Home Blog

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা 

0
আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা 
আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা 

Table of Contents

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার কি?

আপেল থেকে গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয়।

অ্যাপেলের রসে ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা
হয় আপেল সিডার ভিনেগার যা আপেল জুসকে অ্যালকোহলে পরিনত করে।

ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে অ্যালকোহল এসিটিক অ্যাসিডে পরিনত হয়ে অ্যাসিটো ব্যাকটেরিয়া জন্ম দেয়।

এ ভিনেগারে ৯৪% পানি, ১% কার্বোহাইড্রেট ৫% অ্যাসেটিক এসিড থাকে এবং কোনও ফ্যাট বা প্রোটিন নেই। ইহা ২২ ক্যালোরি সরবরাহ করে।

এটি শরীরের জন্য উপকারী। এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।

এসিটিক অ্যাসিড থাকার জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাদ সাধারণত টক হয় এবং রঙ হয় হালকা বাদামি।

এতে খনিজ লবণ, ভিটামিনস, মিনারেলস, অ্যামিনো অ্যাসিডস, অর্গানিক অ্যাসিডস, পলিফেনল কম্পাউন্ডস রয়েছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এর মধ্যে।

যখন Apple Cider Vinegar প্রস্তুতির ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির মেয়াদকাল আরো বাড়ানো হয়, তখন এতে বেশকিছু উপকারী এনজাইম, ইস্ট এবং এসিটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়ে যায়।

এই উপকারী উপাদানসমূহকে একত্রে “মাদার” বলা হয়।
সিডার ভিনেগার উইথ মাদার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং উপকারী।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার দেখতে ঘোলাটে ও তুলনামূলকভাবে ঘন হয়ে থাকে।

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার নিয়ম, পরিমান ও সময়

বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানির সাথে দেড় (1½) চা চামচ (৭.৫ মিলি) আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে হবে।

পানির সাথে না মিশিয়ে সরাসরি পান করা যাবে না। পান করার পর অবশ্যেই ½ ঘন্টা দ্রুত হাটা ও ½ ঘন্টা ব্যায়াম করতে হবে।

যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে ২৫০ মিলি পানিতে দেড় (1½) চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে হবে।

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার ২০-৩০ মিনিট পর অবশ্যই কিছু খাওয়া উচিৎ। ডা: জাহাংগীর কবিরের মতে,

আপেল সিডার ভিনেগার ১ চা চামচ ১ গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিবার খাবার খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে দিনে ২-৩ বার পান করতে হবে। এর সাথে লেবুর রস বা আদার রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।

দীর্ঘ দিন ধরে আপেল সিডার ভিনেগার না খেয়ে মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে পান করলে ভাল। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার খেলে এর অম্ল গুণ শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা

১. ডায়াবেটিস কমায় (রক্তে সুগারের পরিমান কমায়, ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং রক্তের সুগার ও ইনসুলিনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ার গতি কমায়।

বিশেষ করে Type-2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া শুরু করলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে সুগারের মাত্রা প্রায় ৩১% কমে যায়।

একাধিক গবেষণাতে দেখা গেছে, আপেল সিডার ভিনেগার সেবন করলে রক্তের সুগারের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন গ্রহণ না করে

আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা

২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে সকালে সুগারের এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাতে দেখা গেছে,

যে সকল লোক শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের আগে আপেল সিডার ভিনেগার পান করেন তাদের রক্তে সুগারের মাত্রা কম। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এর অ্যান্টি গ্লাইসেমিকের প্রভাব এর মূল চাবিকাঠি।

Type-2 ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে মাত্র ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমে ৪%।

যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারাও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ এই ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শুধু আপেল সিডার ভিনেগার পান করলেই হবে না, এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার (যেমন-ডিম, খাটি ঘি, বাদাম, শশা, শাক-সব্জি, টক ফল, তৈলযুক্ত মাছ, লাল চালের ভাত এক কাপ বা লাল আটার রুটি ১ টা ইত্যাদি) খেতে হবে

। আর প্যাকেটজাত খাবার, ভাজা-পোড়া খাবার, মিষ্টি জাতীয় ফল, সয়াবিন তেল দ্বারা রান্না করা খাবার, চিনি, ভাত ও রুটিসহ শর্করা জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে হবে।

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

ওজন কমাতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময়ে সহজে ক্ষুধা লাগে না। ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া রোগে আক্রান্ত ১৭৫ জনকে নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, রোজ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে, সেই সঙ্গে কমে পেটের মেদ।

তবে অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরিমাণও কমাতে হবে, শুধু ভিনেগারই ওজন কমাবে না।
নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ওজন কমে। অ্যাসিটিক এসিড আপেল সিডার ভিনেগারে থাকে, যা আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরের চর্বি জমতে বাধা দেয়।

প্রতিদিন ১ থেকে ২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ১২ সপ্তাহ খেলে ওজন কমানোর সাথে সাথে তলপেটের চর্বি কমে যায়।

আপেল সিডার ভিনেগার স্টার্চ পরিপাকে সাহায্য করে, ফলে রক্ত প্রবাহে ক্যালরির পরিমাণ কম হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে,

আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমাতে সাহায্য করে। ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরে ফ্যাট জমতে দেয় না, খিদে কমায়, হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয় এবং ফ্যাট বার্ন করে।

৩. রক্তের কোলেস্টেরল ও চর্বি কমায়

আপেল সিডার ভিনেগার উচ্চ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে যা ট্রাই গ্লিসারাইড (TG) কমাতে সাহায্য করে বলে প্রমাণ হয়েছে।

এছাড়াও আপেল সিডার ভিনেগার ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়ক। তাই নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে উচ্চ কোলেস্টেরল এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ।

তবে আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ২০০৬ সালে জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড দ্রুত রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

কিছু প্রমাণ রয়েছে যা অ্যাপল সিডার ভিনেগারের পক্ষে এই প্রমাণকে সমর্থন করে যে, সকালে খালি পেটে এই পানীয় পান করলে দ্রুত ওজন কমে এবং এটি চর্বি বা মেদ পোড়াতে সাহায্য করতে পারে।

এটি প্রাথমিকভাবে ডিটক্সাইফিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। সকালে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে তা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়।

যখন রক্ত চাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে তখন আপেল সিডার ভিনেগার খেলে রক্তচাপ কমে যাবে। তবে যাদের রক্তচাপ কম তাদের এই ভিনেগার থেকে দূরে থাকা উচিত।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

৫. হৃদরোগ রোগের ঝুকি কমায়

বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।

আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে।

৬. লিভার ভাল রাখে

আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের লিভারের ফ্যাট বার্ন করে লিভারকে ভালো রাখে এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।

৭. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

প্রতিদিন খাবারের সাথে ১ থেকে ২ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে।

অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়া এবং প্যাথোজেন মেরে ফেলে।

যে কারণে আমাদের শরীর নানা সংক্রমণ ও রোগভোগ থেকে মুক্তি পায়। তাছাড়া, আপেল সিডার ভিনেগার দীর্ঘ সময় খাবার সংরক্ষণ করতেও সাহায্য করে। অন্ত্র ভাল রাখে।

কিছু গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে, অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে জারণ চাপ এবং ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলোর স্তর হ্রাস করে।

এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং, অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারিতা কেবল চর্বি ঝরানো বা ওজন কমানোই নয়, পাশাপাশি শরীরের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রয়োজন হয় এটি।

৮. দেহের pH-এর সমতা রক্ষা করে

অ্যাপল সিডার ভিনেগার pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, শক্তি বাড়ায়, ক্লান্তি কমাতে পারে,

ব্যথা দূর করতে পারে এবং ওয়ার্কআউট করার সময় শরীরকে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্যামিনাকে উন্নত করতে পারে।

৯. শক্তি উদ্দীপক

অনেক সময় ব্যায়াম বা অধিক চাপ দেহে অবসাদ কারণ হয়ে দাড়ায়। আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

এতে থাকা পটাশিয়াম ও এনজাইম ক্লান্তভাবকে দূর করে। ১ গ্লাস পানিতে ১ বা ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেলে পুনরায় উদ্দীপনা ফিরে পাওয়া যায়।

১০. ক্যানসার প্রতিরোধ করে

আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ভিনেগার ক্যানসার কোষ নির্মূল ও টিউমার সারাতে ভূমিকা রাখে। তবে এটি এখনো সর্বব্যাপী স্বীকৃত নয়। এনিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

১১. পেটের সমস্যা নিরাময় করে ও হজমে সাহায্য করে

প্রত্যেকেই প্রায় প্রতি নিয়ত বিভিন্ন ধরনের পেটের ব্যথায় ভুগে। এই সমস্যা দূর করতে আমরা আপেল সিডার ভিনেগার এর সাহায্য নিতে পারি।

১ টি কাপে অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে তার সাথে পানি মিশিয়ে খেলে পেটের ব্যথা চলে যাবে এবং ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন জনিত ডায়রিয়া দূর হবে। এতে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক গুন, পেকটিন যা অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করে।

১২. রাতে পায়ের পেশিতে টান প্রতিরোধ করে

যদি রাতে প্রায়ই পায়ের পেশিতে টান লাগে, তাহলে বুঝতে হবে শরীরে পটাশিয়াম এর ঘাটতি রয়েছে।

আর আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম। তাই ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

১৩. অ্যাসিডিটি দূর করে

যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করতে হবে, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যাবে (যাদের আলসার আছে তাদের জন্য নয়)।

১৪. গলা ব্যথা দূর করে

½ কাপ কুসুম গরম পানিতে ½ কাপ আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে ১ ঘণ্টা পরপর কুলি করলে গলার ব্যথা কমে যাবে।

কারণ আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড জীবাণু ধ্বংস করে ও ইনফেকশনে বাধা প্রদান করে।

১৫. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

নিয়মিতভাবে ব্রাশ ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করার পরেও মুখের দুর্গন্ধ যাচ্ছে না? তাহলে তারা আপেল
সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

কুলকুচা করে বা ১ চা চামচ ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যাবে।

১৬. দাঁতের জন্য উপকারী

আপেল সিডার ভিনেগার সাধারণত ব্লিচিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি মাউথওয়াশ হিসেবেও কাজ
করে।

তাই আপেল সিডার ভিনেগার দাঁত সাদা ও দাঁতের রং ভালো করে এবং মুখে থাকা
ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার জন্য এর কোন তুলনা নেই।

তবে আপেল সিডার ভিনেগার অত্যধিক ব্যবহারে দাঁতের ক্ষতি হয়। তাই অতিরিক্ত ভিনেগার ব্যবহার
করা থেকে দূরে থাকতে হবে।

১৭. ত্বকের জন্য টনিক

আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের টনিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অল্প পরিমাণ আপেল সিডার
ভিনেগার নিয়ে পানির সাথে বা গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে যেখানে ব্রণ সৃষ্টি হয়েছে, সেই স্থানে নিয়মিত
লাগালে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ব্রণ চলে যাবে।

পেডি-কিউর করতে কুসুম গরম পানিতে কিছু
পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পায়ের যত্নে সপ্তাহে ব্যবহার করা যাবে।

এছাড়াও সান ট্যান
রিমুভ করতে অলিভ অয়েল বা পানির সাথে অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে স্কিনে এপ্লাই
করলে সান ট্যান দূর হবে।

১৮. ব্যাকটেরিয়া নিধন করে

শরীরের বিভিন্ন অংশে মাঝে মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় এই সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে আপেল
সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায়।

নিয়মিত কিছুটা আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সংক্রামক স্থানটি
ভালোভাবে পরিষ্কার করলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর হবে।

