আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮ অপরাহ্ন
আমরা আজকে আলোচনা করবো চৌবাচ্চাতে মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে এবং কিভাবে আলাদা উপার্জন করা যায়।
আমাদের অনেকেরই বাড়ির মধ্যে চৌবাচ্চা আছে। অনেকে তা ব্যবহার করে থাকি, আবার অনেকের অব্যবহারে তা পরিত্যক্ত।
কিন্তু জানেন কি এই চৌবাচ্চায় আপনি করতে পারেন কই, সিঙি মাছের চাষ। কম সময়ে অধিক পরিমাণে মাছ চাষ করতে নতুন কৌশলের প্রশিক্ষণ কৃষি দপ্তরের।
পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের করুঞ্জি গ্রামে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। যারা চাষে আগ্রহী, কৃষি দপ্তর থেকে তাদের মাছের চারা দেওয়া হচ্ছে।
করুঞ্জি গ্রামে দু’জন উপভোক্তাকে ৫০০০টি করে মাছের চারা দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের বাড়ির চৌবাচ্চায় একজন কই ও অপরজন সিঙ্গি মাছের চাষ করছেন।
পূর্ব বর্ধমানের উপ কৃষি অধিকর্তা আবদুস সালাম জানান, “আতমা প্রকল্পে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে খুব কম সময়ে অল্প জায়গায় বেশি পরিমাণে মাছচাষ শুরু করা হয়েছে।
বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সরকারিভাবে এই চাষের প্রশিক্ষণ এবং চারামাছ অনুদান হিসাবে দেওয়া হচ্ছে।”
আউশগ্রামের করুঞ্জি গ্রামে দু’জনের বাড়িতে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের চাষ শুরু হয়েছে। ৬ ফুট/ ৬ ফুট চৌবাচ্চা করে তার উপরে ছাউনি করা হয়েছে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য রয়েছে ব্যবস্থা।
এখানে মাছ চাষের পাশাপাশি বাড়ির ছাদে সবজিরও চাষ করা হচ্ছে। চৌবাচ্চার অপরিষ্কার জল পাম্পের সাহায্যে ছাদে তুলে সেখানে কাঠকয়লা ও নুড়িপাথরের উপর সেই জল ফেলে শোধন করা হচ্ছে।
জলের তলায় পড়ে থাকা মাছের মল ও বর্জ্য জৈব সার হিসাবে ফল ও সবজি চাষে ব্যবহার করা হয়। কৃষি আধিকারিকরা জানান, বায়োফ্লক পদ্ধিতে মাছ চাষ অত্যন্ত লাভজনক।
বর্তমান সময়ে বাড়ির চৌবাচ্চাতে মাছ চাষ একটি জনপ্রিয় শখে পরিণত হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা, যাদের হাতে একটু সময় ও জায়গা আছে, তারা ছোট আকারের পুকুর বা ট্যাঙ্ক তৈরি করে মাছ চাষ করছেন। চৌবাচ্চাতে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত কিছু মাছের প্রজাতি হলো:
১. রুই মাছ: রুই মাছ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারে। কম অক্সিজেনেও এরা বেঁচে থাকতে পারে, যা রুই মাছ চাষকে সহজ করে তোলে।
২. কাতলা মাছ: কাতলা মাঝারি আকারের হয় এবং বেশি খাবার প্রয়োজন হয় না। অল্প খাবারেই এরা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা চৌবাচ্চাতে এদের চাষের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
৩. সিঙ্গি মাছ: সিঙ্গি মাছ খুবই লাগসই প্রজাতি এবং অল্প জায়গায় বেঁচে থাকতে পারে। তবে এদের জন্য যথেষ্ট অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানি দরকার।
৪. থাই শোল মাছ: থাই শোল মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং চাষের জন্য সহজ। এই মাছটি চৌবাচ্চাতে ভালোভাবে বেঁচে থাকে।
৫. টিলাপিয়া: টিলাপিয়া মাছও চৌবাচ্চায় চাষ করা যায়। এরা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সহজে খাবার গ্রহণ কর।
বাড়ির চৌবাচ্চাতে মাছ চাষের জন্য সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং উৎপাদনও ভালো হবে। বাড়ির চৌবাচ্চাতে মাছ চাষের জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো ভালো:
১. জৈবিক পদ্ধতি (বায়োফ্লক): এই পদ্ধতিতে মাছের বর্জ্য জৈব উপাদানে রূপান্তরিত হয় এবং মাছের খাদ্য হিসেবে পুনরায় ব্যবহৃত হয়। এটি পরিবেশবান্ধব এবং কম জায়গায় বেশি মাছ চাষের উপযুক্ত।
