সজিনার ভেষজ গুণাবলী
সজিনা আমাদের দেশে একটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ। সজিনার ইংরেজি নাম Horse Radish Tree । এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- সংস্কৃতিতে শোভাঞ্জন, হিন্দিতে শোয়ানজন। এটি একটি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। এর কাঠ অত্যন্ত নরম, বাকল আঠাযুক্ত।
সজিনার যে অংশ ব্যবহার করা হয়
মূল, বাকল, আঠা, পাতা, ফুল ও ফল।
সজিনার ব্যবহারবিধি ও উপকারিতাসমূহ –
গর্ভপাতে সহায়ক সজিনাঃ
সজিনার বাকল গর্ভপাতকারক। এটি গর্ভাশয়ের মুখে প্রবেশ করালে গর্ভাশয়ের মুখ প্রসারিত হয়ে যায় এবং গর্ভপাত ঘটে। সজিনার আঠাও জরায়ুর মুখ প্রাসারিত করে, তাই গর্ভপাত ঘটে সহজেই।
পেটের সমস্যায় সজিনাঃ
পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেটে জমা গ্যাস দূর হয়। পাতা বমনকারক। শিকড়ের টাটকা রস এবং সরিষা ২৮.৩৪৯৫ গ্রাম মাত্রায় খেতে দিলে প্লীহা ও লিভার বৃদ্ধিজনিত শোথ রোগ সেরে যায়।
সর্দি জ্বরে সজিনাঃ
পাতার শাক খেলে ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর ও যন্ত্রণাদায়ক সর্দি ভাল হয়। এর তরকারী খেলে সর্দি, কাশি ভাল হয় এবং এর চাটনী হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এর ক্বাথ সর্দি, কাশি, হাঁপানি প্রভৃতি রোগে বিশেষ কার্যকর।
ব্যথানাশক সজিনাঃ
সজিনা পাতার ক্বাথ পরিমাণ মত পান করলে শরীরের যাবতীয় ফোলা সেরে যায়। সজিনার বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা মালিশ করলে বিভিন্ন বাত বেদেনা, অবশতা, আঁতুর, কটিশূল, সায়াটিকা, বোধহীনতা প্রভৃতি রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। বাকলের প্রলেপ দিলে স্নায়ুশূল, বাতবেদনা প্রভৃতি সেরে যায়।
মূত্র রোগে সজিনাঃ
সজিনা ফুল দুধের সাথে রান্না করে নিয়মিত খেলে কামশক্তির বৃদ্ধি ঘটে। এতে প্রস্রাব দোষও সেরে যায় কারণ এটি মূত্রকারক। ফুলের ক্বাথ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্রপাথরী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সজিনার বাকল উত্তেজক ও মুত্রকর। শিকড়ের রস গাভীর দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্র রোগ ভাল হয়।
শরীরের ফোলা স্থানে সজিনাঃ
শরীরের কোন স্থানে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে সজিনার শিকড় বেঁটে প্রলেপ দিলে ব্যথা এবং ফোলা সেরে যায়। শিকড়ের ক্বাথ পান করলেও বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
বিভিন্ন রোগে সজিনাঃ
কুকুরের বিষ নষ্ট করতে- সজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ নষ্ট হয়।
বহুমূত্র রোগে- পাতার এক পোয়া রস প্রায় ১১.৬৩ গ্রাম সৈন্ধব লবণের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে বহুমূত্র রোগ সেরে যায়।
হিক্কা রোগে- সজিনা পাতার রস পান করলে হিক্কা রোগ ভাল হয়।
স্কার্ভি রোগে- পাতার রস স্কার্ভি রোগে ব্যবস্থা করা হয়। এটি স্কার্ভিরোগ নাশক।
কান ব্যথায়- শিকড়ের রস কানে দিলে কান ব্যথা ভাল হয়ে যায়।
বাত রোগে- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়ার ব্যথায় (গেঁটে বাত) এটি বিশেষ উপকারী। কচি ফল নিয়মিত রান্না করে খেলেই গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
মাথা ব্যাথায়- সজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যাথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করলেও ব্যথা সেরে যায়।
অন্যান্য রোগে সজিনাঃ
• সজিনার ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দোষ দূর করে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, কফ, শ্লেষ্মা নির্গত করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, সর্দি-কাশি, হাঁপানি, নিবারণ করে, মুখের ঘা, পিত্তদোষ দূর করে।
• এটা হাঁপানি, স্বরভঙ্গ, গলার ভিতরকার ক্ষত নিবারক। ঘুড়িকাশি, হাঁপানি, গেটেবাত, কটি শূল, বাত, প্লীহা ও লিভার বৃদ্ধি প্রভৃতি রোগে শিকড়ের ক্বাথ দুধের সাথে ব্যবস্থা করা হয়।
• আঠা বিভিন্ন চর্মরোগেও ব্যবহৃত হয়। ফোঁড়া, শরীরের ফোলা গিঠ প্রভৃতি স্থানে লাগালেও উপকার পাওয়া যায়।
• ফুলের ক্বাথ হাঁপানি রোগে বিশেষ কার্যকর। সজিনার কচি ফল ক্রিমিনাশক, লিভার ও প্লীহাদোষ নিবারক। প্যারালাইসিস, টিটেনাস প্রভৃতি রোগে কার্যকর।
সজিনা অনেক উপকারী। এর ঔষধি গুণ অনেক। আমাদের উচিত নিয়ম অনুযায়ী সজিনা সেবন করা।