আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ অপরাহ্ন

করলার চাষ পদ্ধতি

করলার চাষ পদ্ধতি

উচ্ছে ও করলা তিতা বলে অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। তবে এর ঔষধিগুণ অনেক বেশি। ডায়াবেটিস, চর্মরোগ ও কৃমি সারাতে এগুলো ওস্তাদসবজি। ভিটামিন ও আয়রন-সমৃদ্ধ এই সবজির অন্যান্য পুষ্টিমূল্যও কম নয়।

উচ্ছে ও করলা এ দেশের প্রায় সব জেলাতেই চাষ হয়। আগে শুধু গরমকালে উচ্ছে-করলা উৎপাদিত হলেও এখন জাতের গুণে প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। যেগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট, গোলাকার, বেশি তিতা, সেগুলোকে বলা হয় উচ্ছে। বড়, লম্বা ও কিছুটা কম তিতা স্বাদের ফলকে বলা হয় করলা। উচ্ছেগাছ ছোট ও কম লতানো হয়। করলাগাছ বেশি লতানো ও লম্বা লতাবিশিষ্ট, পাতাও বড়। উচ্ছে ও করলা তিতা বলে অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। তবে এর ঔষধিমূল্য অনেক বেশি। ডায়াবেটিস, চর্মরোগ ও কৃমি সারাতে এগুলো এক ওস্তাদসবজি। ভিটামিন ও আয়রন-সমৃদ্ধ এই সবজির অন্যান্য পুষ্টিমূল্যও কম নয়।

মাটি :
প্রায় সব রকমের মাটিতে ও পানি জমে না এমন জায়গায় উচ্ছে-করলার চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। ছায়া জায়গায় ভালো হয় না।

জাত :
উচ্ছে ও করলা পরপরাগায়িত সবজি হওয়ায় এর জাত বৈচিত্র্যের শেষ নেই। এক জাত লাগালেও পরের বছর সে জাত থেকে রাখা বীজ লাগিয়ে হুবহু একই বৈশিষ্ট্যের ফল পাওয়া যায় না। তাই প্রতি মৌসুমেই বিশ্বস্ত উৎস থেকে ভালো জাতের ভালো বীজ সংগ্রহ করে এর চাষ করা উচিত। উচ্ছের প্রায় সব জাতই দেশী বা স্খানীয়। চাষিরাই এগুলোর বীজ রাখেন ও লাগান। এ দেশে করলার যেসব জাত রয়েছে সেগুলো হলো-

উচ্চফলনশীল জাত বারি করলা ১। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ জাত উদ্ভাবন করেছে। এ জাতের একটি গাছে ২৫ থেকে ৩০টি করলা ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ২৫ থেকে ৩০ টন (প্রতি শতকে ১০০ থেকে ১২০ কেজি)।
বিএডিসির ‘গজ করলা’ নামে আর একটি জাত আছে। এ জাতও ভালো, গাছপ্রতি ১৫ থেকে ২০টি করলা ধরে। ফলন ২০ থেকে ২৫ টন (প্রতি শতকে ৮০ থেকে ১০০ কেজি)।
হাইব্রিড জাত বুলবুলি, টিয়া, প্যারট, কাকলি, প্রাইম-এক্সএল, টাইড, গ্রিন স্টার, গৌরব, প্রাইড ১, প্রাইড ২, গ্রিন রকেট, হীরা ৩০৪, মিনি, গুডবয়, ওয়াইজম্যান, জাম্বো, গজনি, ইউরেকা, হীরক, মানিক, মণি, জয়, কোড-বিএসবিডি ২০০২, কোড-বিএসবিডি ২০০৫, পেন্টাগ্রিন, ভিভাক, পিয়া, এনএসসি ৫, এনএসসি ৬, রাজা, প্রাচী ইত্যাদি।