ত্বকের অনেক সমস্যা যেমন ব্রণ, র‌্যাশ,
আঁচলি, মেছতা, নখের মধ্যে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন ক্ষতিকারক ছত্রাক, কান ও গলার ইনফেকশন দূর
করতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার হয়ে থাকে।

১৯. চুলের জন্য উপকারী

আপেল সিডার ভিনেগার চুলে ব্যবহার করলে চুল স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ও লম্বা হয়। পাত্রে পরিমাণ মতো
আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সম পরিমাণে পানি মিশিয়ে শ্যাম্পু করার পর মিশ্রণটি দিয়ে চুল
ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

এতে করে চুলে কন্ডিশনিং হবে, তাছাড়া চুলের খুশকি যাবে এবং চুল
নতুন করে গজাবে।

২০. কালশিটে দাগ মুছতে

আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামাটরি উপাদান। কালশিটে দাগ এর উপর এটির প্রলেপ
আস্তে আস্তে দাগ বিলীন করতে সাহায্য করে।

আবার ১ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার গোসলের ১০
মিনিট আগে সারা শরীরে মেখে রাখবেন। এতে করে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে। তাছাড়া গোসলের
পানিতে দিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।

মন প্রফুল্লও হবে, রোদে পোড়া দাগও কমবে।
আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত পান করার অপকারিতা

দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার ভিনেগার খেলে এর অম্ল গুণ শরীরের ক্ষতি করতে
পারে।

বেশি পরিমাণে আপেল সিডার ভিনিগার খেলে দাঁত, ইসোফেগাস ও স্টমাক লাইনিং এর ক্ষতি হতে
পারে।

হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে।

সরাসরি গ্লাস থেকে এটি পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে তা দাঁতের সংস্পর্শে আসে। দাঁতের
এনামেল ক্ষয়ে গিয়ে দাঁত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

তাই অনেকেই স্ট্র দিয়ে সরাসরি আপেল সিডার
ভিনিগার পান করার কথা বলে থাকেন।

আপেল সিডার ভিনিগার বেশি ব্যবহার করলে চোখ, হৃৎপিণ্ড ও ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
যদি এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় তবে এটি ক্ষতিকর হবে না।

প্রতিদিন আপেল সিডার ভিনিগার খেলে অন্ধত্ব, টাক, পাকা চুল এবং পুরুষত্বহীনতা হতে পারে।

প্রতিদিন আপেল সিডার ভিনেগার খেলে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন-পেট খারাপ,
অম্বল, মাড়ি ফুলে যাওয়া, গলা ব্যথা ও এলার্জি।

ত্বকে এলার্জি থাকলে আপেল সিডার ভিনিগার ব্যবহারের ফলে ত্বকে জ্বালা-পোড়া হতে পারে।
আপেল সিডার ভিনেগার বেশি খাওয়ার ফলে রুচি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

পরিমাণের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেললে বমি বমি ভাব হতে পারে, এমন কি বমি হতে পারে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করার ক্ষেত্রে সতর্কতা

আপেল সিডার ভিনেগার কখনোই সরাসরি পান করা যাবে না। অবশ্যই পানির সঙ্গে মিশিয়ে
পাতলা করে পান করতে হবে। এই পানীয়তে অন্য কিছু ভুলেও মিশানো যাবে না।

বেশি বেশি বা খুব ঘন ঘন পান করা যাবে না, করলে তাতে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে।
ইহা পান করতে Straw বাবহার করা ভাল।

দীর্ঘ সময় ধরে আপেল সিডার ভিনেগার না খেয়ে মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে পান করলে ভাল।

কালশিটে দাগ মুছতে

বি. দ্র.: “আপেল সিডার ভিনেগার পান করার উপকারীতা” প্রবন্ধটি সম্পূর্ণই ইন্টারনেট থেকে
ডাউনলোড করে রচনা করা হয়েছে। প্রবন্ধটি খুব ভাল করে কয়েকবার পড়বেন এবং সে
মোতাবেক নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করবেন। অতিরিক্ত বেশী পান করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে লেখক
দায়ী থাকবেন না।

লেখক- বিজ্ঞানী ড. কে এম খালেকুজ্জামান
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব)
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি)

ছাদে মুরগি পালন করার পদ্ধতি

0
ছাদে মুরগি পালন
ছাদে মুরগি পালন

ছাদে মুরগি পালন করার পদ্ধতি

ছাদে সবজি ও ফল নিয়মিত চাষ হচ্ছে পাশাপাশি মাছ ও চাষ হচ্ছে কিন্তু আজকে আমরা আলোচনা করবো ছাদে মুরগি পালন করার পদ্ধতি নিয়ে। সবাই মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেল টি পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন ছাদ বাগান প্রেমী বন্ধুদের।

ছাদে মুরগি পালন নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান? 

গ্রাম বা শহরে ছাদে বাগানের পাশাপাশি মুগরি পালন করা যায়। ছাদে পালনের জন্য মুরগি বা জাপানি কোয়েল পাখিই সবচেয়ে উপযোগী। তবে কবুতর বা তিতির চাষও করা যেতে পারে। ছাদে মুরগি পালন করতে হলে লেয়ার (ডিম উংপাদন জন্য) পালন করা ভাল।

ছাদে পালন উপযোগি মুরগির জাত : আমাদের দেশে লেয়ার মুরগির বিভিন্ন জাত পাওয়া যায়। হাইব্রিড জাতের মুরগি ১৮ – ২০ সপ্তাহ ( সাড়ে চার মাস ) বয়সে ডিম দেওয়া শুরু করে এবং ৭২ – ৮৪ সপ্তাহ ( ১৮ মাস বা দেড় বছর ) পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। জাত ভেদে প্রতিটি মুরগি বছরে ২৮০ – ৩৩০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। ছাদে পালনের উপযোগি কিছু হাইব্রিড জাত হলো লোহম্যান ব্রাউন, হাই-লাইন ব্রাউন, ব্যাবোলনা টেট্রা এস এল, নিক চিক ব্রাউন, বোভানস গোল্ড লাইন, বি. ভি. -৩০০, ইসা ব্রাউন ইত্যাদি।

মুরগি পালন পর্বকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় :

১. বাচ্চা মুরগি পালন।

২. বয়স্ক মুরগি পালন।

১. বাচ্চা মুরগি পালন-

বাচ্চা পালন পর্বকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :- ক. ব্রুডিং পর্ব , খ. গ্রোয়িং বা বৃদ্ধি পর্ব।

ক. ব্রুডিং পর্ব : এ পর্বটি মুরগির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ের সঠিক যত্নের ওপরই এদের ভবিষ্যত জীবনের উতপাদন নির্ভর করে। এ পর্বটির স্থিতিকাল ১ – ৩৫ দিন পর্যন্ত।

খ. গ্রোয়িং বা বৃদ্ধি পর্ব : যেহেতু এটি বৃদ্ধি পর্ব তাই এ পর্বের সঠিক যত্নের ওপর এদের বৃদ্ধি ও ভবিষ্যত উতপাদন অনেকাংশে বির্ভর করে। এই পর্বের স্থিতিকাল ৩৫ – ৭২ দিন পর্যন্ত।

২. বয়স্ক মুরগি পালন –

ছাদে অল্প পরিসরে মুরগি পালন করতে হলে এই পর্ব থেকে শুরু করা ভাল। এই পর্ব শুরু হয় ৭২ দিন থেকে ১.৫ বছর পর্যন্ত। পরিচিত বা কোন নির্ভর যোগ্য খামার থেকে পুলেট ক্রয় করে পালন করলে ভাল হয়।

ছাদে মুরগি পালনের পদ্ধতি : মুরগি পালনের অনেক গুলি পদ্ধতি আছে তার মধ্যে ছাদে পালনের উপযোগি পদ্ধতি হল ব্যাটারি বা খাচা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি মুরগিই বিশেষভাবে তৈরি খাচার ভিতর পালন করা হয়। এ খাচা মুরগির সংখ্যার উপর নির্ভর করে এক তলা বা বহু তল তৈরি করা হয়।

খাচা পদ্ধতিতে তুলনামূলক জায়গা কম লাগে। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে রোগজীবাণুর আক্রমণ ও কম হয়। ডিম পাড়া মুরগির জন্য এটি একটি আর্দশ পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিতে মুরগি পালন করলে তুলনা মুলক খাদ্য খরচ কম হয় এবং ডিম উতপাদন বেশি হয়। খাচা তৈরিতে প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি হয়। তবে একই খাচা বার বার ব্যবহার করা যায়।

৩ ফুট লম্বা, ১ ফুট চওড়া, ১.২ ফুট উচ্চতার একটি খাচায় ৬ টা মুরগি পালন করা যায়। এমন তিনটি খাচা একত্র করে একটি তিন তলা বিশিষ্ট খাচা তৈরি করা যায়। যেখানে মোট ১৮ টা মুরগি পালন করা যায়।


খাচায় ১৮ টা মুরগির আয় ব্যয় হিসাব বর্ননা করা হল।

নিয়মিত পরিচর্যা এবং রোগবালাই দমনঃ

দে ঘর করে মুরগি পালন করতে হলে অবশ্যই এর নিয়মিত পরিচর্যা নিতে হবে।

১। নিয়মিত মল পরিস্কার করতে হবে
২। অতিরিক্ত খাবার না দেয়া সদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
৩। কোন রোগ বালাই বা চাল চলনে সমস্যা আছে কিনা লক্ষ্য রাখা
৪। মুরগির মল তরল এবং চুনার মত কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা
৫। কোন রোগ বালাই বা সন্দেহজনক কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ভেট ডক্টরের পরামর্শ নেয়া।

ছাদে মুরগি পালনে স্থায়ী খরচ:

১. খাচা তৈরি খরচ (খাবার পানির পাত্র ও ময়লার ট্রে সহ) – ২,৫০০ টাকা।
২. ১৮ মুরগি ক্রয় খরচ ( প্রতিটি ৫০০ টাকা হিসাবে ) – ৯,০০০ টাকা।

মোট স্থায়ী খরচ : ১১,৫০০ টাকা।

অস্থায়ী খরচ :

খাবার খরচ ( মুরগি প্রতি প্রতিদিন ৩.৫ টাকা হিসাবে দেড় বছরের / ৫৫০ দিন) – ৩৪,৬৫০ টাকা।
ঔষধ খরচ ( ভিটামিন / অন্যান্য ) – ১,৫০০ টাকা।

মোট খরচ: ৪৭,৬৫০ টাকা।

মোট আয়:

ডিম ( গড়ে ৮০% ডিম হিসাবে ৫৫০ দিনে মোট ডিম ৭৯২০ টা ৭.৫ টাকা প্রতি ডিম ) – ৫৯,৪০০ টাকা।
ডিম দেওয়া শেষে মুরগি বিক্রয় বাবদ ( প্রতি মুরগি ২০০ টাকা হিসাবে) – ৩,৬০০ টাকা।

মোট আয়: ৬৩,০০০ টাকা।

নিট লাভ = ৬৩,০০০ টাকা – ৪৭,৬৫০ টাকা = ১৫,৩৫০ টাকা। সাথে খাচা টা ফ্রি হয়ে গেল।

ঘরে পটিং মিক্স তৈরি পদ্ধতি

0
ঘরে পটিং মিক্স তৈরি

ঘরে পটিং মিক্স তৈরি পদ্ধতি

আমাদের কাছে অনেকেই ইনবক্সে জানতে চান কিভাবে ঘরে পটিং মিক্স তৈরি করবেন। তাই আমরা আজকে আলোচনা করবো ঘরে অথবা ছাদে পটিং মিক্স তৈরির পদ্ধতি নিয়ে।সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে স্টেপ বাই স্টেপ পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন অন্য বাগান প্রেমী বন্ধুদের কাছে।

ঘরে পটিং মিক্স তৈরি কীভাবে করবেন? 

