আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৮ অপরাহ্ন

কোয়েল পাখি পালন বিস্তারিত ও আয়-ব্যয় হিসাব

কোয়েল পাখি পালন বিস্তারিত ও আয়-ব্যয় হিসাব

কোয়েল পাখি পালন বিস্তারিত ও আয়-ব্যয় হিসাব

 

আমরা আজকের আর্টিকেলে আলচনা করবে কোয়েল পাখি পালন বিস্তারিত ও আয়-ব্যয় হিসাব নিয়ে যাতে কোয়েল পালনের কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক কাজে আসে। আর্টিকেল টি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন সবার মাঝে।

কোয়েলের আদি জন্মস্থান জাপানে। সর্বপ্রথম জাপানী বিজ্ঞানীরা কোয়েলকে গৃহপালিত পাখি হিসেবে পোষ মানানোর উপায় উদ্ভাবন করেছেন। পরবর্তীতে জাপান সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোয়েলকে একটি লাভজনক পোলট্টি উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোয়েল পালন করার জন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না। বাড়ির যেকোন কোণ বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ ইত্যাদি জায়গাতেও কোয়েল পালন করা যায়। এই কারণে, শহরে কী গ্রামে অনেক সব স্থানেই কোয়েল পালন সহজতর।

গৃহপালিত পাখির মধ্যে অতি ক্ষুদ্র এই পাখির আয়তন খুব বেশি নয়। একটি মুরগি পালনের স্থানে মোটামুটিভাবে ১০টি কোয়েল পালন করা যায়।বিষেজ্ঞদের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য সর্বাধিক উপযোগি। এই কারণে, বিভিন্ন হাস মুরগির খামারেও ইদানিং কোয়েল পালন ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। দেশের পুষ্টি মিটিয়ে ইদানিং কোয়েলের মাংস বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে।

কোয়েল পালনের বিভিন্ন সুবিধা সমূহ

কোয়েল পালন করলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পরিমাণ বেশি।

(১)ভাল জাতের কোয়েল বছরে ২৮০ থেকে ৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে এবং এরা এক টানা ১৪ মাস ডিম পাড়তে পারে ।

আরও পড়ুন   গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স রোগ, লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

(২) অত্যন্ত কম পুজি নিয়ে কোয়েলের খামার তৈরি করা যায়।

(৩) কোয়েলের আকার ক্ষুদ্র বলে এদের লালন পালনের জন্য বিস্তৃত জায়গা প্রয়োজন হয় না। প্রমাণ সাইজের মুরগির জায়গাতেই কমপক্ষে ১২টি কোয়েল পালন করা যায়।

(৪) রোগ ব্যাধির দিকে থেকে কোয়েল খুবই লাভজনক বিনিয়োগ। কারণ, কোয়েলের রোগ ব্যাধি প্রায় হয় না বললেই চলে ।

(৫)সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েল ডিম প্রদান করে থাকে। এদের ডিম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।

কোয়েল পালনের বিভিন্ন সুবিধা সমূহ

১০০ টি পাখির খরচ

১টি ১৫-২০ দিনের বাচ্চার দাম ২৫-৩০ টাকা (বড় বাচ্চার মৃত্যুর হার কম)।
একটি খাচয় ২৪ ফুট নেট দরকার ।৩ফুট উচ্চতার নেটের দাম ১০০-১২০ টাকা পার ফুট ।
খাবারের দাম পার কেজি ৪২-৪৫ টাকা । মাসিক খাবার লাগে ৫৫-৬০ কেজি ।
খাচার চালার জন্যে চাটাই ব্যাবহার করা যায় এবং উপরে পালিথিন দিলেই চলবে।

কোয়েলের জাত

কোয়েলের জাত হিসেবে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় জাপানি কোয়েলকে। কারণ, জাপানেই কোয়েলক সর্বপ্রথম গৃহপালিত করা হয়েচে। জাপানের হিসেবে অনুযায়ী কোয়েলের কয়েকটি জাত এবং উপাজত রয়েছে, সেগুলো নিম্নরূপ-

মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যেও লেয়ার জাত বিদ্যমান।
লেয়ার কোয়েলঃ এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্টি হলো-ফারাও, ইংলিশ হোয়াই, ম্যানচিরিয়াল গোল্ডেন, ব্রিটিশ রেঞ্জ ইত্যাদি।

এই জাতের কোয়েলকে শুধু ডিম প্রদানের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।
ব্রয়লার কোয়েলঃ এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্টি হলো আমেরিকান বব হোয়াইট কোয়েলে ইন্ডিয়ান হোয়াইট ব্রেস্টেড কোয়েল ।

কোয়েলের জাত

 

কোয়েলের থাকার জায়গা বা বাসস্থানঃ

মোটামুটিভাবে ১২ ফুট দৈর্ঘ্য,৬ ফুট প্রস্থ এবং ২-৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাচায় কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০টি কোয়েল পালন করা যায়। খাচার সামনে ও পিছনে নেট দিতে হবে এতে খাচায় আলো বাতাস চলাচল করবে ।

আরও পড়ুন   দেশি মুরগি নিয়ে গবেষণা ও "হাজল” পদ্ধতিতে দেশি মুরগির উৎপাদন

প্রস্থের দিকে নেট দেবার প্রয়োজন হয় না, তবে নেটের ফাকগুলো একটু ঘন হতে হবে। যাতে করে কোয়েলের মুখ সেই ফাক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে না থাকে । খাঁচাতে যেন ইদুর, ছুচো না ঢুকতে পারে-সেদিকে লক্ষ্য রেখে ছোট ফাঁকের নেট ব্যাবহার করতে হবে।

কোয়েলের বাড়তি জত্নের প্রয়োজন হয়না বিধায় রাড়ির মেয়ে বা বাচ্চারাই দেখাশুনা করতে পারে । ড়িম দেবার সময় খাবার এর তার তম্য হলে ড়িম দেয়ার হার কম হতে পারে ।

কোয়েলের খাদ্য বা খাবার ব্যবস্থা কোয়েল পালনে তেমন খরচ নেই এই কারণেই বলা হয়ে থাকে যে, কোয়েলের জন্য আলাদা তেমন কোন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন হয় না।

সাধারণভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ বয়সের কোয়েল দিনে ১৫ থেকে ২০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে। সাধারণভাবে মুরগির যে খাবার সরবরাহ করা হয় সেই খাবারেই কোয়েল পালন করা যায়।

তবে খাবারের দানা মুরগির খামারে ব্যবহৃত আকারে একটু ছোট হলে ভাল হয়। খাবারের অপচয় রোধে পুরুষ পাখি না রাখাই ভাল ।

মুরগির মত কোয়েলরও ডিম পাড়ার সময় আলোর প্রয়োজন হয় । তাই দিনে ১৬ ঘন্টা আলোর ব্যাবস্থা রাখলে ডিমের দেয়ার হার ভাল থাকে ।

কোয়েলের স্বাস্থ্য রক্ষা ককুতরের মতো কোয়েলেরও তেমন কোন রোগ ব্যাধি নেই বললেই চলে।

তবে মাঝে মাঝে কোয়েলকে রোগক্রান্ত হতে ধেখা যায়। কোয়েল রোগাক্রান্ত হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

কোন কোয়েল অসুস্থ হলে সাথে সাথে তাকে সুস্থ কোয়েলের খাঁচা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। অসুস্থ্য কোয়েলের সংস্পর্শে থাকলে বাকি সুস্থ কোয়েলও আক্রান্ত হতে পারে।

খাঁচায় কোন কোয়েল মারা গেলে সাথে সাথে তার কারণ অসুসন্ধান করতে হবে। মরা কোয়েল পুড়িয়ে বা পুতে পেলতে হবে।

কোয়েলের বিভিন্ন রোগ ব্যাধির মধ্যে আমাশয় উল্লেখ্যযোগ্য। এই রোগ হলে কোয়েলের ঘন ঘন পায়খানা হয়, খাবার গ্রহনে অনীহা দেখা দেয় পাশাপাশি কোয়েলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে।

