আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ অপরাহ্ন
কুমির সরীসৃপজাতীয় প্রাণী। ইউরোপ ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশেই প্রায় ১৭.৫ কোটি বছর পূর্বে ডাইনোসরের সমকালীন কুমিরের উদ্ভব ঘটলেও ডাইনোসরের বিলুপ্তির পর অদ্যবিধি এরা প্রথিবীর বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে আসছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩০টির মতো কুমিরের খামার আছে। খামার গুলো মেক্সিকো উপসাগরের পাড়ে লুসিয়ানা ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। একবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে যুক্তরাষ্টের দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে কুমিরের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে এবং ১৯৭৩ সালে কুমিরকে বিপদাপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত করা হয়। অতঃপর ১৯৭৮ সাল থেকে ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ফলে কুমিরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বর্তমানে এটি আর বিপদাপন্ন প্রজাতি নয়। উল্লেখ্য, কুমিরের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার কারণে ১৯৬০ সাল থেকেই এ সংরক্ষণের দিকে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হতে থাকে।
কুমিরের প্রজাতিসমূহ
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে কুমিরের ৩ টি গোত্রে ২৫ টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় এক ধরনের কুমিরের প্রাচুর্য্য রয়েছে যার বৈজ্ঞানিক নাম Crocodyuls porosus Schneider । আঞ্চলিক ভাষায় একে লুনা পানির কুমির বলা হয়। এ জাতীয় কুমিরের দেহে প্রায় ১৫ ফুট লম্বা হয়। তাছাড়া পদ্মা এবং যমুনা নদীর তিস্তা-নগরবাড়ি ও সারধা-গোদাগারি অঞ্চলে এক ধরনের কুমির পাওয়া যায় যার বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus Gmelin । আঞ্চলিক ভাষায় একে ঘড়িয়াল/বাইশাল/ঘোট কুমির বলা হয়। IUCN এর রেড এ দু-প্রজাতির কুমিরকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কুমিরের প্রাকৃতিক প্রজনন ও সংরক্ষণ
পটভূমি
কুমির সরীসৃপজাতীয় প্রাণী। ইউরোপ ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশেই প্রায় ১৭.৫ কোটি বছর পূর্বে ডাইনোসরের সমকালীন কুমিরের উদ্ভব ঘটলেও ডাইনোসরের বিলুপ্তির পর অদ্যবিধি এরা প্রথিবীর বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে আসছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩০টির মতো কুমিরের খামার আছে। খামার গুলো মেক্সিকো উপসাগরের পাড়ে লুসিয়ানা ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। একবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে যুক্তরাষ্টের দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে কুমিরের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে এবং ১৯৭৩ সালে কুমিরকে বিপদাপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত করা হয়। অতঃপর ১৯৭৮ সাল থেকে ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ফলে কুমিরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বর্তমানে এটি আর বিপদাপন্ন প্রজাতি নয়। উল্লেখ্য, কুমিরের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার কারণে ১৯৬০ সাল থেকেই এ সংরক্ষণের দিকে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হতে থাকে।
কুমিরের প্রজাতিসমূহ
