গো-খাদ্য সঙ্কটের অবসান কীভাবে?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

গো-খাদ্য সঙ্কটের অবসান কীভাবে?

ঘাস আর আজ ফেলনা নয়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস। আর এক বিঘা চাষ করতে পারলে কিস্তিমাত। সামান্য পরিশ্রমে কৃষক ঘরে তুলে আনে বছরে ৫০ হাজার টাকা। শুধু টাকার অঙ্কে নয়, এই নেপিয়ার ঘাস খেয়ে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের গরু ছাগল হচ্ছে হৃষ্টপুষ্ট।

জানা গেছে, এক সময় জেলার অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। এসব জমিতে যে ঘাস হতো তা কৃষকেরা গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে খাওয়াতো। কিন্তু বর্তমান আগের মতো আর অনাবাদি জমি নেই। এ ছাড়া জেলায় বিগত কয়েক বছর থেকে প্রায় প্রতিটি ঘরে পালা হচ্ছে গরু-ছাগল। যে পরিমাণ গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছিল সেই পরিমাণ কাঁচা ঘাস বা অন্য খাবারের তেমন কোনো উৎপাদন ছিল না। পশুসম্পদ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত নেপিয়ার ঘাস গো-খাদ্যের জন্য খুবই পুষ্টিমানসম্পন্ন। এই সংবাদে জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় পাঁচ-ছয় বছর থেকে চাষ করা হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস। দেখাদেখি এখন চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলাতে নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। প্রথমদিকে নিজেদের গরু-ছাগলের খাওয়ানোর মতো অল্প পরিমাণে ঘাস আবাদ শুরু হয়। পরে এর সুফল বুঝতে পেরে অনেক কৃষক নিজের অথবা বর্গা নেয়া ৫-১০ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করছেন।

চুয়াডাঙ্গা ছাগল খামারের ব্যবস্থাপক আরমান আলী বলেন, মে-জুন মাসে নেপিয়ার ঘাস লাগানোর উপযুক্ত সময়। নেপিয়ার গ্রীষ্মকালীন স্থায়ী ঘাস। আখের মতো দুই-তিন মিটার লম্বা হয়। বিভিন্ন জাতের ঘাস থাকলেও দেশে বাজরা জাতের নেপিয়ার চাষ বেশি হয়। একবার লাগালে তিন বছর ঘাষ দেয়। দুই ফুট দূরত্বে ৪৫ ডিগ্রি কোণে এই ঘাসের মেথা বা চারা লাগাতে হয়।


কার্পাসডাঙ্গার কৃষক মাছুম আহমেদ বলেন, তিনি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস আবাদ করেছেন। সেচ সার দিতে হয় নিয়মিত। এ ঘাস একবার লাগালে এক বছর ধরে কাটা যায়। এক দিক থেকে কাটতে কাটতে অপর দিকে শেষ হলে অন্য দিক আবার ঘাস কাটার উপযোগী হয়।

আরও পড়ুন   ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন

দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের একাধিক কৃষকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, নেপিয়ার ঘাস লাগানোর ৪৫ দিন পর এর কাটিং দেয়া যায়। অর্থাৎ বছরে ছয়-সাতবার জমি থেকে নেপিয়ার ঘাস কাটা যায়। প্রতি দেড় মাসে লাভ হয় পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। প্রতিবার কাটিংয়ে সার সেচ দিয়ে েেতর পরিচর্যা করতে হয়। প্রতি বিঘা চাষে প্রথমে খরচ হয় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এর পর প্রতি কাটিংয়ে খরচ হয় এক হাজার টাকা। সব খরচ বাদে প্রতি বিঘায় বছরে নিট লাভ হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। ঘাস চাষের কারণে এলাকায় জমির চাহিদা বেড়ে গেছে। আগে যে জমির লিজ ছিল চার হাজার এখন তা ছয়-আট হাজার টাকা। এক বিঘা নেপিয়ার ঘাস অনায়াসে ২০-২৫টি গরুর খাওয়ার চাহিদা মেটায়।

গ্রাম ও শহরে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে কৃষকেরা নেপিয়ার ঘাষ বিক্রি করছে। প্রকারভেদে প্রতি আঁটি ঘাঁসের দাম পাঁচ-আট টাকা। শুকনা ধানের বিচালির থেকে নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিমান অনেক বেশি। এ জন্য বেশিরভাগ কৃষক তাদের গরু-ছাগলকে নেপিয়ার ঘাস খাওয়াচ্ছেন। এতে যেমন এক দিকে খরচ কমছে, অপর দিকে গরু হচ্ছে হৃষ্টপিষ্ট।
চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙা ব্রিজ মোড়ে ঘাস বিক্রেতা শামু জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেপিয়ার ঘাস ক্রয় করে বিক্রি করেন। ছয়-সাত বছর ধরে এই কাজ করছেন। প্রতি আঁটি সাড়ে তিন টাকা দরে ক্রয় করে বিক্রি করছেন পাঁচ টাকা। প্রতিদিন ২০০-২৫০ আঁটি ঘাস বিক্রি হয়।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, এ ঘাস উৎপাদনে খরচ খুব কম হয়। অপর দিকে ঘাস উৎপাদন করায় গরুর খাদ্য সঙ্কট কমে আসছে। এ জন্য ঘাস আবাদ করতে চাষিদের নানা রকম পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলায় ৬০ হেক্টর।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now