আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন
বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনে ও গৃহ সজ্জায় অর্কিড অতুলনীয়। এই ফুলের রং-বৈচিত্র আর অনিন্দ্য সুন্দর গঠন সবার নজর কাড়ে খুব সহজেই। বারান্দায় টবে বা ছাদে যেখানেই চাষ করুন না কেন অর্কিডের বিচিত্র সৌন্দর্য এর দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবেই। প্রায় সব অর্কিড ফুলেরই কদর আছে পুরো পৃথিবী জুড়ে। এই গাছ খুবই কষ্ট সহিষ্ণু বলে বরফাচ্ছাদিত দেশ থেকে শুরু করে উষ্ণ আর্দ্র আবহাত্তয়ার দেশেও এর বংশ বিস্তার খুব কঠিন নয়। প্রায় ৩০ হাজারের বেশি প্রজাতির অর্কিড এর মধ্যে এক একটির রঙ, আকৃতি, ঘ্রাণ, ওষুধি গুণাগুণ ও স্থায়িত্বকাল অন্যটি থেকে ভিন্ন। চলুন জেনে নেই অর্কিড চাষের প্রস্তুতি, পরিচর্যা ও অন্যান্য বিষয়।
কোন ধরনের অর্কিড উপযুক্ত:
সারাবিশ্বে অনেক জাতের অর্কিড থাকলেও সব অর্কিড আমাদের দেশের জন্যে উপযুক্ত নয়। যে সকল অর্কিড আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্যে উপযুক্ত এবং আলো-ছায়া পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে এমন অর্কিড গাছ লাগানো যেতে পারে ঘরের বারান্দায় বা ছাদে।
অর্কিড সাধারনত দু ধরনের যথা এপিফাইটিক বা পরজীবি এবং টেরেস্ট্রিয়াল বা যেগুলো মাটিতে জন্মে। তবে ঘরের বারান্দায় অর্কিড চাষের জন্য টেরেস্ট্রিয়াল অর্কিডই উপযুক্ত কারন এর চাষ বা পরিচর্যা করা সুবিধাজনক। নার্সারী থেকে গাছ কেনার আগে জেনে নিন সেই গাছ ঘরে চাষ করা যাবে কিনা।
গাছ নির্বাচন:
কোন ধরণের অর্কিড গাছ লাগাবেন তা সম্পূর্নই আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করে। তবে গাছ নির্বাচনের সময় মাথায় রাখতে হবে যে গুলোর যত্ন ও পরিচর্যা সহজ আপনার জন্যে।
যে গাছে তাড়াতাড়ি ফুল ফুটে এবং যে সব অর্কিড ফুলের স্থায়িত্ব বেশিদিন। এই ক্ষেত্রে পরিচিত কারও সাহায্য নিতে পারেন যার নিজের অর্কিড বাগান আছে। তাছাড়া আপনি ভালো কোন নার্সারিতে গিয়ে কথা বলতে পারেন।
ঢাকায় ধানমন্ডি, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, আগারগাঁও, মিরপুর ২, কিংশুক, সাভার সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার নার্সারীতেই যোগাযোগ করতে পারেন।
কেমন হবে অর্কিডের টব বা পাত্র:
দিন দিন মানুষের কাছে অর্কিড ফুলের আকর্ষণ বাড়ছে তাই আজকাল বাজারে অর্কিডের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি আলাদা টব পাওয়া যায়। বাজারে পাওয়া অর্কিড টব বা পাত্র গুলো দেখতে বেশ সুন্দর। একটু খরচ হলেও আপনি বাজার থেকে অর্কিডের জন্যে তৈরি বিশেষ টব বা পাত্র গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া যেগুলোর গায়ে ফাকা জায়গা থাকে অথবা মাটির টব বা ঝোলানো প্লাষ্টিকের ঝুড়িতে অর্কিড লাগাতে পারেন। অর্কিড লাগানোর টব বা ঝুড়ি কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি গভীর হতে হবে এবং অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার জন্য ছিদ্র থাকা আবশ্যক।
টব ও ঝুড়ির মাটি তৈরি:
প্রথমে টবের একদম নিচে কাঠের ছোট ছোট টুকরা, কিছু কয়লা বা ঝামা ইট দিতে হবে। কাঠ ও কয়লার উপর ছোট ছোট নুড়ি, সুরকি অথবা ইঠের খোয়া দিলেও চলবে। তারপর নারকলের ছোবড়া দিয়ে বাকি অংশটা ভরাট করে তার উপর মাটি ও জৈব সারের মিশ্রণ দিন। তবে নারকেলের ছোবড়া ছাড়াও আম গাছের শুকনো ছাল কিংবা আম কাঠের গুঁড়ো, মোটা বালি, শুকনো গোবর এবং কিছু শুকনো মস ব্যবহার করতে পারেন।
এই ভাবে টব বা ঝুড়ি প্রস্তুত করে তার মধ্যে অর্কিডের চারা লাগান তবে উপরে যেনো ৩/৪ ইঞ্চি জায়গা ফাকা থাকে। নারিকেলের ছোবড়া বা ইটের খোয়া যেন খুব বেশি চেপে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখুন এবং গাছের গোড়ায় ও শিকড়ে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে সহজেই। তবে ভালো হয় যদি টব বা ঝুড়িতে গাছ বসিয়ে এসব উপাদান দিয়ে টব ভরে দিতে পারেন।
অর্কিডের যত্ন ও পরিচর্যা
ভোরের প্রথম রোদটি অর্কিডের জন্য খুব উপকারী। অর্কিড ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।যে গাছ আলোতে বাঁচে না, সে গাছ ছায়াতে রাখতে হবে।
বাঁশের কঞ্চি দিয়েও অর্কিড ঘর তৈরি করা যায়।অর্কিড গাছে সপ্তাহে ২ দিন স্প্রে করে পানি দিতে হবে।
অর্কিডের মোটা শিকড়, পাতা ও গাছের পানি ও সার ধরে রাখার ক্ষমতা আছে।পানি যেন কোনোভাবেই টবে জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
বেশি পানি দিলে অর্কিডের গাছ মারা যেতে পারে।প্রতি মাসে একবার গাছের গোড়ায় চা-চামচের আধ চামচ সুফলা দু’লিটার পানিতে গুলে সামান্য পরিমাণে দিতে হবে। তবে গাছে ফুল থাকলে সার বা ফুলে পানি দেয়া যাবে না। তাহলে ফুল পঁচে যাবে।
আলো-ছায়া যুক্ত যায়গা নির্বাচন করুন আর খেয়াল রাখুন যেন গাছে সরাসরি কড়া সূর্যের আলো না পড়ে। বেশি রোদ কিংবা বেশি ছায়া অর্কিড চাষের জন্য উপযুক্ত নয়।গাছে পোকার উপদ্রব হলে রোগাক্রান্ত পাতা কেটে ফেলে দিন।
মাকড়সা বা পিপড়া আক্রমন করলে কিছুটা সাবান পানি স্প্রে করে দিন।অর্কিড পাত্রের দেয়া সবকিছুর কার্যকারিতা দুই তিন বছরে শেষ হয়ে যায়। তাই দুই বছর অন্তর পাত্রের সব কিছু পরিবর্তন করতে হবে।
আর ভ্রমণপ্রিয় ও প্রকৃতিপ্রেমীরা যারা আছেন তারা অর্কিডের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে। এই গ্রামে প্রায় ১১ একর জমির উপরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্কিড ফার্মটি অবস্থিত। এখানে আপনি সাত জাতের প্রায় একুশ ধরণের মোট তিন লাখেরও বেশি অর্কিডের দেখা পাবেন।