Home কৃষি উদ্যোক্তা দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি

দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি

332
0
ঘরে দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি

এই করোনাকালে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অনেকেই ঘি খাচ্ছেন নিয়মিত তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতি নিয়ে। সম্পূর্ন ভালো ভাবে পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন বন্ধুদের কাছে।

অনেকেই দাদি বা নানিকে নিজ হাতে খাটি দেশি ঘি বানাতে দেখেছেন। কিন্তু সময়ের আবর্তে পড়ে এখন আর সে ধরনের ঘি বানাতে দেখা যায় না। বাজার থেকে ঘি কিনে খেতেই আগ্রহী বর্তমান প্রজন্ম। কিন্তু বাজারের ঘি যে কতখানি খাঁটি তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। আর তাই বাড়িতে ঘি বানিয়ে নিতে পারলে তা যেমন খাঁটি মানের নিশ্চয়তা দেয় তেমন স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো হয়। এ লেখায় রয়েছে ঘি বানানোর সঠিক উপায়। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে এনডিটিভি।

গরুর দুধ দিয়ে দেশি ঘি বানাতে হয়। এটি দোকান থেকে কেনা ঘিয়ের তুলনায় কোনো অংশেই কম স্বাদের হয় না। ঘি ব্যবহার করে শুধু খাবারই নয় তা নানা চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়। বাজারে যেসব ঘি পাওয়া যায় তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য প্রিজারভেটিভসহ নানা উপকরণ ব্যবহৃত হয়। তাই দোকান থেকে ঘি না কিনে বরং বাড়িতে তৈরি করে নেওয়াই ভালো।

দেশি ঘি বানাতে প্রচুর দুধ প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, দুধের বাড়তি সর থেকেই ঘি তৈরি হয়। তাই দুধ প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে কোনো সমস্যা হয় না।

যেভাবে বানাবেন দেশি ঘি

১. প্রতিদিন দুধ ফোটানোর পর ৩-৪ ঘণ্টা রেখে দেবেন। দুধ এ সময় নড়াচড়া করবেন না।

২. দুধের ওপর যে সর পড়বে তা সাবধানে সংগ্রহ করে একটি বাটিতে রাখবেন। সর ভরা বাটিটি ফ্রিজে বেশ কয়েক দিন ভালো থাকবে।৩. সরগুলো কয়েক দিন রাখলে জমে শক্ত হয়ে যাবে। এক বাটি সর হলে সেগুলো নিয়ে পিষে ফেলুন। শিলপাটায় বা ব্লেন্ডারে এ কাজ করা যাবে। এ অবস্থায় একে বাটারমিল্ক বলে। এটি নানা খাবারে ব্যবহার করা যায়। তবে তা থেকে ঘি বানাতে হলে আপনাকে আরও কিছু কাজ করতে হবে।

৪. একটি ভারি তলাযুক্ত পাত্রে অল্প আঁচে বাটা সরগুলো দিন। এতে তা ধীরে ধীর গলতে থাকবে। এটি ক্রমাগত নাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন   ফিঞ্চ পাখি পালন ও ব্যাবসায়িক দিক

৫. অল্প আঁচে নাড়াতে থাকলে কিছুক্ষণ পর সোনালি বর্ণের তেলের মতো তরল পাত্রের ওপর ভাসতে থাকবে। এটিই ঘি। রং পরিবর্তন হলে ও পাত্রে বুদবুদ উঠতে থাকলে তা নামিয়ে নিন। লক্ষ রাখবেন যেন পুড়ে না যায়।

৬. একটি পরিষ্কার ছাকনি ব্যবহার করে পাত্র থেকে তরল ঘি আলাদা করুন। অবশিষ্ট অংশগুলোও ফেলনা নয়। সেগুলো মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়।

৭. আলাদা করার পর ঘি ঠাণ্ডা করে পরিষ্কার বোতলে ঢেলে ঢাকনা লাগিয়ে রাখুন।

যেভাবে বানাবেন দেশি ঘি
যেভাবে বানাবেন দেশি ঘি

দেশি ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতির গুরুত্ব কি কি?

দেশি ঘি বা গোলা ঘি বানানোর সহজ পদ্ধতিগুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি পরিবেশবান্ধব কারণ কোনও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। দ্বিতীয়ত, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী কারণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। তৃতীয়ত, এর স্বাদ ও গন্ধ অনন্য এবং বাজারে পাওয়া যায় না। চতুর্থত, এটি বানানো খুব সহজ এবং কম খরচে সম্ভব। অনেক পুরনো প্রজন্মের মানুষ এখনও এই পদ্ধতিতেই ঘি বানান। এছাড়াও, দেশি ঘি বানানোর প্রক্রিয়াটি আমাদের পুরনো ঐতিহ্য রক্ষা করে। অনেকে এখন ঘরেই দেশি ঘি বানিয়ে রাখেন।

কয়েক বছর ঘি সংরক্ষণের উপায়?

