আজ শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন
পেয়ারা চাষ – ফলন / পেয়ারা ডাল বাঁকালেই ফলন হবে দশগুণ
পেয়ারা চাষ – ফলন
পেয়ারা একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন ফল এবং এতে প্রচুর ভিটামিন-সি আছে। ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি পেয়ারা দিয়ে জেলি, জ্যাম ও জুস তৈরি করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সব জায়গাতেই কম-বেশি পেয়ারা জন্মে। বিভিন্ন জাতের দেশি পেয়ারা চাষের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর উদ্ভাবিত বিভিন্ন উন্নতজাতের পেয়ারার চাষও এখন দেশের অনেক জায়গায় হচ্ছে।
আমাদের দেশে সারাবছরই বিভিন্ন ধরণের ফলের চাষ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ফলমূলের মধ্যে পেয়ারা অন্যতম। পেয়ারা হচ্ছে একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। পেয়ারার ইংরেজি নাম Guava ও বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Pisidium guajava.। বাংলাদেশের সব জায়গাতেই কম বেশি পেয়ারা জন্মে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, ফিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি প্রভৃতি এলাকায় এর চাষ হয়ে থাকে। বিভিন্ন জাতের দেশী পেয়ারা চাষের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভাবিত বিভিন্ন উন্নত জাতের পেয়ারার চাষও এখন দেশের অনেক জায়গায় হচ্ছে।
পুষ্টিমান
পেয়ারায় প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ আছে।
ঔষধিগুণ
শেকড়, গাছের বাকল, পাতা এবং অপরিপক্ক ফল কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের পীড়া নিরাময়ে ভালো কাজ করে। ক্ষত বা ঘাঁতে থেঁতলানো পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। পেয়ারা পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।
বাজার সম্ভাবনা
পেয়ারা একটি পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন ফল। ফলটি সুস্বাদু এবং এতে প্রচুর ভিটামিন-সি আছে। ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি পেয়ারা দিয়ে জেলি, জ্যাম ও জুস তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই আমাদের দেশে এই ফলের প্রচুর চাহিদা আছে। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। পেয়ারা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
পেয়ারা উৎপাদন কৌশল
জাত
বাংলাদেশে চাষকৃত পেয়ারার জাতের মধ্যে স্বরূপকাঠি, কঞ্চন নগর ও মুকুন্দপুরী উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত দু’টি উন্নত জাত হলো কাজী পেয়ারা ও বারি পেয়ারা-২।
কাজী পেয়ারা
১. এ জাতটি ১৯৮৫ সালে অনুমোদন করা হয়।
২. গাছের আকার মধ্যম। ডাল বেশ লম্বা।
৩. বীজ লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। এ জাতটি বছরে ২ বার ফল দেয়।
৪. ১ম বার মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল) মাসে ফুল আসে। যা মধ্য আষাঢ় থেকে মধ্য ভাদ্র (জুলাই-আগস্ট) মাসে পাকে। ২য় বার মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিন (সেপ্টেম্বর) মাসে ফুল আসে এবং মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মাসে পাকে।
৫. ফলের আকার বেশ বড়। ওজন ৪০০-৫০০ গ্রাম।
৬. পাকা ফল হলুদাভ সবুজ এবং ভেতরের শাঁস সাদা।
৭. প্রতি ফলে ৩৪০-৩৬০টি বীজ থাকে।৮.
