বিভিন্ন হাট ঘুরে পছন্দসই পশু কেনার ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন খামার থেকে সংগ্রহ করা যায় গরু বা ছাগল। রাজধানীর আশপাশে এরকম বেশ কয়েকটি খামার রয়েছে।
খামার থেকে গরু কিনতে চাইলে চলে যেতে পারেন রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায়। আটিবাজার, ভেড়িবাঁধ, জিঞ্জিরা, হযরতপুরে রয়েছে প্রায় ৩শ’র মতো খামার।এদের মধ্যেই একটি খামার ‘টাইমস অ্যাগ্রো’। আটিবাজার এলাকায় ২০১৬ সালের অক্টোবরে ১০ কাঠা জমিতে মাত্র একটি ভুট্টি গরু নিয়ে টাইমস অ্যাগ্রো গড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মাহবুব-ই-খোদা।
তিনি বলেন, “এবারের ঈদ মৌসুমে গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২০টিতে। যার মধ্যে অবশিষ্ট আছে ১শ’ ও ২শ’ কেজি ওজনের দুইটি ভুট্টি গরু, দাম যথাক্রমে ৪৫ হাজার ও ৮০ হাজার টাকা। ৩শ’ কেজি ওজনের একটি পাকরা গরু, দাম দেড় লাখ টাকা এবং দুইটি দেশি গরু, প্রতিটির দাম ৮০ হাজার টাকা।”
“আমাদের খামার থেকে গরু ওজন মেপে কেনার সুবিধা রয়েছে। কেনার সময় আমাদের নিজস্ব পশু চিকিৎসক পশু যাচাই বাছাই করতে সাহায্য করবেন ক্রেতাদের। বিক্রয়োত্তর চিকিৎসা সেবাও পাবেন। তবে চিকিৎসককে পারিশ্রমিক দিতে হবে। ঢাকার ভেতরে যে কোনো স্থানে বিনামূল্যে গরু পৌঁছে দেওয়ার সুবিধাও দিচ্ছি আমরা।”
একই এলাকার আরেকটি খামার ‘বিক্রমপুর অ্যাগ্রো’। খামারের মালিক মোহাম্মদ আজিজ আশরাফ ও ফয়সাল আশরাফ শখের বসে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন।
বিক্রমপুর অ্যাগ্রো খামার।
মোহাম্মদ আজিজ আশরাফ বলেন, “এ বছর ঈদুল আজহায় প্রায় ৭০টি ষাঁড় ও গরু লালনপালন করেছি, যা এখন বিক্রয়যোগ্য। এদের মধ্যে ভারত থেকে আমদানী করা হাসা জাতের গরু, সিলেটের বড় সিংওয়ালা ‘ফাইটার’ ষাঁড়, ভুট্টি গরু ইত্যাদি অন্যতম। আর দেশি গরু তো আছেই।”মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখে পালন করা হয়েছে ভুট্টি গরু।
আজিজ আশরাফ বলেন, “প্রায় দুই বছর ধরে ভুট্টি গরুগুলো পালন করছি। ‘কংগো’ নামের গরুটির চকচকে কালো রং, বড় শিং, বড় গুজ। খাটো হলেও একে বশে আনতে তিন থেকে চার জন শক্তিশালি মানুষ লাগে। বাদামি লাল রংয়ের আরেকটি ভুট্টি গরুর নাম দিয়েছি ‘রাউটার’। ‘কংগো’য়ের ওজন ৩৫০ কেজি এবং ‘রাউটার’য়ের ওজন ২শ’ কেজি। ‘কংগো’য়ের দাম ধরেছি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আর ‘রাউটার’য়ের এর দাম ১ লাখ টাকা।”
২০০৯ সালে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দুই বিঘা জমির উপর ‘সাদিক অ্যাগ্রো’ খামারটি গড়ে তোলেন ইমরান হোসেন।
তার কথায়, “বর্তমানে আমাদের সংগ্রহে ৫শ’র বেশি গরু আছে। যার মধ্যে শাহিওয়াল, সিন্ধি জাতের গরুই বেশি। এদের ওজন হবে ১৫০ কেজি থেকে ৯০০ কেজি। দাম ৮০ হাজার থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতাদেরও দেশি গরুতেই আগ্রহ বেশি। ৫শ’ থেকে ৬শ’ কেজি ওজনের দেশি গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি, দাম গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।”
বিক্রমপুর অ্যাগ্রো’র ’কঙ্গো’।
“এছাড়াও ভুট্টি গরু আছে প্রায় ৫০টি। ওজনে গরুগুলো প্রায় ১২০ কেজি থেকে ২২০ কেজি পর্যন্ত হয়, দামটা ৭৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে। এছাড়াও আছে অস্ট্রেলিয়ান বড় গরু যার ওজন হতে পারে ৯শ’ কেজি থেকে ১২শ’ কেজি। দাম পড়বে পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা।”খামারের মালিকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় এক ক্রেতার সঙ্গে।
রাজধানির কলাবাগানের বাসিন্দা মাহবুব, পেশায় ছাত্র হলেও তিনিও ছোট একটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ঈদের ৯ মাস আগেই পরিবারের সম্মতি নিয়ে এই ফার্ম থেকে একটি ভুট্টি গরু কিনেছেন।
কথা বলে জানা গেল, তুলনামূলকভাবে বিক্রিমপুর অ্যাগ্রোতে দাম কম এবং ছোট ও মাঝারি গরু বেশি থাকায় তিনি এখান থেকে গরু ক্রয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন।
নারায়নগঞ্জের আটিবাজারের ‘টাইমস অ্যাগ্রো’। এই খামারে কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে পালা হচ্ছে দেশি ও বিদেশি জাতের মাঝারি গরু। খামারের পরিচালক মাহবুব-ই-খোদা জানান শখের বসে করা এই খামারে ২০টির মতো গরু আছে। ছোট থেকে মাঝারি সবগরুই এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে পালন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “বিক্রমপুর অ্যাগ্রো’র মালিক তপু এবং ফয়সাল শুরু থেকে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে আসছেন।”
টাইমস অ্যাগ্রো’র খামার।
তিনি আরও জানান, এই দেশের গরু মোটা তাজাকরণ ফার্মগুলোর মধ্যে ‘সাদিক অ্যাগ্রো’র মালিক ইমরান হোসেন, ‘দ্যা হাম্বা ফ্যাক্টরি’র আদনান-আল-নাহিয়ান, কাজী শেহজাদ এবং ‘শরিফ অ্যাগ্রো’র রায়হান শরীফ তাকে বেশ উৎসাহ দিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত যে কোনো ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছেন নতুন খামারী হিসেবে।মাহবুবের খামারে ‘পাকরা’ জাতের গরুর মূল্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। পাকিস্তানি শাহিওয়াল‘ পাকরা এবং নেপালী জাতের মিশ্রণ এই গরুর ওজন ৩শ’ কেজি।
হাটে যেতে যাদের যন্ত্রণা মনে হয়, এসব খামার থেকে তারা পশু কেনার জন্য ঢুঁ দিতে পারেন।
ছবি: খামারের নিজস্ব।