প্রতিটি গাছেরই ঠিকমতো সুস্থ ও স্বাভবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য মাটি প্রয়োজন। গাছের মূল মাটির নিচে থাকে। এই মূলের মাধ্যমেই গাছ ঠিকভাবে গড়ে ওঠে। তাই গাছের বেড়ে উঠা সম্পূর্ণ নির্ভর করে মাটির উপর। আমরা যারা শহরে বাস করি এবং ছাদ বাগান করতে চাই তাদের ক্ষেত্রে চাই হালকা ওজন, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা সম্পন্ন মাটি। শুধু বাইরে থেকে মাটি এনে তাতে গাছ লাগালাম আর গাছ বেড়ে উঠবে তা কিন্তু সঠিক নয়।

গাছের পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে এবং বিভিন্ন রোগ যাতে না হয় আর আগাছামুক্ত গাছের বৃদ্ধির জন্য পটিং মিক্স একটি মিডিয়া। এই পটিং মিক্স কি, কেন প্রয়োজন, কিভাবে ঘরেই তৈরি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

পটিং মিক্স ছাদ বাগান বা ঘরের আঙিনায় টবে লাগানো গাছের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্রমবর্ধমান মিডিয়াম। কর্ণেল ইউনিভার্সিটিতে ১৯৬০ সালে জেমস কুডলি ও তার টিম কর্ণেল মিক্স নামে একটা মিক্স উদ্ভাবন করেন যা পটিং মিক্স হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। বিভিন্ন দেশে পটিং মিক্সের উপাদান স্থানীয় উৎস অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হতে পারে।

যেমনঃ আমেরিকাতে প্রধানত পিট মস, কম্পোস্ট, পারলাইট, ভার্মিকুলাইট ইত্যাদি মিক্স করে পটিং মিক্স তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে পিট মসের বদলে কোকোপিট বা কোকোডাস্ট এবং পারলাইট- ভার্মিকুলাইটের বদলে ঝামা ইটের টুকরা ব্যবহার করে পটিং মিক্স তৈরি করা যায়। এ ধরনের তৈরিকৃত মাটি যেমন গাছের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে তেমনি পানি নিষ্কাশন ভাল হওয়ায় পানি জমে গাছের মারা যাওয়ার ভয় থাকে না।

পটিং মিক্স তৈরিতে যা যা উপকরণ প্রয়োজনঃ

  • একটি পরিমাপের পাত্র
  • একটি প্লাস্টিকের বা ফোমের পাত্র কোকোপিট আগে থেকে ভিজিয়ে নেয়ার জন্য
  • একটি বড় পাত্র অথবা বালতি যাতে সকল উপাদান মিশানো যায় এমন
  • সিভ বা ছাকনি
  • একটি ছোট ফোর্ক বা কর্নিক( trowel)

পটিং মিক্সের প্রধান উপাদান কি কিঃ

(১) কোকোপিট বা কোকোডাষ্ট
কোকোপিট মূলত নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি হয়। ৫ কেজি/৫০০ গ্রাম এমন বড় বড় হালকা ওজনের কোকোপিটের ব্লক হিসেবে পাওয়া যায় যা দেখতে চারকোণা ইটের মতো।এছাড়াও আপনি বিভিন্ন লেপ তোশকের দোকানে গিয়ে কিনতে চাইলেও কিনতে পারবেন। কোকোপিট বাসাতেও আপনি বানাতে পারবেন নারিকেল খোসা থেকে।

(২)ভার্মিকম্পোষ্ট
ভার্মিকম্পোস্ট একটি জৈব সার যা উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। দুই মাসের বাসি গোবর বা তরি-তরকারির ফেলে দেওয়া অংশ, ফলমূলের খোসা, উদ্ভিদের লতাপাতা, পশুপাখির নাড়িভুঁড়ি হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, ছোট ছোট করে কাটা খড়কুটো খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয় তাঁকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়। এ সার সব ধরনের ফসল ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। এটি পৃথিবীতে অধিক ব্যবহৃত জৈব সারের অন্যতম, পরিবেশবান্ধব সার।
(৩)পার্লাইট
দেখতে সাদা নুড়ি পাথরের মতো। এর বদলে ভার্মিকুলাইট অথবা ইটের গুঁড়া বা ছোট পাথরের টুকরা ব্যবহার করা যায়।পার্লাইট মূলত আগ্নেয়শিলা থেকে আসে। একে ভল্কানিক রক বা ভল্কানিক গ্লাসও বলা হয়।আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে একে সংগ্রহ করা হয়। এরপর একে ছোট ছোট টুকরায় ভাগ করে ৮৫০°- ৯০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। ফলে ছোট ছোট এয়ার পকেট তৈরি হয় যার যেকারণে এটার সত্যিকারের সাইজ থেকে ১৫ গুণ বড় হয়। এজন্য খুবই নিমিষেই আঙুল দিয়ে গুড়ো করা যায়।

সতর্কতা অবলম্বন:
যখন অর্গানিক বা জৈব পদার্থ নিয়ে কাজ করা হবে তখন মুখে মাস্ক পড়ে নিতে হবে।
উপাদান গুলো মিশানোর সময় অবশ্যই হাতে গ্লাভস পরা উচিৎ।
চোখকে নিরাপদ রাখতে চশমা পরা উচিৎ।
ডাস্টযুক্ত উপাদানের জন্য স্প্রে বোতল ব্যবহার করতে হবে।
ঝড়ো আবহাওয়ায় পটিং মিক্স তৈরি থেকে বিরত থাকা।
কাজ শেষে খুব ভালো করে হাত ধোঁয়া।

পটিং মিক্স তৈরির জন্য জৈব উপাদের মিশ্রন রেশিও

*৬০% কোকোপিট
*২০%ভার্মিকম্পোষ্ট
*১৫%পার্লাইট
*৫%নিম মিক্স

প্রথম ধাপ-
একটি বড় প্লাস্টিকের পাত্রে কোকোপিটের ব্লক নিয়ে তা ছোট টুকরো করে গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে।ফলে কোকোপিট সম্পূর্ণ পানি টেনে নিয়ে ছোট্ট থেকে বড় হয়ে যাবে। হাত দিয়ে পরে তা ঝুড়ঝুড়ে করে দিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ –
আলাদা আর একটা বড় পাত্র বা বালতিতে কোকোপিটের গুড়ো এবং ভার্মিকম্পোস্ট মিশিয়ে নিতে হবে। ভার্মিকম্পোস্ট মিশানোর আগে অবশ্যই সিভ বা চালুনি দিয়ে কম্পোস্ট চেলে নিতে হবে যাতে কোনো দলা না থাকে।

তৃতীয় ধাপ-
এরপর এতে পার্লাইট যোগ করতে হবে।

চতুর্থ ধাপ-
খুব ভালোভাবে উপাদান গুলো মিশিয়ে নিতে হবে হাতের গ্লোভস পরে।

পটিং মিক্সের প্রয়োজনীয় টিপসঃ
পটিং মিক্স তৈরির ক্ষেত্রে বড় কন্টেইনার নিতে হবে। অথবা ছাদে প্লাস্টিকের পেপার বিছিয়ে নিয়েও পটিং মিক্স তৈরি করা যায়। কোকোপিট দ্রুত ভিজানোর জন্যে গরম পানি ব্যবহার করা উচিত।

ডাস্টের মধ্যে মাইক্রোস্কোপিক সিলিকা থাকে ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণে বাধা দেয়।তাই অবশ্যই বাসায় পটিং মিক্স তৈরির সময় মুখে মাস্ক পরে নিতে হয়।
যদি বাইরে থেকে পটিং মিক্স কেনা হয় তাহলে লক্ষ্য করতে হবে প্যাকেটের গায়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস মার্ক( AS 3743) আছে কিনা।

পটিং মিক্স কেন ব্যবহার করবেন?
*খরচ বাঁচানো
*মাটিসহ সার প্রয়োগ করা খুব বেশি খরচের হয়ে থাকে। কিন্তু বাসায় এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে খরচ তুলনামূলক কম হয়।
*সময় বাঁচানো
*কম সময়ে গাছের চারা বৃদ্ধি পায়।
*নিরাপদ উপাদান
*এই প্রক্রিয়াটিতে কোনো প্রকার অজৈব উপাদান থাকে যা গাছের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
*ওজনে হালকা
*আমরা যারা শহর অঞ্চলে বাগান করি ছাদ বাগান কিংবা বাড়ির আঙিনায় বা বারান্দায় তাদের জন্য গাছের পরিচর্যায় অবশ্যই টবটি হালকা হওয়া জরুরি। পটিং মিক্স ওজনে হালকা হওয়ার কারণে টবের ওজন কম হয় তাতে করে গাছের টব এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় নেয়া যায় খুব সহজে।
*পরিবেশ বান্ধব
*পটিং মিক্স এ সম্পূর্ণ জৈব উপাদানে তৈরি যা পরিবেশের জন্য নিঃসন্দেহে পরিবেশবান্ধব।
*দীর্ঘস্থায়ী
*পটিং মিক্স দীর্ঘ দিন পর্যন্ত গাছের পুষ্টি সরবরাহ করে।ফলে মাটি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় না।
*রোগমুক্ত রাখা
*বীজ সহজে অঙ্কুরিত হতে সাহায্য করে। বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ( যেমনঃ গোড়া পঁচা, শিকড় পঁচা ইত্যাদি), মাটিবাহিত রোগ( যেমনঃ চারা ঢলে পড়া, চারা পঁচে যাওয়া ইত্যাদি) থেকে রক্ষা করে।

আর্টিকেল টি পোড়ে ভালো লাগলে অন্য ছাগ বাগান প্রেমী বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন।

মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার

0
মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা

মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার

মাছ চাষে অনেক সমস্যায় ভুগে থাকেন মৎস্য চাষীরা তাই আজকে আলোচনা করবো মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার গুলো নিয়ে। সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে।

মাছ চাষে অনেক সমস্যাই দেয়া যায় এর মধ্যে শীতকালে একটু বেশি সমস্যা দেয়া যায়।শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। কারণ এ সময়ে পুকুরে পানি কমে, পানি দূষিত হয়, পানি গরম হয়, অক্সিজেন কমে যায়, গ্যাস সৃষ্টি হয়, রোগবালাইসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যার জন্য মাছের মড়ক দেখা দিতে পারে। এতে মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমস্যার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ও সমস্যা হওয়ার পরেও সমাধান করে মাছের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায়।

মাছ চাষে বিভিন্ন সমস্যা কি কি?

