আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন

আধুনিক পন্থায় পেঁপে চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই প্রতিকার

আধুনিক পন্থায় পেঁপে চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই প্রতিকার

আধুনিক পন্থায় পেঁপে চাষ পদ্ধতি

আধুনিক পন্থায় পেঁপে চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই প্রতিকার

আধুনিক পন্থায় পেঁপে চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই প্রতিকার নিয়ে আজকে আমরা আলচনা করবো আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য। যাতে তারা পেপে চাষ করে বানিজ্যিকভাবে সফল হতে পারেন। 

পেইজে অনেকেই ইনবক্স করে জানতে চান পেঁপে চাশের পদ্ধতি নিয়ে তাই আজকে আলোচনা করবো আধুনিক পন্থায় পেঁপে চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই প্রতিকার নিয়ে।সবাই মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেল টি পড়ুন এবং অন্য কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে শেয়ার করে দিন।

পেঁপে বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান ফল। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।পুষ্টিমানে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই ফল মানব দেহে রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। তাই বাংলাদেশে এখন পেঁপে চাষ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে আর তারই ধারাবাহিকতায় কৃষি উদ্যোক্তাদের চাহিদা বাড়ছে কীভাবে আধুনিক পন্থায় পেঁপে চাষ পদ্ধতি করা যায় তা।

পেঁপের পুষ্টিমানঃ
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও আয়রন বিদ্যমান। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য পাকা পেঁপেতে ৮৮.৪ ভাগ জলীয় অংশ, ০.৭ গ্রাম খনিজ, ০.৮গ্রাম আঁশ, ১.৯ গ্রাম আমিষ, ০.২ গ্রাম চর্বি, ৮.৩ গ্রাম শর্করা, ৩১.০ মি.গ্রা.লৌহ, ০.০৮ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.০৩ মি.গ্রা. বি-২, ৫৭.০ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৪২ কিলোক্যালরী খাদ্য শক্তি রয়েছে।

পেঁপের ঔষধিগুনঃ
অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা ডিপথেরিয়া, আন্ত্রিক ও পাকস্থলীর ক্যানসার প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে কাঁচা পেঁপের পেপেইন ব্যবহার করা হয়। পেঁপের আঠা ও বীজ কৃমিনাশক, প্লীহা যকৃতের জন্য উপকারী।

পেঁপের জাতঃ
পেঁপে বিভিন্ন জাতের হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত পেঁপে জাতগুলি হলোঃ ১. ব্লুস্টেম, ২. কাশিমপুরী, ৩. যশোরি, ৪. রাচি,৫. নউন ইউ, ৬. হানি ডিউ, ৭. ছোট পেঁপে, ৮. শাহী পেঁপে, ৯. হাইব্রীড জাত প্রভৃতি।

পেঁপের চাষের জন্য জমি নির্বাচন ও তৈরীঃ
পেঁপে গাছ মোটেও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই পেঁপের জন্য নির্বাচিত জমি হতে হবে জলাবদ্ধতা মুক্ত এবং সেচ সুবিধাযুক্ত। জমি বারবার চাষ ও মই দিয়ে উত্তমরূপে তৈরী করতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে বেড পদ্ধতি অবলম্বন করা উত্তম। পাশাপাশি দু’টি বেডের মাঝে ৩০সে.মি চওড়া এবং ২০সে.মি. গভীর নালা থাকবে। নালাসহ প্রতিটি বেড ২মিটার চওড়া এবং জমি অনুযায়ী লম্বা হবে।

পেঁপের চারা তৈরীঃ
পেঁপের চারা বীজতলা ও পলিথিন ব্যাগে তৈরী করা যায়। বীজতলায় চারা তৈরীর ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ সে.মি. সারি করে প্রতি সারিতে ৩ থেকে ৪ সে.মি. গভীরে বীজ বপন করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৫x১০ সে.মি. আকারের পলিব্যাগে সমপরিমাণ পলি মাটি, বালি ও পচা গোবরের মিশ্রণ দ্বারা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভর্তি করতে হবে। পলিব্যাগের তলায় ২ থেকে ৩টি ছিদ্র করতে হবে এবং প্রতিটি ব্যাগে ২ থেকে ৩টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর ২ থেকে ৩ দিন অন্তর পানি দিতে হবে। বপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর চারা বের হয় এবং ৪০ থেকে ৫০ দিন পর তা রোপণের উপযোগী হয়।