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে কুমিরের ৩ টি গোত্রে ২৫ টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় এক ধরনের কুমিরের প্রাচুর্য্য রয়েছে যার বৈজ্ঞানিক নাম Crocodyuls porosus Schneider । আঞ্চলিক ভাষায় একে লুনা পানির কুমির বলা হয়। এ জাতীয় কুমিরের দেহে প্রায় ১৫ ফুট লম্বা হয়। তাছাড়া পদ্মা এবং যমুনা নদীর তিস্তা-নগরবাড়ি ও সারধা-গোদাগারি অঞ্চলে এক ধরনের কুমির পাওয়া যায় যার বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus Gmelin । আঞ্চলিক ভাষায় একে ঘড়িয়াল/বাইশাল/ঘোট কুমির বলা হয়। IUCN এর রেড এ দু-প্রজাতির কুমিরকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
লুনা পানির কুমির
ঘড়িয়াল/ঘোট কুমির
প্রাকৃতিক প্রজনন
কার্তিক থেকে পৌষ মাসে কুমির ডাঙ্গায় এসে ৩০-৩৫ টি ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার জন্য স্ত্রী কুমির বালিতে ৪৫-৬০ সে.মি.গভীর গর্ত করে বাসা বাঁধে এবং এরা গর্তের ভিতর ডিম ছেড়ে বালি দিয়ে ডেকে রাখে। কুমির দুটি সারি করে ডিম দেয় এবং বালি দ্বারা প্রতিটি সারি আলাদা রাখে । স্ত্রী কুমির নিকটবর্তী জায়গা থেকে বাসা পাহারা দেয়। ডিম ছাড়ার ১১-১৪ সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়েই কিচ-কিচ শব্দ করতে শুরু করে। শব্দ শুনে স্ত্রী কুমির বাসার কাছে এসে বাসা ভেঙে বাচ্চাদের বের করে আনে এবং সঙ্গে করে পানিতে নিয়ে যায়। কখনও কখনও স্ত্রী কুমির মুখে ধরে বাচ্চাদের বাসা হতে পানিতে নিয়ে যায়। নবজাত কুমিরের প্রথম ৫/৬ বছর অত্যন্ত দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে এবং ক্রমান্বয়ে এই বৃদ্ধির হার তা হ্রাস পেতে থাকে।
নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্রজনন
কুমিরের বয়স প্রায় ৬ বছর হলে পরিণিত বয়সে উপনীত হয়। পরিণত বয়সের কুমিরগুলোকে পাকা চৌবাচ্চা বা পুকুরে রাখা হয়। এ সময় এদেরকে মাছের পরিবর্তে ভিটামিনযুক্ত জীবজন্তু ও মাংস খাওয়ানো হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, শুধু মাছ খাদ্য হিসাবে প্রয়োগ করলে কুমিরের প্রজনন সফলতা অপেক্ষাকৃত কম হয়ে থাকে। কুমির ছত্রাকমুক্ত পুরাতন ঘাস বা খড়ের গাদার ভিতর বাসা তৈরি করে ডিম দিতে ও পচ্ছন্দ করে। সেজন্য পুকুর বা চৌবাচ্চার পাড়ে কপার সালফেট মিশ্রিত ঘাস বা খড় রেখে দিলে স্ত্রী কুমির সেখানে ডিম দেয়। পরবর্তীতে ডিম কাঠের বাক্সে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাটির গর্তে ডিমের উপরের অংশ চিহ্নিত করে রেখে দেয়া হয়। এসময় গর্তের তাপমাত্রা থার্মোমিটার দিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি কেন কারণে ডিমের উপরের অংশ নীচে চলে যায় তাহলে ডিম নষ্ট হয়ে যায়।
কৃত্রিম পদ্ধতিতে ডিম পরিস্ফুটন
আজকাল কুমিরের ডিম ফুটানোর জন্য কৃত্রিম ইনকিউবেটর (২৮-৩০ডিগ্রী সে.তাপমাত্রা) ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরণের ইনকিউবেটরের ভেতরে আর্দ্র বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা থাকে। ডিম ফোটার তাপমাত্রার ওপর বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। যদি ৩৪.৫ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় ডিম ফোটে তবে সব পুরুষ এবং ২৭ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় ডিম ফুটলে সব স্ত্রী জাতের বাচ্চা উৎপন্ন হয়।
বাচ্চা লালন ও চাষ কৌশল
প্রাথমিক অবস্থায় কুমিরের বাচ্চা পাকা চৌবাচ্চায় প্রতি বর্গফুটে একটি করে মজুদ করা হয়। দৈহিক বৃদ্ধির সাথে সাথে এদের ঘনত্ব কমাতে হয়। এ সময় খাদ্য হিসাবে মাছ বা জীবজন্তুর মাংস সরবরাহ করতে হয়। তাপমাত্রা এবং খাদ্যের গুণগতমান এদের দৈহিক বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এদের দৈহিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। তিন বছরের ভিতর এরা ১.৫-২.০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে এবং আহরণের উপযোগী হয়। কুমিরের বয়স তিন বছরের বেশি হলে খাদ্য রূপান্তরের হার কমে যায়। ফলে এদের পালন লাভজনক হয় না।