মাছের খাবি খাওয়া

পানিতে অক্সিজেনের অভাব হলে মাছ পানির ওপর ভেসে ওঠে খাবি খায়। অর্থাৎ বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণের চেষ্টা করে। মনে হয় মাছ পানি খাচ্ছে। মাছ খুব ক্লান্ত হয়। এতে মাছের ফলন কমে যায়।

পানিতে সাঁতারকাটা, বাঁশ পানির ওপর পেটানো, হররা টেনে তলার গ্যাস বের করে দেয়া, পুকুরে পাম্প বসিয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি করা, পানি নাড়াচাড়া করে অক্সিজেন বাড়ানো যায়। নতুন পানি সরবরাহ করেও অক্সিজেন বাড়ানো যায়। প্রতি শতাংশে এক কেজি চুন দিলে উপকার পাওয়া যায়।

কার্বন ডাইঅক্সাইডজনিত পানি দূষণঃ

পানিতে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে গেলে মাছের দেহে বিষক্রিয়া হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। খাবি খাওয়া প্রতিকারের মতো পানি নাড়াচাড়া করে অক্সিজেন বাড়ালে কার্বন ডাইঅক্সাইড কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় অতিরিক্ত কাদা সরাতে হবে।

অ্যামোনিয়াজনিত সমস্যাঃ

পুকুরে অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রঙ তামাটে অথবা কালচে রঙের হয়। এতে মাছের ছোটাছুটি বেড়ে যায়। মাছ খাদ্য খায় না। বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। মাছের মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে। সার ও খাদ্য প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে।

নাইট্রোজেনজনিত সমস্যাঃ

পানিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাছের দেহে অক্সিজেন সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়ে বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। এতে মাছের দেহ বাদামি রঙ ধারণ করে। মাছ খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে ২৫০ মিলিগ্রাম লবণ প্রতি লিটার হারে দিতে হবে।

পিএইচজনিত সমস্যাঃ

পানিতে পিএইচ কমে গেলে মাছের দেহ থেকে প্রচুর পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। মাছ খাদ্য কম খায়। পিএইচ বেশি হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। দেহ খসখসে হয়। মাছ রোগাক্রান্ত হয়। পিএইচ কম হলে চুন, ডলোমাইড বা জিপসাম ১ থেকে ২ কেজি প্রতি শতাংশ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ বেশি হলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডালপালা তিন-চার দিন ভিজিয়ে রেখে পরে তুলে ফেলতে হবে। তেঁতুল পানিতে গুলে দেয়া যায়।

পানির ওপর সবুজ স্তরঃ

পুকুরের পানির রঙ ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা পানির ওপর শ্যাওলা জন্মালে খাদ্য ও সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক ভাগ করে ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানির নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে। প্রতি শতাংশ পুকুরে ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।

পানির ওপর লাল স্তরঃ

পুকুরের পানির ওপর লাল স্তর পড়লে ধানের খড়ের বিচালি বা কলাগাছের শুকনো পাতা পেঁচিয়ে দড়ি তৈরি করে পানির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিলে পরিষ্কার হয়।

পানির ঘোলাত্বঃ

পানি ঘোলা হলে মাছ খাদ্য কম খায়, চোখে দেখে না, প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না, প্রজননে সমস্যা হয় ও রোগবালাই বেশি হয়। প্রতি শতাংশে ৮০ থেকে ১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হবে। পুকুর তৈরির সময় জৈবসার বেশি দিলে স্থায়ীভাবে ঘোলা দূর হয়। পানিতে কলাপাতা ও কচুরিপানা রাখলেও ঘোলা কমে।

পানির ক্ষারত্ব

পানি ক্ষারীয় হলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি কম হয়। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। মাছের দেহে পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় ওপরে শতাংশ প্রতি ১ থেকে ২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। লেবু কেটে দিলেও ক্ষারত্ব কমে। ছাই প্রয়োগেও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ হয়।

জলজ উদ্ভিদঃ
কচুরিপানা, কলমিলতা, চেচরা, পাতাঝাঝি, শাপলা, হেলেঞ্চা, মালঞ্চ এসব জলজ উদ্ভিদ জলাশয়ে রোদ পড়তে বাধা দেয়, মাছের চলাচল, খাদ্য গ্রহণ, প্রজননে সমস্যা করে। এসব ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদ কাঁচি দিয়ে কেটে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হয়।

মাছের রোগবালাইঃ

শীতে মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ ও ফুলকা পচা রোগ হয়। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তাহলো-

১. পুকুরের পরিবেশ ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা ২. জলজ আগাছামুক্ত রাখা ৩. পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করা ৪. অনাকাক্সিক্ষত জলজ প্রাণী অপসারণ করা ৫. অতিরিক্ত কাদা সরানো


৬. দুই তিন বছর পর পর পুকুর শুকানো ৭. চুন প্রয়োগ করা ৮. মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ৯. প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা করা ১০. হররা টানা ১১. পাখি বসতে না দেয়া ১২. জাল শোধন করে ব্যবহার করা ১৩. রোগাক্রান্ত মাছ অপসারণ করা ১৪. সব সময় ঢেউয়ের ব্যবস্থা রাখা ১৫. পানি কমে গেলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা ১৬. ভাসমান খাদ্য প্রয়োগ করা ১৭. পানি বেশি দূষিত হলে পানি পরিবর্তন করা ১৮. পুকুরে বিভিন্ন স্থানে একটু গভীর বা গর্ত করা যাতে পানি কমে গেলে মাছ সেখানে আশ্রয় নিতে পারে।

শীত ও গ্রীষ্মে প্রতিদিন পুকুরে যেতে হবে। সাত দিন পর পর মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। যে কোনো সমস্যা হলে উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

মাছের রোগবালাইঃ
মাছের রোগবালাইঃ

আর্টিকেলটি আংশিক সংকলিত।

মূল লেখকঃ কৃষিবিদ মো. ফরহাদ হোসেন

প্রভাষক (কৃষি শিক্ষা), শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল.

জনাব মো. ইউনুসুর রহমান বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১৯৮২ (বিশেষ) ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার জেলা প্রশাসক, বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্ম জীবনে এসে চাকরির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাসহ ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন ক্রোস বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি খুলনা বিভাগের ‘বিভাগীয় কমিশনার’ এর দায়িত্ব পালনকালে অন্য একজন লেখকসহ “খুলনা বিভাগের ইতিহাস” শীর্ষক পুস্তক রচনা করেছেন।

কৃষি উদ্যোক্তাদের ৫০লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ

0
কৃষি উদ্যোক্তাদের ৫০লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ

কৃষি উদ্যোক্তাদের ৫০লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ

আমাদের কাছে কৃষি উদ্যোক্তা প্রশ্ন করেন কৃষি লোণ পাবো কীভাবে? আজকে আমরা আলোচনা করবো কৃষি উদ্যোক্তাদের ৫০লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে।সবাই মনোযোগ দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন এবং অন্যান্য কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে শেয়ার করে দিন।

আমাদের দেশে মনে করা হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তার পরিবর্তে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি করে।কৃষি উদ্যোক্তাদের ৫০লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ খুজতে গিয়ে বিষয়টি ঢালাওভাবে দেখা ঠিক নয়।

আপনি একজন ভালো উদ্যোক্তা হলে যেমন ব্যবসা পরিচলনা করবেন নিয়মনীতি অনুসরন করে, তেমনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে পদ্ধতিগতভাবে নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।

তবে উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জই বটে। উদ্যোক্তাদের সাধারণত ঋণ দেয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যই হলো উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের ঋণ ও অর্থায়নের ব্যবস্থা করা।

কোন কোন ব্যাংক ঋণ দেয়:
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থবাজারে এসএমই খাতে অর্থায়নে যে সমস্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসএমই ব্যাংকিং শুরু করেছে তাদের তালিকা নিম্নরূপঃ (১) ব্র্যাক ব্যাংক (২) বেসিক ব্যাংক (৩) ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (৪) ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড (৫) প্রাইম ব্যাংক লিঃ (৬) এবি ব্যাংক (৭) মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (৮) প্রিমিয়ার ব্যাংক (৯) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (১০) সিটি ব্যাংক লিমিটেড (১১) মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিঃ (১২) স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক (১৩) ট্রাষ্ট ব্যাংক লিঃ (১৪) ব্যাংক এশিয়া (১৫) ডাচ বাংলা ব্যাংক লিঃ (১৬) সোনালী ব্যাংক লিঃ (১৭) জনতা ব্যাংক লিঃ (১৮) অগ্রনী ব্যাংক লিঃ (১৯) পূবালী ব্যাংক লিঃ (২০) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রভৃতি।

ব্যাংক একাউন্ট খোলা:
ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আপনার পছন্দ মতো ব্যাংক হতে ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংকে এই কাগজপত্রের চাহিদা ভিন্ন রকমের হয়। এছাড়া নিয়মের কিছু কিছু ক্ষেত্রেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১.ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত ফরমে ব্যাংক একাউন্ট করার দরখাস্ত। ২.দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ৩.হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এর সত্যায়িত কপি। ৪.লিমিটেড বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলে বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর রেজুলেশন কপি অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্ট খোলার সিদ্ধান্তসহ কে কে ব্যাংক একাউন্ট অপারেট করবেন তাদের নাম উল্লেখসহ গৃহীত সিদ্ধান্তের কপি। ৫.প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সনদ। ৬. মেম্বার বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সমিতি হতে নেয়া সদস্য সার্টিফিকেট। ৭. ঐ ব্যাংকের অন্য কোন একাউন্ট হোল্ডার কর্তৃক আপনার ছবি ও আবেদন পত্রে স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে এবং তাকে সনাক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ:
(ক) প্রতিটি ব্যাংকের উদ্যোক্তা/ ব্যবসায়ীদের ঋণ ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রকল্প দলিল তৈরীর ফরমেট রয়েছে। আপনি যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে ইচ্ছুক সে ব্যাংকের ফরমেট অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত পূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজ ও দলিলপত্রাদিসমেত প্রকল্প ব্যাংকে দাখিল করতে হবে।

(খ) একটি উপযুক্ত প্রোজেক্ট প্রোফাইল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আপনি বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং কনসালটেন্সী ফার্মের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ব্যাপারে এসএমই ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত তথ্য ও পরামর্শ পেতে পারেন।

(গ) যখন কোনো ব্যবসায়ী যৌক্তিকভাবে মনে করেন ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য তার ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন তখন তিনি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের বরাবরে প্রয়োজনীয় বিবরণ সম্বলিত দরখাস্ত পেশ করবেন।

এতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে;
১. ব্যাংকের নিজস্ব ফরম সংগ্রহকরন এবং তা যথাযথভাবে পূরন। ২. হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি। ৩. ব্যবসায়ের টিন নম্বর। ৪. সম্পত্তির বর্তমান মূল্যের সনদপত্র (যেখানে শিল্পটি বিদ্যমান/ প্রতিষ্ঠা করা হবে)। ৫. সম্পত্তি বন্ধক নেয়া হলে তার বৈধ চুক্তিনামা (যেখানে প্রতিষ্ঠান রয়েছে বা প্রতিষ্ঠা করা হবে)। ৬. ব্যাংকের হিসাব নং এবং জামানত স্থিতি। ৭. পৌরসভার বাসিন্দা হলে কমিশনারের সনদ। স্থানীয় পর্যায়ের হলে চেয়ারম্যান অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সনদ।

৮. লিমিটেড কম্পানি হলে মেমেরেন্ডাম এবং আর্টিক্যাল অব এসোসিয়েশনের কপি। অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হলে অংশীদারী চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি। ৯. প্রতিষ্ঠান চালু থাকা অবস্থায় ঋণ গ্রহনে ইচ্ছুক হলে ব্যবসার ১ বছরের লাভ ক্ষতির হিসাব বিবরনী। ১০. প্রতি ব্যাংকের ফর্মে উল্লেখযোগ্য একটি দিক রয়েছে যাকে লেটার অব গেরান্টি বলা হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে দুইজন যোগ্য গেরান্টারের সনদ প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হয়।

১১. প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পূর্বে কোন ব্যাংক থেকে ঋণ করে থাকলে তার হিসাবের একটি হালনাগাদ ও যথাযথ বিবরন থাকতে হবে। ১২. এসএমই খাতে কতিপয় ব্যাংক কোলেটারেল ফ্রি (জামানতবিহীন) লোন চালু করেছে। এক্ষেত্রে আগ্রহী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারী করেছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের এডভাইজারী সার্ভিস সেন্টারে এ বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। ১৩. কিছু কিছু ব্যাংকে বর্ণিত বিষয়াদির বহির্ভূত দলিলপত্রাদি প্রয়োজন হতে পারে।