কাজী পেয়ারা খেতে সামান্য টক।
বারি পেয়ারা-২
১. এ জাতটি ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।
২. গাছ ছাতাকৃতি ও কাজী পেয়ারা গাছের চেয়ে ছোট হয়। ৎ
৩. পাতা সামনের দিক সুঁচালো।
৪. এ জাতটি বর্ষাকালে ও শীতকালে ২ বার ফল দেয়।
৫. ফল আকারে ছোট, ওজন ২৩০-২৫০ গ্রাম ও গোলাকার।
৬. পাকা ফল হলুদাভ সবুজ এবং ভেতরের শাঁস সাদা।
৭. পেয়ারা খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি।
তথ্যসূত্র : কৃষি প্রযুক্তি হাতবই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর।
মাটির প্রকৃতি
জলবায়ু
বেলে দো-আঁশ মাটি পেয়ারা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।
জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি (জুন-সেপ্টেম্বর) সময়ে পেয়ারার চারা রোপণ করার জন্য উপযুক্ত সময়।
জমি তৈরি
১. উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি পেয়ারা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এজন্য নির্বাচন করতে হবে।
২. চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।
চারা রোপণ পদ্ধতি
১. সমতল ভূমিতে বর্গাকার ও ষড়ভূজি এবং পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ করা যায়।
২. সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩ মিটার রাখতে হবে।
৩. চারা থেকে চারা ৪ মিটার দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
৪. গর্তের আকার ৫০ সে.মি. চওড়া ও ৫০ সে.মি. দীর্ঘ রাখতে হবে।
৫. চারা রোপণের পর খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে পেয়ারা গাছে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
সেচ
১. মাটিতে প্রয়োজনীয় রসের অভাব দেখা দিলে বা খরার সময় ২-৩ বার পানি সেচ দিতে হবে।
২. অন্যদিকে অতিবৃষ্টি বা জলাবদ্ধতা দেখা দিলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগবালাই
১. পেয়ারা গাছের পাতা, কান্ড, শাখা-প্রশাখা ও ফল এ্যানথ্রাকনোজ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রথমে পেয়ারা গাছে ছোট ছোট বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে পেয়ারা গাছে ক্ষত সৃষ্টি করে। আক্রান্ত ফল পরিপক্ক হলে অনেক সময় ফেটে যায়। তাছাড়া এ রোগে আক্রান্ত ফলের শাঁস শক্ত হয়ে যায়। গাছের পরিত্যক্ত শাখা-প্রশাখা, ফল এবং পাতায় এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে। বাতাস ও বৃষ্টির মাধ্যমে পেয়ারার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ ছড়ায়।
২. ডাইবেক রোগে গাছের কচি ডাল আগা থেকে শুকিয়ে মরে যেতে থাকে।
৩. সাদা মাছি পোকা পাতার নিচের দিকে আক্রমণ করে রস চুষে খায়। এর ফলে পাতায় সুটিমোল্ড ছত্রাক জন্মে এবং পাতা ঝরে যায়।
৪. স্ত্রী মাছি পোকা ফলের খোসার ওপর ডিম পাড়ে। এর ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে ফল ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে এবং ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলে।
প্রতিকার
এ সব রোগ দমনের জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।
চাষের সময়ের পরিচর্যা
১. ডাল ছাঁটাই : পেয়ারা সংগ্রহের পর ভাঙা, রোগাক্রান্ত ও মরা শাখা-প্রশাখা ছাঁটাই করে ফেলতে হবে। তাতে গাছে আবার নতুন নতুন কুঁড়ি জন্মাবে।
২. ফল পাতলাকরণ : কাজী পেয়ারা ও বারি পেয়ারা-২ জাতের গাছ প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক ফল দিয়ে থাকে। ফল পাতলা না করলে গাছ ভেঙ্গে যায়। তাই মার্বেল আকৃতি হলেই কমপক্ষে ৫০ ভাগ ফল ছাঁটাই করতে হবে। এতে ফলের আকার আকর্ষণীয় হয়।
ফল সংগ্রহ
সবুজ থেকে হলুদে-সবুজ রঙ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হবে।
উৎপাদিত ফলের পরিমাণ
প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১০০০ থেকে ২০০০টি পেয়ারা পাওয়া যায়।
পেয়ারা উৎপাদন খরচ
খরচের খাত
পরিমাণ
আনুমানিক মূল্য (টাকা)
চারা
১০০টি
১০০০
জমি তৈরি
৬টি মাদা তৈরি
৯০০
পানি সেচ
১ বার
২০০
শ্রমিক
১০ জন
১৫০০
সার
প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার
এই সার বাড়িতেই তৈরি করা সম্ভব। তাই এর জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই।
বিকল্প হিসেবে (প্রতি গর্তে সারের পরিমাণ)
টিএসপি=১৫০-২০০ গ্রাম (১ কেজি=২৩ টাকা)
এম পি=৭৫-১০০ গ্রাম (১ কেজি=২৮ টাকা)
১০
কীটনাশক
প্রয়োজন অনুসারে জৈব বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার
নিজস্ব/দোকান
জমি ভাড়া
একবছর
৪০০০
মাটির জৈব গুণাগুণ রক্ষা ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, অক্টোবর ২০০৯
মূলধন
এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেয়ারা চাষের জন্য প্রায় ৬০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)- এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ
পেয়ারা চাষ করার আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে পেয়ারা চাষ সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
পেয়ারা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে পেয়ারা জন্মে। তাই বাণিজ্যিক ভিওিতে পেয়ারা চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১ : পেয়ারা কোন ঋতুর ফল?