২. ইনটেনসিভ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে চৌবাচ্চাতে বেশি মাছ চাষ করা হয় এবং নিয়মিতভাবে তাদের খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এটি মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য কার্যকর।
৩. আধা-ইনটেনসিভ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্যও সরবরাহ করা হয়। এতে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং চাষে কম খরচ হয়।
এইভাবে যদি সবকিছু মেনে চলা যায়, তাহলে বাড়ির ছোট্ট চৌবাচ্চাতেই সুস্বাদু নিজস্ব মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আশা করি এই টিপসগুলো তোমাদের কাজে লাগবে। ভালো থেকো, আবার দেখা হবে।
বাড়ির চৌবাচ্চাতে মাছ চাষ করতে হলে মাছের সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্য মাছের স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। নিচে কিছু উপযুক্ত খাদ্যের তালিকা দেওয়া হলো:
১. প্রাকৃতিক খাদ্য: প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে প্ল্যাঙ্কটন, শৈবাল এবং জলজ পোকামাকড়, যা মাছের প্রোটিন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।
২. সম্পূরক খাদ্য: মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, এবং মিনারেল সমৃদ্ধ থাকে। যেমন – মাছের জন্য তৈরি বিশেষ পেলেটস, ফ্লেক ফুড, বা ফিড।
৩. গৃহস্থালী খাদ্য: গৃহস্থালী খাদ্য মাছের জন্য সহজলভ্য এবং সস্তা। উদাহরণস্বরূপ, চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, এবং শাকসবজির টুকরা।
খাদ্যের বৈচিত্র্য: মাছের খাদ্যে বৈচিত্র্য থাকা উচিত। প্রাকৃতিক, সম্পূরক, এবং গৃহস্থালী খাদ্য একসঙ্গে সরবরাহ করলে মাছের পুষ্টি চাহিদা ভালোভাবে পূরণ হয়।এই খাদ্য এবং পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে বাড়ির চৌবাচ্চাতে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
১. পুকুর বা ট্যাঙ্ক তৈরি: প্রথমে একটি সঠিক আকারের পুকুর বা সিমেন্টের ট্যাঙ্ক তৈরি করুন। পুকুর বা ট্যাঙ্কের আকার প্রায় ৫০০-১০০০ বর্গফুট হলে ভালো হয়।
২. পানি সরবরাহ ও গুণমান: চৌবাচ্চায় উচ্চ মানের পানি সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ। পানির পিএইচ, তাপমাত্রা, এবং অক্সিজেন স্তর নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। পানি পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত পরিবর্তন এবং ফিল্টার ব্যবহার করা উচিত।
৩. মাছের প্রজাতি নির্বাচন: চৌবাচ্চায় মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত প্রজাতির মাছ বেছে নিতে হবে। রুই, কাতলা, সিঙ্গি, থাই শোল, টিলাপিয়া এবং মৃগেল মাছ চৌবাচ্চায় চাষের জন্য ভালো।
৪. খাদ্য সরবরাহ: মাছের জন্য সঠিক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী গৃহস্থালী খাদ্য এবং বাণিজ্যিক খাদ্যও সরবরাহ করা যেতে পারে।
৫. সঠিক যত্ন ও পরিচ্ছন্নতা: চৌবাচ্চার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিতভাবে পানি পরিবর্তন, পুকুর বা ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা এবং মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। কোনো রোগ লক্ষ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড রাখা: মাছের বৃদ্ধির হার, খাদ্য গ্রহণ, এবং স্বাস্থ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং তার রেকর্ড রাখতে হবে। এতে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে বাড়ির চৌবাচ্চায় মাছ চাষ সহজ এবং লাভজনক হবে। সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত পরিচর্যা করলে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং মাছ চাষে সাফল্য আসবে।