এক্যুইটি এন্ড অন্ট্র্যাপ্র্যানারশীপ ফান্ড (BBGd)
ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু সম্ভাবনাময় শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে সরকারি অর্থায়নে শিল্প উদ্যোক্তাদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এক্যুইটি এন্ড অন্ট্র্যাপ্র্যান্যারশীপ ফান্ড ( ইইএফ) এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সম্প্রতি কৃষিভিত্তিক ও খ্যদ্য প্রাক্রিয়াজাতকরন প্রকল্পে ইইএফ সহায়তা প্রদান করা হয়। এসমস্ত প্রকল্পের অগ্রাধিকার খাতসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ

১. কৃষি: (ক) হাইব্রীড বীজ উৎপাদন (ধান, ভূট্রা, সব্জী ও তরমুজ), (খ) বাণিজ্যিকভাবে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে আলু বীজ উৎপাদন, (গ) বাণিজ্যিকভাবে ফুল, অর্কিড চাষ (রপ্তানি বাজারের জন্য), (ঘ) বাণিজ্যিকভাবে সরু/ সুগুন্ধ চাল (রপ্তানি বাজারের জন্য এবং প্রকৃত রপ্তানিকারক যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে), (ঙ) মাশরুম চাষ প্রকল্প।

২. মৎস্য: মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরনভিত্তিক শিল্প ঃ (ক) আইকিউএফ ফান্ড স্থাপন , (খ) মূল্য সংযোজিত মৎসজাত খাদ্য উৎপাদন, (গ) আধুনিক পদ্ধতিতে শুটকীমাছ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরন ও বাজারজাতকরণ , মৎস্য চাষ ও হ্যাচারী: (ক) বাণিজ্যিকভাবে উচ্চ মূল্যের মাছের খামার ও হ্যাচারী স্থাপন। খাদ্য উৎপাদনভিত্তিক শিল্প: মৎস ও পশুজাত গুনগত মানসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদনভিত্তিক শিল্প।

৩. পশুসম্পদ: পশুজাত খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরনভিত্তিক শিল্প স্থাপন: (ক) দুধ, ডিম প্রক্রিয়াজাতকরন প্ল্যান্ট, (খ) মাংস প্রক্রিয়াজাতকরন প্ল্যান্ট (আধুনিক কসাইখানাসহ)। প.স্বাস্থ্য রক্ষা ও ব্যবস্থাপনাভিত্তিক শিল্প স্থাপন: গবাদি পশু/ হাঁস-মুরগীর রোগ নির্ণয়/ চিকিৎসার জন্য ল্যাবরেটরী ও হাসপাতাল স্থাপন।

পোল্ট্রি উৎপাদনভিত্তিক শিল্পঃ গ্রেট-গ্র্যান্ট প্যারেন্ট ও প্যারেন্ট স্টক খামার। সুদ নেই। প্রকল্পের অর্জিত লাভ-লোকসান উদ্যোক্তার এবং ইইএফ এর মূলধনের আনুপাতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বন্টিত হবে। মোট প্রকল্প ব্যয় সর্বনিম্ন ৫০ লাখ টাকা হতে সর্বোচ্চ ১০ লাখ কোটি টাকা হতে পারে।

বিস্তারিত তথ্যের জন্যঃ এক্যুইটি এন্ড অন্ট্র্যাপ্র্যান্যারশীপ ফান্ড ইউনিট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা-১০০০ ফোনঃ ৭১২৬২৮০-৯৫, ৭১২৬১০১-২০ ওয়েবসাইটঃ www.bangladesh-bank.org

স্মল এন্টারপ্রাইজ ফান্ড:
(ক) বিভিন্ন ব্যাংকে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা থাকলেও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে বেশ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। ক্ষুদ্র শিল্পকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বিশেষ ফান্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। আলোচ্য তহবিলের আওতায় ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা স্পল্প সুদে এবং অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ পায়। এটি এসইএফ ফান্ড নামে পরিচিত।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের এসইএফ ঋণ সহায়তা প্রদান করে না। নিম্নলিখিত ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিসমূহের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্টভাবে এ ঋণ প্রদান করা হয়ঃ (১) ওয়ান ব্যাংক (২) ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (৩) প্রাইম ব্যাংক লিঃ (৪) ঢাকা ব্যাংক (৫) এনসিসি ব্যাংক (৬) উত্তরা ব্যাংক (৭) মাইডাস (৮) আইডিএলসি (৯) পিপলস্ লিজিং (১০) ইন্টারন্যাশনাল লিজিং (১১) প্রিমিয়ার লিজিং। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা লাভের জন্য উল্লেখিত ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিসমূহের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

ইন্স্যুরেন্স:
একটি শিল্প কারখানায় দুই ধরনের ইন্স্যুরেন্স পলিসি গ্রহণ করতে হয়। মূল কারখানা, বিল্ডিং, মেশিন, কাঁচামালের জন্য যে কোন মালিককে ফায়ার ও ফ্লাড পলিসি গ্রহণ করতে হয়। বিপদকালীন সময় এই ইন্সুরেন্স একটি শিল্প কারখানাকে রক্ষা করতে পারে। আর কারখানা চালু হওয়ার পর কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানির জন্য মেশিন পলিসি করতে হয়। আপনি পছন্দসই যে কোন ইন্স্যুরেন্স কম্পানিকে বেছে নিতে পারে।

সূত্র: ড. নূরুল কাদির ও অন্যান্য (২০০৯) এসএমই বিজনেস ম্যানুয়াল, ১ম এডিশন., ঢাকা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন

বারোমাসি আম বারি ১১ এর বিশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

0
বারোমাসি আম বারি ১১

বারোমাসি আম বারি ১১ এর বিশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

আজকের কৃষি এর কাছে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন বারোমাসি আম বারি ১১ এর বিশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য তাই আজকে আমরা আর্টিকেলটি সেই সকল কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য করেছি। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন অন্য কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে।

বারোমাসি আম বারি ১১ যা জানা দরকার 

বারি আম-১১
উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)

জাতের ধরণ : উফশী

জাতের বৈশিষ্ট্য :
লম্বাটে, হলুদাভ সবুজ

আম কম বেশি সবারই পছন্দের একটি ফল। কিন্ত পছন্দের এই ফলটি যখন আমাদের দেশে সারা বছরই পাওয়া যাবে তখন কতই না ভালো হবে আম প্রেমিক মানুষের জন্য। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এমনি একটি আমের জাত উদ্ভাবন করেছে যা সারা বছর ফল দিবে। আমের এই জাতটি হলো বারি আম ১১।

বারি আম ১১ এর বিশিষ্ট্যঃ

. বারি আম ১১ বারোমাসি জাতের আম অর্থাৎ সারা বছরই ফল দিয়ে থাকে।
. বছরে তিনবার ফল প্রদান করে থাকে। নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে গাছে মুকুল আসে এবং মার্চ-. । . এপ্রিল, মে-জুন এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আহরণের উপযোগী হয়।
. ফল লম্বাটে ( লম্বায় ১১.৩ সেমি ) এবং প্রতিটি আমের গড় ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম।
. কাঁচা আমের ত্বক হালকা সবুজ। আর পাকলে ত্বক হয় হলুদাভ সুবজ।
. আম গাছটির উচ্চতা ৬-৭ ফুট। গাছটির কোনো অংশে মুকুল, কিছু অংশে আমের গুটি, কিছু অংশে . . . . কাঁচা আম, আবার কোথাও পাকা আম। একটি গাছেই ফুটে উঠেছে আমের ‘জীবনচক্র’।
. এটি খেতে সুস্বাদু, তবে একটু আঁশ আছে। ফলের শাঁস গাঢ় হলুদ বর্ণের।
. এই জাতের ৪-৫ বছর বয়সী গাছ থেকে প্রতিবার ৬০-৭০টি আম আহরণ করা যায়। এছাড়াও এই . . . . . জাতের একটি গাছে বছরে প্রায় ৫০ কেজি পর্যন্ত আম হয়ে থাকে।
. বারি আম ১১ এর এক বছর বয়সী গাছে আমের মুকুল আসে।
. আম গাছের একটি থোকার মধ্যে ৫-৬ টি আম থাকে।
. আমের উচ্চফলনশীল এই জাতটি বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ উপযোগী।
. আমের এই জাতটি সম্পূর্ণ দেশীয় আম হাইব্রিড নয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়ণের ফলে সৃষ্ট।


চাষের উপযুক্ত জমিঃ

মাঝারি উঁচু জমি এবং দোআঁশ মাটি বারি আম-১১ চাষের জন্য উপযোগী।

চারা বপনের নিয়মঃ

লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব (ইঞ্চি ) : ৩১৪

চারা থেকে চারার দূরত্ব (ইঞ্চি) : ৩১৪

শতক প্রতি ফলন (কেজি) : ৮০ – ৯০

হেক্টর প্রতি ফলন (টন) : ২২

উপযোগী ভূমির শ্রেণী : মাঝারি উচু

উপযোগী মাটি : দোআঁশ

উৎপাদনের মৌসুম : সারা বছর

বপনের উপযুক্ত সময় :

জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় / ভাদ্র – আশ্বিন (মে-জুন/ আগস্ট-সেপ্টেম্বর)

ফসল তোলার সময় :

মে মাস আমের মৌসুম হওয়ায় এ মাসে আমের ফলন বেশি হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগস্ট মাসে, তৃতীয় পর্যায়ে নভেম্বর এবং চতুর্থ পর্যায়ে ফেব্রুয়ারি মাসে আম পাকবে।

বংশবিস্তারঃ বারি আম-১১ বীজের বা কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা যায়। বীজ থেকে চারা উৎপাদন করলে মাতৃগাছের মতো ফল পাওয়া যায় না। তাই কলমের মাধ্যমেই এই জাতের আমের চারা উৎপাদন ও বংশবিস্তার করা উত্তম। এক্ষেত্রে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় / ভাদ্র – আশ্বিন (মে-জুন/ আগস্ট-সেপ্টেম্বর) করাই উত্তম।

আম পাকার সময়ঃ মে মাস আমের মৌসুম হওয়ায় এ মাসে আমের ফলন বেশি হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগস্ট মাসে, তৃতীয় পর্যায়ে নভেম্বর এবং চতুর্থ পর্যায়ে ফেব্রুয়ারি মাসে আম পাকবে।

বারি আম ১১ এর ফলনঃ বারি আম ১১ এর ফলন ২২,০০০ কেজি/হেক্টর বা ২২ টন/ হেক্টর। এছাড়াও প্রতি শতকে ৮০-৯০ কেজি আমের ফলন হয়ে থাকে।

প্রাপ্তিস্থানঃ বারি আম -১১ বা বারমাসি আমের এই জাতটি এখন বাংলাদেশের সব উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রেই চাষ হচ্ছে। আমের এই জাতটি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সকল আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছে।

বারি আম ১১ এর সম্ভাবনাঃ বারি আম-১১ থেকে সারা বছর ফুল,ফল ও পাকা আম পাওয়া যায বিধায় ভবিষ্যতে এই জাতের আমের চাষ বাড়বে। এছাড়াও বাড়ির ছাদেও বারি আম-১১ চাষ করা সম্ভব।

সম্পূর্ন আরটিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অন্য কৃষি উদ্যোক্তাদের মাঝে শেয়ার করে দিন।

একক পদ্ধতিতে পাঙ্গাশ চাষ পদ্ধতি

0
একক পদ্ধতিতে পাঙ্গাশ চাষ পদ্ধতি

একক পদ্ধতিতে পাঙ্গাশ চাষ পদ্ধতি

আমরা আজকে আলোচনা করবো অধিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে একক পদ্ধতিতে পাঙ্গাশ চাষ পদ্ধতি নিয়ে, কারন পাঙ্গাশ চাষ সাধারণত সবাই মিশ্র ভাবেই মাছ চাষ করে থাকে। আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন।

