আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
মৌসুমি ফুলের মধ্যে এটি বেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয় একটি ফুল। জিনিয়া শীতকালীন ফুল হলেও সারা বছরই এর চাষ করা যায়। গাছ ৬০-৭০ সেমি. লম্বা হয়। গাছে ডালের সংখ্যা কম হয়। ফুলের রং লাল, গোলাপি, বেগুনি ও হলুদ প্রভৃতি হয়ে থাকে। আকার ও রঙের বৈচিত্রে ডালিয়া ও চন্দ্র মল্লিকার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
ব্যবহারঃ কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানিতে সাজাবার জন্য এবং তোড়া তৈরির জন্য এ ফুল অদ্বিতীয়।
জাত ও মৌসুম:
জাতঃ জিনিয়ার জনপ্রিয় জাত হচ্ছে ডাবল ফুল। এটি অবিকল চন্দ্র মল্লিকার মত।
উৎপাদন মৌসুমঃ জুন মাসের মাঝামাঝি এবং অক্টোবর মাসে টবে গামলায় বা বীজতলায় বীজ বপন করে চারা প্রস্তুত করতে হয়।
মাটি ও জলবায়ু:
মাটি ও জলবায়ুঃ হালকা উর্বর দো-আঁশ মাটি এ ফুল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। জলবসা, ভিজা ও স্যাঁতসেতে জমিতে এ ফুল ভালো হয় না। এ ফুলের জন্য বড় দিন, উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া আবশ্যক। কিন্তু ক্রমাগত ও অত্যাধিক বৃষ্টিপাতে গাছের পাতা কুকড়িয়ে ও ফুল ছোট হয়ে যায়। সমভাবে ব্যাপ্ত ১০০-১২৫ সেমি. বৃষ্টিপাত ও ৩০-৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন মৌসুমি ফুলের পক্ষে বিশেষ অনুকূল।
জমি ও টবের মাটি তৈরী:
জমি তৈরিঃ
এ ফুল চাষের জন্য উর্বর হালকা দোআঁশ মাটি, উচু, শুষ্ক ও সহজে জল নিস্কাশিত হয় এমন জমি প্রয়োজন। দক্ষিণ খোলা জমি এ ফুল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।
জমিতে লাঙ্গল দেওয়া বা কোপানোর সময় জমিতে পরিমাণমতো পাতাপচা সার, পচা গোবর সার, হাড়গুড়া বা সুপার ফসফেট সার প্রয়োগ করে জমির সাথে মিশাতে হবে। জমিকে উত্তমরুপে কর্ষণ করে মাটি ঝুরঝুরে ও নরম করিয়া ১ফুট বা ৩০ সেমি. দুরে দুরে চারা বসাতে হবে। চারা রোপনের পর জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে ও নিয়মিতভাবে সেচ প্রদাণ করতে হবে।
টবের মাটি তৈরীঃ
৩ ইঞ্চি বা ৭-৮ সেমি. মাপের ছোট টবের ২ ভাগ পাতাপচা সার, ২ ভাগ সাধারণ মাটি, ১ ভাগ গোবর সার ও তার সঙ্গে কিছুটা লাল বালি মিশিয়ে সার মাটি তৈরী করতে হবে। ৫ ইঞ্চি বা ১২-১৩ সেমি. ও ৮-১০ ইঞ্চি বা ২০- ৩০সেমি.মাপের টবের জন্য ৩ ভাগ সাধারণ মাটি, ৩ ভাগ পাতাপচা সার ও চার ভাগ গোবর সার মিশিয়ে সারমাটি তৈরী করতে হবে। ৮-১০ ইঞ্চি বা ২০- ৩০সেমি. মাপের টবের সঙ্গে ৬ চামচ সুপার ফসফেট, তিন চামচ সালফেট অফ পটাশ এবং একমুঠ স্টিমড বোন মিল মিশিয়ে টবটি পুরোপুরি ভর্তি করতে হবে। টব ভরার দশদিন পরে ঐ মাটির সঙ্গে ২/৩ চামচ কলিচুন ও এক মুঠা রেড়ির খৈল মিশিয়ে নিলে ভাল হয়। সার মাটি তৈরী করার সময় উপাদানগুলিকে গুড়া করে ৮ সেমি. ছিদ্রের চালুনি দ্বারা চেলে নিতে হবে। টব ভরার অন্তত একমাস পূর্বে সার মাটি তৈরী করে নিতে হবে এবং এ মিশ্রনের স্তুপকে মাঝে মাঝে ওলট-পালট করে ভালবাবে মিশাতে হবে।
বর্ষাকালে টবগুলি সরিয়ে বারান্দা বা কোন আচ্ছাদিত স্থানে রাখতে হবে।
চারা রোপন:
চারা রোপনঃ বীজতলার চারাগুলি ২/৩ ইঞ্চি বা ৫-৮ সেমি. এর মত লম্বা হলেই বাগানে বা টবে রোপন করতে হবে। বাগানে রোপন করলে ১.৫ফুট বা ৪৫ সেমি. দূরে দূরে রোপন করতে হবে। রোপনের কিছু দিনের মধ্যে গাছে ও নিকৃষ্ট ধরনের ফুল ফুটতে আরম্ভ করে। কিন্তু বর্ষাকালের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে গাছ যখন ৩ ফুট বা ৯০ সেমি. এর মত লম্বা হয় তখন গাছে বড় বড় ফুল হয়।
সার ও অন্যান্য পরিচর্যা:
সার প্রয়োগঃ চারা রোপনের প্রায় ১৫-২০ দিন পর থেকে গাছের গোড়ায় ৭ দিন পর পর তরল সার (খৈল ও কাচা গোবর ১০ দিন মাটির পাত্রে ভিজিয়ে রেখে তার পানি), পাতাপচা সার বা আবর্জনা সার, হাড়গুড়া দিতে হবে। ফুল আসার সময় এ তরল সারে প্রতি লিটারে ১০০ গ্রাম সুপার ফসফেট মিশিয়ে দিলে ফুলের রং ও গড়ন ভালো হবে।
পানি সেচঃ গাছের গোড়া শুকিয়ে এলে হালকা সেচ দিতে হবে। টবে গাছ রোপন করলে পরিমিত সেচ দিতে হয়।
আগাছা পরিস্কারঃ বাগানের এবং টবের দোপাটি গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত খুড়ে আলগা করতে হবে এবং ঘাস আগাছা ইত্যাদি তুলে ফেলতে হবে।
পোকা দমনঃ থ্রিপস, লাল মাকড়সা, জাবপোকা ও শোষক পোকা আক্রমণ করতে পারে। উপযুক্ত কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে নানা প্রকার রোগ দমন করা যায়।