তিসি বীজের নানা গুনাগুন জেনে নেই
আসুন আজকে আমরা তিসি বীজের নানা গুন জেনে নেই। এই আর্টিকেল টি পড়ে ভালো লাগলে অন্য বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন তাহলে তারাও তিসি বীজের গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পারবে।
তিসি বীজের মাধ্যমে পেট পরিষ্কার রাখুন
অনেকের কাছেই তিসি একটি অপরিচিত শস্য। তবে একসময় এই শস্যটির বেশ প্রচলন ছিল। কেউ হয়তো তিসির তেলের কথাও শুনে থাকবেন। কিন্তু এটি হয়তো অনেকেই জানেন না যে- এর বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। এই বীজের চা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া এই বীজ গুড়া করে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে খেলে অনেক রোগের ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
তিসির একাধিক পুষ্টিগুণ রয়েছে। ১০০ গ্রাম তিসির বীজে ক্যালোরি রয়েছে ৩৩৫, শর্করা রয়েছে ২৮.৮৮ গ্রাম, প্রোটিন রয়েছে ১৮.২৯ গ্রাম, ২৭.৩ গ্রাম ফ্যাট এবং ৮ গ্রাম ফাইবার ।
তিসি হচ্ছে আঁশসমৃদ্ধ, প্রোটিন, ক্যলসিয়াম, এন্টি অক্সিডেন্টস, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং মিনারেলের একটি অসাধারণ সমন্বয়। এতে রয়েছে ভিটামিন বি কপ্লেক্স, ম্যাঙ্গানিজ ও প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। তিসি আমাদের শরীরে এন্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে দেহকে শক্তিশালী রাখে এবং সহজে ক্লান্ত হতে দেয় না।
শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে তিসি। খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং অতিরিক্ত মেদও দূর করে।
তিসির মধ্যে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট যা ব্লাড ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
গ্যাস্ট্রিক ও আলসার দূর করে এবং অ্যাজমা থেকে রক্ষা করে।
যারা তামাক বা অন্য নেশায় আক্রান্ত তাদের জন্য তিসি খুবই উপকারী। এটি নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিন খাওয়ার পর অল্প পরিমাণ তিসি চাবালে দ্রুত নেশা থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।
যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের খাদ্য তালিকায় তিসি রাখতে পারেন। প্রতিদিন দুই চামচ তিসির পাউডার এর জন্য যথেষ্ট। এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও এমাইনো এসিড বিপি কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এই বীজ দিয়ে চা করে খেলেও রক্তের প্রেসার স্বাভাবিক থাকবে।
তিসি আমাদের হৃৎপিণ্ডকে সবল রাখতে কাজ করে। হার্টের ব্লক এবং হার্টবিট স্বাভাবিক রাখতেও অনেক সাহায্য করে।
গবেষণায় জানা গেছে, তিসি আমাদের শরীরের এইচডিএল (ভালো কোলেস্টোরাল) বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টোরালকে কমায়। অর্থাৎ এটি আমাদের কোলেস্টোরালকে নিয়ন্ত্রণ করে।
যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন নেই, যদি এই তিসি সেবন করে থাকেন দৈনিক অন্তত ১৫ থেকে ২০ গ্রাম। আর যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা যদি এটি গ্রহণ করেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।
তিসি আমাদের হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করে। মেজাজ ফুরফুরে রাখতেও সাহায্য করে।
এটি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম লেভেল বাড়ায়। হাড় ও শরীরের জয়েন্টগুলো সুস্থ রাখে। যার ফলে বৃদ্ধ বয়সে হাড্ডিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তিসির বীজ মেয়েদের মেনোপোজের সময় ব্যথা দূর করতেও অনেক উপকারী।
তিসি আমাদের চুল ও ত্বকের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি মুখের বলিরেখা প্রতিরোধ করে, চুল পড়া রোধ করে, ত্বককে মসৃণ রাখে, ত্বক উজ্জ্বল রাখে, যৌবন ধরে রাখে। এটি ব্রণ ও যেকোন চামড়া জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে। এটি মাথায় খুশকি হতে দেয় না এবং মাথার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ঠিক রাখে।
তিসির বীজ কাটাবে চর্বি
ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার রেসে প্রায় প্রত্যেকেই দৌড়াচ্ছেন নিশ্চয়ই! সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত খাদ্য তালকায় তিসির বীজ রাখা প্রয়োজন। তিসির বীজ হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত তিসির বীজ গ্রহণ করলে হজমশক্তি বাড়ে। সেই সঙ্গে ওজন কমাতেও এটি ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি ‘আমেরিকান জার্নাল অফ ফিজিওলজি: এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম’ এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা ইঁদুরের শরীরের উপরে করা এক পরীক্ষায় দেখেন, যেসব ইঁদুরকে তিসির বীজ খাওয়ানো হয়েছে তারা অন্যদের থেকে বেশি সক্রিয় এবং তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাছাড়া তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শরীরের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ সঠিক থাকে। গবেষকরা চার ধরনের খাদ্যতালিকার সঙ্গে ১২ সপ্তাহ ধরে তিসির বীজ দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, এটি হজমব্যবস্থার জন্য দারুণ উপকারি। তিসির বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।
এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তিসির বীজ খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষণা বলছে, যাদের শরীরে চর্বি বেশি থাকে তাদের শরীরে ভাল ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কম থাকে। ফলে তাদের হজমশক্তিও বিঘ্নিত হয়। ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে। বৈজ্ঞানিকেরা বলছেন, তিসির বীজের মাধ্যমে শরীরে ভাল ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ানো যায়। ফলে হজমশক্তিও ভাল হয়। তখন ওজন নিয়ন্ত্রণে এটি ভূমিকা রাখে।
নানা রকম খাবার খাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে আমাদের পেটের সমস্যা হতে পারে । পেটে নানা ধরনের সমস্যার কারণে আমরা ডাক্তারের কাছে যাই । কিন্তু অনেক সময় ডাক্তার হাতের কাছে থাকে না । এ সময় আরও পেটের অবস্থা খারাপ হতে পারে । সেই সময় খুব সহজে পেটের সমস্যা সমাধান করতে তিসি বীজ ব্যবহার করতে হবে । আমাদের হাতের কাছেই এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যাদের কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই লিভার এবং মলাশয় পরিষ্কার করে ফেলা সম্ভব। এমনি একটি উপাদান হলো তিসি বীজ। এতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে ফাইবার এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা পেট পরিষ্কার রাখতে নানাদিক থেকে সাহায্য করে। আর আজকের লেখাতে তাই থাকছে আপনাদের জন্য পেট পরিষ্কার রাখতে তিসি বীজ এর ব্যবহার পদ্ধতি।
তাহলে আসুন এখন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে তিসি বীজ ব্যবহার করে আমাদের পেট পরিষ্কার করতে পারি :
প্রয়োজনীয় উপকরণ :
১) এক গ্লাস পানি
২) এক চামচ তিসি বীজ
প্রস্তুত প্রণালী :
প্রথমে এক গ্লাস পানি নিতে হবে । এরপর এর ভিতর এক চামচ তিসি বীজ এর ভিতর গুলে দিতে হবে । এবার এটিকে ২-৩ ঘন্টা ঢেকে রাখতে হবে ।
খাওয়ার নিয়মাবলি :
রাতে শুতে যাওয়ার আগে এই জল পান করতে হবে । এটা রাতে খেলে সকালে উুঠলে দেখা যাবে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে ।
নিয়মিত এটা এক সপ্তাহ এই তিসি বীজের পানি পান করতে হবে । তাহলে দেখা যাবে আপনার পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে ।
তাহলে পেট পরিষ্কার রাখতে এখনি তিসি বীজের পানিয় তৈরী করে সেটা পান করুন আর পেট পরিষ্কার রাখুন ।
তিসিকে খাওয়ার জন্য একে ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে পাউডার তৈরি করে নিন। ওজন কমাতে কুসুম গরম পানিতে আদার টুকরো মিশিয়ে প্রতিদিন সেকালে খালি পেটে পান করতে পারেন। প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে বা সকালের নাস্তার পর সামান্য তিসি মুখে নিয়ে চাবিয়ে খান। প্রতিদিন ছোট চামচের এক চামচ তিসিই যথেষ্ট স্বাস্থ্যের জন্য। তবে এর চেয়ে বেশি খেলে ডায়রিয়া বা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। তিসি দিয়ে খুব মজাদার ভর্তাও বানানো যায়। এক্ষেত্রে রোস্টেড তিসিকে লবণ, মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে পাটায় পিষে নিতে হবে। কোনো জটিল রোগ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তিসি খাবেন।
কোথায় পাওয়া যায়:
যদিও তিসিবীজ আমাদের দেশেও চাষ হয় কিন্তু অন্যান্য শস্যের মত এতো পরিচিত নয়। তিসি সাধারণত অর্গানিক খাবার যেসব দোকানে পাওয়া যায় সেখানে পাবেন। এছাড়া মশলার দোকানে বা বীজ যেসব দোকানে বিক্রি করে সেখানেও পেতে পারেন। এখন বিভিন্ন অনলাইন গ্রসারি শপে তিসি পাওয়া যায়। আপনারা চাইলে অনলাইনে অর্ডার করেও কিনতে পারবেন।