চাষের ভুমিকাঃ

এক সময় বাংলাদেশের নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাঙ্গাশ মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে বর্তমানে এ মাছের মজুদ প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে। দেশীয় প্রজাতির এই পাঙ্গাশ মাছ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, তাই চাহিদাও ব্যাপক। কিন্তু প্রাকৃতিক উৎসের দেশি পাঙ্গাশ মাছ পুকুরে চাষের প্রসার ঘটেনি। তবে ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ড থেকে থাই পাঙ্গাশের পোনা এনে পুকুরে চাষ করা হয়, যা এদেশে মৎস্য সম্পদের নতুন সংযোজন। এদেশে ক্ষুদ্রায়তন পুকুরের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বৃহদায়তন জলাশয়ে থাই পাঙ্গাশ চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে বিদেশি প্রজাতির এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব হয়েছে।

লক্ষণীয় যে, থাই পাঙ্গাশ বর্তমানে দেশের বর্ধিত জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রাণীজ আমিষের শতকরা ৬৩ ভাগ আসে মাছ থেকে, যার অধিকাংশই পূরণ হয় পাঙ্গাশ দ্বারা। বর্তমানে বাচ্চাদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ হচ্ছে পাঙ্গাশ। কেননা, এ মাছ কাঁটাবিহীন ও সুস্বাদু। অত্যন্ত আশার কথা, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পানির পরিবেশ থাই পাঙ্গাশ চাষের জন্য যথার্থই অনুকূল।

পাঙ্গাশ চাষের সুবিধা কি:

১. পাঙ্গাশ মাছ সর্বভুক হওয়ায় তৈরি খাদ্য দিয়ে চাষ করা সম্ভব।

২. এ মাছ দ্রুত বর্ধনশীল, উচ্চফলনশীল ও বিদেশে রফতানিযোগ্য।

৩. যে কোনো ধরনের জলাশয় অর্থাৎ পুকুর-দিঘিতে চাষ করা যায়।

৪. অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকায় প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে।

৫. মিঠা ও স্বল্প নোনা পানিতে চাষ করা যেতে পারে।

৬. জীবিত অবস্থায় বাজারজাত করা সম্ভব।

৭. সুস্বাদু, প্রচুর চাহিদা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি।

৮. হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সহজেই থাই পাঙ্গাশের পোনা উৎপাদন করা যায়।

সঠিক পুকুর নির্বাচন:

পুকুরের আয়তন ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ এবং গভীরতা ৫ থেকে ৭ ফুট হওয়া বাঞ্চনীয়। দোআঁশ ও পলিযুক্ত এটেল মাটি পাঙ্গাশ চাষের জন্য সর্বোত্তম। পুকুরে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক।

সঠিক পুকুর নির্বাচন:
সঠিক পুকুর নির্বাচন:

পুকুর প্রস্তুতকরণ করবেন কীভাবে:

পুকুর পাড়ের ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার রাখতে হবে। পুকুরে জলজ আগাছা, রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণী রাখা যাবে না। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রাক্ষুসে মাছ ও অনাকাঙ্খিত পানি দূর করার পর প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে এবং পুকুরের মাটি লাল অমস্নীয় হলে ২ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা অতীব জরুরি। শুকনো পুকুরে চুন দেয়ার পর প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে হবে। পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রতি শতাংশে ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা অত্যাবশ্যক। সার প্রয়োগের ৫ থেকে ৬ দিন পর পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য (প্লাংটন) তৈরি হলে পুকুরে মাছের পোনা ছাড়তে হবে।

পাঙ্গাস মাছের জাত কয়টি ও কি কি?

আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের পাঙ্গাস মাছের জাত পাই। পাঙ্গাসিয়াস পরিবারভুক্ত এসব মাছের মধ্যে রয়েছেঃ

১. থাই পাঙ্গাস বা রোহু পাঙ্গাস,

২. জাভা পাঙ্গাস,

৩. সুত্রী পাঙ্গাস, 

৪.পাঙ্গাস মাইক্রোনেমাস,

৫. পাঙ্গাস নাসুটাস, 

৬.পাঙ্গাস পলিউরানোডন,

 ৭.পাঙ্গাস প্লুরানিয়েটাস 

৮. পাঙ্গাস বোকোরি। এছাড়াও কিছু অন্যান্য প্রজাতির পাঙ্গাস যেমন পাঙ্গাস কিউপারি, পাঙ্গাস প্লাটোইস্ট্রাস, পাঙ্গাস কিনিয়ারেঙ্গা ইত্যাদি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। তবে এদের বাণিজ্যিক চাষ এখনও বেশি হয়নি।

সবচেয়ে বেশি চাষ হয় থাই বা রোহু পাঙ্গাসের। কারণ এই প্রজাতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক। এছাড়া জাভা ও সুত্রী পাঙ্গাসের বাণিজ্যিক চাষও করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের পরিবেশগত অবস্থা পাঙ্গাস চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলে বিবেচিত হয়।

পাঙ্গাস মাছের জাত কয়টি ও কি কি?
পাঙ্গাস মাছের জাত কয়টি ও কি কি?

পোনা মজুদকরণ পদ্ধতি:

অধিক উৎপাদন পেতে হলে একক পদ্ধতিতে পাঙ্গাশ চাষ করা উত্তম। একক চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি আকারের পাঙ্গাশের পোনা ১২৫ থেকে ১৫০টি এবং মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ৫০ থেকে ৬০টি পাঙ্গাশের পোনা ৫ থেকে ১০টি কাতলের পোনা, ২৫ থেকে ৩০টি বিগহেড বা সিলভার কার্পের পোনা এবং ২০ থেকে ২৫টি রুইয়ের পোনা ছাড়া যেতে পারে। তৈরি খাবার সরবরাহ: পাঙ্গাশ মাছের একক চাষের ক্ষেত্রে তৈরি খাদ্য সরবরাহ করা একান্তই অপরিহার্য।

এ মাছ চাষে আমিষযুক্ত সুষম খাদ্য অত্যাবশ্যক। খাবার দানাদার হওয়া বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে ফিশমিল ২০ শতাংশ, সরিষার খৈল ৪৫ শতাংশ এবং গমের ভুসি ৩৫ শতাংশ একত্র করে সামান্য পানি মিশিয়ে দানাদার খাদ্য তৈরি করে রোদে শুকাতে হবে। মাছের খাবার চাষকৃত মাছের দেহের ওজনের শতকরা ৮ থেকে ৩ ভাগ হারে সরবরাহ করা অত্যাবশ্যক। পর্যায়ক্রমে খাদ্যের পরিমাণ হ্রাস করতে হবে। এছাড়া শামুক, ঝিনুক, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর নাড়িভুঁড়ি টুকরো করে কেটে পাঙ্গাশ মাছকে লোভনীয় খাবার হিসেবে দেয়া যেতে পারে। পোনা মজুদের পর দিন থেকে নিয়মিত সকাল ও বিকাল দু’বার খাবার সরবরাহ করা জরুরি। শীতকালে মাছের খাবার কমাতে হবে।

পোনা মজুদকরণ পদ্ধতি:
পোনা মজুদকরণ পদ্ধতি:

মাছে রোগবালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি:

পানির গুণাগুণ নষ্ট হলে মাছে ঘা দেখা দিতে পারে। পানির গুণাগুণ মাছ চাষের অনুকূলে আনার জন্য চুন, লবণ বা জিওলইট প্রয়োগ করতে হবে। মাছে ক্ষত রোগ দেখা দিলে মাছের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে দূষিত পানি বের করে পরিষ্কার, ঠান্ডা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। রোগবালাই থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করতে হবে।

পরামর্শ:

১. পোনা মজুদের আগে পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করতে হবে,

২. নার্সারি পুকুরে রেণু বা ধানি পোনা ছাড়ার আগে ক্ষতিকর হাঁসপোকা বা ব্যাঙাচি ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।

৩. মজুদকৃত মাছকে নিয়মিত সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে।

৪. সুস্থ-সবল পোনা মজুদ করতে হবে।

৫. পোনা ছাড়ার উপযোগী সময় সকাল-বিকালের মৃদু ঠান্ডা আবহাওয়া। দুপুরের রোদ, মেঘলা ও নিম্নচাপের দিনে পোনা ছাড়া সমীচীন নয়।

মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ পদ্ধতি:

সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনা, উন্নতমানের পোনা মজুদ ও যথানিয়মে সুষম খাবার প্রয়োগ করা সম্ভব হলে মাত্র ৬-৭ মাসে পাঙ্গাশ মাছের গড় ওজন ৯০০ থেকে ১০০০ গ্রাম হয়ে থাকে। বারবার আহরণ করে মাছ বাজারজাত করা হলে মাছের উৎপাদন সন্তোষজনক হয়। এক্ষেত্রে মাত্র ৬ মাসে একটি ভালো ফলন আশা করা যায়। অর্থাৎ একই পুকুরে বছরে দু’বার পাঙ্গাশ মাছের ফলন পাওয়া সম্ভব।

আর্টিকেল টি পড়ে ভালো লাগলে অন্য কৃষি উদ্যোক্তা বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করে বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখুন।

গাভী বারবার হিটে আসার কারণ লক্ষণ ও সমাধান

0
গাভী বারবার হিটে আসার কারণ

গাভী বারবার হিটে আসার কারণ লক্ষণ ও সমাধান

আমাদের কাছে অনেকেই জানতে চায় গাভী কেনো বার হিট আসে ? তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো গাভী বারবার হিটে আসার কারণ লক্ষণ ও সমাধান নিয়ে কি কি করতে হবে। পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন বন্ধুদের কাছে।

গাভী বা বকনা যদি স্বাভাবিক ইষ্ট্রাস (Estrous) চক্রে বার বার গরম হয় এবং তিন বারের অধিক পাল বা কৃত্রিম প্রজনন করা সত্ত্বেও গর্ভধারন না করে, তখন ঐ গাভীকে রিপিট ব্রিডিং (Repeat Breeding) গাভী বলা হয়।
ডেয়রি খামার ধ্বংসের জন্য এই একটি কারণই যথেষ্ট।

গাভী বারবার হিটে আসার কারণ

✓অপুষ্টিতে ভুগলে।
✓ জরায়ুতে জীবানুর সংক্রমন হলে।
✓ Estrous সঠিকভাবে নির্নয় করতে না পারলে।
✓ সময়মত ও যথাস্থানে Semen স্থাপন না হলে।
✓অপর্যাপ্ত ও নিন্মমানের Semen দ্বারা প্রজনন করালে।
✓ অদক্ষ এ, আই কর্মী দ্বারা প্রজনন করালে।
✓যৌন অঙ্গের বিকলঙ্গতা
✓ প্রজনন তন্ত্রের বিভিন্ন রোগ থাকলে।
✓ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও ওভারিয়ান সিস্ট ইত্যাদি।

গাভী বারবার হিটে আসার লক্ষণ

✓ জরায়ু থেকে নিশ্রিত মিউকাসের রং অনেক সময় খুব পাতলা ও ঘোলাটে হতে দেখা যাবে।
✓ যোনী পথে মিউকাসের পরিমান একেবারে কম অথবা খুব বেশি পরিমানে ভাংবে।
✓ডাকে আসা সময়কাল খুব কম অথবা অতিদীর্ঘ হতে দেখা যাবে।
✓ নির্দিষ্ট ঋতুচক্রে গরম হলেও, প্রজনন করালে তা গর্ভধারন করবেনা।

প্রতিরোধ বা সমাধানে যা যা করতে হবেঃ

✓ স্বাস্থ্য সম্মত বাসস্থানে গাভীকে রাখা ও পরিমানমত সুষম খাবার সরবরাহ করা।

✓দৈনিক প্রচুর পরিমান কাচা ঘাস ও অবশ্যই শরিষার খৈল কমপক্ষে ৬০০ থেকে ৭০০ মিঃগ্রাঃ খায়াতে হবে।