দেশী ঘি সংরক্ষণের জন্য কিছু পরীক্ষিত উপায় রয়েছে যা অনেক দিন ধরে মানুষ অনুসরণ করে আসছে। প্রথমেই ঘি বানানোর পর ওটাকে একটি পরিষ্কার জার বা বাটিতে ভরে রাখতে হবে। এরপর ওটার উপর একটুখানি লবণ ছিটিয়ে দিলে ঘি দীর্ঘদিন ফেঁসে যাবে না। কেউ কেউ আবার ওটার উপর একটু তেল ঢেলে রাখেন। অনেকে ঘিটাকে এক ইঞ্চি গভীর করে ধীরে ধীরে সেদ্ধ করে জারে ভরে রাখেন। এতে করে ওটা অনেকদিন ঠিক থাকে। ঘিটাকে ছায়াপথে বা ঠাণ্ডা জায়গায় রাখলে টেকসই হয়। গরম আবহাওয়া এড়ানো উচিত। এভাবে সংরক্ষণ করলে দেশী ঘি প্রায় এক বছরও টিকে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন   মাশরুম কি , মাশরুম চাষ , মাশরুমের পুষ্টিমান ও উপকারিতা

 

১ লিটার দুধে কত ঘি?

দেশীয় পদ্ধতিতে ঘি তৈরি করতে হলে একলিটার দুধ থেকে কতটুকু ঘি পাওয়া যায়, এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে বলা হয়, একলিটার দুধ থেকে প্রায় ১২০-১৩০ গ্রাম অর্থাৎ প্রায় এক আষ্টম অংশ ঘি পাওয়া যায়।

তবে ঘির এই পরিমাণটা কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। প্রথমতই দেখতে হবে দুধের উৎস কোনটি। গরু, ছাগল আর ভেড়ার দুধে ঘির পরিমাণ আলাদা হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঘি পাওয়া যায় গাভীর দুধ থেকেই।

দেশি ঘি কি ফ্রিজে রাখা যায়?

দেশী ঘি ফ্রিজে রাখা যায় এবং রাখা উচিতও। ফ্রিজে রাখলে দেশী ঘি দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকে। তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:

১. ঘিটা যাতে বাতাস না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ।

২. ফ্রিজে রাখার আগে ঘিটাকে ভালভাবে ঠাণ্ডা করে ফেলতে হবে।

৩. ফ্রিজের তাপমাত্রা যেন খুব কম না হয়। সাধারণত ০-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঘি ভালভাবে সংরক্ষিত থাকে। বেশি ঠাণ্ডায় ঘি জমে যেতে পারে।

এভাবে সতর্কতা অবলম্বন করে ফ্রিজে দেশী ঘি সংরক্ষণ করলে প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ঘিটা ভাল থাকবে। পরিচ্ছন্ন বাটি ও নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কার করলে আরও দীর্ঘদিন দেশী ঘি সংরক্ষিত রাখা সম্ভব।

দেশি ঘি কি ফ্রিজে রাখা যায়?
দেশি ঘি কি ফ্রিজে রাখা যায়?

কোন পাত্রে ঘি রাখা উচিত?

দেশী ঘি সংরক্ষণের জন্য পাত্রের বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমাদের নানা-নানীরা মাটির হাঁড়ি বা বাটিই সবচেয়ে বেশি বিক্ষেবচনা করতেন। কারণ মাটির পাত্রগুলো শুষ্ক ও বাতাস চলাচলের সুবিধা দেয়। ফলে ঘিতে একটা বাদামী সুগন্ধ এসে দীর্ঘদিন ভাল থাকে।

আসলে মাটির পাত্রগুলোই সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ। ঘিতে কোনও রাসায়নিক পদার্থ না থাকায় এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য কোনওরকম ক্ষতিকর নয়। একইসাথে মাটির পাত্রগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যায় বলে এগুলো পরিবেশবান্ধবও বটে।

অনেকে আবার কাঁচের বাটিতেও দেশী ঘি রাখেন। কারণ কাঁচের বাটিও শুষ্ক থাকে এবং বাতাস চলাচলের সুবিধা দেয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে দেশী ঘি সংরক্ষণের জন্য মাটির হাঁড়ি বা বাটিই সবচেয়ে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আরও পড়ুন   দেশি মুরগি নিয়ে গবেষণা ও "হাজল” পদ্ধতিতে দেশি মুরগির উৎপাদন