে। তেঁতুল পানিতে গুলে দেয়া যায়।

পানির ওপর সবুজ স্তরঃ

পুকুরের পানির রঙ ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা পানির ওপর শ্যাওলা জন্মালে খাদ্য ও সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক ভাগ করে ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানির নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে। প্রতি শতাংশ পুকুরে ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।

পানির ওপর লাল স্তরঃ

পুকুরের পানির ওপর লাল স্তর পড়লে ধানের খড়ের বিচালি বা কলাগাছের শুকনো পাতা পেঁচিয়ে দড়ি তৈরি করে পানির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিলে পরিষ্কার হয়।

পানির ঘোলাত্বঃ

পানি ঘোলা হলে মাছ খাদ্য কম খায়, চোখে দেখে না, প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না, প্রজননে সমস্যা হয় ও রোগবালাই বেশি হয়। প্রতি শতাংশে ৮০ থেকে ১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হবে। পুকুর তৈরির সময় জৈবসার বেশি দিলে স্থায়ীভাবে ঘোলা দূর হয়। পানিতে কলাপাতা ও কচুরিপানা রাখলেও ঘোলা কমে।

আরও পড়ুন  নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনায় করণীয়

পানির ক্ষারত্ব

পানি ক্ষারীয় হলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি কম হয়। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। মাছের দেহে পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় ওপরে শতাংশ প্রতি ১ থেকে ২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। লেবু কেটে দিলেও ক্ষারত্ব কমে। ছাই প্রয়োগেও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ হয়।

জলজ উদ্ভিদঃ
কচুরিপানা, কলমিলতা, চেচরা, পাতাঝাঝি, শাপলা, হেলেঞ্চা, মালঞ্চ এসব জলজ উদ্ভিদ জলাশয়ে রোদ পড়তে বাধা দেয়, মাছের চলাচল, খাদ্য গ্রহণ, প্রজননে সমস্যা করে। এসব ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদ কাঁচি দিয়ে কেটে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হয়।

মাছের রোগবালাইঃ

শীতে মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ ও ফুলকা পচা রোগ হয়। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তাহলো-

১. পুকুরের পরিবেশ ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা ২. জলজ আগাছামুক্ত রাখা ৩. পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করা ৪. অনাকাক্সিক্ষত জলজ প্রাণী অপসারণ করা ৫. অতিরিক্ত কাদা সরানো


৬. দুই তিন বছর পর পর পুকুর শুকানো ৭. চুন প্রয়োগ করা ৮. মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ৯. প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা করা ১০. হররা টানা ১১. পাখি বসতে না দেয়া ১২. জাল শোধন করে ব্যবহার করা ১৩. রোগাক্রান্ত মাছ অপসারণ করা ১৪. সব সময় ঢেউয়ের ব্যবস্থা রাখা ১৫. পানি কমে গেলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা ১৬. ভাসমান খাদ্য প্রয়োগ করা ১৭. পানি বেশি দূষিত হলে পানি পরিবর্তন করা ১৮. পুকুরে বিভিন্ন স্থানে একটু গভীর বা গর্ত করা যাতে পানি কমে গেলে মাছ সেখানে আশ্রয় নিতে পারে।

শীত ও গ্রীষ্মে প্রতিদিন পুকুরে যেতে হবে। সাত দিন পর পর মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। যে কোনো সমস্যা হলে উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

মাছের রোগবালাইঃ

মাছের রোগবালাইঃ

আর্টিকেলটি আংশিক সংকলিত।

আরও পড়ুন  দেশি শিং মাগুর, কৈ ও থাই কৈ মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা

মূল লেখকঃ কৃষিবিদ মো. ফরহাদ হোসেন

প্রভাষক (কৃষি শিক্ষা), শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল.

জনাব মো. ইউনুসুর রহমান বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১৯৮২ (বিশেষ) ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার জেলা প্রশাসক, বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্ম জীবনে এসে চাকরির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাসহ ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন ক্রোস বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি খুলনা বিভাগের ‘বিভাগীয় কমিশনার’ এর দায়িত্ব পালনকালে অন্য একজন লেখকসহ “খুলনা বিভাগের ইতিহাস” শীর্ষক পুস্তক রচনা করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
একই রকম পোস্ট