আজ শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন
দেশে চাহিদার তুলনায় আদার উৎপাদন কম। চাহিদা মেটাতে ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আদা আমদানি করতে হয়। আর এই আমদানিনির্ভরতাই এখন বাড়াচ্ছে আদার দাম।
সাম্প্রতিক সময়ে আদার মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি করা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে তাই আদা আমদানির বিকল্প উৎস দেশ খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেই বিকল্প হতে পারে নেপাল ও মিয়ানমার।
প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক হারে মূল্যবৃদ্ধির পরও আদা আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ বাড়ছেই৷ দেশেও উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। তাই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সুযোগ নেই। স্থানীয় বাজারে আদার সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারদরকে ভিত্তি ধরে আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে আদার যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
ট্যারিফ কমিশনের এই প্রতিবেদনটি গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১ জানুয়ারি মানভেদে ১২৫ থেকে ১৭৫ টাকায় প্রতি কেজি আদা বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায়। ঠিক এক বছর আগে আদা বিক্রি হতো ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সে হিসেবে এক বছরে দাম বেড়েছে ৯৫ শতাংশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে আদার চাহিদা প্রায় তিন লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে আদার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ২০ হাজার টন। বছরে গড়ে এক লাখ টন আদা আমদানি করতে হয় (চাহিদার ২৭ শতাংশ)। আমদানি করা আদার ৫০ শতাংশ ভারত, ৩০ শতাংশ চীন আর ২০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে। এ আমদানিনির্ভরতাই আদার দাম বাড়ানোর একটি বড় কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ট্যারিফ কমিশন।
ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ আদা উৎপাদনকারী দেশ। গত বছর ভারতে অতিরিক্ত আদা উৎপাদন হওয়ায় চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাননি। ফলে এ বছর সে দেশে আদা চাষ অর্ধেকে নেমে আসে। তাই দেশটিতে বর্তমানে আদার দাম কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে এসেছে। এ অবস্থায় ভারতে উৎপাদিত আদার ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোকে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও নেপাল থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আমদানি খরচও বেড়ে যাচ্ছে। মূলত ভারতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি এক টন আদার আমদানি মূল্য (সিঅ্যান্ডএফ) ছিল ৮০ হাজার টাকা। ১৫ মার্চের পরই বিশ্ববাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে প্রতি টন আদার আমদানি মূল্য এক লাখ ১৫ হাজার টাকায় পৌঁছায়। ৬ মে অবশ্য আমদানিমূল্য কিছুটা কমে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় নেমে আসে।
তবে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আদার মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ট্যারিফ কমিশন দেখেছে, রপ্তানিকারক দেশে যে হারে আদার দাম বেড়েছে, দেশের আমদানিকারকেরা তার চেয়ে কম দামে ঋণপত্র (এলসি) খুলেছেন। এ েক্ষত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং হয়ে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, আদা আমদানিতে বর্তমানে ৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপিত আছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এক হাজার ৪২ টন আদা আমদানির জন্য ২১টি ঋণপত্র খোলা হয়। এর গড় মূল্য ছিল ৭৭৫ দশমিক ৮২ ডলার। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে এক হাজার ৬৮৫ টন আদার জন্য ৩১টি ঋণপত্র খোলা হয়, যার গড় মূল্য ৯৪১ ডলার। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে ৫৩টি ঋণপত্র খোলা হয় এক হাজার ৯২২ টন আদা আমদানির জন্য, যার প্রতি টনের মূল্য ৮৭০ দশমিক ২৯ ডলার। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে আদার মূল্যবৃদ্ধির পরও ঋণপত্র খোলার প্রবণতা বেড়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, বাজারে আদার দাম বাড়লেও সরবরাহে খুব বেশি প্রভাব পড়ার কথা নয়।
ট্যারিফ কমিশন বলছে, আমদানি স্বাভাবিক থাকায় আদার সরবরাহে ঘাটতি হওয়ার কারণ নেই। তবে বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। নইলে দেশে উৎপাদিত আদা ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কারণ, ভারতে আদার দাম এ দেশের চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। আদা নিয়ে যেন অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য না হয়, সে জন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আদা আমদানির বিকল্প দেশ হিসেবে নেপাল ও মিয়ানমারকে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপাল বিশ্বের চতুর্থ আদা উৎপাদনকারী দেশ। আবার নেপাল ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হলে খরচও অনেক কম পড়বে এবং সময়ও কম লাগবে। অন্যদিকে আ
ন্তর্জাতিক বাজার সার্বক্ষণিক তদারক করা প্রয়োজন, যেন দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
ট্যারিফ কমিশনের প্রিতবেদন
৩ লাখ টন চাহিদা বছরে
১ লাখ টন আমদানি করতে হয়
৫০% আমদানি হয় ভারত থেকে
৯৫% দাম বেড়েছে এক বছরে
বর্তমানে আদা আমদানি হয় ভারত, চীন আর ইন্দোনেশিয়া থেকে। তবে বিকল্প হতে পারে নেপাল আর মিয়ানমার