আরও পড়ুন   সূর্যমুখী চাষ বিস্তারিত

পেঁপের বীজ ও চারার পরিমাণঃ
পেঁপের জন্য ২x২ মি. দূরত্বে গর্ত তৈরী করে প্রতি গর্তে ৩টি করে চারা রোপণ করা হলে হেক্টর প্রতি ৭৫০০ চারা লাগবে এবং শেষাবধি ২৫০০ গাছ থাকবে। এই সংখ্যক সুস্থ সবল চারা পেতে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। তবে হাইব্রীড পেঁপের জন্য ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম বীজই যথেষ্ঠ।

পেঁপে চারার জন্য গর্ত তৈরীঃ
চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বে বেডের মাঝ বরাবর ২ মিটার দূরত্বে ৬০x৬০x৪৫ সে.মি. আকারে গর্ত তৈরী করতে হবে। গর্ত প্রতি ১৫ কেজি পঁচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ৩০ গ্রাম বোরাক্স এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট (মুক্তাপ্লাস) সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি দ্বারা গর্ত পূরণ করে সেচ দিতে হবে।

পেঁপের বীজ বপন ও চারা রোপণের সময়ঃ
আশ্বিন এবং পৌষ মাস হল পেঁপের বীজ বপনের উত্তম সময় এবং বীজ বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর অর্থাত মাঘ-ফাল্গুণ মাসে চারা রোপণের উপযোগী হয়।

পেঁপের চারারোপণঃ
চারা রোপণের আগে গর্তের মাটি ভালভাবে উলটপালট করে নিতে হবে। প্রতি গর্তে ৩০সে.মি. দূরত্বে ত্রিভূজ আকারে ৩টি করে চারা রোপণ করতে হবে। বীজ তলায় উৎপাদিত চারার উন্মুক্ত পাতা গুলি রোপণের আগে ফেলে দিলে রোপণ করা চারার মৃত্যু হার হ্রাস পায় এবং চারা দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়। পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার ক্ষেত্রে পলিব্যাগটি খুব সাবধানে অপসারণ করতে হবে, যাতে মাটির বলটি ভেঙ্গে না যায়। পড়ন্ত বিকেল চারা রোপণের জন্য উত্তম সময়। রোপণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে চারার গোড়া বীজতলা বা পলিব্যাগে মাটির যতটা গভীরে ছিল তার চেয়ে গভীরে না যায়।

পেঁপের গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
ভাল ফলন পেতে হলে পেঁপেতে সময় মতো সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি গাছে ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পর হতে প্রতিমাসে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসার পর এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন   কাঁঠাল চাষ পদ্ধতি

পেঁপের পরিচর্যাঃ
পেঁপের জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। বর্ষা মৌসুমে আগাছা দমন করতে গিয়ে মাটি যাতে বেশি আলগা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পেঁপের পানি সেচ ও নিষ্কাশনঃ
শুষ্ক মৌুমে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচ দিতে হবে। সেচের ও বৃষ্টির পানি যাতে জমিতে জমে না থাকে সে জন্য পানি নিকাশের সুব্যবস্থা রাখতে হবে।

অতিরিক্ত গাছ অপসারণঃ
চারা লাগানোর ৩ থেকে ৪ মাস পর গাছে ফুল আসলে প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ্য সবল স্ত্রী গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। তবে সুষ্ঠু পরাগায়ণ ও ফল ধারণের জন্য বাগানের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে শতকরা ৫টি পুরুষ গাছ থাকা অপরিহার্য।

পেঁপের ফল পাতলা করণঃ
পেঁপের অধিকাংশ জাতের ক্ষেত্রে একটি পত্রক থেকে একাধিক ফুল আসে এবং ফল ধরে। ফল কিছুটা বড় হওয়ার পর প্রতি পত্রকক্ষে সবচেয়ে ভাল ফলটি রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী বছরে যে পেঁপে হয় সেগুলো ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে। ফলে ঠিকমত বাড়তে পারেনা এবং এদের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছোট ফলগুলো ছাঁটাই করতে হবে।

