বাড়ির ছাদে বাগানের নতুন মডেল তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বাগানের মোট ক্ষেত্রফলের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ রাস্তা, ১০ শতাংশ বসার জায়গা, ৪০ শতাংশ শাকসবজি, ১০ শতাংশ ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ, ২০ শতাংশ ফল, মসলা ও ওষুধি এবং ৫ শতাংশ অন্যান্য গাছের জন্য বিবেচনায় রেখে বাগানের মডেলটি প্রস্তুত করা হয়েছে। বাড়ির ছাদ বাগানের এ মডেলটি তৈরি করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। নাম দেওয়া হয়েছে নিবিড় ছাদ বাগান। মডেলটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-অধিক জীববৈচিত্র্য, দৃশ্যত খুবই আকর্ষণীয়, বিনোদন ও খাদ্য উত্পাদনের জায়গা।
বাড়ির ছাদের বাগান শুধু সৌন্দর্য বর্ধন এবং খাদ্যের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজধানী শহরে প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে ফাঁকা ছাদ। যা শহরে তাপ বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী। যদি শহরে সব ছাদে বাগান করা হয় তবে তা তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমাতে পারে বলে মনে করেছেন তারা। আর এজন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ছাদ বাগানের এ নতুন মডেলটি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের ভিতরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করতে পারে, যা শীতলীকরণ চাহিদার জন্য বিদ্যুত্ খরচ কমায় এবং ছাদ বাগানে ছাদের তাপমাত্রা ও ছাদ বাগানবিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য ৭.৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারক উপাদান যেমন পার্টিকুলেট মেটার গাছের পাতায়, কান্ডে ও শাখায় লেগে থাকে যা পরবর্তীতে সেচ ও বৃষ্টির পানির মাধ্যম মাটিতে চলে যায়, ফলে বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এ ছাড়া গাছপালা গ্রীষ্মকালে তাপ শোষণ ও শীতকালে তাপ বর্জন করে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
বাড়ির ছাদের বাগান একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করবে অন্যদিকে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে মনে করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের একটি বাগান পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের সবজি চাহিদা মেটাতে পারে।
এগ্রিকালচারাল বোটানী বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব ইসলাম বলেন, ছাদে বাগান করে শহরে গাছপালা বর্ধনের মাধ্যম জীবের জন্য নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব। ছাদের বাগান বাতাসের মান উন্নয়ন করে, কারণ গাছপালা হচ্ছে পরিবেশের বিষাক্ত উপাদানের প্রাকৃতিক ছাঁকনি।
ড. মাহবুব আরো জানান, ছাদে বাগান বৃষ্টির পানি ধরে রাখা, শহুরে কৃষির সম্প্রসারণ তথা ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদা পূরণ, আয়ের উত্স ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এটি সামাজিক সম্পর্ক, শিক্ষা, গবেষণা এবং খাদ্য উত্পাদনের মাধ্যম শহুরে কৃষির একটি মডেল হতে পারে।
শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, যদি ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে ছাদ বাগানের প্রসার করা যায়- তবে এটি কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য বায়ু দূষণকারী উপাদানের মাত্রা কমিয়ে শহরে তাপদ্বীপ প্রভাব ও পরিবেশ দূষণ কমাবে। এ ছাড়াও এর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল বোটানী বিভাগের এ বাগানটি ঘুরে দেখা গেছে, বাগানে প্রবেশ করার সাথে সাথে চোখে পড়ল কাঁচা-পাকা বড় টবে নরসিংদী অমৃত সাগর কলা। কয়েকটি গাছে ডালিম আর পেঁপে। পাশেই রয়েছে করলা গাছের মাচা, লেবু, আমলকি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক, ডাঁটাসহ বিভিন্ন সবজির গাছ। অন্য পাশে পেয়ারা, পেঁপে, স্ট্রবেরি, আম, পেয়ারা, লেবু, ডালিম, কামরাঙ্গা, ড্রাগন ফল, আঙ্গুর, কমলা, আনারস, জামরুল, লিচু, করমচা, বরই, জাম্বুরা, জলপাইসহ কয়েকটি দেশ-বিদেশি ফলের গাছ। রয়েছে পাট গাছ। ছাদের একপাশে রয়েছে রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্লান্ট। শেষ প্রান্তে বাঁশের খুঁটি অবলম্বন করে কিছু পিভিসি পাইপ স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাল্টি লেয়ার হাইড্রোপোনিকস পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে-ক্যাপসিকাম, চাইনিজ বাঁধাকপি, টমেটো, লেটুস।
মতিঝিলে ছাদে বাগান করেছেন বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির কেন্দ্রীয় পরিষদের সাবেক সভাপতি মোঃ এনামুল হক খান। তার বাগানে ১২ থেকে ১৮ প্রজাতির ফুল রয়েছে।
Post Views: 162