15.3 C
New York
Friday, September 22, 2023
spot_img

হালদা রক্ষায় রাবার ড্যামের বিকল্প খুঁজছে কৃষি মন্ত্রণালয়

হালদা রক্ষায় রাবার ড্যামের বিকল্প খুঁজছে কৃষি মন্ত্রণালয়

কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১১ সালে হালদা নদীর ফটিকছড়ির ভুজপুরে এবং নদীটির শাখা হারুয়ালছড়ি খালে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। এসব ড্যামের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে নদীর উজান থেকে সরিয়ে নেয়া হয় পানি। এতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে স্বাদু পানির মাছের সবচেয়ে বড় প্রজননক্ষেত্র হালদা। এ অবস্থায় হালদা রক্ষায় রাবার ড্যামের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা করছে সরকার। কৃষিতে পানি ব্যবহারের একটি বিকল্প প্রকল্পও হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের ক্ষতি না করে হালদায় রাবার ড্যামের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলার কৃষকদের হালদার পানি ব্যবহার থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। পাশাপাশি ধীরে ধীরে রাবার ড্যামগুলো সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে উত্স থেকে নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ বণিক বার্তাকে বলেন, হালদাকে রক্ষার জন্য কাজ করছে সরকার। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান এলাকার মানুষের কৃষিতে পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে রাবার ড্যাম স্থাপন করা হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে রাবার ড্যামের নির্ভরতা কমাতে একটি প্রকল্পও প্রস্তুত করেছি আমরা। শিগগিরই এটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে হালদার পানির ব্যবহার কমিয়ে ভিন্নভাবে ওইসব এলাকায় কৃষিতে পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

হালদা নদীর উজানে ছয় বছর আগে কৃষি মন্ত্রণালয় নির্মিত এ দুটি রাবার ড্যামে সে সময় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে  দেরিতে হলেও রাবার ড্যাম স্থাপনের বিষয়টি ভুল ছিল বলে স্বীকার করেছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি রাবার ড্যাম এলাকা পরিদর্শন করেন এলজিইডির পার্টিসিপেটরি স্মল স্কেল ওয়াটার রিসোর্সেস সেক্টর প্রকল্পের পরিচালক শেখ মো. নুুরুল ইসলাম। এ সময় হালদার মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এলজিইডি রাবার ড্যাম নির্মাণে কারিগরি সহযোগিতা দিলেও হালদায় রাবার ড্যামের নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে অবগত ছিল না। মত্স্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় এলজিইডি রাবার ড্যাম নির্মাণে কাজ করে। দেশের স্বার্থে হালদা নদীকে রক্ষায় রাবার ড্যামমুক্ত করতে এলজিইডি কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে গত ২৮ মার্চ নদী কমিশনের চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম ও সদস্য মো. আলাউদ্দিন মানিকছড়ি থেকে ভুজপুর পর্যন্ত হালদা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে নিরুত্সাহিত করার পাশাপাশি হালদার পানির ব্যবহার কমানোর বিষয়ে অবহিত করেন তিনি।

হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘পরিবেশবাদীরা বিভিন্ন সময় হালদায় রাবার ড্যাম নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু মত্স্য বিভাগের উদাসীনতায় এলজিইডি ও কৃষি মন্ত্রণালয় দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। কয়েক বছরের মধ্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে হালদায়। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণার প্রাক্কালে সব সরকারি সংস্থা এখন হালদা রক্ষায় এগিয়ে আসছে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কাজ না করলে এসব উদ্যোগও সুফল বয়ে আনবে না।’

চট্টগ্রামের হালদা নদীকে ইসিএ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় অনেক আগেই। কয়েক দফা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ইসিএ ঘোষণার বিষয়টি এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। শিগগিরই এটি রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হবে।

ছয় বছর আগে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ ছাড়াও পাকিস্তান আমলে ফটিকছড়ি সদর এলাকায় হালদার আরেক শাখা ধুুরুং খালে কংক্রিট বাঁধ নির্মাণ করা হয়। দুটি রাবার ড্যাম ও একটি কংক্রিট বাঁধের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে উজানে পানি ধরে রাখার কারণে হুমকির মুখে পড়ে হালদা। পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় প্রজনন ছাড়াও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। প্রতি বছর মে-জুনে হালদা নদীতে এক বা একাধিকবার মা-মাছ প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়লেও ২০১৬ সালে কোনো ডিম ছাড়েনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিম সংগ্রহকারী ও পরিবেশ সংগঠকদের দাবির মুখে হালদা নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয় সরকার।

পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাতের তত্ত্বাবধানে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। মত্স্য ও পাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। এক বছর ধরে গবেষণা কার্যক্রমের পর সরকার হালদার ওপর নির্মিত রাবার ড্যামের বিষয়ে একটি স্থায়ী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।

বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটাসমৃদ্ধ নদী হালদা স্বাদু পানির মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র। রুইজাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয় এ নদী থেকে। প্রতি বছর হালদা থেকে পাওয়া রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ মাছের পোনা সারা দেশের মত্স্যচাষীরা প্রতি কেজি ৫০-৬০ হাজার টাকায় কিনে নেন। হালদার ডিম ও পোনা থেকে ভালো মানের মাছ চাষে লাভবান হন কৃষক। গবেষকদের মতে, হালদার একটি মা-মাছ প্রতি বছর প্রায় চার কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা দেয় দেশকে। এ অবস্থায় ইসিএ ঘোষণার মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হলে হালদার মাধ্যমে মত্স্য খাতে দেশের অগ্রগতি বেগবান হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোর্স- বনিকবার্তা

 

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,867FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles