আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ। এ দেশে শীতকাল দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে কিছু কিছু জেলায় শীত তীব্র আকার ধারণ করে বিশেষত উত্তরাঞ্চলে। উত্তরাঞ্চলে কোনো কোনো বছর শীতকালে তাপমাত্রা অনেক কমে যায়, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বিরাজ করে।
শীতকালে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুরও নানা রোগ বালাই দেখা দেয়। ফলে গবাদি পশুর দেহের ওজন কমে যায় এবং দুধ উৎপাদন কমে যায়।
শীতকালে গবাদি পশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। মোটা কাপড় দিয়ে পশুর শরীর ঢেকে দিতে হবে। মোটা কাপড় না থাকলে চটের বস্তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিদিন সেগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে যেন রাতের প্রস্রাব দিয়ে সেগুলো ভিজে না থাকে। অন্যথায় সেগুলো থেকে পশুর ঠাণ্ডা লাগবে।
এ সময় গবাদিপশুকে সকল খাবার বাড়িতে অথবা খামারের গোয়াল ঘরে অথবা শেডে দিতে হবে। গবাদি পশুকে বাইরের ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে।
পশুকে গরম খাবার খাওয়াতে হবে, যেমন গরম পানি, ভাতের গরম ফেনা; ফলে পশুর খাদ্য চাহিদা বাড়বে এবং ওজন স্বাভাবিক থাকবে। চিটাগুড় পানির সাথে মিশিয়ে গরম করেও খাওয়ানো যেতে পারে।
খামারের অথবা গোয়াল ঘরের মেঝেতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে যেন মেঝেতে শোবার সময় পশুর শরীরে ঠাণ্ডা লেগে না যায়। প্রতিদিন খড়গুলো রোদে শুকাতে হবে।
খামার অথবা গোয়াল ঘরের চারদিক যদি দেওয়াল না থাকে তাহলে নেট অথবা মোটা কাপড় বা চট দিয়ে চারদিক ঢেকে দিতে হবে যেন ঠাণ্ডা বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। শীত তীব্র হলে ঘরে কৃত্রিম তাপের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈদ্যুতিক বাল্ব দিয়ে অথবা ঘরের এক কোনায় গরম কয়লা রেখে ঘরের তাপমাত্রা বাড়াতে হবে। শীতকালে গবাদিপশুর ঘরের তাপমাত্রা ৫৫-৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইট রাখতে হবে। গবাদিপশুর ঠাণ্ডা কম লাগবে।
শীতকালে গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় এর মধ্যে আঁটালি, গলা ফোলা, ক্ষুরারোগ, বাদলা, ক্যাসিওলিয়াসি রোগ তড়কা রোগ বেশি দেখা দেয়; এজন্য প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সাথে রাখতে হবে। শীতকালে জ্বর, নাক দিয়ে তরল পড়া কিংবা ভাইরাস জনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। রোগের উপসর্গ দেখা মাত্র পশুকে আলাদা করে রাখতে হবে এবং স্থানীয় পশু চিকিৎসক অথবা পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
পশুকে কিছুতেই বাসি খাবার দেওয়া যাবে না। বাসি এবং জমিয়ে রাখা খাবারে পরজীবি বা ছত্রাক থাকে। এ জন্য সব সময় শুষ্ক পরিষ্কার জায়গায় খাবার সংরক্ষণ করতে হবে। সবুজ খাবার কাঁচা খেতে দেওয়ার আগে অবশ্যই পরিষ্কার করে দিতে হবে।
পশুর প্রতি যথেষ্ট সময় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে শীতকালে পশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব। রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হলে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান, পোল্ট্রি অ্যান্ড ডেইরী সায়েন্স বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।