আজ বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন
টবে বা ছাদে চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকে আলোচনা করা হবে যারা পড়বেন পড়ে আবার শেয়ার করে দিবেন আরেক ছাদ কৃষি ফ্রেন্ডদের নিকট যাতে তারাও শিখতে পারে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই বাড়ির ছাদে টবে চালকুমড়া চাষ করে থাকেন। তবুও সঠিকভাবে টবে চালকুমড়া চাষ উপায় না জানার কারণে সুন্দর উৎপাদন হয় না বা গাছ সতেজ হয় না। এখানে একে তুলে ধরা হলো কেমনে চালকুমড়া বৃক্ষের ঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হয়, টবে চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি, টবে চালকুমড়া চাষের জন্য মাটি তৈরির উপায়, ও টবে চালকুমড়া উদ্ভিদের রোগবালাই এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা। টবে চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি।
চালকুমড়ার সমৃদ্ধ জাত
আমাদের দেশে কতিপয় মহৎ ফলনশীল জাত উৎপাদন হয়েছে যা বার মাসই চাষ করা যায়। এর ভিতরে বারি চাল কুমড়া-১ অন্যতম। সাম্পপ্রতিককালে আমাদের দেশে হাইব্রিড বংশের চালকুমড়ার বীজও মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে। এসব জাতের ভিতরে জুপিটার, ইউনিক, ভেনাস, পানডা, সুমাইয়া, বাসন্তী, নিরালা, মনি, দেব-১২০৩, মাধবী ইত্যাদি অন্যতম।উন্নত জাতের চালকুমড়া রোপন করলে সারাবছর ফসল পাওয়া যায়। সারা বছর ফলন দানকারী জাতগুলোর ভিতরে বারি ১ সবচেয়ে অনেক ভালো । টবে চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি।
চালকুমড়ার বীজ থেকে চারা তৈরি
ভালো চারা প্রস্তুত করতে হলে পলিব্যাগে চারা তৈরী করা সবচেয়ে উত্তম। সেক্ষেত্রে চালকুমড়ার বীজ হতে চারা তৈরির সময় প্রথমে বীজ গুলোকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ১টি বীজতলা তৈরি করতে হবে। এর জন্য ৬০ অংশ দোআঁশ মাটি ৪০ অংশ শুকনো গোবর এবং অল্প হিসাব ছাই মিশিয়ে বীজতলা টি সৃষ্টি করে নিন। ভেজানো বীজগুলোকে নতুন সৃষ্টি করা বীছ তলায় বসিয়ে একটি পাটের ছালা অথবা সুতি বস্ত্র দিয়ে ঢেকে দিন। অতঃপর কয়েকদিন ওই পোশাক বা ছালার উপর কিছু কতিপয় করে পানি দিয়ে যান। তিন হতে চার দিনের মধ্যেই বীজ গুলো অঙ্কুরিত হবে। এই সময়ে নিউ গজানো বীজ গুলো তুলে আপনার প্রস্তুত করা পলি ব্যাগ গুলোতে স্থানান্তর করুন। পলিব্যাগের মাটি এবং দোয়াশ মাটি এবং গোবর এর মিশ্রণ দিয়ে প্রস্তুত হতে হবে। পলিব্যাগে থাকাকালে 10 থেকে 15 দিনের ভিতরে ছোট চারাগুলো রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবে।
টবে চালকুমড়া গাছের পরিচর্যা :
ড্রামে বা টবে কুমড়া চাষ করলে সর্বনিম্ন টবের সাইজ ১৮”×১৮” থেকে হবে। এরকম ১টি টবে ১-২ টি চাড়া রোপণ করা যাবে।
চাল কুমড়া চাষের জন্য টবের মাটি তৈরি
চাল কুমড়া চাষের জন্য মাটি তৈরির সময় টবের নিম্নদেশে ২” হিসাব ইটের সূরকী দেবেন । এর পর সর্বমোট মাটির ২৫ ভাগ গোবর বা পত্র পচা সার এবং ৭০ অংশ দোআঁশ মাটি ও ৫ ভাগ ছাই মিশিয়ে টব বোঝাই করতে হবে। এছাড়া মাটিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সার গুলোর ভিতরে ইউরিয়া সার ৫০ গ্ৰাম , টিএসপি ৩০ গ্ৰাম , এমওপি সার ২০ গ্ৰাম মিশিয়ে নিন।
