গোলমরিচ চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশে এখন সবজি এবং ফল চাষ যেমন বেড়েছে তেমনি পিছিয়ে নেই মসলা চাষ। তাই আজকের কৃষি আজকে আলোচনা করবে গোলমরিচ চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত নিয়ে।
পুষ্টিমূল্যঃ গোল মরিচে আমিষ, চর্বি এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও লৌহ থাকে।
ভেষজ গুণঃ
- হজমে সহায়তা করে
- স্নায়ু শক্তি বাড়ায়
- দাঁতের ব্যাথা কমানোতে সহায়তা করে
- মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়ার ব্যাথা উপশম করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ব্যবহারঃ মসলা হিসেবে গোল মরিচের ব্যবহার রয়েছে।
উপযুক্ত মাটি ও জমিঃ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় ও আর্দ্রতা বেশি এমন এলাকায় গোল মরিচ ভাল জন্মে। এ ফসল ১০-৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। পিএইচ ৪.৫-৬.০ পর্যন্ত এ ফসল ফলানো যায়। পাহাড়ি এলাকার মাটি এ ফসল চাষের জন্য খুব উপযোগী।
জাত পরিচিতিঃ স্থানীয় জাত
চারা তৈরিঃ গোল মরিচে ৩ ধরনের লতা/কান্ড দেখা যায়। ১. প্রধান কান্ড যার পর্বমধ্য বড়, ২. রানার ডগা (সুট) ও ৩. ফল ধারণকারী পার্শ্বীয় শাখা। রানার ডগা হতে কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হয়। শীর্ষ ডগা ও ব্যবহার করা যায়। ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে ২-৩ টি পর্বসন্ধি (গিট) যুক্ত কান্ড কাটিং হিসেবে নার্সারীতে বা পলি ব্যাগ লাগানো হয়। পলি ব্যাগ উর্বর মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। কাটিং-এ ছায়ার ব্যবস্থা রাখা হয় ও প্রয়োজনে সেচ দিতে হয়। মে-জুন মাসে কাটিং লাগানোর উপযোগী হয়।
চারা লাগানোঃ গোল মরিচ ঠেস গাছের ছায়ায় লাগাতে হয়। ঠেস গাছ আগে থেকে ২.৫x২.৫ মি. দূরত্বে লাগিয়ে গোল মরিচের কাটিং লাগানো হয়। ২-৩ টি কাটিং এক গর্তে লাগানো হয়।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
প্রতি গর্তে ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১১০ গ্রাম টিএসপি ও ৪৫০ গ্রাম পটাশ দিতে হয়। তবে এ পরিমাণ সার তৃতীয় বছর হতে দিতে হবে। এ পরিমাণের ১/৩ ভাগ ১ম বছর এবং ২/৩ ভাগ দ্বিতীয় বছরে দিতে হবে। সার সাধারণতঃ বছরে দু’বারে দিতে হয়। একবার মে-জুন মাসে ও পরের বার আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দিতে হয়। এছাড়া প্রতি বছর প্রতি গর্তে মে-জুন মাসে ১০ কেজি পঁচা গোবর ও প্রতি ১ বছর অন্তর-অন্তর প্রতি গর্তে ৬০০ গ্রাম চুন দিতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ আগাছা দেখা দিলে পরিষ্কার করতে হবে ও মাটিতে রসের অভাব হলে পানি সেচ দিতে হবে। ডগা বাড়তে থাকলে ঠেস গাছের সাথে বেঁধে দিতে হবে।
রোগবালাই ব্যবস্থাপনাঃ
পোকার নামঃ ফ্লি বিটল
এ পোকার আক্রমণে শতকরা ৩০ -৪০ ভাগ ক্ষতি হতে পারে। সে কারনে এ পোকা দেখা মাত্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পূর্নাঙ্গ বিটল কালো পাখা যুক্ত, মাথা ও ঘাড় হলদে বাদামী বর্ণের।
ক্ষতির নমুনাঃ পূর্ণাঙ্গ ও কীড়া উভয় গাছের কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে। পূর্ণাঙ্গ বিটল ফল ছিদ্র করে ফলের মধ্যে ঢুকে ভেতরের অংশ খায়। আক্রান্ত ফল প্রথমে হলুদ ও পরে কালো হয়। কীড়া ফলের বীজ ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়। ছায়াযুক্ত স্থানে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
জীবন চক্রঃ স্ত্রী বিটল জুলাই মাসে কচি ফলে ১-২ টি ডিম পাড়ে। প্রতিটি পোকা ১০০ টি করে ডিম পাড়ে। ৫-৮ দিনে ডিম থেকে কীড়া বের হয়। কীড়া ২০-৩২ দিন পরে পুত্তলিতে পরিণত হয়। ৬-৭ দিন পর পুত্তলি হতে পূর্ণাঙ্গ বিটল বের হয়। পূর্ণাঙ্গ বিটল ৩৯-৫০ দিন বাঁচে।
ব্যবস্থাপনাঃ নিয়মিত গাছ ছাঁটাই করে বৃদ্ধি কমাতে হবে। অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনাঃ
নার্সারীঃ
নার্সারীতে পাতা পচা ও ঢলে পড়া রোগ দেখা যায়। পাতা পচা রোগে পাতায় কাল দাগ পড়ে এবং ঢলে পড়া রোগ হলে কাটিং নেতিয়ে পড়ে।
দমনঃ ব্যাভিস্টিন বা কপার অক্সি ক্লোরাইড নামক ছত্রাক নাশক প্রতি দশ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর ৩ বার প্রয়োগ করলে এ রোগ দমন করা যায়।
মাঠেঃ
হটাৎ ঢলে পড়া রোগ
লক্ষণঃ
- পাতার উপর কালো দাগ পড়ে এবং পরে দাগ বড় হয়।
- কচি পাতা ও ডগা আক্রমণে কালো হয়ে যায়। অধিক আক্রমণে গাছ মরে যায়।
- গোড়া সহ সকল স্থানে আক্রমণ ছড়াতে পারে।
- বর্ষা মৌসুমের শেষে আক্রমণ হলে গাছ হলুদ হয়ে ঢলে পড়তে পারে।
দমনঃ
- মাটিসহ গাছ তুলে ধ্বংস করা
- রোগমুক্ত কাটিং ব্যবহার
- পরিচর্যার সময় শিকড়ে ক্ষত করা যাবেনা
- সাকার (ডগা) মাটিতে বাড়তে দেয়া যাবেনা
- ০.২% হারে কপার অক্সিক্লোরাইড প্রয়োগ
ফসল তোলাঃ মে-জুন মাসে ফুল আসে এবং ৬-৮ মাস পর ফল তোলা যায়। থোকায় ২/১টি ফল উজ্জ্বল কমলা বা বেগুণী হলে সংগ্রহ করে ৭-১০ দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়।