আজ বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন
পুকুর, বিল বা জলাশয়ে ফোটা শাপলা ফুল দেখে আমরা বরাবরই অভ্যস্ত। আকাশের পানে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকা প্রকৃতির এসব ফুল শুধু সৌন্দর্যের আঁধারই নয়, জলাশয়ের সুস্বাস্থ্যেরও একটি প্রতীক। শাপলা ফুল আমাদের জাতীয় ফুল। আমাদের দেশের বাচ্চারা ছোট বেলা থেকে এই ফুলের সম্পর্কে জেনে আসে। কিন্তু তারা কখনই এই ফুল দেখে না। কারণ শাপলা সাধারণত গ্রামে দেখা যায়। এই শাপলা বর্তমানে আপনার বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে চাষ করতে পারেন।
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮০ ধরণের শাপলা আছে। তবে আমাদের দেশে সাদারণত সাদা শাপলা চাষ করা হয়। এছাড়াও আপনি বাড়িতে নীল শাপলা, বেগুনী শাপলা, লাল শাপলা, ইত্যাদি চাষ করতে পারেন।
আসুন জেনে নেই কিভাবে আপনি আপনার বাড়িতে শাপলার চাষ করবেন…
শাপলা চাষ/রোপনের সঠিক সময়…
শাপলা মূলত জলজ উদ্ভিদ। এদেরকে গ্রীষ্মের শুরুতে লাগাতে পারলে মধ্য বর্ষায় ফুল পাবেন।
শাপলার বীজ লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে শাপলার গোড়ার দিকের শালূক সংগ্রহ করতে হবে। এরপর উক্ত শালূক উপযুক্ত টবের মাটিতে পুতে দিতে হবে এবং পানির পরিমাণ সঠিক মাপে দিতে হবে।
যেভাবে বানাবেন ছোট্ট পুকুর…
** শেকড়সহ শাপলা গাছ পুকুর-জলাশয় থেকে তুলে নিন।
** মাটির বড় মালশা বা হালিমের মাটির বড় হাড়ি নিন(প্রায় ৬ লিটার পানি ধরে এমন), তাতে বেলে দোয়াঁশ মাটি এবং দু’ কেজি শুকনো গোবর সার মিশিয়ে মাটির মালসাটা ভর্তি করুন। এর পর পাত্রটি পানি মিশিয়ে কাদা করে নিন।
** এক হাতের পাঁচ আঙ্গুল এক জায়গায় জড়ো করে কাদার মধ্যে ডুবিয়ে দিন। আঙ্গুলগুলো ধীরে ধীরে চারদিকে প্রসারিত করুন। একটা সুন্দর গর্ত হয়ে যাবে। গর্তের মধ্যে শাপলার চারাটিকে সাবধানে বসিয়ে দিন। কোন ভাবে যেন শাপলার শেকড়ে চাপ কিংবা আঘাত না লাগে।
** শাপলা চাষ করার জন্য খেয়াল রাখবেন পাত্রটি যেন মোটামুটি গভীর হয়। শাপলা চাষ করার জন্য আপনি আপনি ইচ্ছা করলে হাফ ড্রাম, বড় মাটির চারি বা প্লাস্টির সবচেয়ে বড় গামলা বা সবচেয়ে বড় বালতি (৩৫ লিটার সাইজের) নিয়ে এর মধ্যে আস্তে আস্তে পানি ঢেলে উপরের দিকে ১ ইঞ্চি খালি রেখে ভর্তি করে ফেলুন।
** এবার মাটির মালশাটি আস্তে করে শাপলা চাড়ি বা গামলা বা বালতিতে ডুবিয়ে দিন।
হয়ে গেল আপনার শাপলা লাগানো।।
ছোট্ট পুকুরের যত্ন…
** পানি ঢালার পরে পানিটা সামান্য ঘোলা হবে। ২৪ ঘন্টা পরেও যদি ঘোলাটে ভাব না কাটে, বুঝতে হবে আপনার মাটি নির্বাচণ সঠিক হয়নি।
** সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদ পায় এমন জায়গায় গামলাটি রেখে দিন। মনে রাখবেন দুপুর ২টার পরে যেন শাপলায় কোন অবস্থায়ই রোদ না পায়। কড়া রোদে পানি গরম হয়ে গেলে শাপলার পাতা হলুদ হতে থাকে।
** শাপলার পাতা, কুড়ি ও ফুলে ভরে না ওঠা পর্যন্ত টবের পানির উপরে কয়েকটা টোপা পানা ভাসিয়ে দিতে পারেন। রোদে বেশী গরম হওয়া থেকে বাঁচাবে।
** প্রথম দিকে কিছু পাতা সব মরে যেতে পারে । এতে বিচলিত না হয়ে যত্ন নিন । কয়েক মাসের মধ্যে নতুন পাতা আসবে ।
**শাপলা চারা লাগানোর ১মাস এর মধ্যে পানি বদল না করাই ভাল । পানি বদলানোর সময় পাত্রের গায়ে জন্মানো পিচ্ছিল শেওলা পরিষ্কার করে দিন ভাল করে।
** প্রতিদিন অন্তত একবার করে দেখুন শাপলা চাড়ি বা গামলাতে পানি আছে কিনা। পানি কমে গেলেই আবার পানি দিয়ে ভরে দেবেন। চাইলে বৃষ্টি পানি জমিয়ে রাখতে পারেন। পানি কমে গেলে জমানো বৃষ্টির পানি দিলে গাছ ভালো থাকবে।
** মরা পাতা জমতে দেবেন না। পাতা মরে পচে গেলে পানি নষ্ট হয়ে তাতে শ্যাওলা জমবে।
** কোন প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যাবে না তাতে গাছ মারা যেতে পারে।
** শাপলার গামলায় কিছু পানা ও গাপ্পি ছেড়ে দিন। পানা পানি পরিষ্কার রাখবে আর গাপ্পি মশা ডিম পাড়লে সেই ডিম ও লার্ভা খেয়ে পরিবেশ মশামুক্ত রাখবে।
নিয়মিত মনে করে মাছের খাবার দিন। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার দিবেন না তাতে পানি দুর্গন্ধ হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
শাপলার ঔষধি গুনাগুন…
শাপলার অনেক ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে। শাপলা রক্ত দোষ ও বহুমূত্র রোগে অনেক উপকারে আসে। এছাড়াও শাপলা প্রসাবের জ্বালা পোড়া, আমাশয় ও পেট ফাঁপায় উপকারী।
শাপলার অন্যান্য ব্যবহার…
শাপলা কে শুধু সবজি হিসেবে খাওয়া হয় তা নয় শাপলার ফলগুলো পাকলে ফেটে যায়। ফলের মধ্যে থাকে কালে ও বাদামী রঙের অসংখ্য বীজ। এই বীজ রোদে শুকিয়ে গরম বালু দিয়ে আগুনে ভেজে খই তৈরি করা যায়। ইলিশ ও চিংড়ি মাছের সাথে রান্না করলে অতুলনীয় স্বাদ পাওয়া যায়।
গুনিজনেরা বলে শাপলাতে নাকি সামান্য পরিমানে মধু থাকে যা আহরণে মৌমাছি ছুটে আসে। আর মৌমাছি যদি কোন বাগানে আসা যাওয়া করে তাহলে না কি সে বাগানে অন্যান্য গাছে পরাগায়ন ভাল হয়। বাগান ফুলে ফলে ভরে উঠে।। সুতরাং আসুন না সবাই শাপলা লাগাই কেননা, কম বেশী সারাবছরই এতে ফুল থাকে। যা সারা দিন ব্যাপী এর সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়।