উত্তর : পেয়ারা একটি গ্রীষ্মকালীন ফল।
প্রশ্ন ২ : কখন পেয়ারা সংগ্রহ করতে হয়?
উত্তর : সবুজ থেকে হলদে-সবুজ রং ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
প্রশ্ন ৩ : পেয়ারায় কোন ভিটামিন আছে?
উত্তর : পেয়ারায় প্রচুর ভিটামিন সি আছে।
পেয়ারা ডাল বাঁকালেই ফলন হবে দশগুণ
বর্ষাকালের অন্যতম জনপ্রিয় ফল পেয়ারা। আমাদের দেশে ফলটির চাহিদা অনেক। দীর্ঘ ২৭ মাস গবেষণার পর সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে তথ্য দিলেন বাউকুল উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম.এ. রহিম।
পেয়ারা ডাল বাঁকালেই ফলন হবে দশগুণ। তাছাড়া একই প্রযুক্তিতে বছরের বার মাসই ফল ধরানো সম্ভব। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায়, যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায় কমপক্ষে আট থেকে দশগুণ ফল ধরবে গাছে।
উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে ড. রহিম জানান, সাধারণত বর্ষা ও শীত ঋতুতে গাছে পেয়ারা হয়। তবে শীত অপেক্ষা বর্ষাকালে ফলন একটু বেশি হয়। বর্ষাকালে জলীয়ভাব বেশি থাকায় ফলের মিষ্টতা ও অন্যান্য গুণাগুণ শীতকালের ফলের থেকে অনেকাংশেই কম থাকে। তাছাড়া জলীয়ভাব বেশি থাকায় পাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে দাম থাকে কম। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে সকল জাতের পেয়ারার গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায়, রোগ ও পোকার আক্রমণও কম থাকে।
ফলের আকৃতি এবং রঙ সবদিক থেকেই সুন্দর হওয়ায় এই সময়ে পেয়ারার দামও থাকে বেশি। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বর্ষাকাল বাদে কীভাবে অন্যান্য ঋতুতে অত্যাধিক হারে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা শুরম্ন হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গবেষণার মাধ্যমে ‘গাছের ডাল বাঁকানো’ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম পস্নাজম সেন্টারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রতিটি গাছ থেকে সাধারণ গাছের তুলনায় কমপক্ষে আট থেকে দশগুণ বেশি পেয়ারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়াও পেয়ারার মৌসুমে গাছের ফুল ও ফল ছিড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায় বলে জানান তিনি। এ সম্পর্কে বাকৃবির জার্ম পস্নাজম সেন্টারের প্রধান গবেষণা সহযোগী কৃষিবিদ শামসুল আলম মিঠু বলেন, বছরে দু’বার অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে এবং হেমনত্মকালে শাখা-প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিন্যাসের মাধ্যমে সারা বছর পেয়ারার ফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গাছের বয়স দেড় থেকে দু’বছর হলেই এই পদ্ধতি শুরম্ন করা যাবে এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যনত্ম এই পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো সম্ভব।
ডাল বাঁকানোর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দেওয়া হয়। ডাল বাঁকানোর সময় প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের প্রায় এক থেকে দেড় ফুট অঞ্চলের পাতা ও ফুল-ফল রেখে বাকি অংশ ছেটে দেওয়া হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি করে সাথে অথবা খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দেওয়া হয়।
গ্রীষ্মকালে মাত্র দশ থেকে বার দিন পরেই নতুন ডাল গজানো শুরম্ন হয়। নতুন ডাল ১ সে.মি. লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। আর হেমনত্মকালে নতুন ডাল গজাতে বিশ থেকে পঁচিশ দিন সময় লাগে। ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরম্ন হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি পাতার কোলেই ফুল আসে। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া ফলের মিষ্টতা বেশি এবং রঙ আকৃতি সুন্দর হওয়ায় পেয়ারার বাজার দরও বেশি পাওয়া যায়