আজ মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ন
মাছ চাষের বিষয়ে আমাদের কাছে অনেকেই প্রতিদিন ফেসবুকে পেইজে ইনবক্স করে থাকেন তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো পাবদা মাছের বংশ বৃদ্ধি যা যা করণীয় তা নিয়ে।
আমরা মাছেভাতে বাঙালি। আর পাবদা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। তবে মাছটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। ফলে মাছটির বংশবৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।
তার মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ মাছ রক্ষা করা সম্ভব। এর জন্য কিছু কৌশল জেনে নেওয়া জরুরি। আসুন জেনে নেই কৌশলগুলো-
প্রজনন ঋতুর ৪-৫ মাস আগে থেকেই ব্রুড মাছগুলোকে বিশেষ যত্নের সঙ্গে লালন পালন করা উচিত। এ সময় খাবার হিসেবে ফিশমিল, চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, সয়াবিন মিল, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, আটা এবং ভিটামিনের প্রিমিক্সের মিশ্রণ মাছের মোট ওজনের ৫-৮ ভাগ দিতে হবে।
ডিম্বাশয়ের পরিপক্বতা আনার জন্য ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ততার জন্য নিয়মিত গোবর, ইউরিয়া ও টিএসপি পরিমাণ মতো দিতে হবে।
ব্রুড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে স্ত্রী মাছের চেয়ে ছোট হবে। পুরুষ মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট চাপা থাকে এবং পুরুষ মাছের বক্ষ পাখনা খাঁজকাটা থাকে।
আর স্ত্রী মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে পুরুষ মাছ থেকে বড় হয়। স্ত্রী মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট ফোলা ও নরম থাকে এবং স্ত্রী মাছের বক্ষপাখনা তেমন খাঁজকাটা থাকে না।
ইনজেকশন দেওয়ার ৮-১০ ঘণ্টা আগে মাছ ধরে সেগুলোকে পুকুরে স্থাপিত গ্লাস নাইলনের হাপাতে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় পর্যন্ত অক্সিজেনের জন্য মাছকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপের সাহায্যে ওপর থেকে অনবরত পানির ফোয়ারা দিতে হবে।
পাবদা মাছের প্রণোদিত প্রজননের জন্য পিজি এবং এইচসিজি দু’টোই ব্যবহার করা যায়। মাছকে মাত্র একবারই ইনজেকশন দিতে হয়।
পিজির জন্য সবচেয়ে ভালো মাত্রা হচ্ছে প্রতি কেজি পুরুষ মাছের জন্য ১২.০ মিলিগ্রাম এবং প্রতি কেজি স্ত্রী মাছের জন্য ১৮.০ মিলিগ্রাম। ইনজেকশন দেওয়ার সময় ভেজা কাপড় দিয়ে মাথা জড়িয়ে পৃষ্ঠপাখনার নিচে ৪৫ কোণে ইনজেকশন দিতে হবে।
ইনজেকশন দেওয়ার ৯-১২ ঘণ্টার মধ্যে হাপাতেই প্রাকৃতিক প্রজনন ক্রিয়ার মাধ্যমে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছ শুক্রাণু ছেড়ে ওই ডিম নিষিক্ত করে।
ডিম ছাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব মাছগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে হাপা থেকে সরিয়ে ফেলতে এবং ডিমগুলোকে ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে।
এ সময় খেয়াল রাখতে হবে ট্রে ও পুকুরের পানির তাপমাত্র যেন প্রায় একই থাকে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে পুকুরের পানি ছেঁকে ট্রেতে দেওয়া যেতে পারে।
ডিম স্থানান্তর করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেতে ওপর থেকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ দিয়ে অনবরত পানি সরবরাহ করতে হবে যাতে ডিমগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়। এভাবে ১৬-২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে।
ট্রেতে ডিম থেকে ফোটার ২১-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে রেনু পোনাকে প্রাথমিক খাবার দিতে হবে। প্রাথমিক খাবার হিসেবে টিউবিফিসিড ওয়ার্ম সবচেয়ে ভালো।
টিউবিফিসিড ওয়ার্ম ছোট বাটিতে নিয়ে কুচি কুচি করে কেটে দিতে হয়। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম না পাওয়া গেলে পুকুর থেকে জুপ্লাংকটন ধরে সুক্ষ্ন ছাকনি দিয়ে ছেঁকে ট্রেতে দিতে হবে।
পোনার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ২-৩ বার খাবার দিতে হবে। এভাবে ৬-৮ দিন ট্রেতে প্রতিপালন করার পর পোনা গুলোকে সিস্টার্নে স্থানান্তর করতে হবে। ২.৪, ১.৩, ০.৫ ঘনমিটার সাইজের সিস্টার্নে ৩০০-৫০০টি পোনা লালন করা যাবে।
পানির উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার বজায় রাখতে হবে। সিস্টার্নে ১০-১৫ দিন প্রতিপালন করার পর পোনার আকার ২-৩ সেন্টিমিটার হলে পোনাগুলোকে নার্সারি পুকুরে মজুদ করা যাবে।
পুকুরের আয়তন ৩-৬ শতাংশ হবে। পুকুর প্রস্তুতির পর শতাংশে ৩০০-৪০০টি করে পোনা ছাড়া যাবে। পোনা ছাড়ার আগে ভালোভাবে ছোট ফাঁস জাল টেনে পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।
পোনা সকাল কিংবা সন্ধ্যার আগে ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পর প্রতিদিন পোনার দেহ ওজনের ১০-২০ ভাগ সম্পূরক খাবার দিতে হবে। প্রতি ১৫ দিন পর পর জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
পাবদা মাছ সাধারণত বর্ষাকালে পোনা দেয়, যা জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ঘটে। এই সময়ে পানির তাপমাত্রা ও পরিবেশ পাবদা মাছের প্রজননের জন্য উপযুক্ত থাকে, ফলে তারা সহজেই পোনা দেয়।