খাদ্য ও খাদ্য গ্রহণের আচরণ
কুমির খুব শক্তিশালী সাঁতারু ও মাংসাশী প্রাণী। এরা লেজ দিয়ে সাঁতার কাটে এবং শিকারকে কাবু করে। এদের সারা দেহে পানির নীচে এবং চোখ ওপরে রেখে শিকারের জন্য অপেক্ষা করে। পানির নীচ দিয়ে ১৫-২০ ফুট কাছে এসে শিকারকে লেজ দিয়ে এক বা একাধিকবার আঘাতের মাধ্যমে কাবু করে এবং কামড় দিয়ে ধরে গভীর পানিতে নিয়ে যায়। এরা ছোট শিকারকে আস্ত গিলে ফেলে এবং শিকার বড় হলে ছিঁড়ে টুকরো করে গিলে খায়। কুমিরের বাচ্চা কীট ও অমেরুদন্ডী প্রাণী খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। পদ্মা ও যমুনায় বাসরত ঘড়িয়াল বা মেছো কুমির শুধু মাছ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে।
সুন্দরবনে কুমিরের চাষ সম্ভাবনা ও সংরক্ষণের সুপারিশ
সুন্দরবনে অঞ্চলে কুমিরের খামর স্থাপন করার মত যতেষ্ট উপযুক্ততা রয়েছে বিধায় সরকার ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে কুমিরের খামার স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। খামারে কুমিরের উৎপাদন বাড়ানো একটি লাভজনক খাত হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। বাসস্থানের উন্নয়নের মাধ্যমে এসব অঞ্চলে কুমিরের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন:
পরিবেশ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকে বাংলাদেশে কুমিরের প্রজনন ও চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে কুমিরের বাণিজ্যিক চাষ করা হয়। অষ্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক উন্নত দেশে কুমির অপ্রচলিত খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। ঐ সকল দেশে পর্যটন শিল্প হিসেবে কুমিরের খামার স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া কুমিরের চামড়া অনেক অভিজাত সামগ্রী তৈরিতে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় কুমিরের আধুনিক খামার স্থাপনের সম্ভবনা বিদ্যমান। খামার স্থাপন ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণের মাধ্যমে কুমিরের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে কুমিরের প্রজাতিসমূহের বিলুপ্তি রোধকল্পে এর আবাসস্থলের উন্নয়ন ও প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া কুমিরের কৃত্রিম প্রজনন-কৌশল ও চাষ-পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য দেশের বিভিন্ন পরিবেশগত অঞ্চলে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত কয়েকটি গবেষণাগার স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী। এ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কুমিরের উৎপদন বৃদ্ধিসহ এ থেকে প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য রপ্তনী কওে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। এ বিষয়ে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কুমিরের খামার
কেন এই খামার?
অনেক কথাই তো বলা হলো। কিন্তু মাছ, মুরগী, গরু-ছাগলের খামার করা ছেড়ে কুমিরের খামারটি কেন করা হল তা তো বলা হল না। শোন তবে, এই খামারটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। কুমিরের চামড়া কিন্তু অনেক দামি। এই চামড়া দিয়ে ব্যাগ, জুতাসহ অনেক দামি জিনিস তৈরি করা হয় এবং বিদেশে রপ্তানী করা হয়। এছাড়া কুমিরের মাংস, হাঁড়, দাঁত সবকিছুই দামী। এক কথায় কুমিরের কোন কিছুই ফেলনা নয়। কুমিরকে বলা হয় গোল্ড আয়রন অর্থাৎ ‘সোনালী লোহা’। সেজন্যই যদি কুমির চাষ করা যায় তাহলে তো এটি অবশ্যই অনেক লাভজনক ব্যবসা।
কুমির সেই খামার দেখার জন্য নিশ্চয়ই এখনই চলে যেতে হচ্ছে সেখানে? তাহলে তো একবার সময় করে ঘুরে আসো সেখান থেকে। তবে একটা বিষয় বলা হয়নি। এই খামারে ঢোকার জন্য তোমাকে কিন্তু একটা টিকিট কাটতে হবে। টিকিটের মূল্য ২৫০ টাকা।