আজ বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
শজিনা মাঝারি আকৃতির পত্রঝরা বৃক্ষ, ৭-১০ মিটার উঁচু হয়। এর বাকল ও কাঠ নরম। যৌগিক পত্রের পত্রাক্ষ ৪০-৫০ সে.মি. লম্বা হয়। এতে ৬-৯ জোড়া ১-২ সে.মি. লম্বা বিপরীতমুখী ডিম্বাকৃতি পত্রক থাকে। ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে শজিনা গাছে ফুল আসে। মুকুল ডাঁটাগুলো বিস্তৃতি, গুচ্ছবদ্ধ ও ৫-৮ সে.মি. লম্বা। মিষ্টি গন্ধে সবুজের আভাযুক্ত সাদা ফুল ২-৩ সে.মি. ব্যাসের হয়। লম্বা সবুজ বা ধূসর বর্ণের শজিনা ফল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এক একটি ফল ৯টি শিরাযুক্ত ২২-৫০ সে.মি. বা কখনো কখনো এর বেশী লম্বা হয়। হিম সাদা
শজিনা ফুল সম্পর্কে কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেণ-
এখানে আকাশ নীল-নীলাভ আকাশ জুড়ে শজিনার ফুল
ফুটে থাকে হিম সাদা-রং তার আশ্বিনের আলোর মতন।
শজিনার আদি নিবাস ভারতের পশ্চিমাঞ্চলও পাকিস্তান। বাংলদেশের উত্তরাঞ্চলে এটি হেজ (hedge) হিসেবে এবং বাড়িঘরে সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য রোপণ করা হয়। যে কোনো ধরণের মাটিতে এটি হলেও ৭৫০-২১২৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত শজিনার জন্য উত্তম। কিন্তু এটি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
তিন ধরণের শজিনা আছে। (ক) শ্বেত শজিনা (অপর নাম কৃষ্ণ গন্ধা) (খ) রক্ত শজিনা (অপর নাম মধু শিগ্রুী) এবং (গ) নীলা শজিনা বা কৃষ্ণ শজিনা। আমাদের দেশে শ্বেত শজিনা পাওয়া যায় এবং ভারতের মালহদে রক্ত শজিনা পাওয়া যায়। তবে কৃষ্ণ শজিনা বনৌষধি হিসেবে খুব বেশি উপকারী কিন্তু এটি খুব বিরল।
বিস্তৃতি:
শজিনার আদি নিবাস ভারতের পশ্চিমাঞ্চলও পাকিস্তান। বাংলদেশের উত্তরাঞ্চলে এটি হেজ (hedge) হিসেবে এবং বাড়িঘরে সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য রোপণ করা হয়। যে কোনো ধরণের মাটিতে এটি হলেও ৭৫০-২১২৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত শজিনার জন্য উত্তম। কিন্তু এটি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
বীজ সংগ্রহ ও বংশবিস্তার:
বীজ সংগ্রহের সময়
এপ্রিল-জুন মাস বীজ সংগ্রেহের উপযুক্ত সময়।
বীজের সংখ্যা:
প্রতি কেজিতে ১২০০-২০০০টি বীজ পাওয়া যায়।
বংশবিস্তার:
প্রতিটি লম্বা শজিনা ফলে ১০-১৫টি বীজ থাকে, এগুলো তিন শিরাবিশিষ্ট এবং ত্রিভূজাকৃতির। বীজ থেকে বংশবিস্তার সম্ভব হলেও অঙ্গজ বা কাটিং (Cutting) থেকে নতুন চারা তৈরী করাই সহজ এবং উত্তম। সিড বেডে কাটিং দিলে ২ স্পতাহের মধ্যে কুশি গজায় এবং শতকরা ৯০টি নতুন চারা পাওয়া যায়। এক বছর বয়সী কাটিং চারা রোপণের জন্য উত্তম। উষ্ণ ও আর্দ্র পলিমটি শজিনা গাছের জন্য উপযুক্ত।
ঔষধি গুণ:
শজিনা ফল, মূল, ছাল ও বিচি ওষধ হিসেবে ব্যবহার হয়।
১। অপুষ্টি হল অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। অন্ধত্ব নিবারণে Indian Royal Commonwealth Society for Blind প্রচুর ‘এ’ ভিটামিন সমৃদ্ধ শজনে পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
২। মূলের ছাল বায়ুনাশক, হজম বৃদ্ধিকারক এবং হৃৎপিন্ড ও রক্ত চলাচলের শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
৩। মূলের ছালের জলীয় নির্যাস স্নায়বিক দুর্বলতা, তলপেটের ব্যথা ও হিষ্টেরিয়া চিকিৎসায় উপকারী।
৪। শজিনা ফলের নির্যাস যকৃৎ ও প্লীহার অসুখে, ধনুষ্টঙ্কার ও প্যারালাইসিসে উপকারী।
৫। শজিনার বীজ Fixed oil রয়েছে, যা প্রদাহবিরোধী (Ghani, 2002) তাই (ক) বিচির তেল বাত রোগের চিকিৎসায় মালিশ হিসেবে ব্যবহার হয়।
(থ) শজিনার শিকড়ের ক্বাথ গেঁটে বাত, কটি বেদনা ও সাধারণ বাত রোগে দুধের সাথে ব্যবহার হয়।
(গ) শরীরে কোনো অঙ্গ মচকালে বা থেঁতলালে আদা ও শজনে ছাল বাটা প্রলেপ দিলে উপশম হয়।
অন্যান্য ব্যবহার:
শজিনা কাঠের কোন ব্যবহার নেই। ফল ও পাতা পুষ্টিকর তরকারি ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। বীজের তেল পারফিউম ও কসমেটিকে ব্যবহার হয়।