✓বকনার ক্ষেত্রে প্রথম হিট মিস করে কৃমিমুক্ত করুন এবং রেনাসল এডিই ও ই-সেল ২০ মিঃলিঃ করে ১০ দিন খাওয়ান।

✓ হিটে আসার সময় ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করা এবং পুনরায় ৬ ঘন্টা পর আবার প্রজনন করা।

✓ প্রজনন করার পর ৫০ মিঃলিঃ ই-সেল এবং ৫ দিন পর আবার ৫০মিঃলিঃ খাওয়ান। বীজ দেওয়ার দিন থেকে ১০ দিন দৈনিক ১০০ মিঃলিঃ Syr: Farovet vet খাওয়ান।

✓ প্রজনন করার পর অবশ্যই গাভী বা বকনাকে গোসল করাতে হবে।

✓ প্রজনন করার ৩০ মিনিট পুর্বে হরমোন ইনজেকশন যেমন Ovurelin ৩ ml, দিয়ে তারপর Semen দেওয়া।

✓ Semen দেয়ার পর এ. আই কর্মীর হাত দিয়েই যোনিদ্বার ৩/৪ সেকেন্ড ম্যাসেজ করা।

✓ সাস্থ্য সম্মত উপায়ে দক্ষ এ. আই. কর্মীর মাধ্যমে সবল সিমেন দ্বারা প্রজনন করাতে হবে।

✓ গর্ভফুল আটকে যাওয়া গাভীকে তিন মাসের আগে প্রজনন না করাই ভালো। সে ক্ষেত্রে পুর্বেই চিকিৎসা দিয়ে রাখতে হবে।

✓পরপর তিন বার প্রজনন করেও গর্ভধারন ব্যর্থ হলে ৪র্থ বার বীজ না দিয়ে বিশ্রাম দেওয়া এবং বিশ্রাম চলাকালে চিকিৎসা সম্পন্ন করা।

✓ ফসফরাস, কপার, কোবাল্ট, মাঙ্গানিজ, সিলেনিয়াম, এবং ভিটামিন এডিই জাতীয় পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করুন।

✓কাচা ছোলা পানিতে ভিজিয়ে ৪৮ ঘন্টা পর অংকুরদগম হলে খাওয়ান। প্রতিদিন ২০০ গ্রাম করে ২৫ দিন।

✓প্রতিদিন তিনটা করে মুরগির কাঁচা ডিম খাওয়ান একটানা ৫ দিন।

✓ অভিজ্ঞ ও দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানের সাথে যোগাযোগ করুন।

ডা মোঃ শাহীন মিয়া
বিসিএস প্রাণিসম্পদ
ভেটেরিনারি সার্জন
চৌদ্দগ্রাম কুমিল্লা।
০১৭১৬১৬২০৬১(ইমু)

দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি

0
ঘরে দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি

দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি

এই করোনাকালে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অনেকেই ঘি খাচ্ছেন নিয়মিত তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি নিয়ে। সম্পূর্ন ভালো ভাবে পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন বন্ধুদের কাছে।

অনেকেই দাদি বা নানিকে নিজ হাতে খাটি দেশি ঘি বানাতে দেখেছেন। কিন্তু সময়ের আবর্তে পড়ে এখন আর সে ধরনের ঘি বানাতে দেখা যায় না। বাজার থেকে ঘি কিনে খেতেই আগ্রহী বর্তমান প্রজন্ম। কিন্তু বাজারের ঘি যে কতখানি খাঁটি তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। আর তাই বাড়িতে ঘি বানিয়ে নিতে পারলে তা যেমন খাঁটি মানের নিশ্চয়তা দেয় তেমন স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো হয়। এ লেখায় রয়েছে ঘি বানানোর সঠিক উপায়। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে এনডিটিভি।

গরুর দুধ দিয়ে দেশি ঘি বানাতে হয়। এটি দোকান থেকে কেনা ঘিয়ের তুলনায় কোনো অংশেই কম স্বাদের হয় না। ঘি ব্যবহার করে শুধু খাবারই নয় তা নানা চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়। বাজারে যেসব ঘি পাওয়া যায় তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য প্রিজারভেটিভসহ নানা উপকরণ ব্যবহৃত হয়। তাই দোকান থেকে ঘি না কিনে বরং বাড়িতে তৈরি করে নেওয়াই ভালো।

দেশি ঘি বানাতে প্রচুর দুধ প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, দুধের বাড়তি সর থেকেই ঘি তৈরি হয়। তাই দুধ প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে কোনো সমস্যা হয় না।

যেভাবে বানাবেন দেশি ঘি

১. প্রতিদিন দুধ ফোটানোর পর ৩-৪ ঘণ্টা রেখে দেবেন। দুধ এ সময় নড়াচড়া করবেন না।

২. দুধের ওপর যে সর পড়বে তা সাবধানে সংগ্রহ করে একটি বাটিতে রাখবেন। সর ভরা বাটিটি ফ্রিজে বেশ কয়েক দিন ভালো থাকবে।৩. সরগুলো কয়েক দিন রাখলে জমে শক্ত হয়ে যাবে। এক বাটি সর হলে সেগুলো নিয়ে পিষে ফেলুন। শিলপাটায় বা ব্লেন্ডারে এ কাজ করা যাবে। এ অবস্থায় একে বাটারমিল্ক বলে। এটি নানা খাবারে ব্যবহার করা যায়। তবে তা থেকে ঘি বানাতে হলে আপনাকে আরও কিছু কাজ করতে হবে।

৪. একটি ভারি তলাযুক্ত পাত্রে অল্প আঁচে বাটা সরগুলো দিন। এতে তা ধীরে ধীর গলতে থাকবে। এটি ক্রমাগত নাড়াতে হবে।

৫. অল্প আঁচে নাড়াতে থাকলে কিছুক্ষণ পর সোনালি বর্ণের তেলের মতো তরল পাত্রের ওপর ভাসতে থাকবে। এটিই ঘি। রং পরিবর্তন হলে ও পাত্রে বুদবুদ উঠতে থাকলে তা নামিয়ে নিন। লক্ষ রাখবেন যেন পুড়ে না যায়।

৬. একটি পরিষ্কার ছাকনি ব্যবহার করে পাত্র থেকে তরল ঘি আলাদা করুন। অবশিষ্ট অংশগুলোও ফেলনা নয়। সেগুলো মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়।

৭. আলাদা করার পর ঘি ঠাণ্ডা করে পরিষ্কার বোতলে ঢেলে ঢাকনা লাগিয়ে রাখুন।

যেভাবে বানাবেন দেশি ঘি
যেভাবে বানাবেন দেশি ঘি

দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতির গুরুত্ব কি কি?

দেশি ঘি বা গোলা ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতিগুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি পরিবেশবান্ধব কারণ কোনও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। দ্বিতীয়ত, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী কারণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। তৃতীয়ত, এর স্বাদ ও গন্ধ অনন্য এবং বাজারে পাওয়া যায় না। চতুর্থত, এটি বানানো খুব সহজ এবং কম খরচে সম্ভব। অনেক পুরনো প্রজন্মের মানুষ এখনও এই পদ্ধতিতেই ঘি বানান। এছাড়াও, দেশি ঘি বানানোর প্রক্রিয়াটি আমাদের পুরনো ঐতিহ্য রক্ষা করে। অনেকে এখন ঘরেই দেশি ঘি বানিয়ে রাখেন।

কয়েক বছর ঘি সংরক্ষণের উপায়?

দেশী ঘি সংরক্ষণের জন্য কিছু পরীক্ষিত উপায় রয়েছে যা অনেক দিন ধরে মানুষ অনুসরণ করে আসছে। প্রথমেই ঘি বানানোর পর ওটাকে একটি পরিষ্কার জার বা বাটিতে ভরে রাখতে হবে। এরপর ওটার উপর একটুখানি লবণ ছিটিয়ে দিলে ঘি দীর্ঘদিন ফেঁসে যাবে না। কেউ কেউ আবার ওটার উপর একটু তেল ঢেলে রাখেন। অনেকে ঘিটাকে এক ইঞ্চি গভীর করে ধীরে ধীরে সেদ্ধ করে জারে ভরে রাখেন। এতে করে ওটা অনেকদিন ঠিক থাকে। ঘিটাকে ছায়াপথে বা ঠাণ্ডা জায়গায় রাখলে টেকসই হয়। গরম আবহাওয়া এড়ানো উচিত। এভাবে সংরক্ষণ করলে দেশী ঘি প্রায় এক বছরও টিকে থাকতে পারে।

 

১ লিটার দুধে কত ঘি?

দেশীয় পদ্ধতিতে ঘি তৈরি করতে হলে একলিটার দুধ থেকে কতটুকু ঘি পাওয়া যায়, এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে বলা হয়, একলিটার দুধ থেকে প্রায় ১২০-১৩০ গ্রাম অর্থাৎ প্রায় এক আষ্টম অংশ ঘি পাওয়া যায়।

তবে ঘির এই পরিমাণটা কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। প্রথমতই দেখতে হবে দুধের উৎস কোনটি। গরু, ছাগল আর ভেড়ার দুধে ঘির পরিমাণ আলাদা হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঘি পাওয়া যায় গাভীর দুধ থেকেই।

দেশি ঘি কি ফ্রিজে রাখা যায়?

দেশী ঘি ফ্রিজে রাখা যায় এবং রাখা উচিতও। ফ্রিজে রাখলে দেশী ঘি দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকে। তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:

১. ঘিটা যাতে বাতাস না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ।

২. ফ্রিজে রাখার আগে ঘিটাকে ভালভাবে ঠাণ্ডা করে ফেলতে হবে।

৩. ফ্রিজের তাপমাত্রা যেন খুব কম না হয়। সাধারণত ০-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঘি ভালভাবে সংরক্ষিত থাকে। বেশি ঠাণ্ডায় ঘি জমে যেতে পারে।

এভাবে সতর্কতা অবলম্বন করে ফ্রিজে দেশী ঘি সংরক্ষণ করলে প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ঘিটা ভাল থাকবে। পরিচ্ছন্ন বাটি ও নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কার করলে আরও দীর্ঘদিন দেশী ঘি সংরক্ষিত রাখা সম্ভব।

দেশি ঘি কি ফ্রিজে রাখা যায়?
দেশি ঘি কি ফ্রিজে রাখা যায়?

কোন পাত্রে ঘি রাখা উচিত?

