Home কৃষি তথ্য শেরপুরে এক জমিতে বছরে চার ফসল

শেরপুরে এক জমিতে বছরে চার ফসল

77
0
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

শেরপুর শহরের পশ্চিম শেরী এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম। বাড়ির পাশের দেড় একর জমিতে এক বছরে পর্যায়ক্রমে তিনি চারটি ফসলের আবাদ করতে পেরে দারুন খুশি। আউশ মৌসুমে চাষ করেছিলেন বিআর-৪৮ ধান। ১১০ দিনেই সেই ফসল ঘরে তুলেছিলেন একর প্রতি ৪৫ মণ করে। আউশ কেটে আমনে চাষ করেছিলেন বিআর-৬২ ধান। ১০০ দিনেই আমন ফসল কেটে ঘরে তুলেছিলেন। একর প্রতি ফলন মিলেছিল ৫৫ মণ করে। আমন কেটে রবি মৌসুমের শুরুতেই সেই জমিতে রোপণ করেছিলেন বারি-১৪ মরিষা।

মাত্র ৮২ দিনেই সেই সরিষা ঘরে তুলে এবার বোরো রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা সরিষা আবাদে খরচ হয়েছে। দেড় একরে সরিষার উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৫ মণ। বাজারে বর্তমানে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে সরিষা বিক্রি হচ্ছে। সরিষার এমন লাভ পেয়ে তিনি দারুণ খুশি। এবার সরিষার লাভের টাকাতেই সেই জমিতে তিনি বিআর-২৮ ধান রোপণ  করবেন। আগে থেকেই বীজতলা তৈরি করে রেখেছেন। এখন কেবল সরিষা তোলা জমিতে বোরো রোপণ করবেন। ১৪০-১৪৫ দিনেই বিআর-২৮ ধানের ফলন আসে।

বাংলাদেশ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বারি) শেরপুর সরজমিন গবেষণা বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কৃষক রফিকুল ইসলামের জমিতে এভাবে এক জমিতে পর্যায়ক্রমে চারটি ফসল ফলানো সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া সবগুলো ফসল উচ্চ ফলনশীল জাতের হওয়ায় এসব ফসলের ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। এলাকার কৃষকরা একই জমিতে বছরে চার ফসল আবাদ হওয়ায় বিষয়টি দেখে বেশ আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন।

কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে বিষয়টি আমার বিশ্বাস হতে চায়নি। কিন্তু নিজের জমিতে বছরে চার ফসল করে এখন মনে হচ্ছে, এটা অসম্ভব কিছু না। এতে উৎপাদন খরচ যেমন কম হয়েছে, তেমনি ফলনও ভালো হয়েছে।” পাশের জমির কৃষক মাহবুব আলী বলেন, “রফিকুলের ক্ষেতের অবস্থা আমি সবসময় দেখেছি। দেখলাম আবাদের অবস্থা খুব ভালো। আগেতো কেবল বোরো আর আমন ধানই করতাম। এবার চিন্তা করছি, চলতি বোরো মৌসুম থেকে আমার দুই একর জমিতেও বছরে চার ফসল কীভাবে করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেব।”

আরও পড়ুন   ঘরে মাছ চাষ

আজ শনিবার শহরের পশ্চিম শেরী এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলামের চার ফসলভিত্তিক শস্য আবাদের সরিষা ক্ষেত পরিদর্শনে আসেন বারি গাজীপুরের বিভাগীয় প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান খান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুল হাসান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শহীদুজ্জামান, ড. এম আব্বাস  আলী, জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নারায়ণ চন্দ্র বসাক, শেরপুর সরজমিন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুর রহমান প্রমুখ। তাঁরাও এ সরিষা ক্ষেত দেখে ভুয়শী প্রশংসা করেন। এ উপলক্ষে ওই সরিষা ক্ষেতের পাশে আয়োজিত মাঠ দিবসে সদর উপজেলার শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বারি গাজীপুরের বিভাগীয় প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান খান বলেন, “ফসল নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণে  চার ফসলভিত্তিক শস্য বিন্যাস উদ্ভাবন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশের ১৫টি জেলায় এখন সরজমিন গবেষণা কার্যক্রম চলছে। গবেষণার ফলাফল এখন পর্যন্ত খুব ভালো। আশা করি আগামী বছর থেকে এক জমিতে চার ফসল আবাদের এ কর্মসূচি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।”

বারি শেরপুরের সরজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুর রহমান বলেন, “আমরা শেরপুরে যেভাবে চার ফসলের শস্য বিন্যাস করে আবাদ করেছি তাতে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৩৫ দিনেই চারটি ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছে। বিষয়টি খুবই আশা জাগানিয়া। এতে শস্যের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষকদের আয়ও বেড়েছে। এর ফলে উৎপাদন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে।”

সূত্র: কালের কন্ঠ