আরও পড়ুন   গবাদিপশুর দূর্ঘটনা জনিত প্রাথমিক চিকিৎসা কি দিবেন জেনে নিন

এই অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এম্বাজিন জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে।

তবে সবচেয়ে বড়ো কথা, সুষ্ঠুভাবে কোয়েল পালন করতে হলে তাদের থাকার জায়গা বা বাসস্থান, খাবার জায়গা ইত্যাদি স্থানগুলো শুকনা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পর্যাপ্তআরৌ বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

সেই সাথে প্রয়োজনীয় সুষমত খাদ্যের সরবরাহ রাখতে হবে। তবেই কোয়েল পালন করে তার মাংস ও ডিম উৎপাদনে সঠিক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।

কোয়েলের থাকার জায়গা বা বাসস্থান

প্রতি হাজার কোয়েল পাখি পালনে মাসে কত টাকা আয় করা সম্ভব?

১০০০ কোয়েল পাখি পালনে প্রতি মাসে কত টাকা লাভ হতে পারে???

প্রথমে আমরা হিসাবের সুবিধার্থে কিছু বিষয় ধরে নিব

১) ডিম দেয়ার হার ৭০-৮০% (গড়ে ৭৫%)
২) ডিমের দাম ১.৮ – ২.০ টাকা (গড়ে ১.৯ টাকা)
৩) লেয়ার খাবারের দাম(৫০কেজি) প্রতি বস্তা ১৬০০ টাকা
প্রতি কেজির দাম=৩২ টাকা
৪) প্রতিটি কোয়েল খাবার খাবে ২৫ গ্রাম

**১০০০ কোয়েলের মাসিক ব্যয়ঃ

১) দৈনিক খাবার= ১০০০*২৫=২৫০০০ গ্রাম=২৫ কেজি

মাসিক খাবার খরচ= ২৫৩০ কেজি=৭৫০ কেজি৩২ টাকা=২৪০০০ টাকা

২) ওষুধ(ভিটামিন,ক্যালসিয়াম,জিংক,এন্টিবায়োটিক্ ও অন্যান্য)=১০০০ টাকা
৩) বিদ্যুৎ বিল =৫০০ টাকা
৪) লিটার(গাছের গুড়ি,ধানের তুষ) =৩০০ টাকা
৫) কর্মচারী বেতন- =৫০০০ টাকা
৬) অন্যান্য =৪০০ টাকা
(কর্মচারীর বেতন ১০০০০ টাকা কিন্তু একজন লোক কমপক্ষে ২০০০ কোয়েল দেখাশুনা করতে পারে।তাই ১০০০ কোয়েলের হিসাবের জন্য বেতন ৫০০০ টাকা ধরা হয়েছে)

মোট খরচ =৩১২০০ টাকা

**১০০০ কোয়েল থেকে মাসিক আয়ঃ

দৈনিক ডিম পাওয়া যাবে= ৭৫০ টি
প্রতিটি ১.৯ টাকা গড়ে
দৈনিক আয়=৭৫০১.৯=১৪২৫ টাকা
তাহলে,মাসিক আয়= ১৪২৫
৩০=৪২৭৫০ টাকা

**১০০০ কোয়েল থেকে মাসিক লাভঃ

মোট আয় = ৪২৭৫০ টাকা
মোট খরচ =৩১২০০ টাকা
**মাসিক লাভ = ৪২৭৫০-৩১২০০ টাকা
= ১১৫৫০ টাকা
এখন যদি আপনি কর্মচারী না রেখে নিজে একটা কষ্ট করে খামারের দেখাশুনা করেন তবে বেচে যাবে আরো ৫০০০ টাকা।
**তাহলে লাভ হবে = ১৬৫৫০ টাকা।
এভাবে আপনি ২০০০ কোয়েল পালন করলে আপনি মাসে আয় করতে পারবেন ৩০ হাজারের বেশি টাকা।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন

Comments are closed.

© All rights reserved © 2014 Ajkerkrishi.com
Developed By One Planet Web