দেশী ঘি সংরক্ষণের জন্য পাত্রের বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমাদের নানা-নানীরা মাটির হাঁড়ি বা বাটিই সবচেয়ে বেশি বিক্ষেবচনা করতেন। কারণ মাটির পাত্রগুলো শুষ্ক ও বাতাস চলাচলের সুবিধা দেয়। ফলে ঘিতে একটা বাদামী সুগন্ধ এসে দীর্ঘদিন ভাল থাকে।

আসলে মাটির পাত্রগুলোই সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ। ঘিতে কোনও রাসায়নিক পদার্থ না থাকায় এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য কোনওরকম ক্ষতিকর নয়। একইসাথে মাটির পাত্রগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যায় বলে এগুলো পরিবেশবান্ধবও বটে।

অনেকে আবার কাঁচের বাটিতেও দেশী ঘি রাখেন। কারণ কাঁচের বাটিও শুষ্ক থাকে এবং বাতাস চলাচলের সুবিধা দেয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে দেশী ঘি সংরক্ষণের জন্য মাটির হাঁড়ি বা বাটিই সবচেয়ে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।

 

স্বপ্ল পুঁজির নার্সারি ব্যবসা করবেন কীভাবে

0
স্বপ্ল পুঁজির নার্সারি ব্যবসা

স্বপ্ল পুঁজির নার্সারি ব্যবসা করবেন কীভাবে

আমাদের আজকের কৃষির ফেসবুক পেইজে অনেকেই ইনবক্সে প্রশ্ন করেন স্বপ্ল পুঁজির নার্সারি ব্যবসা করবেন কীভাবে? প্রশ্নের উত্তর খুব ছোট করে দেয়া সম্ভব না তাই একটি সম্পূর্ন আর্টিকেল তৈরি করা হলো নার্সারী উদ্যোক্তাদের জন্য।

স্বপ্ল পুঁজির নার্সারি ব্যবসা শুরুর জন্য সম্পূর্ন পোষ্টটি ভালো ভাবে পড়ুন।

পরিশ্রম আর আগ্রহের সমন্বয় ঘটাতে পারলে অবশ্যই মিলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। নার্সারি ব্যবসা থেকেও আস্তে পারে তেমন সাফল্য। বছরজুড়ে নার্সারি ব্যবসা চালান যায়। এমন কি বাড়ির ছাদেও হতে পারে নার্সারি। বর্ষাকাল নার্সারি করার উপযুক্ত সময়। ফুল, ফল, কাঠ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী-সব ধরনের গাছই নার্সারিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ছোট চারা কিংবা উদ্ভিদের কলম উৎপাদন করা হয়, রোপণের আগে যত্নসহকারে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

নার্সারি খাত শুধু অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়তা করে না, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ রোধসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, খাদ্য ও পুষ্টি সমস্যা সমাধানে বহুমাত্রিক অবদান রাখে। দিন দিন নার্সারির চারার চাহিদা বাড়ছে। নার্সারি খাতের মাধ্যমে দেশের বেকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে স্বল্পপুঁজির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

নার্সারি কি?
নানা ধরনের গাছগাছড়ার চারা উৎপাদন, বিতরণ বা বিক্রয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশেষ কেন্দ্র বা স্থান। একসময় নার্সারি বলতে মূল্যবান বনবৃক্ষ এবং ফলগাছের চারা উৎপাদনকারী বিশেষ প্রতিষ্ঠানকেই বোঝানো হতো। বাগানের গাছপালার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাবার কারণে নার্সারির ধারণা এবং সেসঙ্গে তার কর্মকান্ড অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। উদ্ভিদ প্রজনন ও নতুন জাতের গাছপালা-বৃক্ষাদি ও ফল-ফুল উদ্ভাবনের কর্মসূচিও এখন নার্সারির আওতাভুক্ত। আধুনিক নার্সারি সাধারণত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যানতত্ত্বের বিশেষজ্ঞরা দেখাশুনা করেন।

বিভিন্ন রকমের নার্সারিঃ
ফল, ফুল, বনজ, সবজি, মসলা, অর্কিড, ক্যাকটাস ও ফার্নের নার্সারিতে বিভিন্ন চারা উৎপাদন করা হয়।

নার্সারি ব্যবসার সম্ভাবনাঃ
মানুষের আয়, নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে রুচি ও সৌন্দর্যবোধের পরিবর্তন ঘটছে। বাড়ছে বসতবাড়ির সংখ্যা। ছায়া, বাতাস, জ্বালানি, আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি তৈরি, পুষ্টি ও খাদ্যের প্রয়োজন মানুষ বসতবাড়ির আশেপাশে রোপণ করছে প্রচুর ফলদ, বনজ ও ভেষজ বৃক্ষের চারা। বাড়ির আশেপাশে অর্থকরী গাছপালা লাগানো পুরানো প্রথা হলেও নার্সারিতে চারাগাছ উৎপাদন বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনা।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি শুধু বনায়নের জন্য বনবিভাগ প্রথম নার্সারির প্রবর্তন করে। তারপর সরকারি তত্ত্বাবধানে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফলগাছের চারা উৎপাদনের জন্য নার্সারির প্রসার ঘটে। মধ্য-বিশ শতকে কেবল বাগানের গাছপালা উৎপাদনের লক্ষ্যে কয়েকটি বেসরকারি নার্সারি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ দেশের বিভিন্ন স্থানে নার্সারি প্রতিষ্ঠা করে। বিগত শতকের আশির দশকে গাছপালার চাহিদা ও অর্থকরী বৃক্ষাদি রোপণের ব্যাপক আগ্রহের জন্য নার্সারি ব্যবসা বহুগুণে বেড়ে যায়।

নার্সারি ব্যবসার সুবিধাঃ
• নার্সারি ব্যবসার মৌসুম হলো বৈশাখ থেকে আশ্বিন। মূলত আষাঢ়, শ্রাবণ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ভালো বিক্রি হয়।
• তুলনামূলক কম মূলধন লাগে।
• রোপণের জটিলতা, নিড়ানি ও চাষকালীন পরিচর্যায় ঝামেলা কম।
• লাভ বেশি।
• অল্প জায়গা ও ছোট পাত্রে রোপণ করা যায়।

নার্সারির জন্য স্থান নির্বাচনঃ
যেকোনো ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের জন্য নার্সারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। নার্সারীর অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নার্সারীটি যেন সহজেই সকলের দৃষ্টিগোচর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। তাই এটি অবশ্যই কোন মহাসড়ক, শহর বা বাজারের পাশে অবস্থিত হতে হবে যেন নার্সারীটি খুজে বের করতে ক্রেতাদের কোন অসুবিধা না হয়। শুধু তাই নয়, সহজে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে এমন স্থানেই নার্সারী প্রতিষ্ঠা করা উচিত। নার্সারীর অবস্থান যেন কোন ঘোপের মধ্যে না হয় যেখানে সব সময় অতিরিক্ত আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকে।

নার্সারি ব্যবসা জন্য নির্বাচিত স্থান অবশ্যই উঁচু হতে হবে, যাতে বন্যা কিংবা বৃষ্টির পানি না জমে এবং জমির দামও তুলনামূলকভাবে কম অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এমন স্থানে বাণিজ্যিক নার্সারী স্থাপন করলে লাভবান হওয়ার নিশ্চয়তা বেশি থাকে। অনেক জায়গায় বেশি দামেও সুবিধামত বা উপযুক্ত জমি পাওয়া যায় না। তাই নার্সারি স্থাপনের জন্য নির্বাচিত এলাকায় জমির সহজলভ্যতা এমনকি জমির দামও বিবেচনায় আনতে হবে। নার্সারীর সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে। নার্সারীতে সব সময় পানির প্রয়োজন বিধায় পানির উৎস থেকে নার্সারীর দূরত্ব বা সেচ-সুবিধা আছে কিনা তা বিবেচনায় আনতে হবে।

বাড়ির ছাদেও হতে পারে নার্সারিঃ


নার্সারির জন্য যে বিশাল জায়গা থাকতে হবে, এমন নয়। কেউ চাইলে বাড়ির ছাদেও করতে পারেন চমৎকার একটি নার্সারি। প্রায় সব ধরনের গাছই ছাদে টবে উৎপাদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে পানি দেওয়া ও শেডের ব্যবস্থা করতে হবে। দেড় হাজার বর্গফুটের ছাদে পূর্ণাঙ্গ একটা নার্সারি করা সম্ভব। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বাড়ির ছাদে নার্সারি ব্যবসা করেও লাভবান হওয়া সম্ভব। বাড়ির ছাদে নার্সারির প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। দুই-তিন দিনের প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন বিনা মূল্যে, উপরন্তু মিলবে কিছু সম্মানীও।

নার্সারির জন্য যন্ত্রপাতিঃ
বীজতলা তৈরি, চারা উৎপাদন, চারার যত্ন ও পরিচর্যা, চারা তোলা, কলম তৈরি প্রভৃতি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। যেমন কোদাল, নিড়ানি, চালনি, নলকূপ, ভ্যান, শাবল, কাঁচি, পাইপ, ছুরি বা দা, ঝুড়ি, বদনা, বাঁশ প্রভৃতি।

নার্সারির জন্য কাঁচামালঃ
বীজ, সার, কীটনাশক, গোবর, পলিথিন প্রভৃতি।

নার্সারির জন্য চারা রোপণের পাত্রঃ
গাছভেদে ছোট থেকে বেশ বড় আকারের পাত্র ব্যবহƒত হয়। ট্রে, সিডপ্যান, পট, প্লাস্টিক পট ও ব্যাগ, বালতি, পলিব্যাগ, ড্রাম, হাফ ড্রাম, মাটির বল, টিনের কৌটা প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।

নার্সারির জন্য নিবন্ধনঃ
বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি ব্যবসা করার জন্য প্রথমেই দরকার নিবন্ধন। ২০১০ সালের নার্সারি আইনের আলোকে যে জমিতে নার্সারি করবেন সেই জমির কাগজপত্র অর্থাৎ নিজের হলে দলিল, ইজারা হলে তার পক্ষে কাগজপত্র, ভাড়া হলে সে-সংক্রান্ত চুক্তিনামার ফটোকপিসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। সঙ্গে যুক্ত করতে হবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুকূলে ৫০০ টাকার ট্রেজারি চালান। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যাঁরা রেজিস্ট্রেশন করতে চান, তাঁদের উপজেলা বা জেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

নার্সারির জন্য প্রশিক্ষণঃ
নার্সারি করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে নার্সারি ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এছাড়া স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা কিংবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সারা বছরই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই), ঢাকা হর্টিকালচার সেন্টার, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সারা বছর গ্রাফটিং, কাটিং, লেয়ারিং, ফলগাছ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।

যে কেউ চাইলেই তিন দিন, সাত দিন, ২১ দিন, এক মাস বা তিন মাস মেয়াদি এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করতে পারেন নার্সারি তৈরির কাজ। এ ছাড়া সুইস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের আর্থিক সহযোগিতায় সম্মিলিত কৃষি বনায়ন উন্নয়ন কার্যক্রম (এএফআইপি) নামে একটি প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে নার্সারি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। চারা উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণের বিষয়ে দরকারি সহযোগিতা দেয় তারা। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে কিংবা বিনামূল্যে কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

বাজারজাতঃ
নার্সারি ব্যবসার উপযুক্ত মৌসুম বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস। তবে ব্যবসা মূলত বর্ষাকালেই বেশি জমে। তবে নার্সারিতে সব মৌসুমের গাছ থাকে। গ্রামগঞ্জে বর্ষাকালে নার্সারি থেকে চারাগাছ তুলে বাজারে বিক্রি করা হয়। এ সময় গ্রামাঞ্চলে কাঠের গাছের ও ফলের গাছের চাহিদা আর শহরে টবের আম, কুল, সফেদা, পেয়ারা এবং বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছের চাহিদা বেশি থাকে। নার্সারি থেকে চারা বিক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। নার্সারি থেকে পাইকারি কিনে পিকআপ ও ভ্যানে করেও গাছের চারা ও শোভাবর্ধনকারী গাছ বিক্রি করেন অনেকে। এছাড়া হাটেও ফেরি করে বিক্রি করা যায়।

নার্সারি ব্যবসা থেকে আয় রোজগারঃ
বিনিয়োগের জন্য নার্সারি ব্যবসা একটি লাভজনক ক্ষেত্র। যদি ব্যক্তিগত পুঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে। এটি এমন একটি ব্যবসা, যেখানে কখনো লোকসান হয় না।

বিভিন্ন উন্নত ও বিদেশি জাতের ফল, ফুল, ভেষজ উদ্ভিদের চারা এবং শোভাবর্ধনকারী গাছের কালেকশন রাখলে বেশ লাভবান হওয়া যায়। এ ব্যবসায় সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে ছোট নার্সারি হলে সাধারণত এক থেকে দুই লাখ, মাঝারি আকারের হলে পাঁচ থেকে ১০ লাখ ও বড় নার্সারি হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে। নিজের জমি থাকলে ২৫ হাজার টাকা দিয়েই ছোট আকারের নার্সারি ব্যবসা শুরু করা যায়। খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে এক কোটি টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে।

পোষ্ট টি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিন।

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe

Recent Posts