পেঁপের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনঃ
পেঁপের রোগবালাইয়ের মধ্যে ঢলেপড়া ও কাণ্ডপঁচা, এ্যানথ্রাকনোজ, মোজাইক ও পাতা কোঁকড়ানো রোগ অন্যতম। আর পোকার মধ্যে মিলিবাগ উল্লেখযোগ্য।

পেঁপের ঢলেপড়া ও কাণ্ডপঁচা রোগঃ
মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে বীজতলায় চারায় ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া বর্ষাকালে কাণ্ডপঁচা রোগ দেখা দিতে পারে। কাণ্ডপঁচা রোগ হলে গাছের গোড়ায় বাদামী বর্ণের পানি ভেজা দাগের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত চারা গাছ মারা যায় এবং ঢলে পড়ে। প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা হিসেবে বীজতলার মাটি বীজ বোনার আগে শুকনা রাখতে হবে এবং প্রোভেক্স নামক ছত্রাক নাশক ২ থেকে ৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।

এ রোগের প্রতিকার হিসেবে রোগাক্রান্ত চারা গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ০৪ গ্রাম একরোবেট এমজেড বা ০১মিলি স্কোর বা ০১মিলি কোগার ২৮এসসি ছত্রাকনাশক মিশিয়ে আক্রান্ত কাণ্ডে ছিটিয়ে দিলে সুফল পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন   সজনা চাষ পদ্ধতি

পেঁপের এ্যানথ্রাকনোজঃ
এ রোগের কারণে ফলের গায়ে বাদামী পচন রোগ দেখা দেয়। ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়।

প্রতিকারঃ
০৪ গ্রাম একরোবেট এমজেড বা ০১ মিলি কোগার ২৮ এসসি বা ০২ মিলি ডিফেন্স ৩৫এসসি বা ২ গ্রাম নোইন নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩বার ফলে গায়ে স্প্রে করতে হবে।

পেঁপের মোজাইকঃ
এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগ হলে পাতায় হলুদ রং এর ছোপ ছোপ দাগ পড়ে, পাতার বোঁটা বেঁকে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। জাব পোকা ও সাদামাছি এ রোগ ছড়ায়।

প্রতিকারঃ
আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগ বিস্তারকারী জাব পোকা ও সাদামাছি দমনের মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। এজন্য নোভাস্টার ৫৬ইসি ০২ মিলি বা হেমিডর বা পিমিডর বা কনফিডর ৭০ডব্লিউজি ০২গ্রাম বা ইমিটাফ বা এডমায়ার ২০০ এসএল ০১ মিলি প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৫ থেকে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

পেঁপের মিলিবাগঃ
সাম্প্রতিক সময়ে মিলিবাগ পেঁপের একটি ক্ষতিকর পোকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আক্রান্ত পাতা ও ফলে সাদা পাউডারের মতো আবরণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা ও ফল শুটি মোল্ড রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে গাছ মারা যেতে পারে।

প্রতিকারঃ
আক্রমণের প্রথম দিকে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা বা কাণ্ড সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম সাবান পানি অথবা নোভাস্টার ৫৬ইসি ০২ মিলি বা হেমিডর বা পিমিডর বা কনফিডর ৭০ডব্লিউজি ০২গ্রাম বা ইমিটাফ বা এডমায়ার ২০০ এসএল ০.৫০ মিলি প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৫ থেকে ৭ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

পেঁপের ফল সংগ্রহঃ
সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ফলের কষ যখন হালকা হয়ে আসে এবং জলীয়ভাব ধারণ করে তখন পেঁপে সংগ্রহ করতে হবে। অন্যদিকে ফলের গায়ে যখন হালকা হলুদ রং দেখা দেবে তখন ফল হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।

ফলনঃ
উপযুক্ত যত্ন নিলে পেঁপে চাষে হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ৬০ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়।

পোষ্টটি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন অন্য সব কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে।

উন্নতজাতের পেপের বীজের জন্য যোগাযোগ করুণ এগ্রোশিয়া সীড কোম্পানি ফোন- ০১৮৪১২১২৯৩৫।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web