আজ শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন

সাগর কলা চাষ পদ্ধতি

সাগর কলা চাষ পদ্ধতি

সাগর কলা চাষ পদ্ধতি

আজকে আলোচনা করা হবে সাগর কলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে। বাংলাদেশে প্রায় অঞ্চলেই এখন সাগর কলা চাষ করা যায় তবে বিশেষ ভাবে নরসিংদী সদর, পলাশ, ঘোড়াশাল, শিবপুর ও মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষ করা হয় সাগর কলা অধিক পরিমানে।

সাগর কলার সমকক্ষ কলা শুধু এ দেশে নয়, বিদেশেও বিরল । মাঝারি আকার ও হলুদ রঙের এ কলার স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয় । বাংলাদেশের কলার বাজারে অর্ধেকেরও বেশী স্থান দখল করে আছে অমৃত সাগর কলা । বর্তমানে ছাদেও এর চাষ শুরু হয়েছে । কলা চাষের জন্য অপেক্ষাকৃত একটু বড় টবের প্রয়োজন হয় ।

@ জমি তৈরি ও চারা রোপন @

জমি তৈরী

বারবার চাষ দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরী করে নিতে হয়। অমৃত সাগর কলার জন্য ২ x ২ মি. দূরত্বে কাঠি পুঁতে চারা রোপণের জায়গা চিহ্নিত করা হয়। কাঠিটিকে কেন্দ্র করে ৪৫ x ৪৫ x ৪৫ সে. মি. গর্ত খুড়তে হয়।

এ সময় গর্তের উপরের মাটি আলাদা রাখতে হবে। গর্তটি ১০-১৫ দিন উম্মুক্ত ফেলে রাখাই ভাল। প্রথমে জৈবসার উপরের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তে ফেলতে হবে। এরপর মাটি দেয়ে গর্তটি সম্পূর্ণ ভরে ফেলতে হবে।

মেহের সাগর কলার বেলায় ১.৮ x ১.৮ মি. দূরত্বে রোপণ করা যেতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম দূরত্বে (১.৫ x ১.৫ মি.) বামুন জাতগুলো রোপণ করা চলে।

আরও পড়ুন   কাঠলিচু বা আঁশফল চাষ

@ চারা সংগ্রহ ও রোপণ @

বেশী পুরানো বাগান হতে চারা সংগ্রহ না করা উত্তম। পুরানো বাগানের কন্দ উইভিল পোকাক্রান্ত হতে পারে। গর্তে সার প্রয়োগের পর চারা রোপণ করতে হয়। সোর্ড সাকার/তরবারি চারা রোপণ করাই উত্তম।

প্রতি হেক্টরে ২ x ২ মিটার দূরত্বে ২৫০০টি, ১.৮ x ১.৮ মি. দূরত্বে ৩০৮৬টি ও ১.৫ x ১.৫ মি. দূরত্বে ৪৪৪০টি সাকারের প্রয়োজন হয়।

@ চারা সংগ্রহ ও রোপণ @

@ চারা সংগ্রহ ও রোপণ @

@ রোপণ সময় @

কলার চারা বছরে ৩ মৌসুমেই রোপণ করা যায়। মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ। মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে এবং মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর

@ সার প্রয়োগ @

প্রতি কলা গাছে নিন্মরুপে সার ব্যবহার করতে হবেঃ

সার সারের পরিমান* পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়
জমি তৈরির সময় দেয় (হেক্টর প্রতি) গর্তে দেয় ১ম কিস্তি ২মাস পর ২য় কিস্তি ৪মাস পর ৩য় কিস্তি ৬মাস পর

গোবর ১২ টন ৬ কেজি – – –
খৈল – ৫০০ গ্রাম – – –
ইউরিয়া – ১২৫ গ্রাম ১২৫ গ্রাম ১২৫ গ্রাম ১২৫ গ্রাম
টিএসপি – ২৫০ গ্রাম – – –
এমপি – ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
জিপসাম – ১০০ গ্রাম – – –
জিংক সালফেট – ১০ গ্রাম – – –
বোরিক এসডি – ৫ গ্রাম – – –

  • মাটির উর্বরতাভেদে সার ও তার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।

@ অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা @

সেচ
শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর সেচের প্রয়োজন হয়। গাছ বৃদ্ধির প্রথম অবস্থায় বিশেষ করে রোপণের প্রথম চারমাস কলা বাগান আগাছা মুক্ত রাখা খুব জরুরী । কলা বাগানের জমিতে যাতে পানি না জমে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। প্রয়োজন হলে পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা কেটে দিতে হবে ।

আন্তঃফসল

চারা রোপণের প্রথম ৪-৫ মাস বলতে গেলে জমি ফাকাই থাকে। যদি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চারা রোপণ করা হয় তবে কলা বাগানের মধ্যে আন্তঃফসল হিসাবে রবি মৌসুমের সবজি চাষ করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন   স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি

তবে এসব আন্তঃফসলের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত সার দিতে হবে। জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী (মাঘ) মাসে চারা রোপণ করলেও আন্তঃফসল হিসাবে কুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, শসা ইত্যাদি বাড়তি ফসল উৎপাদন করা যায়।

ফলের যত্ন

গাছে থোড় আসার পরপরই গাছ যাতে বাতাসে ভেঙ্গে না যায় সেজন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে বাতাসের বিপরীত দিক থেকে গাছে ঠেস দেয়া খুবই জরুরী। থোড় থেকে কলা বের হওয়ার আগেই গোটা থোড় স্বচ্ছ বা সবুজ পলি ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেয়া দরকার। পলি ব্যাগের নীচের দিকের মুখ একটু খোলা রাখতে হবে।

@ পোকা ও রোগ দমন @

পোকামাকড়

কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা

কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা দিনের বেলা পাতার গোড়ায় লুকিয়ে থাকে এবং রাত্রে বের হয়ে কচি পাতার সবুজ অংশের রস চুষে খায়। ফলে অসংখ্য দাগের সৃষ্টি হয়। কলা বের হওয়ার সময় হলে পোকা মোচার মধ্যে ঢুকে কচি কলার রস চুষে খায়। ফলে কলার গায়ে বসন্ত রোগের দাগের মত দাগ হয়। এ পোকা দমনে নিন্মলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

ক) পোকা আক্রা্ন মাঠে বার বার কলা চাষ না করা।

খ) কলার মোচা বের হওয়ার সময় পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে এ পোকার আক্রামন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

গ) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম সেভিন ৮৫ ডব্লিউ পি অথবা ম্যালাথিয়ন অথবা লিবাডিস ৫০ ইসি ২ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর গাছের পাতার গোড়ায় ছিটাতে হবে।

কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা

কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা

@ রোগবালাই @

পানামা রোগ

এটি একটি ছত্রাক জাতীয় মারাত্নক রোগ। এ রোগের আক্রমণে প্রথম বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায় এবং পরে কচি পাতাও হলুদ রঙ ধারণ করে। পরবতীতে পাতা বোটার কাছে ভেঙ্গে গাছের চতুর্দিকে ঝুলে থাকে এবং মরে যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কচি পাতাটি গাছের মাথায় খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অবশেষে গাছ মরে যায়। কোন কোন সময় গাছ লম্বালম্বি ভাবে ফেটেও যায়। এ রোগ দমনে নিন্মলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন   মৌসুমের শুরুতে আম গাছের যত্নে করণীয়

ক) আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খ) আক্রান্ত গাছের সাকার চারা হিসেবে ব্যবহার না করা।
গ) পানামা রোগ প্রতিরোধকারী চাম্পা জাত ব্যবহার করা।

বানচি-টপ ভাইরাস রোগ

এ রোগের আক্রমণে গাছের পাতা গুচ্ছাকারে বের হয়। পাতা আকারে খাটো, অপ্রশস্থ এবং উপরের দিকে খাড়া থাকে। কচি পাতার কিনারা উপরের দিকে বাঁকানো এবং সামান্য হলুদ রঙয়ের হয়।

অনেক সময় পাতার মধ্য শিরা ও বোটায় ঘন সবুজ দাগ দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত গাছে কোন সময় মোঁচা আসেনা। নিন্মোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগ দমন করা যায়।

ক) ভাইরাস বহনকারী এফিড পোকা দমনে রগর বা সুমিথিন (২ মি.লি./লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।)

খ) আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
গ) বানচি-টপ রোগ প্রতিরোধকারী চাম্পা জাত ব্যবহার করা।

সিগাটোকা রোগ

এ রোগের আক্রমণে প্রাথমিকভাবে ৩য় বা ৪র্থ পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। ক্রমশ দাগগুলো বড় হয় ও বাদামি রং ধারণ করে। এভাবে একাধিক দাগ বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং তখন পাতা পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়। নিন্মোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগ দমনে রাখা হবে।

ক) আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খ) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট-২৫০ ইসি অথবা ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে ছিটাতে হবে

@ মুড়ি ফসল @

চারা রোপণের প্রথম ৪-৫ মাস পর সাকার (ফেকড়ি) বের হওয়া শুরু করে। কলাগাছে থোড় বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর মাটির ৫ সে.মি. উপরে ধারালো হাসুয়া দিয়ে সবগুলো চারা কেটে ফেলে দিতে হবে।

থোড়া বা ফুল বের হবার পর পছন্দমত জায়গায় কোন একটি চারাকে বাড়তে দেয়া উচিত যেটি মুড়ি ফসল হিসেবে পরবর্তীতে বেড়ে উঠবে ও ফল দিবে। মুড়ি ফসলের জন্য সমান বয়সের চারা নির্বাচন করতে হবে।

@ মুড়ি ফসল @

@ মুড়ি ফসল @

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web