আরও পড়ুন   ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ

জমি ও মাদা তৈরি :
জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে প্রতি শতাংশে জমি তৈরির সময় ৪০ কেজি পচা গোবর সার মিশিয়ে দিতে হবে। মই দিয়ে সমান করার পর ১ মিটার চওড়া বেড করে তার মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া করে নালা কাটতে হবে। জমি যতটুকু লম্বা ততটুকুই লম্বা বেড হতে পারে। খুব বেশি লম্বা হলে মাঝখানে খণ্ড করা যেতে পারে। উচ্ছের ক্ষেত্রে ১ মিটার ও করলার ক্ষেত্রে ১.৫ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করতে হবে। সব দিকে ৪০ সেন্টিমিটার করে মাদা তৈরি করতে হবে। বীজ বোনার ৭ থেকে ১০ দিন আগে মাদায় পচা গোবর ও সার মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

বীজ বোনা :
বছরের যেকোনো সময় এখন করলা লাগানো যায়। তবে খরিপ বা গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে ভালো হয়। এ মৌসুমে চাষ করতে হলে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বীজ বুনতে হবে। আগাম ফলন পেতে চাইলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বীজ বোনা ভালো। তবে উচ্ছে বসন্ত-গ্রীষ্মেই ভালো হয়। উচ্ছে চাষ করতে চাইলে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে বীজ বুনতে হবে। করলার বীজ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বোনা যেতে পারে। প্রতি মাদায় দু’টি করে বীজ বুনতে হবে। বীজের খোসা শক্ত বলে বোনার আগের দিন রাতে পানিতে বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে, তাহলে ভালো গজাবে। তবে মাদায় সরাসরি বীজ না বুনে কলার ঠোঙা বা পলিব্যাগেও চারা তৈরি করে সেসব চারা মাদায় রোপণ করা যেতে পারে। সাধারণত ১০০ গ্রাম বীজে ৬০০ থেকে ৭০০টি চারা হয়। প্রতি শতকে ১২-১৫ গ্রাম উচ্ছে ও ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম করলার বীজ লাগে।

সারের পরিমাণ :
করলা চাষে জৈবসার খুব দরকার। মোট জৈবসারের অর্ধেক জমি চাষের সময় ও বাকি অর্ধেক বীজ বোনা বা চারা লাগানোর ১০ দিন আগে মাদায় দিতে হবে। অন্যান্য সার নিচের ছক অনুযায়ী দিতে হবে।

আরও পড়ুন   পটল চাষ

বাউনি দেয়া :
চারা ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে গেলে চারার সাথে কাঠি পুঁতে বাউনি দেয়ার ব্যবস্খা করতে হবে। পাশাপাশি মাটি থেকে এক থেকে দেড় মিটার উঁচু করে মাচা তৈরি করতে হবে। যেহেতু বেড ১ মিটার চওড়া, সে জন্য মাচাও অনুরূপ চওড়া রাখলে ভালো হয়। এতে করলা তোলা ও পরিচর্যার কাজ সহজ হয়। বাঁশের শক্ত খুঁটি পুঁতে তার মাথায় জিআই তার, রশি ইত্যাদি বেঁধে খাঁচা তৈরি করে তার উপর দিয়ে পাটকাঠি বা বাঁশের সরু কাঠি ফাঁকা করে বিছিয়ে মাচা তৈরি করা যেতে পারে। মাটিতে লতিয়ে দেয়ার চেয়ে মাচায় লতিয়ে দিলে করলার ফলন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হয়।

সেচ ও আগাছা পরিষ্কার :
মাদায় জো রেখে বীজ বুনতে হবে। চারা গজানোর পর মাদা শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। সেচ দেয়ার পর মাটি চটা বেঁধে গেলে তা নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে ভেঙে দিতে হবে। পানির অভাবে গাছের বাড়বাড়তি কমে যায়, ফুল ও কচি ফল ঝরে যায়, ফল ছোট হয়। সে জন্য খরা হলে বা জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। প্রতিবার সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে। গাছের গোড়া থেকে ছোট ছোট কিছু ডগা বের হয়। সেগুলো ছেঁটে দিলে ফলন ভালো হয়। জমিতে যেন পানি জমতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

করলা তোলা :
চারা গজানোর ৪০ থেকে ৫০ দিন পর থেকেই উচ্ছেগাছ ফল দেয়া শুরু করে। করলাগাছ ফল দেয়া শুরু করে ৬০ দিন পর। ফল আসা শুরু হলে গাছ থেকে প্রায় দু’মাস ফল তোলা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web