এরপর চারা রোপণ করে ড্রাম গুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থাপন করুন এবং প্রগাঢ় পরিচর্যার ভিতরে রাখুন। গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের জন্য মাচা তৈরি করে দিলে সবচেয়ে অনেক ভালো হয় । এতে ভাল ফলন পাওয়া যায়। টবে চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি।
টবে চালকুমড়া গাছে পানি সেচ :
টবে কুমড়া চাষ এর ক্ষেত্রে পানি সেচ দেওয়া অধিক প্রয়োজনীয় ১টি বিষয়। কুমড়া গাছের অনেক পানি প্রয়োজন হয়। একারণে ডেইলি সকাল বেলা বিকেল দুই বার করে জল সেচ দেওয়ার জন্য হবে। তাছাড়া বাসাবাড়ির প্রতিদিনের মাংস বা মাছ ধোয়া পানি চালকুমড়া বৃক্ষে সরাসরি ভাবে দিয়ে দেবেন এতে উদ্ভিদের প্রচুর মঙ্গল হয়। মনে রাখার জন্য হবে কোন কারণে যদি কুমড়া গাছে পানির অভাব হয় তবে ফলন বেশ ভালো হবে না এবং ফল ছোট অবস্থাতেই ফল ঝরে যাবে।
চাল কুমড়া গাছে সার প্রয়োগ :
রোপণের সময় প্রয়োগ কৃত সার এর বাইরে ও রোজ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বৃক্ষের অবস্থা দেখে ইউরিয়া ও আদার্স সার বৃক্ষের গোড়ার ৬” ইঞ্চি সরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য হবে।
চাল কুমড়া গাছের রোগবালাই দমন :
চাল কুমড়া উদ্ভিদের রোগ বালাই নিবারণ করতে বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সাধারনত প্রায় ধরনের উদ্ভিদে রোগ বালাই হয়ে থাকে। এখানে চালকুমড়া গাছের রোগ বালাই দমনের প্রাকৃতিক এবং রাসায়নিক দুটি পদ্ধতিই আলোচনা করা হলো।
চাল কুমড়া বৃক্ষের রোগ বালাই নিবারণ এর প্রাকৃতিক পদ্ধতি :
১, আপনার কুমড়ার মাচায় খেচর বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট করে দিন । পাখি ক্ষতিকর সকল পোকা খেয়ে এর দমন করতে সহায়তা করে।
২, এছাড়া একধরনের জৈব ফাঁদ পাওয়া যায় বাজার হতে এগুলো ক্রয় করে এনে ব্যবহার করলে অধিকাংশ পোকা মাকড় এর ভিতরে ধরা পড়ে।
৩, জৈব কীটনাশক প্রয়োগ, চালকুমড়া উদ্ভিদের রোগ বালাই দমন করতে জৈব কীটনাশক ইউজ করতে পারেন। এ ধরনের কীটনাশক নিম পাতা সেদ্ধ করে বা গাঁদা ফুলের পত্রের রস থেকে প্রস্তুত করা যায়। এছাড়া নিমের তেল স্প্রে করেও প্রাকৃতিক উপায়ে কীট পতঙ্গ নিবারণ করা সম্ভব।
৪, বিষাক্ত টোপ ইউজ করেও পোকা নিবারণ করা যায়। সে ক্ষেত্রে টোপ সৃষ্টি করার জন্য ১০০ গ্রাম থেঁতলানো কুমড়ার সঙ্গে ১০০ গ্ৰাম পানি দিয়ে ০.২৫ গ্ৰাম ডিপটেরেক্স মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মাটির পাত্রে ঢেলে টপ বা ড্রামের কাছে রেখে দিন দেখবেন নানারকম রকম পোকা এর মধ্যে আসবে ও মারা পড়বে। এই বিষ টোপ এর কার্যকারিতা তিন থেকে চার দিন ধরে থাকে। চার দিন পর পর এটা পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য হবে।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে চালকুমড়া গাছের রোগবালাই দমন
১, ফ্রুট ফ্লাই কচি কুমড়ার এর মধ্যে চোট তৈরি করে ও চাল কুমড়া বৃক্ষের কচি শক্ত পচে ঝড়ে পরে। এ প্রবলেম উপশম করতে ছাই ছিটিয়ে দিন পক্ষান্তরে ডায়াজেনন প্রয়োগ করুন।
২, বৃক্ষ বড় হয়েছে তা সত্ত্বেও ফুল কম ধরে এইরকম হলে টিএসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করুন। বৃক্ষের বৃদ্ধি ঠিকভাবে হচ্ছে না এইরকম হলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করুন। আপনাকে উদ্ভিদের সিচুয়েশন দেখে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ছত্রাকনাশক ব্যবহার এর প্রয়োজন হলে ডায়াজনন বা ইউনিসাফ ব্যবহার করতে পারেন।