টমেটো চাষ
টমেটোর পুষ্টিমানটমেটো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। টমেটোর পুষ্টির পাশাপাশি ভেষজ মূল্যও আছে। এর শাঁস ও জুস হজমকারক এবং ক্ষুধাবর্ধক। টমেটো রক্ত শোধক হিসেবেও কাজ করে।টমেটো চাষ
জাতসমূহ
বারি টমেটো-১:
গাছের উচ্চতা ৪০-৪২ ইঞ্চি। প্রতিটি গাছে ২৫-৩০টি করে ফল ধরে। গাছ প্রতি ফলন ২.৫-৩.০ কেজি। ফল কিছুটা লম্বাটে আকারের। প্রতিটি ফলের ওজন ৮৫-৯৫ গ্রাম।
বাংলাদেশের সব এলাকাতেই এটি চাষ করা যায়। গাছ থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩৪৫-৩৬০ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-২:
গাছের উচ্চতা ২৮-৩০ ইঞ্চি। প্রতিটি গাছে ৩০-৩৫টি করে ফল ধরে। গাছ প্রতি ফলন ২.০-২.৫ কেজি। ফল মোটামুটি গোল আকারের হয়। প্রতিটি ফলের ওজন ৮৫-৯০ গ্রাম।
ফলটি অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। বাংলাদেশের সব এলাকাতেই এটি চাষ করা যায়। গাছ থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে ৪-৫ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩২৫-৩৪৫ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-৩:
গাছের উচ্চতা ৪০-৪২ ইঞ্চি। প্রতিটি গাছে ৩০-৩২টি করে ফল ধরে। গাছ প্রতি ফলন ২.০-৩.০ কেজি। ফলের রঙ গাঢ় লাল। ফল কিছুটা চ্যাপ্টা ও মাংসল ধরণের। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৮৫-৯০ গ্রাম।
বাংলাদেশের সব এলাকাতেই এটি চাষ করা যায়। প্রতিটি গাছ থেকে ৭-৮ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩৪৫-৩৬০ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-৪:
প্রতিটি গাছে ২০-২৫টি ফল ধরে। গাছ প্রতি ফলন প্রায় ১ কেজি। ফলের রঙ লাল এবং গোল আকারের। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৪০ গ্রাম। এই জাতটি উচ্চ তাপ সহনশীল বলে সারাবছরই চাষ করা যায়।
এ জাত চাষ করে বর্ষা মৌসুমে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তবে গ্রীষ্ম এবং বর্ষা মৌসুমে পলিথিন ছাউনিতে চাষ করতে হয় এবং টমেটোটোন (প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলিলিটার হারে) নামক হরমোন প্রয়োগে ফলন বেশি হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৮০-৯০ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-৫:
প্রতিটি গাছে ২০-২২টি ফল ধরে। গাছ প্রতি ফলন প্রায় ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি। ফলের আকার হৃদপিন্ডের মতো। প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ৪৫ গ্রাম। শীত মৌসুমে আগাম চাষ করা যায়।
তবে গ্রীষ্ম এবং বর্ষা মৌসুমে পলিথিন ছাউনিতে চাষ করতে হয় এবং টমেটোটোন (প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলিলিটার হারে) নামক হরমোন প্রয়োগে ফলন বেশি হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৮০-৯০ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-৬:
গাছের উচ্চতা ৪৮-৫৪ ইঞ্চি। ফুল ও ফল হওয়ার সময়ও গাছের বৃদ্ধি হতে থাকে। প্রতি গাছে ৩০-৪০টি ফল ধরে। ফল গোল আকারের। রঙ হালকা লাল।
ফলের চামড়ার উপরে শিরা দেখা যায়। প্রতিটি ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম। গাছ থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়। শীত মৌসুমে আগাম চাষ করা যায়।
তবে গ্রীষ্ম এবং বর্ষা মৌসুমে পলিথিন ছাউনিতে চাষ করতে হয় এবং টমেটোটোন নামক হরমোন (প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলিলিটার হারে) প্রয়োগে ফলন বেশি হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন শীত মৌসুমে: ৩২০-৩৬০ গ্রীষ্ম মৌসুমে: ১৮০-২০০ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-৭:
প্রতিটি গাছে ৩০-৩২টি ফল ধরে। প্রতি গাছের ফলন হয় ৩.০-৩.৫ কেজি। ফলের উপরে বোঁটার গোড়ায় তারার মতো চিহ্ন থাকে। ফল সামান্য চেপ্টা ধরণের। ফলের রঙ গাঢ় হলদে থেকে কমলা।
প্রতিটি ফলের গড়ওজন ১৫০ গ্রাম। এই জাতের টমেটোতে বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। এক মৌসুমে ৬-৭ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। সারাদেশেই শীতকালে চাষ করা যায়।
পারিবারিক বাগানে চাষের জন্য এজাতটি বিশেষভাবে উপযোগী। প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০০-৪২৫ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-৮:
গাছ খাটো আকারের। প্রতিটি গাছে ২৫-৩০টি ফল ধরে। প্রতি গাছে ফলন হয় ২.৫-৩.০ কেজি। ফল বর্গাকৃতি থেকে গোল আকারের হয়ে থাকে। ফলের রঙ হালকা লাল। ফল মাংসল এবং ফলের চামড়া (ত্বক) খুব পুরু ও শক্ত।
প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১০০-১১৫ গ্রাম। এক মৌসুমে ৪-৫ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। জমি থেকে ফল তুলে ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় ১৫-২০ দিন সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩৬৫-৩৮৫ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-৯:
গাছ খাটো আকারের। প্রতিটি গাছে ৩২-৩৫টি ফল ধরে। প্রতি গাছে ফলন হয় ২.০-৩.০ কেজি। ফল ডিমের আকৃতির। ফলের নিচের দিক সামান্য চোখা। ফলের গড় ওজন ৭৫ গ্রাম।
এক মৌসুমে ৩-৪ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। সংগ্রহ করা ফল ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় ৩ সপ্তাহের বেশি সময় সংরক্ষণ করা যায়। ফল শক্ত তাই দূর দূরান্তে পরিবহন করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩২০-৩৬০ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-১০:
প্রতিটি গাছে ৭৫-৮০টি ফল ধরে। গাছ প্রতি ফলন হয় ২.০-২.৫ কেজি। ফল ডিম আকারের। প্রতিটি ফলের ওজন ২৫-৩০ গ্রাম। ফলের ত্বক বেশ পুরু এবং শক্ত । ফল সংগ্রহ এক মাসের বেশি সময় ধরে করা যায়।
এ জাতটি দূর দূরান্তে সরবরাহের উপযোগী। তাছাড়াও ঘরেও বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়। গ্রীষ্মকালে পাওয়া বলে বেশি লাভবান হওয়া যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমে হরমোন ব্যবহার জরুরি নয়, তবে ব্যবহার করলে ফলন বেশি হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ১৮০-২০০ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-১১:
গাছ লম্বা আকারের ও কম ঝোপালো। প্রতি গাছে ১৮০-২২০টি ফল ধরে এবং গাছ প্রতি ফলন প্রায় ১ কেজি। ফলের আকার ছোট। ফলের ওজন ৮-১০ গ্রাম। প্রতি গোছায় ১৫-২০টি ফল আঙ্গুরের মতো থোকায় ধরে।
ফল অনেক মিষ্টি স্বাদের হয়। মূলত শীতকালে আবাদ করা হয় তবে বছরের অন্য সময়েও চাষ করা যায়। সাধারণ তাপমাত্রায় দুই সপ্তাহ ফল সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন শীত মৌসুমে: ১৪০-১৬০, গ্রীষ্ম মৌসুমে: ৬০-৮০টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-১২:
গাছ লম্বা ও কম ঝোপালো। ফল আকারে মাঝারি ধরণের, কিছুটা চ্যাপ্টা। পাকলে সুন্দর লাল রঙের হয়। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৮০-৮৫ গ্রাম। সারা দেশেই চাষ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩২৫-৩৮৫ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-১৩:
প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৩০ গ্রাম। এই জাতটি যথেষ্ট গরম সহ্য করতে পারে। বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পলিথিন ছাউনিতে আবাদ করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ১৮০-২০০ টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-১৪:
প্রতিটি গাছে ৩০-৩৫টি ফল ধরে। ফলের আকার বড়। ফলের মাংসল অংশ আকর্ষণীয় লাল রঙের হয়। প্রতি ফলের গড় ওজন ৯০-৯৫ গ্রাম।
অনেকদিন ধরে ( প্রায় দেড় থেকে দুই মাস) ফল সংগ্রহ করা যায়। সাধারণ তাপমাত্রায় বাড়িতে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩৬৫-৩৮৫টন/হেক্টর।
বারি টমেটো-১৫:
প্রতিটি গাছে গড়ে ৪০-৪৫টি ফল ধরে। ফলের আকার অনেকটা ডিমের মতো। এতে বীজের সংখ্যা অনেক কম থাকে। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৬৫-৭০ গ্রাম।
ফলের ত্বক অনেক পুরু এবং শক্ত থাকে বলে বেশিদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়। ফল পাকতে শুরু করলে প্রায় এক মাস ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩২৫-৩৪৫ টন/হেক্টর।
বারি হাইব্রিড টমেটো-৩:
প্রতিটি গাছে গড়ে ৩৫টি ফল ধরে। প্রতিটি গাছে ফলন হয় ১.২ থেকে ১.৩ কেজি। ফলের আকার কুল বড়ই এর মতো। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৩৫-৪০ গ্রাম।
ফলের ত্বক অনেক পুরু ও শক্ত বলে বেশিদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায় এবং দূর দূরান্তে পরিবহনের জন্য সু্বধিাজনক। এই জাতটি যথেষ্ট গরম সহ্য করতে পারে। গ্রীষ্মকালীন জাত হলেও সারাবছরই আবাদ করা যায়।
বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পলিথিন ছাউনিতে আবাদ করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ১৪০-১৬০ টন/হেক্টর।
বারি হাইব্রিড টমেটো-৪:
প্রতিটি গাছে গড়ে ৩০টি ফল ধরে। গাছ প্রতি ফলন প্রায় ১.৫ কেজি। ফলের গড় ওজন ৫০ গ্রাম। ফল আকারে মাঝারি গোল ও লাল রঙের।এই জাতটি যথেষ্ট গরম সহ্য করতে পারে।
গ্রীষ্মকালীন জাত হলেও সারাবছরই আবাদ করা যায়। বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পলিথিন ছাউনিতে আবাদ করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ১৬০-১৮০ টন/হেক্টর।
বারি হাইব্রিড টমেটো-৫:
প্রতিটি গাছে গড়ে ৩৫-৪০টি ফল ধরে। প্রতিটি গাছে গড়ে ফলন হয় ৩.৫ থেকে ৪.০ কেজি। ফল আকারে বড়, গোল আকারের এবং সুন্দর লাল রঙের হয়।
প্রতিটি ফলের ওজন ৯৫-১০০ গ্রাম। ফল পাকতে শুরু করলে প্রায় এক মাস ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩৮৫-৪০০ টন/হেক্টর।
বারি হাইব্রিড টমেটো-৬:
প্রতিটি গাছে গড়ে ৩৫-৪০টি ফল ধরে। প্রতিটি গাছে গড়ে ফলন হয় ৩.০ থেকে ৪.০ কেজি। ফল আকারে বড়, গোল আকারের এবং সুন্দর লাল রঙের হয়। ফলটি অনেকদিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায়।
প্রতিটি ফলের ওজন ৯০-৯৫ গ্রাম। ফল পাকতে শুরু করলে প্রায় এক মাস ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩৬৫-৩৮৫ টন/হেক্টর।
বাহার: গাছের উচ্চতা ৩০-৩২ ইঞ্চি।
প্রতিটি গাছে ১৬-২০টি ফল ধরে। ফল আকারে বড়, গোলাকার। প্রতিটি ফলের ওজন গড় ওজন ১১০ গ্রাম। গাছ ছোট, কান্ড শক্ত, গাছ খাড়া, পাতা গাঢ় সবুজ ও চওড়া। প্রতি হেক্টরে ফলন ২৬৫ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-২:
গাছের উচ্চতা ৩০-৩২ ইঞ্চি। প্রতিটি গাছে ১৮-২২টি ফল ধরে। ফলের আকার গোল। উপরের দিকে সামান্য শিরা আছে। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৫০ গ্রাম। ফল খেতে সুস্বাদু। পাতা হালকা সবুজ ও কিছুটা কোকড়ানো। প্রতি হেক্টরে ফলন ১৪৫-১৬০ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-৩:
গাছের উচ্চতা ৩০-৩৩ ইঞ্চি। প্রতিটি গাছে ১২-১৪টি ফল ধরে। ফল কিছুটা চ্যাপ্টা ও স্পষ্ট শিরাযুক্ত। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৮২ গ্রাম। পাতা হালকা সবুজ ও কিছুটা কোকড়ানো। প্রতি হেক্টরে ফলন ১৫৩-১৭০ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-৪:
গাছের উচ্চতা ২৮-৩০ ইঞ্চি। প্রতিটি গাছে ২২-২৮টি করে ফল ধরে। ফল গোল আকারের। ফলের ত্বক মৃসন ধরণের হয়। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৮২ গ্রাম। গাছের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। ফল খেতে সুস্বাদু এবং ভিটামিন সি এর পরিমান বেশি থাকে। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩১০ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-৫:
গাছের উচ্চতা ৩৬-৩৮ ইঞ্চি। প্রতিটি গাছে ৩০-৩৫টি ফল ধরে। ফল কিছুটা লম্বাটে ধরণের। ফলের ত্বক মসৃন। গাছের পাতা হালকা সবুজ রঙের। ফল খেতে সুস্বাদু এবং ভিটামিন সি এর পরিমান বেশি থাকে। প্রতি হেক্টরে ফলন ২৮০ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-৬:
প্রতিটি গাছে ৩০-৩৫টি ফল ধরে। ফল মাঝারি আকারের। ফলের ত্বক মসৃন। ফল খেতে সুস্বাদু। ফলে কম বীজ থাকে। আগাম ও নাবি রোপণের জন্য উপযোগী জাত। প্রতি হেক্টরে ফলন শীতকালে: ৩৪৫, শীতের শুরুতে: ২১০. গ্রীষ্মকালে: ১৬০ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-৭:
প্রতিটি গাছে ২৫-৩০টি ফল ধরে। ফল মাঝারি আকারের। ফলের ত্বক মসৃন। ফল খেতে সুস্বাদু। রবি মৌসুমের জাত হলেও গ্রীষ্মকালেও চাষ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন শীতকালে: ৩৫০, শীতের শুরুতে: ২৫৫. গ্রীষ্মকালে: ১৬০ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-৮:
গাছ লম্বা হয়, গাছের উচ্চতা ৫৫ ইঞ্চি। অধিক ফলনশীল। বীজ আকারে ছোট হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩৬৫-৩৭৬ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-৯:
গাছ লম্বা হয়, গাছের উচ্চতা ৪৩ ইঞ্চি। অধিক ফলনশীল। বীজ আকারে ছোট হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩৪৫-৩৬৫ টন/হেক্টর।
বিনা টমেটো-১০:
গাছ লম্বা হয়, গাছের উচ্চতা ৫৫ ইঞ্চি। অধিক ফলনশীল। বীজ আকারে ছোট হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ৩২৫-৩৪৫ টন/হেক্টর।
বীজ ও বীজতলার মাটি শোধন:
টমেটো চাষে সফলতার জন্য কেনা বীজ বা ঘরে রাখা বীজ প্রথমে শোধন করে নিতে হবে (ভিটাভেক্স ছাত্রকানাশক দিয়ে)। সম্ভব হলে বীজতলার মাটিও শোধন করে নিলে ভাল হয়।
বীজ তলার মাটি চাষ দিয়ে তাতে জৈব সার মিশিয়ে পলিথিন দিয়ে দু’সপ্তাহ ভাল করে ঢেকে রেখে দিলে সূর্যের তাপে মাটিতে থাকা অনেক জীবাণু মরে যায় ও বীজতলার মাটি শোধন হয়ে যায়।
সময় না থাকলে বীজতলার মাটির উপরে ৩ ইঞ্চি পুরু করে কাঠের গুঁড়া বিছিয়ে আগুন দিলে সে তাপেও রোগ জীবাণু নষ্ট হয়।
চারা তৈরি
সরাসরি জমিতে বীজ বুনেও টমেটো চাষ করা যায়। তবে দ্রুত ভাল ফলন পাওয়ার জন্য আলাদাভাবে চারা তৈরি করে সেই চারা মূল জমিতে লাগাতে হবে। এজন্য রোদযুক্ত উঁচু জায়গায় পরিস্কার করে ভালভাবে মাটি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে।
চাষের পর মাটি সমতল করে ১ মিটার চওড়া করে বেড বানাতে হবে। বেড খুব বেশি লম্বা না করে ৩-৫ মিটার করা ভাল। এতে পরিচর্যার সুবিধে হয়। ছিটিয়ে বীজতলায় বীজবপন করা যায়।
ছিটিয়ে বপনের জন্য সাধারণত:প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজ লাগে। বীজ থেকে চারা গজাতে ৬-১৪ দিন লাগে। শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য বীজ বুনতে হবে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। আগাম চাষের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজ বুনতে হবে।
জমি তৈরি
জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হয়। গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের জন্য ২০-২৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ২৩০ সেন্টিমিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। সেচ দেওয়ার সুবিধার্থে ২টি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হয়।
চারা রোপণের দূরত্ব
প্রতিটি বেডে ২ সারি করে ৬০ী৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।
রোপণ সময়
শীতকালীন টমেটোর জন্য মধ্য কার্তিক থেকে মাঘের ১ম সপ্তাহ (নভেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি) পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। তবে আগাম চাষের জন্য রোপণ সময় এগিয়ে আনতে হবে।
আগাম চাষের জন্য ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং নাবি চাষের ফাল্গুণ মাসে এবং গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য জন্য চৈত্র-বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করতে হবে।
সারের পরিমাণ
টমেটো চাষের জন্য প্রতি শতকে ইউরিয়া ২.০-২.৪ কেজি, টিএসপি ১.৬-২.০ কেজি, এমওপি ০.৮-১.২ কেজি ও গোবর সার ৩০-৪৫ কেজি দিতে হয়। অর্ধেক গোবর সার ও সবটুকু টিএসপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
অবশিষ্ট গোবর চারা লাগানোর পূর্বে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সমান দুই কিস্তিতে পার্শ্বকুশী ছাঁটাই এর পর চারা লাগানোর ৩য় সপ্তাহে ও ৫ম সপ্তাহে রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হয়।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
মরা পাতা ছাঁটাইসহ ‘অ’ আকৃতি বাঁশের খুটি টমেটো গাছের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি কাজ। এ ছাড়া প্রয়োজনে সেচ দেয়াও যেতে পারে। প্রথম ফুলের গোছার ঠিক নিচের কুশিটি ছাড়া সব পার্শ্বকুশি ছাঁটাই করতে হবে।
রোগবালাই
টমেটোর চারা ঢলে পড়া রোগ: যে কোন বয়সের গাছই ক্ষেতে গেলে অনেক সময় ঝিমিয়ে ঢলে যেতে দেখা যায়। ব্যাক্টেরিয়ার কারণে এমন হলে হঠাৎ করে চারা ঢলে পড়ে।
আক্রান্ত গাছের ডাল কেটে পানিতে রাখলে ব্যাকটেরিয়ার সাদা কষের মত তরল বেরিয়ে আসে। পক্ষান্তরে ছত্রাক জীবাণু দ্বারা গাছ আক্রান্ত হলে প্রথমে গাছের অংশ বিশেষ এবং কয়েকদিন পর সম্পূর্ণ গাছ ঢলে পড়ে।
আক্রান্ত কান্ডের ভিতরের অংশ বাদামী রং ধারণ করে। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় মাটি যদি ভেজা থাকে তাহলে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। রোগাক্রান্ত গাছ ও সেচের পানির মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু বিস্তার লাভ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা:
রোগ মুক্ত চারা উৎপাদন ও রোপণ করতে হবে। বীজ তলায় বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ পূর্বে ৩-৫ টন/হেক্টর হারে মুরগির পচা বিষ্ঠা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া। মূল জমিতেও এভাবে মুরগির বিষ্ঠা দেয়া যেতে পারে।
২৫০-৩০০ কেজি/হে: হারে সরিষা বা নিম খৈল এভাবে প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যায়। জমি আগাছামুক্ত রাখা। ঢলে পড়া চারা ক্ষেতে দেখা মাত্রই তুলে তা ধ্বংস করতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ও পরিমিত ইউরিয়া ব্যবহার করা। জমি সব সময় আর্দ্র বা ভিজা না রাখা এবং নিকাশের ব্যবস্থা রাখা।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন:
জাত ও লাগানোর সময়ের উপর নির্ভর করে ২-৪ মাসের মধ্যেই ফসল তোলার সময় হয়। টমেটো পাকা ও কাঁচা উভয়ই অবস্থায়ই তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ২০-৪০ টন।
সংগৃহীত ও সংকলিত