আজ শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
ড্রাগন ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা এমন কথা এর আগে অনেকেই শুনেছেন তাই আজকে এই আর্টিকেল টি ভালো ভাবে পড়ুন তাহলে বুঝবেন আসলেই অনেকেই সফল ড্রাগল ফল চাষ করে।
ধানের জেলা দিনাজপুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ফল চাষ করে অনেকের ভাগ্যে পরিবর্তন এসেছে। দিনাজপুরের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা। সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলে ড্রাগন ফল চাষের বিপ্লব সাধিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
জানা গেছে, পাইকারেরা ক্ষেত থেকেই নগদ টাকায় ড্রাগন ফল কিনছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। সদর উপজেলার শেখপুরা এলাকার ড্রাগন চাষি মোখলেসুর জানালেন, শখের বসে তিনি ১২ শতক জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করে লাভের মুখ দেখছেন। একই কথা জানালেন, বিরামপুর উপজেলার ড্রাগন ফল চাষি নজরুল ইসলাম। গত বছর প্রথম ফল পেয়েছেন। এবার গত বছরের তুলনায় ফল অনেক বেশি হয়েছে। ক্ষেত থেকেই সাড়ে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন ফল।
দিনাজপুরের ড্রাগন ফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষে সফলতার কাহিনী শুনে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন এ ফল চাষের।
চলতি বছর দিনাজপুরে ৫৪ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল স্থানীয় বাজারে সাড়ে তিনশো টাকা থেকে সাড়ে চারশো টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ফল চাষে কৃষককে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে হর্টি কালচার সেন্টার ও কৃষি বিভাগ।
বেকার কৃষকরা ঝুঁকছেন ড্রাগন ফল চাষে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও অনাবাদি-পরিত্যক্ত জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করছেন। দিনাজপুর সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আওতায় কাহারোল কান্তা ফার্মে পতিত ও পরিত্যক্ত জমিতে এখন ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। এবার এ মৌসুমে তাদের জমিতে উৎপাদিত ড্রাগন ফল এক বছরের জন্য সাড়ে ১৬ লাখ টাকা চুক্তিতে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফার্মের সিআইসি কাজল চন্দ্র দাস।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, দিনাজপুরে মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। সুষ্ঠু বাজারজাতের ব্যবস্থা করা গেলে উদ্যোগী কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে।
মো. ইসমাইল হোসেনের ভাষ্য, এ ফলের উপকারিতা অনেক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রচুর। আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত এন্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভর করে। তাই আমরা এ ফল চাষের উদ্যোগ নেই। দুইজন শেয়ারে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। প্রথম বছরেই তিন লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। এবছর পাঁচ লাখ টাকার ফল বিক্রি করার আশা করছি। গ্রাগ্ন ফলের বাগান থেকে বছরে ৬ মাস ফল পাওয়া যায়। শীতের সময় ফল পাওয়া যায় না। আরও ৯ বিঘা জমিতে নতুন করে বাগান করা হয়েছে।
প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে জমি থেকেই বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে এক একটি ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত। চার-পাঁচ বছর বয়সের একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে এক কেজি পর্যন্ত ওজনের ড্রাগন ফল পাওয়া সম্ভব। প্রতি বছর এক বিঘা জমিতে দুই লাখ টাকার বেশি আয় করা যায়।
বোদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামন অর রশিদের ভাষ্য, ‘পঞ্চগড়ের কৃষকরা এখন পুরাতন গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থার ওপর নির্ভশীল না হয়ে সময়ের প্রয়োজনে এবং চাহিদার কথা বিবেচনা করে লাভজনক কৃষি পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, মাঠ পার্যয়ে তদারকি এবং এর চাষ পদ্ধতি সর্ম্পকে অবহিতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার মাটি ড্রাগন চাষের উপযোগী হওয়ায় এবং পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষ শুরু হয়েছে।’
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেনের বক্তব্য, ‘সব ধরণের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে-দোআঁশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম। একবার এ ফল চাষ করলে ২০-২৫ বছর ফল পাওয়া যায়। বাগান করতে প্রাথমিকভাবে খরচটা একটু বেশি হয়।
এ ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে জটিল রোগসহ আরও অনেক রোগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এছাড়া এ ফল ডায়বেটিস ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং কোলেস্টরেল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ্যটা করে। অ্যাজমা ও ঠাণ্ডা-কাশির রোগীদের জন্যও ফলতই বিশেষ উপকারী। ড্রাগন ফলে প্রচুর ফাইবার থাকে যা পেটের পীড়া নিরাময় ও সুস্থ লিভারের জন্য উপকারী। সালাদ তৈরিতে ও বিউটিফিকেশনের কাজেও ড্রাগন ফল ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ফল রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।’