আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ অপরাহ্ন

কাকরোল চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত

কাকরোলের জাত পরিচিতি

কাঁকরোলের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। সেসব জাতের মধ্যে –

  • আসামি,
  • মণিপুরি,
  • মুকুন্দপুরি ও
  • মধুপুরি উল্লেখযোগ্য।

আসামিঃ এ জাতের ফলগুলো গোলাকার ও বেঁটে এবং খেতে সুস্বাদু।

মণিপুরিঃ এ জাতের ফল কিছুটা লম্বাটে ও অপেক্ষাকৃত চিকন। তবে তুলনামূলক ফলন বেশি হয় এ জাতে।

কাঁকরোলের বপন/রোপণ প্রযুক্তি

জমি তৈরীঃ
১) জমি ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে তৈরী করতে হবে।
২) জমির উপরিভাগ সমান ও আগাছা দমন করতে হবে।
৩) এরপর চাষকৃত জমিতে প্রয়োজনীয় মাপের বেড তৈরী করতে হবে।

বপন সময়ঃ কাঁকরোলের বীজ বপন বা মোথা রোপণের উত্তম সময় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন মাস।
বেড তৈরীঃ
১) দৈর্ঘ্যঃ জমির দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে।
২) প্রস্থঃ ৩০০ সে.মি।
৩) দুই বেডের মাঝে নালার প্রস্থ ৩০ সেমি।
৪) দুই বেডের মাঝে নালার গভীরতা ২০ সেমি।
৫) প্রতি বেডে দুটি সারি থাকবে।
৬) সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২০০ সেমি।
৭) প্রতি সারিতে ৬০x৬০x৬০ সেমি আকারের গর্ত তৈরী করতে হবে।
৮) মাদা থেকে মাদার দূরত্ব হবে ২৫০ সেমি।
৯) হেক্টরপ্রতি প্রতি মাদার সংখ্যা হবে ২০০০টি।

বীজ বা মোথা বপন :
১) কাঁকরোল চাষের জন্য মোথা রোপণ করতে হবে। ২ মিটার দূরত্বে সারিতে ও ব্যবধানে ৫-৬ সেমি গভীরে মোথ রোপণ করে খড়কুটা দ্ধারা ঢেকে দিতে হবে।
২) রোপণের জন্য নির্বাচিত মোথার ৫% পুরুষ গাছের মোথা হতে হবে।
৩) কেননা কাঁকরোলের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে জন্মেই পরাগায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্ত্রী গাছের পাশাপাশি আনুপাতিক হারে পুরুষ গাছ ধাকা দরকার।

কাঁকরোল চাষে সার ব্যবস্থাপনা

কাঁকরোলের ভাল ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি শতাংশ (ডেসিমাল) জমির জন্য নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবেঃ
সারের নাম সারের পরিমাণ

শতকের জন্য

মন্তব্য
পচা গোবর/কম্পোস্ট ২০ কেজি এলাকা বা মৃত্তিকাভেদে সারের পরিমাণে কম-বেশী হতে পারে। অধিকতর তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন
টিএসপি ০.৫১-০.৬১ কেজি
ইউরিয়া ০.৪-০.৫১ কেজি
এমওপি/পটাশ ০.৪-০.৫১ কেজি
জিপসাম ০.৩২-০.৪ কেজি
দস্তা সার ০.০৫ কেজি
বোরণ ০.০৪ কেজি
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড
আরও পড়ুন   ফুলকপির চাষ পদ্ধতি

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

গোবর সার জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম সার মোথা লাগানোর ১৫ দিন আগে মাদার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার সমান দু’ভাগে ভাগ করে মোথা থেকে চারা গজানোর পর যথাক্রমে ১৫ ও ৩০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটি অমস্নীয় হলে শেষ চাষের সময় হেক্টরপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।

কাঁকরোল চাষে অন্যান্য প্রযুক্তি

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা :

১) মোথা গজানোর পর আগাছা জন্মালে তা দমন করতে হবে।
২) নালার সাহায্যে পানির সেচ দিতে হবে।
৩) অতিরিক্ত পান অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) প্রতিদিন ভোরবেলা স্ত্রী ফুলে কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে।
৫) রোগ ও পোকার আক্রমন দেখা দিলে দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬) কাঁকরোলের গাছ ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা হলে গাছের গোড়ায় ১ টি করে কাঠি পুঁতে দিতে হবে।
৭) গাছ ২০ ইঞ্চি সেমি লম্বা হলে মাচা করে দিতে হবে।

পরাগায়নঃ

কাকরোল যদিও প্রাকৃতিকভাবেই পরাগায়িত হয়, তথাপিও ভালো ফলনের জন্য কাকরোল ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হয়। ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন পদ্ধতি হলো :-

  • (১) সকাল ৬টার দিকে সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল বোটাসহ কেটে নিয়ে সতেজ রাখার জন্য ফুলগুলোর বোটা পানির ভেতর ডুবিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিতে হবে।
  • (২) এরপর পুরুষ ফুলের পুংকেশর ঠিক রেখে পাঁপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। এতে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ সহজ হবে।
  • (৩) তারপর স্ত্রীফুলের গর্ভকেশরের মুন্ডের উপর পুরুষ ফুলের পুংকেশর খুব আস্তে আস্তে ২-৩ বার স্পর্শ করাতে হবে। এর ফলে গর্ভকেশরের মুণ্ডে রেনু আটকে যাবে ও পরাগায়ন হবে। সচেতনভাবে করলে একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৬-৭টি স্ত্রী ফুলে কৃত্রিম পরাগায়ন সম্ভব।

রেটুন কাকরোল :

শীতের শুরুতেই কাকরোল গাছ মরে যায় এবং পরবর্তী বর্ষা না আসা পর্যন্ত মাটির নিচে মোথা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে, যা থেকে পরবর্তী বছর আবার যথাযথ যত্ন নিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এতে বীজ বাবদ খরচ, রোপণ এবং রোপণ পরবর্তী খরচ থেকে বাচা যায় ফলে লাভ বেশি হয়।

কাঁকরোল সংগ্রহ ও পরবর্তী করণীয়

ফসল সংগ্রহঃ

আরও পড়ুন   লাউয়ের ফলন বৃদ্ধির উপায়

১) কাঁকরোল হলদে সবুজ হলে সংগ্রহ করতে হয়।
২) গাছ রোপণের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কাঁকরোল ফুল দিতে আরম্ভ করে।
৩) পরাগায়নের ১২-১৫ দিনের মধ্যে কাঁকরোল সংগ্রহের উপযোগী সময়।

ফসল সংগ্রহের সময়ঃ মধ্য জুলাই হতে সেপ্টেম্বর মাস কাঁকরোল সংগ্রহের উত্তম সময়।

 গ্রেডিং, প্যাকেজিং ও বাজারজাতকরণঃ

১) কাঁকরোল সংগ্রহের পরপরই আকার অনুসারে গ্রেডিং করা হয়।
২) গ্রেডিংকৃত কাঁকরোল প্যাকিং করে বাজারজাত করা হয়।
৩) কাঁকরোল বস্তবন্দী না করে বায়ু চলাচলের সুবিধাযুক্ত প্লাস্টিক, কাঠ বা বাঁশের খাঁচা বা হার্ডবোর্ডের বাক্সে করে বাজারে পাঠাতে হয় যাতে গায়ে আঘাত না লাগে।

ফলনঃ ভালোভাবে যত্ন নিলে জাতভেদে হেক্টরপ্রতি কাঁকরোলের ২০ থেকে ২৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্রঃ কৃষি তথ্য সার্ভিস, ঢাকা

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web