পানি কচু চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হবে সবাই পড়ে সবার সাথে শেয়ার করে দিবেন যাতে অন্য কৃষি উদ্যোক্তা বন্ধুরাও শিখতে পারে।
আজকে আলোচনা করা হবে পানি কচু চাষ পদ্ধতি নিয়ে। কচুর লতির পাশাপাশি পানি কচু ও এখন অনেক চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক কৃষি উদ্যোক্তাই এখন পানি কচু চাষ করছে।
পানি কচুর জাত পরিচিতি
জাতের নাম | ক্লিক করুন | জীবনকাল ও বপন সময় | বিঘা প্রতি ফলন (মণে) | ||
বারি পানি কচু-১ (লতিরাজ) | ১৮০-২৭০ চৈত্র-ভাদ্র
(লাগানোর ২ মাস পর থেকে ৭ মাস পর্যন্ত লতি হয়ে থাকে) |
কান্ডঃ ৫৫-৭০,
লতিঃ ৯০-১০৫ |
|||
এ জাতে কান্ড অপেক্ষা লতির প্রাধান্য বেশি। গাছ মাঝারী, পাতা সবুজ, পাতা ও বোঁটার সংযোগস্থলের উপরিভাগ লাল রং বিশিষ্ট যা জাতটির সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য। লতি লম্বায় ৩ ফুট থেকে ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি, সামান্য চ্যাপ্টা, হাল্কা পিংক রং বিশিষ্ট। লতি সমানভাবে সিদ্ধ হয়, গলা চুলকানীমুক্ত (ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম)। দেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়। | |||||
বারি পানি কচু-২ | – | কান্ডঃ ৬৫-৮০
লতিঃ ৯০-১০৫ |
|||
এ জাতে কান্ড অপেক্ষা লতির প্রাধান্য বেশি। এ জাতটি প্রচুর উৎকৃষ্ট মানের লতি উৎপাদন করে যার লতি লম্বায় সোয়া ৩ ফুট, লতি গোলাকার, অপেক্ষাকৃত মোটা ও গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। লতি সমানভাবে সিদ্ধ হয়, গলা চুলকানীমুক্ত (ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম)। দেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়। | |||||
বারি পানি কচু-৩ | – | কান্ডঃ ৯০-১০৫
লতিঃ ৩৫-৪২ |
|||
এ জাতে কান্ড হলো প্রধান ভক্ষণযোগ্য অংশ। কান্ড গোলাকার, মোটা ও হালকা সবুজ বর্ণের হয়। কান্ডের দৈর্ঘ্য সোয়া ৩ ফুট, সমানভাবে সিদ্ধ হয়, গলা চুলকানীমুক্ত (ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম)। দেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়। | |||||
বারি পানি কচু-৪ | – | কান্ডঃ ২৫-১৬০
লতিঃ ২০-৩০ |
|||
এ জাতের গাছ খাড়া, কান্ড থামাকার এব সবুজ বর্ণের। পাতা সবুজ ও peltate আকৃতির। কান্ড মোটা ও গোলাপী বর্ণের হয়। পত্রফলকের মধ্য ও অন্যান্য শিরা নিম্নপৃষ্টে গাঢ় গোলাপী রঙের এবং উপরের পৃ্ষ্ঠে গোলাপী রঙের। বোঁটা এবং পত্র ফলকের সংযোগস্থল গোলাপী রঙের। রাইজোম গোলাপী রঙের এবং ফ্লেস হালকা গোলাপী যা অন্য জাত থেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এটি মূলত রাইজোম উৎপাদিত তবে অল্প পরিসরে লতিও উৎপন্ন করে। কান্ড সমানভাবে সিদ্ধ হয়, গলা চুলকানীমুক্ত (ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম)। দেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়। | |||||
বারি পানি কচু-৫ | – | কান্ডঃ ২৫-১৫০
লতিঃ ২০-৩০ |
|||
এ জাতের গাছ খাড়া, কান্ড থামাকার এব সবুজ বর্ণের। পাতা সবুজ ও peltate আকৃতির। কান্ড মোটা ও সবুজ বর্ণের হয়। পত্রফলকের মধ্য ও অন্যান্য শিরা সবুজ রঙের এবং উপরের পৃ্ষ্ঠে গোলাপী রঙের। বোঁটা এবং পত্র ফলকের সংযোগস্থল সবুজ রঙের। রাইজোম হালকা সবুজ রঙের এবং ফ্লেস সাদাটে যা অন্য জাত থেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এটি মূলত রাইজোম উৎপাদিত তবে অল্প পরিসরে লতিও উৎপন্ন করে। কান্ড সমানভাবে সিদ্ধ হয়, গলা চুলকানীমুক্ত (ক্যালসিয়াম অক্সালেট কম)। দেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়। |
উৎসঃ বারি কৃষি প্রযুক্তি হাত বই (৬ষ্ঠ সংস্করণ), বারি, গাজীপুর
পানি কচুর বপন/রোপণ প্রযুক্তি
রোপনের সময়ঃ
আগাম ফসলের জন্য কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর), নাবী ফসলের জন্য মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল)। তবে বানিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য অগ্রহায়ন-পৌষ (ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারী) মাসে চারা লাগানো হয়।
বীজ হারঃ বিঘা প্রতি ৫০০০ টি চারার প্রয়োজন হয়।
স্পেসিং/দূরত্বঃ সারি – সারির দূরত্ব হবে = ২ ফুট, গাছ – গাছের দূরত্ব হবে= ১.৫ ফুট।
উৎসঃ বারি কৃষি প্রযুক্তি হাত বই (৬ষ্ঠ সংস্করণ), বারি, গাজীপুর
পানি কচু চাষে সার ব্যবস্থাপনা
পানি কচুর ভাল ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি শতাংশ (ডেসিমাল) মাঝারি উর্বর জমির জন্য নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট (দস্তা), বোরণ ও অর্ধেক পটাশ সার জমি তৈরির আগে শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১.৫-২ মাস পর অবশিষ্ট পটাশ ও ইউরিয়া সারের ছয় ভাগের এক ভাগ ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি পাঁচ ভাগ ইউরিয়া সার সমান কিস্তিতে ১৫ দিন পর পর জমিতে সারির পার্শ্বে প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম | সারের পরিমাণ
|
মন্তব্য |
পচা গোবর/কম্পোস্ট | ৪০.০০-৬০.০০ কেজি | এলাকা বা মৃত্তিকাভেদে সারের পরিমাণে কম-বেশী হতে পারে। অধিকতর তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন। |
ইউরিয়া | ১.২০-১.৪০ কেজি | |
টিএসপি | ০.৬১-০.৮১ কেজি | |
এমওপি/পটাশ | ১.২০-১.৪০ কেজি | |
জিপসাম | ০.৪০-০.৫৩ কেজি | |
দস্তা | ০.০৪-০.০৬ কেজি | |
বোরণ | ০.০৪-০.০৫ কেজি |
প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট (দস্তা), বোরণ ও অর্ধেক পটাশ সার জমি তৈরির আগে শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১.৫-২ মাস পর অবশিষ্ট পটাশ ও ইউরিয়া সারের ছয় ভাগের এক ভাগ ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি পাঁচ ভাগ ইউরিয়া সার সমান কিস্তিতে ১৫ দিন পর পর জমিতে সারির পার্শ্বে প্রয়োগ করতে হবে।
উৎসঃ বারি কৃষি প্রযুক্তি হাত বই (৬ষ্ঠ সংস্করণ), বারি, গাজীপুর