Home অন্যান্য ফসল মাটি ছাড়াই ঘাসের চাষ

মাটি ছাড়াই ঘাসের চাষ

91
0
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মাটি ছাড়াই ঘাসের চাষ

জমিতে ঘাস চাষের প্রচলিত ধারণা বদলে ঘরের ভেতরে মাটি ছাড়া কেবল পানি ছিটিয়ে পশুখাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে যশোরে। হাইড্রোফনিক (মৃত্তিকাবিহীন জল চাষ বিদ্যা) ফডার নামের এই প্রযুক্তিতে পশুখাদ্য উৎপাদনে খরচ কম। এই খাদ্যে বাজারের দানাদার ও মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান আছে। তাই ধীরে ধীরে বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের ‘কৃষক বাড়ি’ ও ‘যশোর ডেইরি’ খামারের উদ্যোক্তারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করছেন। গম, ছোলা, খেসারি, ভুট্টা, সয়াবিন, মাষকলাইসহ বিভিন্ন শস্যের অঙ্কুরোদ্‌গম বীজ ব্যবহার করে খাদ্যটি উৎপাদন করা যায়।

জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. নিজাম উদ্দীন প্রথমআলোকে বলেন, ‘হাইড্রোফনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পশুখাদ্য তৈরি খুবই সম্ভাবনাময়। শুধু এই খাদ্য দিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়া, খরগোশ ও রাজহাঁস পালন করা সম্ভব।

২২ বিঘা জমির ওপর ‘যশোর ডেইরি’ খামার স্থাপিত। খামারটিতে ৩৩টি গরু আছে। খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য অন্তত ১৫ বিঘা জমিতে নেপিয়ারসহ বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস লাগানো আছে। তারপরও হাইড্রোফনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৈনিক ১০০ কেজি খাদ্য উৎপাদন করছে তারা।

এ বিষয়ে যশোর ডেইরির স্বত্বাধিকারী রিয়াজ মেহমুদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের প্রতিদিন গরুকে পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া বিরাট চ্যালেঞ্জ। বাজারের দানাদার খাদ্যে গুণগত মান সব সময় ঠিক থাকে না। সে জন্য গরুর বদহজমসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া মাঠে লাগানো ঘাসে কৃমি ও শামুকের জন্য পশুর রোগব্যাধি হয়।’

এ জন্য ঘরের ভেতরে নিবিড় তত্ত্বাবধানের শস্যবীজ দিয়ে মাটি ছাড়াই পানি দিয়ে ট্রের ভেতরে হাইড্রোফনিক খাদ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানালেন রিয়াজ মেহমুদ খান। তিনি বলেন, এই খাদ্য ব্যবহারে গত এক মাসে গরুর দুধে ননি ও ঘনত্ব ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন   উন্নত গুনাগুনসম্পন্ন ছাগল নির্বাচন কৌশল

রিয়াজ মেহমুদ খান বলেন, কৃষক বাড়ি খামারের উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম যশোরে প্রথম এই প্রযুক্তিতে খাদ্য উৎপাদন শুরু করেন। তাঁকে দেখে তিনি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হন।

কৃষক বাড়ি খামারে ভেড়া পালন করা হয়। এখানে হাইড্রোফনিক ফডার প্রযুক্তিতে দৈনিক ২০ কেজি খাদ্য উৎপাদিত হয়। খামারটির অংশীদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পশুখাদ্য তৈরি হয়। ইউটিউবে এই প্রযুক্তি দেখে কয়েক মাস আগে এটি ব্যবহার শুরু করি। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই একবার দেখেই এই প্রযুক্তিতে খাদ্য উৎপাদন সম্ভব।’

উৎপাদন কৌশল: পরিষ্কার পানিতে শস্যবীজ ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পানি ঝরিয়ে ভেজা চটের বস্তা অথবা কালো সুতি কাপড়ের ভেতরে করে ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার স্থানে রাখতে হয়। শেষে এক পাশ ছিদ্রযুক্ত ট্রের ভেতরে পাতলা করে ওই বীজ বিছিয়ে কালো কাপড় দিয়ে দুই দিন ঢেকে রাখতে হবে। এই দুই দিন খেয়াল রাখতে হয়, বাইরের আলো-বাতাস যেন না লাগে। কাপড়টি সারাক্ষণ ভেজা রাখতে হয়। তৃতীয় দিন কাপড় সরিয়ে আধঘণ্টা পরপর পানি ছিটাতে হবে। নবম দিনে বীজ থেকে পাঁচ-ছয় ইঞ্চির মতো চারা গাছ লম্বা হয়ে ওঠে। তখন সেগুলো ট্রে থেকে শিকড়সহ উঠিয়ে পশুপাখির খাবারের জন্য দিতে হবে।

খামারিরা বললেন, টিনশেডের একটি ঘরে বাঁশ বা কাঠের তাক বানিয়ে ট্রেগুলো সাজিয়ে রাখতে হয়। এক কেজি বীজ থেকে ৯ দিন পরে ৭ থেকে ৮ কেজি খাদ্য পাওয়া যায়। পাঁচ বিঘা জমিতে যে পরিমাণ ঘাস উৎপাদিত হয়, মাত্র ৩০০ বর্গফুটের একটি টিনশেডের ঘরে সেই পরিমাণ হাইড্রোফনিক খাদ্য উৎপাদন করা যায়।

কৃষক বাড়ির হাইড্রোফনিক প্রযুক্তি দেখে যশোর সদর উপজেলার বড় খুদরা গ্রামের ‘মাঠে মাঠে’ নামের খামারের উদ্যোক্তা ওমর ফারুক উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তাঁর খামারে ২৫টি গরু আছে। তিনি বলেন, ‘হাইড্রোফনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদিত খাদ্য গরুর জন্য খুবই কার্যকর। শহরের পালবাড়ি এলাকার আরও দুটি খামারে এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন   মাল্টা গাছের রোগবালাই ও চিকিৎসা